সরজমিন মিরপুর বিআরটিএ কার্যালয়: এখনো দালালদের দৌরাত্ম্য by শাহনেওয়াজ বাবলু
বাংলাদেশ
রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) মিরপুর কার্যালয়। পরিবহন সংক্রান্ত এ
অফিসটি যেন দালালের রাজ্য। বিআরটিএর এ আঞ্চলিক কার্যালয়ের সব ধরনের কাজ
নানা কৌশলে দালালরাই নিয়ন্ত্রণ করে। দালাল ছাড়া কাজ করতে ভোগান্তি পোহাতে
হয় পদে পদে। গাড়ির লাইসেন্স, ড্রাইভিং লাইসেন্স, মালিকানা হস্তান্তর,
ফিটনেস সার্টিফিকেটসহ সকল কাগজপত্র ঠিক করতে সরকারি ফি জমা দেয়ার আগে
দালালের কমিশন পরিশোধ করতে হয়। আর কমিশনের একটা অংশ যায় বিআরটিএ
কর্মকর্তাদের পকেটে। এছাড়া কাগজপত্র ঠিক করতে গিয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে
দালাল, কর্মচারী-কর্মকর্তাদের কাছে নাজেহাল হতে হয় সাধারণ মানুষকে।
সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লাইসেন্সের জন্য ফিল্ড টেস্ট দিতে
গেলে ৩০ সেকেন্ড গাড়ি চালানো সুযোগ দেয়া হয়। এ জন্য প্রত্যেককে গুনতে হয়
২০০ টাকা করে। যদিও ফিল্ড টেস্টে কোনো টাকা নেয়ার তালিকায় নেই। প্রতিদিন এ
কার্যালয়ে প্রায় ১ হাজার গ্রাহক ফিল্ট টেস্টে অংশ নেন।
গত রোববার মিরপুর বিআরটিএ কার্যালয়ে ঘুরে দেখা যায়, নতুন কেউ কাগজ করাতে গেলেই তাকে ঘিরে ধরছে একটি গ্রুপ। অল্পসময়ে কাজ সম্পূর্ণ করে দেয়ার কথা বলে আদায় করে নিচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। কার্যালয়ের ভিতরে বিভিন্ন কক্ষের আশপাশে, ব্যাংকের সামনে, গাছতলায় সর্বত্র দালালরা তৎপর। মূল ফটকের পাশে স্ট্যাম্প, ফটোকপির দোকানগুলো দালাল চক্রের মূল আস্তানা। ব্যাংকে ফি জমা দেয়ার ক্ষেত্রেও দালালদের অগ্রাধিকার। অথচ সেখানে সাধারণ সেবাগ্রহীতারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছে। প্রত্যেক রুমের সামনেই নিরাপত্তা কর্মীরা থাকে। প্রয়োজনেও সেখানে কেউ ঢুকতে পারে না। কিন্তু দালালরা সহজেই সেখান ঢুকে কাজ করিয়ে নিচ্ছে।
আল আমিন হোসেন নামের একজন বলেন, ফিল্ড পরীক্ষা দিতে গেলে আরো বড় ধরনের ভোগান্তির শিকার হতে হয়। যারা আগ থেকে যোগাযোগ করা থাকে তারাই আগে টেস্টে অংশ নিতে পারে। গ্রাহকদের ফিল্ড পরীক্ষায় ৩০ সেকেন্ড গাড়ি চালানোর জন্য প্রত্যেককে ২০০ টাকা করে দিতে হয়। আমি তাদের কাছে জানতে চাইলাম, এখানে টাকা দেয়ার কথা কোথাও তো উল্লেখ নেই। তখন তারা বলে এটা নাকি ‘ফিক্সড টাকা’।
কাজল নামে এক ব্যক্তি জানান, তিনি দালালকে দিয়েই সব কাজ করাচ্ছেন। তিনি বলেন, ওখানে কেউই খুশি নয়। টাকাটাই সবার ধান্ধা। দালালদের সঙ্গে কর্মকর্তাদের যোগসাজশ থাকে। দালালরা কর্মকর্তাদের নিয়মিত টাকা দিয়ে একটি সম্পর্ক করে রাখে, যাতে কাজ দ্রুত হয়ে যায়। অনেক কর্মকর্তা আছেন যারা সাধারণ গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নেন না। আর কাজও করে দেয় না। নানা অজুহাতে টালবাহানা করেন। কিন্তু দালালের কাছে দিলে ঠিকই কাজ করে দেন। তখন আর বুঝতে বাকি থাকে না, ওই কর্মকর্তা টাকার জন্যই এসব করেছেন। কাওসার নামের একজন বলেন, আমি গেট দিয়ে প্রবেশের সঙ্গেই প্রস্তাব দেয়া হয়, বিআরটিএতে যে খরচ হয়, তার চেয়ে দুই-তিন হাজার টাকা বেশি দিলেই কাজ হয়ে যাবে। এ জন্য আমাকে মাত্র আধা ঘণ্টা বসতে হবে। ১ হাজার ৩০০ সিসির গাড়ির কাগজের জন্য বিআরটিএকে দিতে হয় ১৮ হাজার টাকা। এক হাজার ৫০০ সিসির গাড়ির জন্য দিতে হয় ২৩ হাজার টাকা। এর চেয়ে দুই-তিন হাজার টাকা বেশি দিলেই দালালরা আধা ঘণ্টার মধ্যে কাগজ এনে দেয়। সেবা নিতে আসা গুলশান শাহজাদপুর এলাকার আহসান আলী মোক্তার, মহাখালী দক্ষিণপাড়ার রুহুল আমীন, মুরাদ আহমেদ, তেজগাঁও নাখালপাড়া রেলগেটের ইউনুস আহমেদসহ কয়েকজন অভিযোগ করেন, সাধারণ প্রক্রিয়ায় সেবা পেতে অযথা হয়রানি করা হয়। অথচ দালালদের দিয়ে দ্রুত কাজ হয়ে যাচ্ছে। তারা জানান, কর্মকান্ডে দক্ষ মাস্টার রোলের অস্থায়ী কর্মীদের হঠাৎ করেই সরিয়ে দিয়ে অদক্ষ কর্মীরা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে নানা জটিলতা ও সময়ক্ষেপণ করছে।
কার্যালয়টির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরাও হাত গুটিয়ে বসে নেই। বিভিন্নভাবে তারাও কাজ করেন। প্রধান গেটের বাম পাশেই দেয়া হয় তথ্য সেবা ও লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স। কিন্তু ২০০ টাকা না দিলে তা পেতে অনেক রকমের হয়রানি পোহাতে হয়। তার পাশেই ডিজিটাল নম্বর-প্লেট প্রদান শাখা। সেখানেও ৫০০ টাকা করে দিতে হয়। দালালদের ভাষায় এটা ‘ফিক্সড টাকা’। এ টাকা না দিলে নম্বর-প্লেট যে কতদিনে মিলবে তা জানা নেই। এক নম্বর ভবনের নিচে লোকজনের ভিড়। সেখানে দুই-আড়াই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও ছবি তোলার সিরিয়াল মেলে না। তবে দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের হাতে ২০০ টাকা দিলেই ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যেই ছবি তোলা সম্পন্ন হয়ে যায়।
এ বিষয়ে জানতে বিআরটিএ’র উপ-পরিচালক (প্রকৌশল) মো. মাসুদ আলম বলেন, দালাল প্রতিরোধে দফায় দফায় অভিযান চালানো হচ্ছে। এই কার্যালয় এখন সেবা গ্রহীতাদের আস্থার স্থল হয়ে উঠেছে। সেবা গ্রহীতারা কোনোরকম ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়া নিজেরাই বিভিন্ন শাখায় প্রয়োজনীয় কাজ করছেন এবং হাসিমুখে ফিরে যাচ্ছেন। মিরপুর কার্যালয়ে ঘুষ, হয়রানি, দালালদের উৎপাতের অভিযোগ সত্য নয় বলেও দাবি করেন তিনি।
গত রোববার মিরপুর বিআরটিএ কার্যালয়ে ঘুরে দেখা যায়, নতুন কেউ কাগজ করাতে গেলেই তাকে ঘিরে ধরছে একটি গ্রুপ। অল্পসময়ে কাজ সম্পূর্ণ করে দেয়ার কথা বলে আদায় করে নিচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। কার্যালয়ের ভিতরে বিভিন্ন কক্ষের আশপাশে, ব্যাংকের সামনে, গাছতলায় সর্বত্র দালালরা তৎপর। মূল ফটকের পাশে স্ট্যাম্প, ফটোকপির দোকানগুলো দালাল চক্রের মূল আস্তানা। ব্যাংকে ফি জমা দেয়ার ক্ষেত্রেও দালালদের অগ্রাধিকার। অথচ সেখানে সাধারণ সেবাগ্রহীতারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছে। প্রত্যেক রুমের সামনেই নিরাপত্তা কর্মীরা থাকে। প্রয়োজনেও সেখানে কেউ ঢুকতে পারে না। কিন্তু দালালরা সহজেই সেখান ঢুকে কাজ করিয়ে নিচ্ছে।
আল আমিন হোসেন নামের একজন বলেন, ফিল্ড পরীক্ষা দিতে গেলে আরো বড় ধরনের ভোগান্তির শিকার হতে হয়। যারা আগ থেকে যোগাযোগ করা থাকে তারাই আগে টেস্টে অংশ নিতে পারে। গ্রাহকদের ফিল্ড পরীক্ষায় ৩০ সেকেন্ড গাড়ি চালানোর জন্য প্রত্যেককে ২০০ টাকা করে দিতে হয়। আমি তাদের কাছে জানতে চাইলাম, এখানে টাকা দেয়ার কথা কোথাও তো উল্লেখ নেই। তখন তারা বলে এটা নাকি ‘ফিক্সড টাকা’।
কাজল নামে এক ব্যক্তি জানান, তিনি দালালকে দিয়েই সব কাজ করাচ্ছেন। তিনি বলেন, ওখানে কেউই খুশি নয়। টাকাটাই সবার ধান্ধা। দালালদের সঙ্গে কর্মকর্তাদের যোগসাজশ থাকে। দালালরা কর্মকর্তাদের নিয়মিত টাকা দিয়ে একটি সম্পর্ক করে রাখে, যাতে কাজ দ্রুত হয়ে যায়। অনেক কর্মকর্তা আছেন যারা সাধারণ গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নেন না। আর কাজও করে দেয় না। নানা অজুহাতে টালবাহানা করেন। কিন্তু দালালের কাছে দিলে ঠিকই কাজ করে দেন। তখন আর বুঝতে বাকি থাকে না, ওই কর্মকর্তা টাকার জন্যই এসব করেছেন। কাওসার নামের একজন বলেন, আমি গেট দিয়ে প্রবেশের সঙ্গেই প্রস্তাব দেয়া হয়, বিআরটিএতে যে খরচ হয়, তার চেয়ে দুই-তিন হাজার টাকা বেশি দিলেই কাজ হয়ে যাবে। এ জন্য আমাকে মাত্র আধা ঘণ্টা বসতে হবে। ১ হাজার ৩০০ সিসির গাড়ির কাগজের জন্য বিআরটিএকে দিতে হয় ১৮ হাজার টাকা। এক হাজার ৫০০ সিসির গাড়ির জন্য দিতে হয় ২৩ হাজার টাকা। এর চেয়ে দুই-তিন হাজার টাকা বেশি দিলেই দালালরা আধা ঘণ্টার মধ্যে কাগজ এনে দেয়। সেবা নিতে আসা গুলশান শাহজাদপুর এলাকার আহসান আলী মোক্তার, মহাখালী দক্ষিণপাড়ার রুহুল আমীন, মুরাদ আহমেদ, তেজগাঁও নাখালপাড়া রেলগেটের ইউনুস আহমেদসহ কয়েকজন অভিযোগ করেন, সাধারণ প্রক্রিয়ায় সেবা পেতে অযথা হয়রানি করা হয়। অথচ দালালদের দিয়ে দ্রুত কাজ হয়ে যাচ্ছে। তারা জানান, কর্মকান্ডে দক্ষ মাস্টার রোলের অস্থায়ী কর্মীদের হঠাৎ করেই সরিয়ে দিয়ে অদক্ষ কর্মীরা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে নানা জটিলতা ও সময়ক্ষেপণ করছে।
কার্যালয়টির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরাও হাত গুটিয়ে বসে নেই। বিভিন্নভাবে তারাও কাজ করেন। প্রধান গেটের বাম পাশেই দেয়া হয় তথ্য সেবা ও লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স। কিন্তু ২০০ টাকা না দিলে তা পেতে অনেক রকমের হয়রানি পোহাতে হয়। তার পাশেই ডিজিটাল নম্বর-প্লেট প্রদান শাখা। সেখানেও ৫০০ টাকা করে দিতে হয়। দালালদের ভাষায় এটা ‘ফিক্সড টাকা’। এ টাকা না দিলে নম্বর-প্লেট যে কতদিনে মিলবে তা জানা নেই। এক নম্বর ভবনের নিচে লোকজনের ভিড়। সেখানে দুই-আড়াই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও ছবি তোলার সিরিয়াল মেলে না। তবে দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের হাতে ২০০ টাকা দিলেই ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যেই ছবি তোলা সম্পন্ন হয়ে যায়।
এ বিষয়ে জানতে বিআরটিএ’র উপ-পরিচালক (প্রকৌশল) মো. মাসুদ আলম বলেন, দালাল প্রতিরোধে দফায় দফায় অভিযান চালানো হচ্ছে। এই কার্যালয় এখন সেবা গ্রহীতাদের আস্থার স্থল হয়ে উঠেছে। সেবা গ্রহীতারা কোনোরকম ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়া নিজেরাই বিভিন্ন শাখায় প্রয়োজনীয় কাজ করছেন এবং হাসিমুখে ফিরে যাচ্ছেন। মিরপুর কার্যালয়ে ঘুষ, হয়রানি, দালালদের উৎপাতের অভিযোগ সত্য নয় বলেও দাবি করেন তিনি।
No comments