ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় ওরা: সরজমিন চক্ষু-বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট by সুদীপ অধিকারী
এদিকে গত ১৯শে জুলাই রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ এলাকায় বাম চোখে গুলিবিদ্ধ হন রিপন আহমেদ। দশমাসের সন্তান আয়াত ও স্ত্রীকে নিয়ে তিনিও দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিচ্ছেন জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ৪ তলায়। রিপন জানান, আন্দোলন যখন তুঙ্গে সকলে ঘর থেকে রাস্তায় নেমে এসেছে তখন আমিও আর বসে থাকতে পারিনি। আমিও তাদের সঙ্গে যোগ দেই। সেদিন পুলিশের গুলিতে একের পর এক নিহতের খবর আসছিল। পুলিশ নির্বিচারে গুলি করছিল। আমরাও রাস্তা ছাড়িনি। এরই মধ্যে হঠাৎ একটি গুলি এসে লাগে আমার চোখে। চোখে ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়ছিল। আমি রাস্তায় লুটিয়ে পড়ি। এক পর্যায়ে আমার সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলি। যখন জ্ঞান ফেরে আমি তখন হাসপাতালে। এরপর সেখান থেকে আমাকে এই চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেদিন প্রাণে বাঁচলেও চোখের দৃষ্টি হারিয়ে গেছে সারাজীবনের মতো। আমার এই দশ মাসের বাচ্চা ও স্ত্রীর আমি ছাড়া কেউ নেই। আমার পারিশ্রমিকেই তাদের মুখে অন্ন জুটতো। এখন তো কাজও করতে পারবো না। অন্ধ লোককে কেউ কাজেও নিবে না। আমার বাচ্চাটাকে কীভাবে বড় করে তুলবো, কীভাবে সংসারের খরচ মেটাবো কিছুই বুঝতে পারছি না। ১৯শে জুলাই একইদিনে রাজধানীর বাড্ডার গুদারাঘাট এলাকায় চোখে গুলিবিদ্ধ হন মো. সাজ্জাদ হোসেন। সাজ্জাদ বলেন, সেদিন জুমার পর অন্যদের সঙ্গে আমি বাড্ডার আন্দোলনে যোগ দেই। পুলিশ আমাদের লক্ষ্য করে একের পর এক গুলি ছুড়ছিল। সেই গুলির একটি এসে লাগে আমার ডান চোখে। তারপর থেকে আমি আর এই চোখটা দিয়ে কিছুই দেখতে পারছি না।
সিলেটের গোলাপগঞ্জের সামাদ আহম্মেদও একই ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনিও একটি চোখের জ্যোতি হারিয়েছেন। গতকাল সকালে তার চোখে অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা। তাই হাসপাতালের বেডে বসে হিসাব মিলাচ্ছেন বাকি জীবনের। সামাদ বলেন, আমি একটি ওয়ার্কশপে ওয়েল্ডিং এর কাজ করতাম। গত ৪ঠা আগস্ট পুলিশের গুলিতে আমি আহত হই। এরপর ওসমানী মেডিকেলে যাই। সেখান থেকে আমাকে ঢাকায় আসতে বলা হয়। সামাদ বলেন, বছর দুয়েক বিয়ে করেছি। ছয় মাস বয়েসের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। এখন আমি এক চোখে আর কোনোদিন দেখতে পাবো না। কাজ ছাড়া আমি পরিবার নিয়ে কীভাবে বাঁচবো।
No comments