ঢাকায় ঘুরে বেড়াতো ভয়ঙ্কর এই চক্র by জিয়া চৌধুরী
সকাল
থেকে বিকাল পর্যন্ত ঘুম, অতঃপর শুরু কাজের তোড়জোড়। সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত
এই সময়ে নিরীহ মানুষকে জোর করে গাড়িতে তুলে ডাকাতি ও ছিনতাই করতো ১০ থেকে
১২ জনের একটি চক্র। টাকা-পয়সা কিংবা দামি মুঠোফোন, জিনিসপত্র নিয়েও ক্ষান্ত
হতো না ডাকাত দলের সদস্যরা। ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তিদের বিদায়
বেলায় নিজেদের কায়দায় চুরি বা চাকু দিয়ে আঘাত করে বিদায় সম্ভাষণ জানাতো।
কখনো কখনো ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তির সঙ্গে কোন নারী সদস্য থাকলে তাকেও যৌন
হয়রানি করতো চক্রের সদস্যরা। রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ, বছিলা ও ঢাকা
উদ্যান এলাকা ছিল এই ডাকাত চক্রের নিয়ন্ত্রণে। তবে ঢাকার বাইরেও চক্রটি
কয়েকটি জায়গায় ডাকাতি করেছে। গত ২৫ মে শনিবার রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা
পুলিশের (ডিবি) সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম
প্রিভেনশন টিমের অভিযানে ডাকাত দলের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা
হলো, মো. নাসির সরদার(২২), মো. কামাল মাদবর(২৩), মো. শহীদ বেপারী(৩৫), মো.
মনিরুল হাসান(১৮) ও মো. মাহাবুব মিয়া(৩০)। ডাকাত দলের আরো অন্তত সাত সদস্য
ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে। গ্রেপ্তার পাঁচ জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩৯৯ ও
৪০২ ধারায় ডাকাতির প্রস্তুতির অভিযোগে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা হয়েছে।
গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ডাকাত দলটি সংঘবদ্ধভাবে অনেক দিন ধরে
মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ ও ঢাকা উদ্যানের প্রধান সড়কের সামনের এলাকায় ডাকাতি ও
ছিনতাই করতো। গ্রেপ্তার হওয়া ৫ জনের মধ্যে বয়সে জ্যেষ্ঠ মাহাবুব মিয়া
ডাকাত দলের যানবাহন বিভাগের দায়িত্ব সামলাতেন। প্রতিদিন বিকালে গাড়ি ঠিক
করে দলের বাকি সদস্যদের ফোন করে ঘুম ভাঙাতেন তিনি। পরে প্রত্যেককে গাড়িতে
তুলে বেড়িবাঁধের আশেপাশের এলাকায় চলে যেতেন। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ডাকাত
দলটির বেশিরভাগ সদস্য বয়সে তরুণ ও মাদকাসক্ত। মাদকের টাকা জোগাতে এরা
ডাকাতির মতো অপরাধমূলক কাজে যোগ দেয়। তবে, রাতে ডাকাতি করার কারণে দলের
সবাই সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ঘুমাতো। বিকালের দিকে মাহাবুব গাড়ি ঠিক করে
তাদের নিয়ে ঢাকা উদ্যানের প্রধান সড়কের দিকে চলে যেতো। আলো নামলেই রিকশা
আরোহী থেকে শুরু করে পথচারী ও গাড়ির আরোহীদেরও টার্গেট করতো ডাকাতরা।
ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের পর কৌশলে চাপাতি ও চাকু দিয়ে তাদের আঘাত করে নিরাপদ
দুরত্বে দিয়ে আসতো। ভোলা থেকে সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা এক তরুণ সম্প্রতি
তাদের হাতে ডাকাতির শিকার হয়। আরো একজন বেসরকারি চাকরিজীবী তার স্ত্রীকে
নিয়ে ঢাকা উদ্যানের সড়কে যাবার সময় ডাকাত দলের হাতে পড়েন। নাম প্রকাশে
অনিচ্ছুক এই চাকরিজীবী জানান, তার স্ত্রীকেও শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে
ডাকাতরা। ডিবি’র সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের সিনিয়র সহকারী পুলিশ
কমিশনার মো. নাজমুল হক বলেন, মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করার সময়
রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে ডাকাত দলের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা
হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতির উদ্দেশ্যে সংঘবদ্ধ হয়ে প্রস্তুতি
নিচ্ছিল বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাদের কাছ থেকে দুইটি স্টিলের চাপাতি এবং ৩
টি স্টিলের চাকু উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা ঢাকা
মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ডাকাতি করে বলে স্বীকার করেছে। গ্রেপ্তার ৫
জনের বিরুদ্ধে এর আগেও বিভিন্ন থানায় ডাকাতিসহ ছিনতাই ও মাদক মামলা হয়েছে।
No comments