হাল ছেড়ো না কংগ্রেস by সুনিল শরন
শশি
থারুর যখন ক্রমেই দৃশ্যপটে ফুটে উঠছেন, কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট যখন ক্রমেই
নিষ্প্রভ হয়ে উঠছেন, যেই ব্যক্তিটির রাজা হওয়ার কথা ছিল, তিনি কেবল মিইয়ে
যাচ্ছেন। ছোটখাটো নেতারা আসেন, এসে মধু খেয়ে চলে যান। ফলে কংগ্রেসের জন্য
কোনো আশা দেখা যাচ্ছে না।
কিন্তু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর মধ্যে যেই আলিঙ্গন দেখা গেল, তাতে একটি কথা স্পষ্ট: কংগ্রেস কখনো বিলীন হবে না। এই দল গান্ধী ও সুভাষের, নেহরু ও প্যাটেলের, আজাদ ও রাজাজির, যারা কিনা ভারতের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ প্রজন্ম। এই দলকে বিলীন হতে দেয়া হবে না।
শেখ হাসিনার মতো বিশ্ব নেতারা বিষয়টি জানেন। তাই তারা আলিঙ্গন করেন। মনমোহন সিং, যাকে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে গান্ধীদের হাতে অনেক অপদস্থ হতে হয়েছে, তিনি এখন গান্ধী পরিবার ও দলের জন্য অনেকটা পিতৃতুল্য ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন।
শেখ হাসিনা ও প্রিয়াঙ্কা যখন আলিঙ্গনে আবদ্ধ, তখন মনমোহন তাকিয়ে ছিলেন।
ছোটখাটো নেতারা বলেন যে, পেছন ফিরে তাকাতে হবে। কেন? ২০১৯ সালের বিপর্যস্ত দশা থেকে দলকে উদ্ধার করতে এই নেতারা কী ভূমিকা পালন করেছেন? এখন কেন তাদেরকে মুখ্যমন্ত্রী বা দলের রাজ্য ইউনিটের বড় পদে বসানো হবে? কেন তারা মনমোহন সিংয়ের মতো দলের প্রতি আনুগত্যশীল থাকতে পারে না?
২০১৪ আর ২০১৯ হয়েছে একজন ব্যক্তি অর্থাৎ নরেন্দ্র মোদির জাদুতে। কিন্তু মোদির জাদু কতদিন থাকবে? ১৯৭১ সালের পর চার বছরের মধ্যেই ইন্দিরা গান্ধীর জনপ্রিয়তা মিইয়ে গিয়েছিল। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীরও বয়স বাড়ছে। দৃশ্যপট থেকে মোদি বিদায় নিলে, সংঘ পরিবারে আর কেউ কি আছেন যিনি তার স্থলাভিষিক্ত হবেন? তার পদে বসার দাবিদার আছেন অনেকেই। কিন্তু সত্য বলতে কি, এদের সকলেই মোদির ওপর নির্ভরশীল।
রাজনীতি হলো অপেক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করার আর্ট। অর্থনীতির অবস্থা খুবই শোচনীয়। মনমোহন সিং বা এমনকি পি. চিদাম্বরমের মতো অর্থনীতির জাদুকরও নেই এই সরকারের। (হ্যাঁ, চিদাম্বরম, আপনার জন্য হাততালি। এই কঠিন অবস্থাতেও নিজেকে ঠিক রাখুন। আমরা সকলেই জানি, দেশের জন্য আপনি কী করেছেন, বিশেষ করে ২৬/১১-এর পর।)
বিজেপি সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের ক্ষমতায়, একটা কথা বারবার আসতো যে, ভারত বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল বৃহৎ অর্থনীতি। এখন ওই কথা বলা হচ্ছে না। এখন ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির কথা বলা হচ্ছে। সত্যি বলতে কি, ইচ্ছা যদি ঘোড়া হতো, তাহলে সেই ঘোড়ায় ভিক্ষুকরা চড়তো।
অর্থনীতির জাদুকরী মন্ত্রী হলেই শেখা যায় না। আপনি অর্থমন্ত্রী হওয়ার আগেই এই অর্থনীতির জাদুকর হতে হবে। কিন্তু বড় ৪ মন্ত্রীর কেউই নিজেকে তেমনটা দাবি করতে পারবেন না। দ্বিতীয় সারির মন্ত্রীরাও না।
প্রধানমন্ত্রীর এখনো কাল্ট-এর মতো অনুসারী আছে। কিন্তু তিনি যদি সচেষ্ট না হন, তাহলে বৈশ্বিক অর্থনীতি যেভাবে শ্লথ হচ্ছে, সেই হিসাবে ভারতের অর্থনীতির শোচনীয় দশা তার দ্বিতীয় দফার প্রধানমন্ত্রীত্বের বারোটা বাজাতে পারে।
কংগ্রেসের জন্য সুসংবাদ হলো যে, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এখন স্থায়ীভাবে সক্রিয় রাজনীতিতে আছেন। মা হয়তো অবশেষে বুঝতে পারছেন যে, প্রিয়াঙ্কাকে লাইমলাইটে আনাটাই যৌক্তিক। হ্যাঁ, এক্ষেত্রে রবার্ট ভদ্র প্রিয়াঙ্কার জন্য অনেকটা বোঝার মতো। কিন্তু সেটা তার ব্যক্তিগত সমস্যা। তাকেই সেটা সমাধান করতে হবে।
এটি অচিন্তনীয় যে প্রিয়াঙ্কার মতো রাজনৈতিক ধীশক্তির অধিকারী একজন ‘চৌকিদারই চোর’ স্লোগানে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রচার চালাবেন। হ্যাঁ, তিনিও হয়তো এই প্রচারাভিযানেই অংশ নিয়েছেন। অনুগত বোন হিসেবে তিনি হয়তো স্রোতের সঙ্গে তাল মিলিয়েছেন। কিন্তু যখন মনমোহন সিং-এর মতো ব্যক্তিরা তাকে শেখ হাসিনার মতো বিশ্বনেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করাচ্ছেন, দলের শীর্ষ নেতারা হয়তো বুঝতে পারছেন যে, তাকেই এখন দলের নেতা হিসেবে দাঁড় করাতে হবে। দলের মধ্যে অনেকে দীর্ঘদিন ধরে যা চাচ্ছিলেন, তাই হচ্ছে এখন। দেরি হলেও অন্তত হচ্ছে।
২০২৪ সালে প্রধানমন্ত্রী ও প্রিয়াঙ্কার লড়াই দেখার তর যেন সইছে না। দুই ক্যারিশমেটিক নেতা একে অপরের বিরুদ্ধে লড়বেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তখন থাকবেন তার লিগ্যাসির একেবারে শেষ প্রান্তে। কিন্তু প্রিয়াঙ্কা সবে শুরু করবেন।
সুতরাং, হাল ছেড়ো না, কংগ্রেস। ভালো দিন আসবে। এই বইটি পড়ে দেখতে পারেন: ফিল্ড মার্শাল স্লিমের লেখা ‘ডিফিট ইনটু ভিকটরি (পরাজয় থেকে বিজয়)’।
(সুনিল শরনের এই নিবন্ধ টাইমস অব ইন্ডিয়া থেকে নেয়া হয়েছে।)
কিন্তু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর মধ্যে যেই আলিঙ্গন দেখা গেল, তাতে একটি কথা স্পষ্ট: কংগ্রেস কখনো বিলীন হবে না। এই দল গান্ধী ও সুভাষের, নেহরু ও প্যাটেলের, আজাদ ও রাজাজির, যারা কিনা ভারতের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ প্রজন্ম। এই দলকে বিলীন হতে দেয়া হবে না।
শেখ হাসিনার মতো বিশ্ব নেতারা বিষয়টি জানেন। তাই তারা আলিঙ্গন করেন। মনমোহন সিং, যাকে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে গান্ধীদের হাতে অনেক অপদস্থ হতে হয়েছে, তিনি এখন গান্ধী পরিবার ও দলের জন্য অনেকটা পিতৃতুল্য ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন।
শেখ হাসিনা ও প্রিয়াঙ্কা যখন আলিঙ্গনে আবদ্ধ, তখন মনমোহন তাকিয়ে ছিলেন।
ছোটখাটো নেতারা বলেন যে, পেছন ফিরে তাকাতে হবে। কেন? ২০১৯ সালের বিপর্যস্ত দশা থেকে দলকে উদ্ধার করতে এই নেতারা কী ভূমিকা পালন করেছেন? এখন কেন তাদেরকে মুখ্যমন্ত্রী বা দলের রাজ্য ইউনিটের বড় পদে বসানো হবে? কেন তারা মনমোহন সিংয়ের মতো দলের প্রতি আনুগত্যশীল থাকতে পারে না?
২০১৪ আর ২০১৯ হয়েছে একজন ব্যক্তি অর্থাৎ নরেন্দ্র মোদির জাদুতে। কিন্তু মোদির জাদু কতদিন থাকবে? ১৯৭১ সালের পর চার বছরের মধ্যেই ইন্দিরা গান্ধীর জনপ্রিয়তা মিইয়ে গিয়েছিল। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীরও বয়স বাড়ছে। দৃশ্যপট থেকে মোদি বিদায় নিলে, সংঘ পরিবারে আর কেউ কি আছেন যিনি তার স্থলাভিষিক্ত হবেন? তার পদে বসার দাবিদার আছেন অনেকেই। কিন্তু সত্য বলতে কি, এদের সকলেই মোদির ওপর নির্ভরশীল।
রাজনীতি হলো অপেক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করার আর্ট। অর্থনীতির অবস্থা খুবই শোচনীয়। মনমোহন সিং বা এমনকি পি. চিদাম্বরমের মতো অর্থনীতির জাদুকরও নেই এই সরকারের। (হ্যাঁ, চিদাম্বরম, আপনার জন্য হাততালি। এই কঠিন অবস্থাতেও নিজেকে ঠিক রাখুন। আমরা সকলেই জানি, দেশের জন্য আপনি কী করেছেন, বিশেষ করে ২৬/১১-এর পর।)
বিজেপি সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের ক্ষমতায়, একটা কথা বারবার আসতো যে, ভারত বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল বৃহৎ অর্থনীতি। এখন ওই কথা বলা হচ্ছে না। এখন ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির কথা বলা হচ্ছে। সত্যি বলতে কি, ইচ্ছা যদি ঘোড়া হতো, তাহলে সেই ঘোড়ায় ভিক্ষুকরা চড়তো।
অর্থনীতির জাদুকরী মন্ত্রী হলেই শেখা যায় না। আপনি অর্থমন্ত্রী হওয়ার আগেই এই অর্থনীতির জাদুকর হতে হবে। কিন্তু বড় ৪ মন্ত্রীর কেউই নিজেকে তেমনটা দাবি করতে পারবেন না। দ্বিতীয় সারির মন্ত্রীরাও না।
প্রধানমন্ত্রীর এখনো কাল্ট-এর মতো অনুসারী আছে। কিন্তু তিনি যদি সচেষ্ট না হন, তাহলে বৈশ্বিক অর্থনীতি যেভাবে শ্লথ হচ্ছে, সেই হিসাবে ভারতের অর্থনীতির শোচনীয় দশা তার দ্বিতীয় দফার প্রধানমন্ত্রীত্বের বারোটা বাজাতে পারে।
কংগ্রেসের জন্য সুসংবাদ হলো যে, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এখন স্থায়ীভাবে সক্রিয় রাজনীতিতে আছেন। মা হয়তো অবশেষে বুঝতে পারছেন যে, প্রিয়াঙ্কাকে লাইমলাইটে আনাটাই যৌক্তিক। হ্যাঁ, এক্ষেত্রে রবার্ট ভদ্র প্রিয়াঙ্কার জন্য অনেকটা বোঝার মতো। কিন্তু সেটা তার ব্যক্তিগত সমস্যা। তাকেই সেটা সমাধান করতে হবে।
এটি অচিন্তনীয় যে প্রিয়াঙ্কার মতো রাজনৈতিক ধীশক্তির অধিকারী একজন ‘চৌকিদারই চোর’ স্লোগানে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রচার চালাবেন। হ্যাঁ, তিনিও হয়তো এই প্রচারাভিযানেই অংশ নিয়েছেন। অনুগত বোন হিসেবে তিনি হয়তো স্রোতের সঙ্গে তাল মিলিয়েছেন। কিন্তু যখন মনমোহন সিং-এর মতো ব্যক্তিরা তাকে শেখ হাসিনার মতো বিশ্বনেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করাচ্ছেন, দলের শীর্ষ নেতারা হয়তো বুঝতে পারছেন যে, তাকেই এখন দলের নেতা হিসেবে দাঁড় করাতে হবে। দলের মধ্যে অনেকে দীর্ঘদিন ধরে যা চাচ্ছিলেন, তাই হচ্ছে এখন। দেরি হলেও অন্তত হচ্ছে।
২০২৪ সালে প্রধানমন্ত্রী ও প্রিয়াঙ্কার লড়াই দেখার তর যেন সইছে না। দুই ক্যারিশমেটিক নেতা একে অপরের বিরুদ্ধে লড়বেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তখন থাকবেন তার লিগ্যাসির একেবারে শেষ প্রান্তে। কিন্তু প্রিয়াঙ্কা সবে শুরু করবেন।
সুতরাং, হাল ছেড়ো না, কংগ্রেস। ভালো দিন আসবে। এই বইটি পড়ে দেখতে পারেন: ফিল্ড মার্শাল স্লিমের লেখা ‘ডিফিট ইনটু ভিকটরি (পরাজয় থেকে বিজয়)’।
(সুনিল শরনের এই নিবন্ধ টাইমস অব ইন্ডিয়া থেকে নেয়া হয়েছে।)
No comments