মিয়ানমারে ‘জিরো-ডলার পর্যটনের’ প্রসার by কিয়াও ইয়ে লিন
মিয়ানমারের
রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীর বর্বর অভিযানের
বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিন্দা সত্বেও দেশটিতে পর্যটকদের আগমনের হার বাড়ছে।
পর্যটন বয়কট নিয়ে যে বিতর্ক চলছে, সেটা পর্যটকদের বিভ্রান্ত করছে, এবং রোহিঙ্গা সঙ্কটের কারণে স্বাভাবিকভাবেই ইউরোপিয় ও পশ্চিমা দেশগুলো থেকে পর্যটক আসা কমে গেছে।
২০১৭ সালে, রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বর্বর অভিযানে প্রায় সাড়ে সাত লাখ মানুষ প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বাংলাদেশ বছরে ৩.৪৪ মিলিয়ন পর্যটককে স্বাগত জানিয়ে থাকে, ২০১৮ সালে যেটা বেড়ে ৩.৫৫ মিলিয়ন হয়।
কিন্তু মিয়ানমারের পর্যটন খাত একটা চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গেছে এবং পশ্চিমা দেশগুলো থেকে তাদের পর্যটক আসা অনেক কমে গেছে।
মিয়ানমারের হোটেল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি স্থায়ী সচিব লাইং উ বলেন, “কিন্তু ২০১৯ সালে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে”।
মন্ত্রণালয় মনে করছে, এ বছর বর্ষা মওসুমের পর জুন-সেপ্টেম্বর থেকে পর্যটকদের আগমন প্রত্যাশিত ছয় মিলিয়নকে ছাড়িয়ে যাবে। আনাদুলু এজেন্সিকে সোমবার ফোনে তিনি এ তথ্য জানান।
সরকারী হিসেব অনুযায়ী, বছরের প্রথম ছয় মাসে ২.১৪ মিলিয়ন পর্যটক এসেছে মিয়ানমারে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এটা ২৪% বেশি।
মান্ডালেতে চীনা পর্যটকদের ভিড়
লাইং উ বলেন, জার্মানি, ইটালি, স্পেনের মতো ইউরোপিয় দেশ এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে পর্যটকের আগমন কিছুটা বেড়েছে, তবে তিনি স্বীকার করেন যে, এশিয়ার দেশগুলো থেকে ২০১৯ সালে পর্যটকের আগমণ বেড়েছে প্রায় ৯০ শতাংশ।
তিনি বলেন, “এশিয়ান পর্যটকদের মধ্যে তালিকার শীর্ষে রয়েছে চীন”।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ভিসার নিয়ম শিথিল করার পর চীনা পর্যটকদের আগমন প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, “মান্ডালে সফরের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় জায়গা”। মান্ডালের মিয়ানমারের উত্তরাংশে দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর।
মিয়ানমারের সবশেষ রাজবংশের রাজধানী ছিল মান্ডালে এবং এখানে তাদের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক অতীতকে দেখার সুযোগ রয়েছে। এখানকার প্রাচীন বাগান শহরকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ঘোষণা করেছে ইউনেসকো।
চলতি বছরে চীনা পর্যটকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চীনা বিমান অপারেটরগুলো এই শহরে সরাসরি ফ্লাইট চালু করেছে।
সরকারী তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে যে ২১৮,৯০১ জন পর্যটক মান্ডালে সফরে এসেছে, এদের মধ্যে প্রায় ৯০,০০০ হলো চীনা পর্যটক।
হোটেল ও পর্যটন মন্ত্রনালয়ের ডিরেকটার সান ইউ জানান, “গত বছরে একই সময়ের তুলনায় এ বছর চীনা পর্যটকের সংখ্যা দশগুণ বেড়ে গেছে”।
মাথাব্যাথার কারণ ট্যুর প্যাকেজ
আশ্চর্যের বিষয় হলো, চীনা পর্যটকদের এই বৃদ্ধিতে স্থানীয় সম্প্রদায় উপকৃত হচ্ছে না।
চীনা ট্যুর অপারেটরেরা বুকিং থেকে নিয়ে, ফ্লাইট, হোটেল ও পর্যটন ব্যবস্থাপনার পুরো প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা পর্যটকদের নিম্নমূল্যের পর্যটন প্যাকেজের প্রস্তাব দিচ্ছে – যেটাকে বলা হচ্ছে জিরো-ডলার বা জিরো-বাজেট সফর।
মিয়ানমার ট্যুরিজম এন্টারপ্রেনর্স অ্যাসোসিয়েশানের মান্ডালে অঞ্চলের ভাইস-চেয়ার থান্ত জাউ বলেন, প্যাকেজে স্বল্প সময়ে হোটেল বুকিং, পরিবহন, রেস্তোরাঁ এবং খুচরা দোকানের বিষয়গুলো এই চীনা অপারেটরদের সাথে জড়িত।
আনাদুলু এজেন্সিকে মঙ্গলবার তিনি ফোনে জানান, “তাই এখানে স্থানীয় সম্প্রদায়ের উপকৃত হওয়ার সুযোগ খুবই সামান্য বা একেবারেই নেই”।
জাউ বললেন, প্যাকেজ ট্যুরের অধীনে পর্যটকদের উচ্চমূল্যে অলঙ্কার ও স্মারক কিনতে হবে সেই সব দোকান থেকে, যেগুলো ট্যুর কোম্পানির সাথে সম্পর্কিত।
তিনি বললেন চীনা পর্যটকরা মিয়ানমারের মুদ্রা (কিয়াত) ব্যবহার করে না, বরং তারা চীনা মুদ্রা (ইউয়ান) ব্যবহার করে এবং উইচ্যাট পে’র মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যাবহার করে।
তিনি বলেন, “সরকারও এখানে এই ধরনের পর্যটন থেকে সঠিক পরিমাণ রাজস্ব পাচ্ছে না”।
মিয়ানমারের কঠিন বিকল্প
স্থানীয়দের তাগাদা সত্বেও কর্তৃপক্ষ চীনা পর্যটন অপারেটরদের জিরো-ডলার পর্যটন নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে অনিচ্ছুক।
হোটেল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা এই ইস্যুটিকে ‘জটিল ও স্পর্শকাতর সমস্যা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
রোহিঙ্গা সঙ্কটের সূত্রে ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে আগত পর্যটকের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ২০১৮ সালে ‘লুক ইস্ট’ নীতি গ্রহণ করে মিয়ানমার যাতে এশিয়ার পর্যটকদের আকর্ষণ করা যায়। আর এতে কাজও হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, “এক বছরে চীনা পর্যটকের সংখ্যা শতভাগ বেড়েছে”। তবে নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি ওই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, “জিরো-ডলার পর্যটন পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে যদি আমরা পদক্ষেপ নিই, তাহলে আমাদের আশঙ্কা যে পর্যটকের সংখ্যা আবার কমে যেতে পারে”।
তিনি স্বীকার করেন যে, এই ধরনের পর্যটন ব্যবসায় যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত যাতে এই খাতের প্রবৃদ্ধি হয় এবং সেটা টেকসই হয়।
পর্যটন বয়কট নিয়ে যে বিতর্ক চলছে, সেটা পর্যটকদের বিভ্রান্ত করছে, এবং রোহিঙ্গা সঙ্কটের কারণে স্বাভাবিকভাবেই ইউরোপিয় ও পশ্চিমা দেশগুলো থেকে পর্যটক আসা কমে গেছে।
২০১৭ সালে, রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বর্বর অভিযানে প্রায় সাড়ে সাত লাখ মানুষ প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বাংলাদেশ বছরে ৩.৪৪ মিলিয়ন পর্যটককে স্বাগত জানিয়ে থাকে, ২০১৮ সালে যেটা বেড়ে ৩.৫৫ মিলিয়ন হয়।
কিন্তু মিয়ানমারের পর্যটন খাত একটা চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গেছে এবং পশ্চিমা দেশগুলো থেকে তাদের পর্যটক আসা অনেক কমে গেছে।
মিয়ানমারের হোটেল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি স্থায়ী সচিব লাইং উ বলেন, “কিন্তু ২০১৯ সালে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে”।
মন্ত্রণালয় মনে করছে, এ বছর বর্ষা মওসুমের পর জুন-সেপ্টেম্বর থেকে পর্যটকদের আগমন প্রত্যাশিত ছয় মিলিয়নকে ছাড়িয়ে যাবে। আনাদুলু এজেন্সিকে সোমবার ফোনে তিনি এ তথ্য জানান।
সরকারী হিসেব অনুযায়ী, বছরের প্রথম ছয় মাসে ২.১৪ মিলিয়ন পর্যটক এসেছে মিয়ানমারে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এটা ২৪% বেশি।
মান্ডালেতে চীনা পর্যটকদের ভিড়
লাইং উ বলেন, জার্মানি, ইটালি, স্পেনের মতো ইউরোপিয় দেশ এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে পর্যটকের আগমন কিছুটা বেড়েছে, তবে তিনি স্বীকার করেন যে, এশিয়ার দেশগুলো থেকে ২০১৯ সালে পর্যটকের আগমণ বেড়েছে প্রায় ৯০ শতাংশ।
তিনি বলেন, “এশিয়ান পর্যটকদের মধ্যে তালিকার শীর্ষে রয়েছে চীন”।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ভিসার নিয়ম শিথিল করার পর চীনা পর্যটকদের আগমন প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, “মান্ডালে সফরের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় জায়গা”। মান্ডালের মিয়ানমারের উত্তরাংশে দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর।
মিয়ানমারের সবশেষ রাজবংশের রাজধানী ছিল মান্ডালে এবং এখানে তাদের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক অতীতকে দেখার সুযোগ রয়েছে। এখানকার প্রাচীন বাগান শহরকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ঘোষণা করেছে ইউনেসকো।
চলতি বছরে চীনা পর্যটকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চীনা বিমান অপারেটরগুলো এই শহরে সরাসরি ফ্লাইট চালু করেছে।
সরকারী তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে যে ২১৮,৯০১ জন পর্যটক মান্ডালে সফরে এসেছে, এদের মধ্যে প্রায় ৯০,০০০ হলো চীনা পর্যটক।
হোটেল ও পর্যটন মন্ত্রনালয়ের ডিরেকটার সান ইউ জানান, “গত বছরে একই সময়ের তুলনায় এ বছর চীনা পর্যটকের সংখ্যা দশগুণ বেড়ে গেছে”।
মাথাব্যাথার কারণ ট্যুর প্যাকেজ
আশ্চর্যের বিষয় হলো, চীনা পর্যটকদের এই বৃদ্ধিতে স্থানীয় সম্প্রদায় উপকৃত হচ্ছে না।
চীনা ট্যুর অপারেটরেরা বুকিং থেকে নিয়ে, ফ্লাইট, হোটেল ও পর্যটন ব্যবস্থাপনার পুরো প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা পর্যটকদের নিম্নমূল্যের পর্যটন প্যাকেজের প্রস্তাব দিচ্ছে – যেটাকে বলা হচ্ছে জিরো-ডলার বা জিরো-বাজেট সফর।
মিয়ানমার ট্যুরিজম এন্টারপ্রেনর্স অ্যাসোসিয়েশানের মান্ডালে অঞ্চলের ভাইস-চেয়ার থান্ত জাউ বলেন, প্যাকেজে স্বল্প সময়ে হোটেল বুকিং, পরিবহন, রেস্তোরাঁ এবং খুচরা দোকানের বিষয়গুলো এই চীনা অপারেটরদের সাথে জড়িত।
আনাদুলু এজেন্সিকে মঙ্গলবার তিনি ফোনে জানান, “তাই এখানে স্থানীয় সম্প্রদায়ের উপকৃত হওয়ার সুযোগ খুবই সামান্য বা একেবারেই নেই”।
জাউ বললেন, প্যাকেজ ট্যুরের অধীনে পর্যটকদের উচ্চমূল্যে অলঙ্কার ও স্মারক কিনতে হবে সেই সব দোকান থেকে, যেগুলো ট্যুর কোম্পানির সাথে সম্পর্কিত।
তিনি বললেন চীনা পর্যটকরা মিয়ানমারের মুদ্রা (কিয়াত) ব্যবহার করে না, বরং তারা চীনা মুদ্রা (ইউয়ান) ব্যবহার করে এবং উইচ্যাট পে’র মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যাবহার করে।
তিনি বলেন, “সরকারও এখানে এই ধরনের পর্যটন থেকে সঠিক পরিমাণ রাজস্ব পাচ্ছে না”।
মিয়ানমারের কঠিন বিকল্প
স্থানীয়দের তাগাদা সত্বেও কর্তৃপক্ষ চীনা পর্যটন অপারেটরদের জিরো-ডলার পর্যটন নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে অনিচ্ছুক।
হোটেল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা এই ইস্যুটিকে ‘জটিল ও স্পর্শকাতর সমস্যা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
রোহিঙ্গা সঙ্কটের সূত্রে ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে আগত পর্যটকের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ২০১৮ সালে ‘লুক ইস্ট’ নীতি গ্রহণ করে মিয়ানমার যাতে এশিয়ার পর্যটকদের আকর্ষণ করা যায়। আর এতে কাজও হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, “এক বছরে চীনা পর্যটকের সংখ্যা শতভাগ বেড়েছে”। তবে নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি ওই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, “জিরো-ডলার পর্যটন পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে যদি আমরা পদক্ষেপ নিই, তাহলে আমাদের আশঙ্কা যে পর্যটকের সংখ্যা আবার কমে যেতে পারে”।
তিনি স্বীকার করেন যে, এই ধরনের পর্যটন ব্যবসায় যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত যাতে এই খাতের প্রবৃদ্ধি হয় এবং সেটা টেকসই হয়।
No comments