বিএনপি’র সঙ্গে দূরত্ব নেই সংস্কার ও নির্বাচন দু’টিই গুরুত্বপূর্ণ -ডা. শফিকুর রহমান by মুনির হোসেন

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিপ্লবের ফসল। ঐকমত্যের ভিত্তিতে তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এই সরকারকে সর্বোচ্চ সহায়তা করা সকল নাগরিকের কর্তব্য। তারা যে সংস্কার কাজে হাত দিয়েছেন সেটার জন্য যৌক্তিক সময় দিতে হবে। তবে সেটি যেন কোনো ভাবেই আনলিমিটেড না হয়। একই সঙ্গে নির্বাচনও গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুত সময়ের মধ্যে মৌলিক সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে। যেন আগামীতে কেউ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে। মানবজমিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। নিশ্চিত করেন বিএনপি’র সঙ্গে জামায়াতের জোট আর নেই। তবে জাতীয় স্বার্থে তাদের সঙ্গে ঐকমত্য রয়েছে।  আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না হলেও বিএনপি’র সঙ্গে ২০২২ সাল থেকে জোট নেই। সেটি দুই দলের বক্তব্যের মাধ্যমে পরিষ্কার। বিএনপি’র সঙ্গে জামায়াতের কোনো টানাপড়েন নেই। দলটির সঙ্গে যোগাযোগ আছে। রাজনীতিতে দুইটা দলের দুইটা আদর্শ ও মত থাকবে স্বাভাবিক। পরস্পর সমালোচনার দ্বারা আমরা ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করবো।

জাতীয় স্বার্থের জায়গায় আমাদের কারও দ্বিমত নেই। এ সরকারকে সহযোগিতা করা, যৌক্তিক সময় দিয়ে সফল করা- এসব জায়গায় আমরা সবাই ঐকমত্য। রাজধানীর বড় মগবাজারের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দেয়া সাক্ষাৎকারে জামায়াত আমীর বলেন, ছাত্র-জনতার বিপ্লব হয়েছে বৈষম্যের বিরুদ্ধে। বিগত সরকার ছলেবলে কৌশলে যে সকল নির্বাচন করেছে সেগুলোর কোনো নৈতিক বৈধতা ছিল না। এগুলোর মাধ্যমে ক্ষমতায় থেকেছে। সাড়ে ১৫ বছরে বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশনসহ রাষ্ট্রের সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। পাশাপাশি জনপ্রশাসন ও পুলিশকে দলীয়করণ করেছে। দলীয়করণের ফলে তারা বেপরোয়া হয়ে জনগণের ওপর জুলুম অত্যাচার করার সুযোগ পেয়েছে। যদি এসব জায়গা থেকে সমর্থন না পেতো তাহলে সরকার এত বেপরোয়া হতে পারতো না। এগুলোর মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন। পাশাপাশি উন্নয়নের মডেল বানিয়েছে দাবি করলেও দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা একেবারেই বিধ্বস্ত। উন্নয়নের কথা বলে প্রচারণা ছিল ফাঁকা বুলির মতো। মানুষ এখন সব বুঝেছে। সাড়ে ১৫ বছরের এ বিশাল জঞ্জাল পরিষ্কার করতে অবশ্যই সময় লাগবে। তবে সময় অপরিসীম হওয়া উচিত নয় এবং সংস্কারের বিষয় অনেক বেশি হওয়া উচিত হবে না। তাহলে সমস্যা হবে। এখানে মৌলিকভাবে বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে বিধি প্রো-বিধি এ জায়গাগুলোতে কিছু সংস্কার করতে হবে। তা না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। বিচার বিভাগকে সাজাতে হবে। আপিল বিভাগ ছাড়া বাকি সব আগের জায়গায়ই রয়ে গেছে। এসবের জন্য সময় প্রয়োজন আছে। এ পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন সেটার অনেকগুলোই ফলপ্রসূ আবার কিছু পদক্ষেপ জনগণ ইতিবাচকভাবে নেয়নি। এটা হতেই পারে। মানুষ ভুল করতেই পারে। তারা কোনো রাজনৈতিক দলের লোক না, বেশির ভাগই সিভিল সোসাইটির মানুষ। ত্রুটি-বিচ্যুতি হবেই, তবে তাদের উদ্দেশ্যটা দেখতে হবে। তারা যদি ভালো উদ্দেশ্যে কিছু করেন তাহলে অবশ্যই জনগণকে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন দেবেন। তাহলে তাদের সম্মানের জায়গাটাও বহাল থাকবে দেশও উপকৃত হবে। আমরা সেটাই আশা করি।

তিনি বলেন, মৌলিক জায়গাগুলো তারা করলে কমিশন একাধিক গঠিত হলে অসুবিধা নেই। কমিশন কমিশনের কাজ করবে। এ বেসিক জায়গাগুলো ঠিকঠাক করে নির্বাচনের রোডম্যাপ অনুযায়ী তারা যেতে পারেন। আমরা দুটা রোডম্যাপের কথা বলছি। একটা নির্বাচনের রোডম্যাপ, অন্যটা সংস্কারের। সংস্কারের রোডম্যাপে কী কী বিষয়ে সংস্কার করবেন আর কতো সময়ের মধ্যে করবেন এটা থাকবে। এজন্য আমরা আহ্বান জানিয়েছি তারা যেন অংশীজনের সঙ্গে ডায়ালগে বসেন। তারা সেটা করবেন। আমরা আশা করছি এর মাধ্যমে সমাধান বের হয়ে আসবে। আমরাও সে ব্যাপার নিয়ে কাজ করছি। আমরা যৌক্তিক সময়টা কেমন হতে পারে সেটা তাদের কাছে তুলে ধরবো। আপনাদেরও ব্রিফ করবো।

সংস্কারের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, নির্বাচন হতেই হবে। তবে মৌলিক সংস্কারগুলো করে নির্বাচন হলে সেটি ফলপ্রসূ হবে। তা না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। নির্বাচনে বিএনপি’র সঙ্গে জোট করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ মুহূর্তে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে যে সিদ্ধান্তই নিই না কেন সেটি জনগণের প্রত্যাশা, দেশের প্রয়োজন, জাতীয় স্বার্থ গুরুত্ব পাবে।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শুধু ইসলামিক দল নয়, ১২ দল, ৫ দলসহ অনেকের সঙ্গে আমরা বসেছি। সুতরাং যারা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ছিলেন, দেশপ্রেমিক শক্তি সেসব দলের সঙ্গে মানসিক ঐক্য থাকতে পারে। সে জায়গা থেকে আমরা মতবিনিময় করেছি। যেটি আগামী দিনে বৃহত্তর ঐক্যের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে। যার যতটুকু ভূমিকা আছে তাকে সম্মান ও গুরুত্ব দেয়া হবে। নির্বাচনে আগামীতে কেমন সরকার চান এমন প্রশ্নের জবাবে জামায়াতপ্রধান বলেন, এদেশের মানুষের জোট এবং একক দলের সরকার দেখার সুযোগ হয়েছে। আমরা জোট বা একক সরকারে না গিয়ে বলতে চাই সরকারটা হবেন যিনি প্রকৃতপক্ষেই জনগণের সরকার হবেন। যারা সরকারে বসে দেশের মালিক হবে না। সব জায়গা দখলে নিতে হবে, আধিপত্য বিস্তার করতে হবে, সব জায়গায় আমার লোক থাকতে হবে- এটা করতে গেলে আবার দুর্বৃত্তায়নে দেশ পড়ে যাবে। এ জায়গাটা পরিষ্কার করতে হবে। সরকার দুর্নীতিমুক্ত এটা মুখের কথায় নয়, বাস্তবে রূপ দিতে হবে। নিজে দুর্নীতিমুক্ত থাকবেন, দেশের সম্পদকে আমানত মনে করে দেশ ও জনগণের স্বার্থে ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। অর্থ-আত্মসাৎ, চাঁদাবাজি, দখলদারি, টেন্ডার বাণিজ্যসহ সকল দুর্বৃত্তায়ন থেকে বের হয়ে একটা সরকার কায়েম হোক সেটাই আমরা চাই। একই সঙ্গে আদালতকে যেন কেউ ব্যবহার করতে না পারে। বিচার বিভাগ যেন স্বাধীন থাকে। প্রধান বিচারপতি আদালতের সচিবালয় আলাদা করার যে প্রস্তাব করেছেন, আমরা সেটিকে পূর্ণ সমর্থন করি। কে ক্ষমতায় যাবে সেটা বড় কথা না। ক্ষমতায় যেন জনগণের সরকার যায়। যারা জনগণকে বুঝবে ও সম্মান করবে। আন্দোলনের কৃতিত্ব নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের দাবির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৫ই আগস্টের আগে বিশ্বের কোনো রাষ্ট্রবিজ্ঞানীও ধারণা করেনি এমন একটি ঘটনা ঘটবে। তবে এটা বোঝা যাচ্ছে যে স্বৈরাচারী সরকার আর টিকবে না। যে সরকার যুবসমাজের গায়ে হাত দিয়েছে তারা অতীতেও টিকেনি। সকলে এটা স্বীকার করতে বাধ্য যে এটা আল্লাহর একটা সিদ্ধান্ত। এটার মূল কৃতিত্ব তার। জমিনে নিঃসন্দেহে পুরো দেশবাসীর অংশগ্রহণ ছিল। মাস্টারমাইন্ড শব্দটি না নিলেই ভালো। কে মাস্টারমাইন্ড বা কে অন্য কিছু সেটি বড় কথা নয়। আমরা বলবো ছাত্রসমাজ মুখ্য নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিল। আমরা তাদের অভিনন্দন জানাই। মাস্টারমাইন্ড নিয়ে যেন কোনো কাটাছেঁড়া না হয় এবং বিপ্লবের চেতনা যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয় আমরা সেটাই চাই। একজনকে মাস্টারমাইন্ড করা হলে অন্যদের আন্ডারমাইন্ড করা হবে। যারা জীবন উৎসর্গ করেছে তাদের যেন আমরা সর্বোচ্চ সম্মান জানাই। আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা সর্বোচ্চ থাকে। দেশের জনগণ ও প্রবাসী সবার মুখ্য ভূমিকা ছিল আন্দোলনে। সুতরাং কাউকে খাটো করে দেখার পক্ষে নয়। আমরাও দলগতভাবে জনগণের সঙ্গে একাকার ছিলাম। তিনি আরও বলেন, বঙ্গভবন থেকে বের হয়ে আমিই প্রথম তরুণদের স্বীকৃতি দিয়েছি। আর তো কেউ দেয়নি। সেদিন আমি আশা করছিলাম সবাই করবেন। পরে অবশ্য অনেকে করেছেন। ওইদিন এ স্বীকৃতি তাদের পাওনা ছিল। কারণ নেতৃত্বটা তাদের ছিল। সাড়ে ১৫ বছর আমরা আন্দোলন করেছি। যার ধারাবাহিকতায় এখানে সফলতা এসেছে। তাই তাদের স্বীকৃতি পাওয়া বাড়তি কিছু না। আমরা আগেও শ্রদ্ধা দেখিয়েছি, আগামীতেও দেখাতে থাকবো। তবে তারাও যেন শ্রদ্ধার মূল্যটা বুঝে সেটা প্রত্যাশা করবো। এটি দলের জন্য না জাতির জন্য বলছি। এ সম্মান রেখে নিজেদের মর্যাদা তারা আরও বাড়াবে বলে প্রত্যাশা করি।
ছাত্রদের দল গঠন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াত আমীর বলেন, শুরুতে একজন সমন্বয়ক দুই মাসের মধ্যে দল গঠন করবেন বলেছিলেন। এরপর একাধিক সমন্বয়ক বলেছেন আমরা এরকম সিদ্ধান্ত নেইনি। এরপর তারা নাগরিক কমিটি করেছে। প্রশ্ন উঠেছে এটা কী দল গঠনের প্রথম পদক্ষেপ কিনা- তারা বলেছেন প্রেসার গ্রুপ হিসেবে কাজ করবেন। যাতে যে সরকারই আসুক তারা যেন সঠিক রাস্তায় থাকে। জনগণের সঙ্গে যেন প্রতারণা, ধোঁকা, অত্যাচার, জুলুম, বৈষম্য না করে সেজন্য তারা প্রেসার গ্রুপ হিসেবে কাজ করবে। তাদের বক্তব্য যদি এতটুকু হয় তাহলে এ ব্যাপারে আমার কোনো মন্তব্য নেই। দল গঠন দৃশ্যমান হলে আমরা আমাদের বক্তব্য দেবো। আর কেউ যদি দল গঠন করতে চায় তাতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। বাংলাদেশে অনেক দল আছে আরেকটা হবে। তাদের বক্তব্য, আদর্শ, কৌশল মানুষ পছন্দ করলে তাতেও আমার আপত্তি থাকার কথা না। তবে যেহেতু তাদের একটা অংশ সরকারে আছেন তাহলে সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে। দুইদিকে থাকলে নৈতিকতার সঙ্গে ঠিক হবে না। এ সময় জামায়াতের নাম পরিবর্তন নিয়ে তিনি বলেন, দেশবাসী, শুভাকাঙ্ক্ষীরা আমাদের যেসব পরামর্শ দেয় সেগুলো আমরা গুরুত্ব দেই। আমাদের সংবিধান অনেকবার সংশোধন হয়েছে। তা না হলে তো আমরা এক জায়গায় পড়ে থাকতাম। দেশ ও মানবতার জন্য যেখানে সংশোধনের প্রয়োজন হয়েছে সেটাতো আমরা গ্রহণ করেছি। জামায়াতের নাম পরিবর্তনের বিষয়টা আসে মূলত ১৯৭১’র ভূমিকা নিয়ে। এখন হলো ২০২৪। তারও ২৩ বছর আগে বৃটিশরা এ দেশ শাসন করে গেছে ১৯০ বছর। তাদের নিয়ে কোনো আলোচনা কেউ করে না। তাহলে ৫৩ বছর আগের বিষয় নিয়ে আলোচনা করলে আমরা  পেছনের দিকে যাবো। সামনের দিকে যেতে পারবো না। জাতি বিভক্ত হবে, ঐক্যবদ্ধ হবে না। জামায়াতে ইসলামী দেশ স্বাধীনের পর থেকে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে একটাও সিদ্ধান্ত নেয়নি। জাতি যখন পেছনের বিষয় নিয়ে পড়ে থাকে তাহলে তার ভবিষ্যৎ নেই। একটা জাতিকে বিভক্ত করে কী অর্জন করবো। ঐক্যবদ্ধ হলেই দেশ শক্তিশালী হবে। আওয়ামী লীগ একে খন্দকার, জিয়াউর রহমানসহ অনেককেই পাকিস্তানের রাজাকার, চর বলেছে। তারা ছাড়া সবাই খারাপ ছিল তাহলে? তাদের বিভাজনের রাজনীতি মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। যার কারণে তাদের সুষ্ঠু নির্বাচন দেয়ারও সাহস হয়নি। নাম পরিবর্তনের বিষয়টা আসে মূলত জামায়াতকে খারাপভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তাই। দল হিসেবে আমাদের প্রতি তারা জুলুম করেছে। হ্যাঁ, জামায়াত যদি মনে করে প্রয়োজনে নতুন কোনো নামে রাজনৈতিক অবস্থান নেবে, সেটা নিতে পারে। অসুবিধা নেই। বহু দেশে এমন উদাহরণ আছে। মূল দল মূল দলের জায়গায় আছে, আরেকটা রাজনৈতিক উইং আছে। প্রয়োজন হলে সেটা আমরাও করবো।

জামায়াত কেমন রাষ্ট্রব্যবস্থা চায় এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ইসলামী রাষ্ট্র ও কল্যাণ রাষ্ট্রের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। দল, মত, ধর্মের ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও মদিনাকেন্দ্রিক যে রাষ্ট্রব্যবস্থা ছিল সেটি কল্যাণ রাষ্ট্র ছিল। সমস্ত মানুষের জন্য ছিল সেটি কল্যাণ রাষ্ট্র। ইসলামের নামে সমাজে চলা চলমান অসহিষ্ণুতার প্রশ্নে তিনি বলেন, কাউকে জোর করে কিছু চাপিয়ে দেয়া, আইন হাতে তুলে নেয়া উচিত না। আমার যদি কোনো আপত্তি থাকে সেটি নিয়মতান্ত্রিক পন্থা তুলে ধরবো। কিন্তু নিজে আইন হাতে তুলে নিয়ে কোনো কাজ করাকে সেটি আমরা সমর্থন করি না। আওয়ামী লীগকে নির্বাচনী লড়াইয়ে জামায়াত দেখতে চায় কিনা এমন প্রশ্নে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা চাই কি চাই না সেটি বড় কথা না। তারা চায় কিনা সেটিই প্রশ্ন। নির্বাচনে আসে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি যাদের সম্মানবোধ আছে তারা। কিন্তু আওয়ামী লীগ কি গত সাড়ে ১৫ বছরে সেটির পরিচয় দিয়েছে? তিনটা নির্বাচনে সামান্য দেখাতে পেরেছেন। তাহলে সেই মানসিকতা নিয়ে তারা কীভাবে নির্বাচনে আসবেন। তারা তো নির্বাচন চান না, সিলেকশন চান। তারা সিলেকশনের অপেক্ষায় থাকতে পারেন তবে ইলেকশন তো তাদের সঙ্গে মানায় না। তারা যেটি নিজেদের জন্য চান না সেটি আমরা কেন চাইবো। আগে তারা তাদের অবস্থান ঠিক করুক। জামায়াত আমীর বলেন, দেশটা আমাদের সবার। আর যেন কেউ আমাদের দেশটাকে আবার বিভক্ত করতে না পারে। জাতি হিসেবে আমরা যেন জাতীয় স্বার্থের জায়গায় ঐক্যবদ্ধ থাকি। এখানে দল, মত, ধর্ম যেটাই থাকুক আমাদের ঐক্যটা যেন একদম ইস্পাত কঠিন সুদৃঢ় থাকে। এ সরকার একটা বিপ্লবের ফসল। ঐকমত্যের ভিত্তিতে আমরা তাদের দায়িত্ব দিয়েছি। দায়িত্ব যেহেতু আমরা দিয়েছি কাজেই সহযোগিতা করার দায়িত্ব আমাদের। তবে অন্ধভাবে বিনাশর্তে নয়। তারা যদি অসঙ্গত বা দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো কাজ করেন তাহলে অবশ্যই তাদের সংশোধন করতে হবে। সংশোধনের রাস্তায় না এলে প্রতিবাদ করতে হবে। আর সঠিক পথে থাকলে আমাদের উচিত তাদের সর্বোচ্চ সহায়তা করা। বর্তমান প্রেসিডেন্ট নিয়ে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট গত সরকারের। তার নৈতিক ও আইনগত জায়গা থাকে। দেশের সর্বোচ্চ মর্যাদার আসন। এ পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের দৃশ্যমান কোনো বিপর্যয় দেখি নাই। তারপরও জনগণের একটা মত আছে। বিপর্যয়ের সময় দেশকে শান্তি ও যৌক্তিক একটা জায়গায় আনার কোনো উদ্যোগ নেননি তিনি। তার চোখের সামনে হাজারের ওপর মানুষ হত্যা ও অনেক মানুষ পঙ্গু হলেন তখন তিনি কোনো উদ্যোগ নেননি। তিনি চাইলে প্রথম দিনই একটা উদ্যোগ নিতে পারতেন। কাজেই অভিভাবক হিসেবে সংকটকালীন সময়ে তিনি তার নৈতিক দায়িত্ব পালন করেননি। তিনিই সিদ্ধান্ত নিন কী করার, না করার। তিনি নৈতিকতার জায়গায় দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। তার নীরব থাকাই স্বৈরাচারী সরকারকে সমর্থন করা। এর বাইরে কোনো কিছু থাকলে তাকেই জাতির কাছে পরিষ্কার করতে হবে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.