মিয়া-বাবুদের মেগাসিটি এবং চাষা-ভূষার গাঁয়ের রাস্তার গল্প by রাশেদ মেহেদী
রাস্তার
এক পাশের অর্ধেকটা জুড়ে গাঁয়ের বড় বড় মাথা মিয়া বাবুদের বাগান বাড়ির
প্রধান ফটক। আরেক পাশের অর্ধেকটা দখল করে রেখেছে বাবুদের দোকান-পাট, গুদাম
ঘর। আর রাস্তার মাঝখান দিয়ে মোড়লের পোষা মস্তানরা যখন ইচ্ছা তখন হাডুডু
খেলে, শখের বসে নিজেরা লাঠালাঠি করে, এ ওর কান কেটে নেয়, চোখে গুঁতো দেয়।
তারপরও এ রাস্তা দিয়েই গাঁয়ের চাষা-ভূষা থেকে শুরু করে ভদ্রলোকদের একসঙ্গে
চলতে হয়। সমস্যা হল ভদ্রলোকদের চলাচল নিয়ে। মাঝে মধ্যেই চাষা-ভূষাদের গায়ের
সঙ্গে লেগে যায়, চকচকে পালিশ করা জুতোতে চাষাদের খালি পায়ের ধুলো এসে পড়ে,
ঘামে ভেজা গায়ের গন্ধ এসে দামি পারফিউমের সৌরভ মলিন করে দেয়।
অতএব গাঁয়ের বাবুরা সিদ্ধান্ত নিলেন, গাঁয়ের চাষা-ভূষারা আর রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারবে না। তাদের চলতে হবে ক্ষেতের আল দিয়ে। ছেলে হোক, বুড়ো হোক, মর মর রোগী হোক চাষা-ভুষারা কীভাবে চলাচল করবে, মরবে না বাঁচবে, সেটা ভদ্রলোক মিয়া বাবুদের দেখার বিষয় নয়। তবে এই চাষা-ভূষাদের ঠিকঠাক মত বাড়তি খাজনা দিতে হবে, কোন ছাড় নয়!
ঢাকার রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দিকে তাকালে কোনো এক গাঁয়ের মিয়া-বাবুদের এই গল্পটার সঙ্গে বেশ মিল খুঁজে পাওয়া যাবে। এবার ঢাকার রাস্তা থেকেই উদাহরণ দেই। আপনি ঢাকায় বাস করলে বনানী-মহাখালীর প্রতিদিনের ভয়াবহ যানজটের অভিজ্ঞতার কথা নিশ্চয় জানেন। দেখুন নৌবাহিনী সদরদফতরের সামনে থেকে চেয়ারম্যান বাড়ি পর্যন্ত মাত্র এক থেকে দেড় কিলোমিটার সড়কের মধ্যে পাঁচটি ইন্টার ক্রসিং। প্রত্যেকটা ক্রসিং এ এলাকার অভিজাত মিয়া-বাবুদের গাড়ি চলাচলের প্রয়োজনে। এর চাপে পড়ে চাষা-ভূষা নিম্ন আয়ের মানুষ গাদগাদি সিটের বাসে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে আটকে ঘামতে থাকেন। এখানে অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়েছে যে, মিয়া-বাবুদের উপায় নাই। তাদের চকচক গাড়িও জ্যামে আটকে থাকে। তবে বাবুরা এসি গাড়িতে বসে ঠাণ্ডা হাওয়ায় দামি স্মার্টফোনে পরিচিত কারও সঙ্গে খোশ গল্প করে সময় কাটান বলে এই যানজটটা খুব একটা গায়ে লাগে না! আর এটা তাদের এলাকা, বাড়ির কাছে এসে একটু রাস্তায় বসে থাকলে সমস্যা কী? অথচ দেখুন, একটু দূরে যেখানে বেশিরভাগ চাষা-ভুষা মানুষ থাকেন সেই খিলক্ষেত এলাকার মানুষকে জরুরি প্রয়োজনে গাড়ি ব্যবহার করলে রাস্তার এ পাশ থেকে ওপাশে যেতে তিন কিলোমিটার দূরে বিমানবন্দরের কাছাকাছি এলাকা থেকে ইউটার্ন নিতে হয়। কুড়িল বিশ্বরোডের পর একেবারে কাওলা, এর মধ্যে কোনো ইউটার্ন নেওয়ার জায়গা নেই। এটাই হওয়া উচিত। কমপক্ষে দুই কিলোমটারের মধ্যে কোনো ইন্টার ক্রসিং থাকবে না। কিন্তু বনানী-গুলশানের বাসিন্দা বড় বাবুরা সেটা মানেন না। তারা নিজেদের বাড়ির দরজার সামনে পারলে একটা করে ইন্টার ক্রসিং বসিয়ে দেন! যেমন ধরুন বনানী ১১ নম্বর সড়কের শেষ মাথায় এক ইন্টার ক্রসিং এর পর মাত্র তিন-চার গজ দূরে আর একটা অপ্রয়োজনীয় ইন্টার ক্রসিং শুধুমাত্র পানি উন্নয়ন বোর্ডের কলোনিতে থাকা কয়েকজনের সুবিধার জন্য!
বনানী এলাকার আর একটা বাস্তবতা বিবর্জিত পদক্ষেপের কথা বলি। এখানে কাকলি ইন্টার ক্রসিংয়ের আগে প্রায় ৩০০ মিটার দূর থেকে রডের বেড়া দেওয়া হয়েছে ফুটপাত ঘিরে। সেখানে উত্তর সিটি করপোরেশনের সাইনবোর্ড 'এখানে বাস থামিবে না'। অথচ এই কাকলি মোড়ে ত্রিভুজ ইন্টারক্রসিংয়ে প্রতিটি ট্রাফিক সিগন্যালে যানবাহনগুলোকে কমপক্ষে ৯ মিনিট দাঁড়াতে হয়। এখন আপনিই বলুন, যেখানে একটি সিগন্যালে বাসকে কমপক্ষে ৯ মিনিট দাঁড়াতে হয় সেখানে 'বাস থামিবে না' নোটিশ কতটা হাস্যকর! আর এখানে দীর্ঘ ট্রাফিক সিগন্যালের কারণে যাত্রীদের ওঠা-নামা করতেই হয়। কিন্তু বাস থেকে নেমেই মোটা রডের বেড়া। ফুটপাতে ওঠার সুযোগ নেই। অতএব জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়। এরপর ক্রসিং পার হয়ে একটা বাস বে আছে বটে, কিন্তু সেটা অত্যন্ত স্বল্প পরিসরে। এখানে যদি সব বাস দাঁড়ায় তাহলে যে যানজট হবে তাতে কাকলি ইন্টার ক্রসিংয়ের প্রতিটি সিগন্যালের দৈর্ঘ্য কমপক্ষে আধঘণ্টার বেশি হবে। বিশ্বাস না হলে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে যে ট্রাফিক পুলিশরা রাস্তায় দায়িত্বপালন করছেন, তাদের জিজ্ঞেস করুন। এখানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ঘন ঘন বিদেশ ভ্রমণ করা মিয়া-বাবু কর্মকর্তারা চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়ে সাধারণ বাসযাত্রীদের ওঠা-নামা চরম ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছেন। দীর্ঘ বেড়ার ফাঁকে দু'একটা কাটা রেখে ফুটপাতে ওঠার জায়গা করে দিলেই কিন্তু ঝুঁকিটা কমে যায়, উত্তর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা সেটা বেঝেন না! কোনোদিন যখন বড় একট দুর্ঘটনা ঘটবে, নিরীহ মানুষের জীবন যাবে, তখন হয়ত মেয়র এসে বলবেন, এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি। সময়ত তারা ব্যবস্থা নেওয়ার সময় পান না! কিংবা তারা কি আদৌ কখনও এ এলাকায় সারা জীবনে এসেছেন– এ প্রশ্নটাও করা যায়।
এটাই ঢাকার সড়ক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে যুক্ত থাকা কর্তৃপক্ষগুলোর বাস্তবতা। তারা বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেন না। দেখুন ঢাকায় বর্তমানে প্রায় ১৭৬টি বাসের রুট। মাত্র তিনটি প্রধান সড়ক যে শহরে সেখানে ১৭৬টি রুট হয় কোন বাস্তবতায়? অথচ ঢাকার প্রশাসন এটা করেছে! এই ১৭৬টি রুট মূলত শেষ মাথায় বিভিন্ন অলি-গলিতে বিভক্ত করে করা হয়েছে। কিন্তু প্রধান সড়ক এবং রুট কিন্তু একটাই ব্যবহার করছে গাড়িগুলো। যেমন ধরুন মিরপুর ১০-১১-১২ নম্বর থেকে প্রায় ১০টি রুটে গাড়ি চলে উত্তরা-গাজীপুরের ভেতর। উত্তরায় গিয়ে কোনো গাড়ি দিয়াবাড়ি, কোনো গাড়ি আব্দুল্লাহপুর, কোনো গাড়ি স্লুইস গেট, কোনো গাড়ি টঙ্গী, কোনো গাড়ি গাজীপুর পর্যন্ত চলাচল করছে। এখন প্রত্যেকটি গাড়িকে কিন্তু যাত্রপথে জনবহুল এলাকা কুড়িল বিশ্বরোড, খিলক্ষেত এবং উত্তরার মূল এলাকা জসীমউদ্দিন, রাজলক্ষ্মী, আজমপুর, হাউজবিল্ডিং হয়ে যেতে হয়। সর্বশেষ গন্তব্যের চেয়ে মাঝ পথের এসব এলাকার যাত্রীই বেশি। ফলে বাসগুলোর রুটের সর্বশেষ গন্তব্য যাই হোক, তারা মাঝখানের জনবহুল এলকার জন্য যাত্রী বেশি পায় এবং যাত্রী নেওয়ার জন্য চালকরা পাগল প্রায় হয়ে প্রতিযোগিতা শুরু করে। এখন বাসে বাসে প্রতিযোগিতার জন্য দায়ী কে? সেই কর্তৃপক্ষ যারা ঢাকার ভেতরে বাসের রুট পারমিট দেয়। ঢাকার বাস সার্ভিসে মূল বিশৃঙ্খলার জন্য দায়, বাসে বাসে প্রতিযোগিতায় নিরীহ মানুষের মর্মান্তিকভাবে নিহত হওয়ার কিংবা পঙ্গু হওয়ার জন্য দায়ী এই কর্তৃপক্ষটিই।
ঢাকায় মিনিবাসগুলোর মডেলও হাস্যকর। এখানে ৩০ আসনের বাসে ৫০টির বেশী আসন গাদাগাদি করে বসানো আছে। আর বাসে মেয়েদের আসন চালকের পাশে ইঞ্জিন কভারের সামনে। এ অংশে আসন বসানো অবৈধ। অথচ এখানে ঝুঁকিপূর্ণ আসন বসিয়ে বছরের পর বছর ধরে নারীদের চলতে বাধ্য হতে হচ্ছে। এসব ফালতু মডেলের বাস ঢাকায় কেন চলবে? বিশ্বের বেশির ভাগ মেগাসিটিতে দুই ধরনের বাস চলে। ডাবল ডেকার এবং লম্বা বড় বাস যেখানে একসঙ্গে অনেক যাত্রী যেতে পারে। ঢাকার প্রধান তিনটি সড়কে ৯ থেকে ১০টি রুট করে প্রতি রুটে ৫০ থেকে ৬০টি এসি বাস এবং একশ' থেকে দেড়শ' ভালো মানের ডাবল ডেকার দিলেই যানজট সমস্যা এবং বাস সংকট ও বিশৃঙ্খলা– তিনটিই অনেকটা সহনীয় করা সম্ভব সহজ উপায়ে। ঢাকায় ভালো এবং আধুনিক মানের বাস সার্ভিস চালুর কোনো উদ্যোগ কখনও নেওয়া হয়েছে? নেওয়া হয়নি। বরং গত ১০ বছরে ঢাকায় এক সময়ের নিরাপদ, রোড স্টার, প্রিমিয়াস বাস, বিআরটিসির দোতলা ভলভো বাস সার্ভিস তুলে দিয়ে তার পরিবর্তে সেখানে পুরনো আমলের সেই নোংরা ফালতু মডেলের মিনিবাস চলাচলই অনুমোদন করা হয়েছে এবং হচ্ছে, কার স্বার্থে?
ঢাকাসহ সারাদেশের বাস সার্ভিস একটা মাফিয়া সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে সেটা সবাই জানেন। কারা মাফিয়া, তার সর্দারকে, তার পৃষ্ঠপোষককে সবাই খুব ভাল করে জানেন। গণপরিবহন খাত মূলত এই মাফিয়া সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গডফাদার-ক্যাডার ব্যবস্থায় পরিচালিত হচ্ছে। মালিক-শ্রমিক নির্ভর শিল্প ব্যবস্থা গণপরিবহন ব্যবস্থায় নেই। গণপরিবহন ব্যবস্থা মাফিয়া সিন্ডিকেট মুক্ত করতে কোনো ব্যবস্থা কি নেওয়া হয়েছে? ঢাকার কোনো বাসে এখন টিকেট দেওয়া হয় না। আগে দেওয়া হত। মাফিয়া সিন্ডিকেট টিকেটের বিরুদ্ধে। তারা টিকেট না দিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে গায়ের জোরে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। ঢাকায় বিকাশ পরিবহন-ভিআইপি পরিবহন নামে 'সিটিং সার্ভিস' নামধারী লোকাল বাস আছে, যার সর্বনিম্ন ভাড়া ৪০ টাকা। এদের কথা সবাই জানে। কিন্তু ঢাকার কোনো প্রশাসন কি এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পেরেছে? ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন মাঝে মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে হুঙ্কার ছাড়েন– ওমুখ তারিখ থেকে ঢাকায় কাউন্টার সার্ভিস, টিকেট সার্ভিস বাস চালু হবে। এ রকম প্রায় ডজনখানে তারিখ চলে গেছে, মেয়র সাহেব কিছুই করতে পারেননি। ভবিষ্যতেও পারবেন– সে আস্থা আমজনতার নেই।
আসুন প্রগতি সরণীর উদাহরণ দেখে রিকশা তুলে দেওয়ার প্রসঙ্গটি বিবেচনা করে দেখি। প্রগতি সরণীর সড়ক কিন্তু অনেক বড়। কিন্তু ফুটপাত থেকে শুরু করে রাস্তার দু'পাশে নানা কায়দায় দখল। দোকানের মালামাল, গাড়ির গ্যারেজ। এই সড়কে চলাচল করা বাসগুলো চলে বেওয়ারিশ ষাঁড়ের মত। রাস্তার মাঝখানে তিন-চারটা বাস একটা আরেকটার আগে গলা বাড়িয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করাচ্ছে। আর পেছনে বিশাল যানজট লেগে যাচ্ছে, ট্রাফিক পুলিশ দাঁড়িয়ে দেখছে অনেকটা অসহায়ের মত। আপনি যমুনা ফিউচার পার্কের আগে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার উল্টোদিকে কয়েক মিনিট দাঁড়ালেই বুঝবেন পরিবহন ক্যাডারদের কী ভয়াবহ রাস্তা দখলের দৌরাত্ম্য। রাস্তা দখল করে যাত্রী ওঠা-নামা করার কারণেই এখানে নদ্দা ছাড়িয়ে যানজট বিস্তৃত হয়ে কখনও কখনও নতুন বাজারে গিয়ে ঠেকে। এই যানজটের জন্য রিকশা নয়, বিশৃঙ্খল বাস চলাচল আর ত্রুটিপূর্ণ ট্রাফিক চলাচল ব্যবস্থা দায়ী।
দেখুন কর্তৃপক্ষ, প্রশাসন কিংবা সরকার ভালো করেই জানে রাস্তায় দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন, সবাই তো নিজেদেরই ভাই-ব্রাদার। বেপরোয়া ও বিশৃঙ্খল বাস চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না, কারণ মাফিয়া সিন্ডিকেট কখন কোন চাল দিয়ে বেকায়দায় ফেলে দেয়! অতএব রিকশাওয়ালাদের তুলে দেওয়াটাই সবচেয়ে সহজ। এরা তো আর নিজেদের ভাই-ব্রাদারও না, মাফিয়াও না, কয়েকদিন চেঁচামেচি করবে। তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে।
গুলশান-বনানী হলেও কথা ছিল, গ্রগতি সরণীর মত গড় পড়তা মানুষের এলাকার রাস্তায় ভদ্রলোকের গাড়ি দীর্ঘ সময় জ্যামে আটকে থাকবে, এটা কি হয় নাকি? পাশ দিয়ে রিকশা গেলে গাড়ির ভেতরে সুগন্ধময় ঠাণ্ডার ভেতরেও কেমন পচা ঘামের দুর্গন্ধ পাওয়া যায়! এটা মেনে নেওয়া যায় না। আর রিকশাওয়ালাদের তুলে দিলে সমস্যা নেই। এতে তো ভদ্রলোকদের সমস্যা হবে না। তাদের গাড়ি আছে। মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত ক্যাডারদের বাস সার্ভিসে চলতে পারলে চলুক, না হলে যেমনে চলে চলুক।
টেলিভিশনের টক শোকে দেখলাম কয়েকজন তারকা বক্তা বলছেন, এর আগে অনেক জায়গায় রিকশা তুলে দেওয়া হয়েছে, তাই বলে কী নিম্ন আয়ের মানুষের ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ থেকেছে? এই তারকা বক্তা জানেন না, ঢাকার ভয়াবহ বিশৃঙ্খল বাস সার্ভিসে উঠলে একজন সুস্থ মানুষ অসুস্থ হয়ে যান, তারপরও তারা চলছেন। কিন্তু এই চলাটাই চলা নয়। মেগাসটিতে রিকশা চলে না ঠিক আছে, আগে ঢাকাকে সত্যিকারের মেগা সিটি বানান, তারপর অন্যসব বুলি আওড়ান। কয়েকটি ফ্লাইওভার বানালেই একটি বিশৃঙ্খল, জরাজীর্ণ শহর মেগাসিটি হয়ে যায় না। চোখের সামনে মগবাজার ফ্লাইওভারের চেহারা দেখেও কি 'ফ্লাইওভার উন্নয়নে'র বাস্তবতাটা বুঝতে পারছেন না?
অতএব গাঁয়ের বাবুরা সিদ্ধান্ত নিলেন, গাঁয়ের চাষা-ভূষারা আর রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারবে না। তাদের চলতে হবে ক্ষেতের আল দিয়ে। ছেলে হোক, বুড়ো হোক, মর মর রোগী হোক চাষা-ভুষারা কীভাবে চলাচল করবে, মরবে না বাঁচবে, সেটা ভদ্রলোক মিয়া বাবুদের দেখার বিষয় নয়। তবে এই চাষা-ভূষাদের ঠিকঠাক মত বাড়তি খাজনা দিতে হবে, কোন ছাড় নয়!
ঢাকার রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দিকে তাকালে কোনো এক গাঁয়ের মিয়া-বাবুদের এই গল্পটার সঙ্গে বেশ মিল খুঁজে পাওয়া যাবে। এবার ঢাকার রাস্তা থেকেই উদাহরণ দেই। আপনি ঢাকায় বাস করলে বনানী-মহাখালীর প্রতিদিনের ভয়াবহ যানজটের অভিজ্ঞতার কথা নিশ্চয় জানেন। দেখুন নৌবাহিনী সদরদফতরের সামনে থেকে চেয়ারম্যান বাড়ি পর্যন্ত মাত্র এক থেকে দেড় কিলোমিটার সড়কের মধ্যে পাঁচটি ইন্টার ক্রসিং। প্রত্যেকটা ক্রসিং এ এলাকার অভিজাত মিয়া-বাবুদের গাড়ি চলাচলের প্রয়োজনে। এর চাপে পড়ে চাষা-ভূষা নিম্ন আয়ের মানুষ গাদগাদি সিটের বাসে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে আটকে ঘামতে থাকেন। এখানে অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়েছে যে, মিয়া-বাবুদের উপায় নাই। তাদের চকচক গাড়িও জ্যামে আটকে থাকে। তবে বাবুরা এসি গাড়িতে বসে ঠাণ্ডা হাওয়ায় দামি স্মার্টফোনে পরিচিত কারও সঙ্গে খোশ গল্প করে সময় কাটান বলে এই যানজটটা খুব একটা গায়ে লাগে না! আর এটা তাদের এলাকা, বাড়ির কাছে এসে একটু রাস্তায় বসে থাকলে সমস্যা কী? অথচ দেখুন, একটু দূরে যেখানে বেশিরভাগ চাষা-ভুষা মানুষ থাকেন সেই খিলক্ষেত এলাকার মানুষকে জরুরি প্রয়োজনে গাড়ি ব্যবহার করলে রাস্তার এ পাশ থেকে ওপাশে যেতে তিন কিলোমিটার দূরে বিমানবন্দরের কাছাকাছি এলাকা থেকে ইউটার্ন নিতে হয়। কুড়িল বিশ্বরোডের পর একেবারে কাওলা, এর মধ্যে কোনো ইউটার্ন নেওয়ার জায়গা নেই। এটাই হওয়া উচিত। কমপক্ষে দুই কিলোমটারের মধ্যে কোনো ইন্টার ক্রসিং থাকবে না। কিন্তু বনানী-গুলশানের বাসিন্দা বড় বাবুরা সেটা মানেন না। তারা নিজেদের বাড়ির দরজার সামনে পারলে একটা করে ইন্টার ক্রসিং বসিয়ে দেন! যেমন ধরুন বনানী ১১ নম্বর সড়কের শেষ মাথায় এক ইন্টার ক্রসিং এর পর মাত্র তিন-চার গজ দূরে আর একটা অপ্রয়োজনীয় ইন্টার ক্রসিং শুধুমাত্র পানি উন্নয়ন বোর্ডের কলোনিতে থাকা কয়েকজনের সুবিধার জন্য!
বনানী এলাকার আর একটা বাস্তবতা বিবর্জিত পদক্ষেপের কথা বলি। এখানে কাকলি ইন্টার ক্রসিংয়ের আগে প্রায় ৩০০ মিটার দূর থেকে রডের বেড়া দেওয়া হয়েছে ফুটপাত ঘিরে। সেখানে উত্তর সিটি করপোরেশনের সাইনবোর্ড 'এখানে বাস থামিবে না'। অথচ এই কাকলি মোড়ে ত্রিভুজ ইন্টারক্রসিংয়ে প্রতিটি ট্রাফিক সিগন্যালে যানবাহনগুলোকে কমপক্ষে ৯ মিনিট দাঁড়াতে হয়। এখন আপনিই বলুন, যেখানে একটি সিগন্যালে বাসকে কমপক্ষে ৯ মিনিট দাঁড়াতে হয় সেখানে 'বাস থামিবে না' নোটিশ কতটা হাস্যকর! আর এখানে দীর্ঘ ট্রাফিক সিগন্যালের কারণে যাত্রীদের ওঠা-নামা করতেই হয়। কিন্তু বাস থেকে নেমেই মোটা রডের বেড়া। ফুটপাতে ওঠার সুযোগ নেই। অতএব জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়। এরপর ক্রসিং পার হয়ে একটা বাস বে আছে বটে, কিন্তু সেটা অত্যন্ত স্বল্প পরিসরে। এখানে যদি সব বাস দাঁড়ায় তাহলে যে যানজট হবে তাতে কাকলি ইন্টার ক্রসিংয়ের প্রতিটি সিগন্যালের দৈর্ঘ্য কমপক্ষে আধঘণ্টার বেশি হবে। বিশ্বাস না হলে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে যে ট্রাফিক পুলিশরা রাস্তায় দায়িত্বপালন করছেন, তাদের জিজ্ঞেস করুন। এখানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ঘন ঘন বিদেশ ভ্রমণ করা মিয়া-বাবু কর্মকর্তারা চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়ে সাধারণ বাসযাত্রীদের ওঠা-নামা চরম ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছেন। দীর্ঘ বেড়ার ফাঁকে দু'একটা কাটা রেখে ফুটপাতে ওঠার জায়গা করে দিলেই কিন্তু ঝুঁকিটা কমে যায়, উত্তর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা সেটা বেঝেন না! কোনোদিন যখন বড় একট দুর্ঘটনা ঘটবে, নিরীহ মানুষের জীবন যাবে, তখন হয়ত মেয়র এসে বলবেন, এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি। সময়ত তারা ব্যবস্থা নেওয়ার সময় পান না! কিংবা তারা কি আদৌ কখনও এ এলাকায় সারা জীবনে এসেছেন– এ প্রশ্নটাও করা যায়।
এটাই ঢাকার সড়ক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে যুক্ত থাকা কর্তৃপক্ষগুলোর বাস্তবতা। তারা বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেন না। দেখুন ঢাকায় বর্তমানে প্রায় ১৭৬টি বাসের রুট। মাত্র তিনটি প্রধান সড়ক যে শহরে সেখানে ১৭৬টি রুট হয় কোন বাস্তবতায়? অথচ ঢাকার প্রশাসন এটা করেছে! এই ১৭৬টি রুট মূলত শেষ মাথায় বিভিন্ন অলি-গলিতে বিভক্ত করে করা হয়েছে। কিন্তু প্রধান সড়ক এবং রুট কিন্তু একটাই ব্যবহার করছে গাড়িগুলো। যেমন ধরুন মিরপুর ১০-১১-১২ নম্বর থেকে প্রায় ১০টি রুটে গাড়ি চলে উত্তরা-গাজীপুরের ভেতর। উত্তরায় গিয়ে কোনো গাড়ি দিয়াবাড়ি, কোনো গাড়ি আব্দুল্লাহপুর, কোনো গাড়ি স্লুইস গেট, কোনো গাড়ি টঙ্গী, কোনো গাড়ি গাজীপুর পর্যন্ত চলাচল করছে। এখন প্রত্যেকটি গাড়িকে কিন্তু যাত্রপথে জনবহুল এলাকা কুড়িল বিশ্বরোড, খিলক্ষেত এবং উত্তরার মূল এলাকা জসীমউদ্দিন, রাজলক্ষ্মী, আজমপুর, হাউজবিল্ডিং হয়ে যেতে হয়। সর্বশেষ গন্তব্যের চেয়ে মাঝ পথের এসব এলাকার যাত্রীই বেশি। ফলে বাসগুলোর রুটের সর্বশেষ গন্তব্য যাই হোক, তারা মাঝখানের জনবহুল এলকার জন্য যাত্রী বেশি পায় এবং যাত্রী নেওয়ার জন্য চালকরা পাগল প্রায় হয়ে প্রতিযোগিতা শুরু করে। এখন বাসে বাসে প্রতিযোগিতার জন্য দায়ী কে? সেই কর্তৃপক্ষ যারা ঢাকার ভেতরে বাসের রুট পারমিট দেয়। ঢাকার বাস সার্ভিসে মূল বিশৃঙ্খলার জন্য দায়, বাসে বাসে প্রতিযোগিতায় নিরীহ মানুষের মর্মান্তিকভাবে নিহত হওয়ার কিংবা পঙ্গু হওয়ার জন্য দায়ী এই কর্তৃপক্ষটিই।
ঢাকায় মিনিবাসগুলোর মডেলও হাস্যকর। এখানে ৩০ আসনের বাসে ৫০টির বেশী আসন গাদাগাদি করে বসানো আছে। আর বাসে মেয়েদের আসন চালকের পাশে ইঞ্জিন কভারের সামনে। এ অংশে আসন বসানো অবৈধ। অথচ এখানে ঝুঁকিপূর্ণ আসন বসিয়ে বছরের পর বছর ধরে নারীদের চলতে বাধ্য হতে হচ্ছে। এসব ফালতু মডেলের বাস ঢাকায় কেন চলবে? বিশ্বের বেশির ভাগ মেগাসিটিতে দুই ধরনের বাস চলে। ডাবল ডেকার এবং লম্বা বড় বাস যেখানে একসঙ্গে অনেক যাত্রী যেতে পারে। ঢাকার প্রধান তিনটি সড়কে ৯ থেকে ১০টি রুট করে প্রতি রুটে ৫০ থেকে ৬০টি এসি বাস এবং একশ' থেকে দেড়শ' ভালো মানের ডাবল ডেকার দিলেই যানজট সমস্যা এবং বাস সংকট ও বিশৃঙ্খলা– তিনটিই অনেকটা সহনীয় করা সম্ভব সহজ উপায়ে। ঢাকায় ভালো এবং আধুনিক মানের বাস সার্ভিস চালুর কোনো উদ্যোগ কখনও নেওয়া হয়েছে? নেওয়া হয়নি। বরং গত ১০ বছরে ঢাকায় এক সময়ের নিরাপদ, রোড স্টার, প্রিমিয়াস বাস, বিআরটিসির দোতলা ভলভো বাস সার্ভিস তুলে দিয়ে তার পরিবর্তে সেখানে পুরনো আমলের সেই নোংরা ফালতু মডেলের মিনিবাস চলাচলই অনুমোদন করা হয়েছে এবং হচ্ছে, কার স্বার্থে?
ঢাকাসহ সারাদেশের বাস সার্ভিস একটা মাফিয়া সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে সেটা সবাই জানেন। কারা মাফিয়া, তার সর্দারকে, তার পৃষ্ঠপোষককে সবাই খুব ভাল করে জানেন। গণপরিবহন খাত মূলত এই মাফিয়া সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গডফাদার-ক্যাডার ব্যবস্থায় পরিচালিত হচ্ছে। মালিক-শ্রমিক নির্ভর শিল্প ব্যবস্থা গণপরিবহন ব্যবস্থায় নেই। গণপরিবহন ব্যবস্থা মাফিয়া সিন্ডিকেট মুক্ত করতে কোনো ব্যবস্থা কি নেওয়া হয়েছে? ঢাকার কোনো বাসে এখন টিকেট দেওয়া হয় না। আগে দেওয়া হত। মাফিয়া সিন্ডিকেট টিকেটের বিরুদ্ধে। তারা টিকেট না দিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে গায়ের জোরে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। ঢাকায় বিকাশ পরিবহন-ভিআইপি পরিবহন নামে 'সিটিং সার্ভিস' নামধারী লোকাল বাস আছে, যার সর্বনিম্ন ভাড়া ৪০ টাকা। এদের কথা সবাই জানে। কিন্তু ঢাকার কোনো প্রশাসন কি এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পেরেছে? ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন মাঝে মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে হুঙ্কার ছাড়েন– ওমুখ তারিখ থেকে ঢাকায় কাউন্টার সার্ভিস, টিকেট সার্ভিস বাস চালু হবে। এ রকম প্রায় ডজনখানে তারিখ চলে গেছে, মেয়র সাহেব কিছুই করতে পারেননি। ভবিষ্যতেও পারবেন– সে আস্থা আমজনতার নেই।
আসুন প্রগতি সরণীর উদাহরণ দেখে রিকশা তুলে দেওয়ার প্রসঙ্গটি বিবেচনা করে দেখি। প্রগতি সরণীর সড়ক কিন্তু অনেক বড়। কিন্তু ফুটপাত থেকে শুরু করে রাস্তার দু'পাশে নানা কায়দায় দখল। দোকানের মালামাল, গাড়ির গ্যারেজ। এই সড়কে চলাচল করা বাসগুলো চলে বেওয়ারিশ ষাঁড়ের মত। রাস্তার মাঝখানে তিন-চারটা বাস একটা আরেকটার আগে গলা বাড়িয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করাচ্ছে। আর পেছনে বিশাল যানজট লেগে যাচ্ছে, ট্রাফিক পুলিশ দাঁড়িয়ে দেখছে অনেকটা অসহায়ের মত। আপনি যমুনা ফিউচার পার্কের আগে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার উল্টোদিকে কয়েক মিনিট দাঁড়ালেই বুঝবেন পরিবহন ক্যাডারদের কী ভয়াবহ রাস্তা দখলের দৌরাত্ম্য। রাস্তা দখল করে যাত্রী ওঠা-নামা করার কারণেই এখানে নদ্দা ছাড়িয়ে যানজট বিস্তৃত হয়ে কখনও কখনও নতুন বাজারে গিয়ে ঠেকে। এই যানজটের জন্য রিকশা নয়, বিশৃঙ্খল বাস চলাচল আর ত্রুটিপূর্ণ ট্রাফিক চলাচল ব্যবস্থা দায়ী।
দেখুন কর্তৃপক্ষ, প্রশাসন কিংবা সরকার ভালো করেই জানে রাস্তায় দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন, সবাই তো নিজেদেরই ভাই-ব্রাদার। বেপরোয়া ও বিশৃঙ্খল বাস চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না, কারণ মাফিয়া সিন্ডিকেট কখন কোন চাল দিয়ে বেকায়দায় ফেলে দেয়! অতএব রিকশাওয়ালাদের তুলে দেওয়াটাই সবচেয়ে সহজ। এরা তো আর নিজেদের ভাই-ব্রাদারও না, মাফিয়াও না, কয়েকদিন চেঁচামেচি করবে। তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে।
গুলশান-বনানী হলেও কথা ছিল, গ্রগতি সরণীর মত গড় পড়তা মানুষের এলাকার রাস্তায় ভদ্রলোকের গাড়ি দীর্ঘ সময় জ্যামে আটকে থাকবে, এটা কি হয় নাকি? পাশ দিয়ে রিকশা গেলে গাড়ির ভেতরে সুগন্ধময় ঠাণ্ডার ভেতরেও কেমন পচা ঘামের দুর্গন্ধ পাওয়া যায়! এটা মেনে নেওয়া যায় না। আর রিকশাওয়ালাদের তুলে দিলে সমস্যা নেই। এতে তো ভদ্রলোকদের সমস্যা হবে না। তাদের গাড়ি আছে। মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত ক্যাডারদের বাস সার্ভিসে চলতে পারলে চলুক, না হলে যেমনে চলে চলুক।
টেলিভিশনের টক শোকে দেখলাম কয়েকজন তারকা বক্তা বলছেন, এর আগে অনেক জায়গায় রিকশা তুলে দেওয়া হয়েছে, তাই বলে কী নিম্ন আয়ের মানুষের ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ থেকেছে? এই তারকা বক্তা জানেন না, ঢাকার ভয়াবহ বিশৃঙ্খল বাস সার্ভিসে উঠলে একজন সুস্থ মানুষ অসুস্থ হয়ে যান, তারপরও তারা চলছেন। কিন্তু এই চলাটাই চলা নয়। মেগাসটিতে রিকশা চলে না ঠিক আছে, আগে ঢাকাকে সত্যিকারের মেগা সিটি বানান, তারপর অন্যসব বুলি আওড়ান। কয়েকটি ফ্লাইওভার বানালেই একটি বিশৃঙ্খল, জরাজীর্ণ শহর মেগাসিটি হয়ে যায় না। চোখের সামনে মগবাজার ফ্লাইওভারের চেহারা দেখেও কি 'ফ্লাইওভার উন্নয়নে'র বাস্তবতাটা বুঝতে পারছেন না?
No comments