ভারতের প্রধানমন্ত্রিত্বের ফয়সালা পশ্চিমবঙ্গে! by রঞ্জন বসু
ভারতে
প্রায় দেড় মাসব্যাপী নির্বাচনি প্রক্রিয়া একেবারে শেষ ধাপে। এখন গোটা
দেশের মনোযোগ পশ্চিমবঙ্গের ওপর। কারণ রাজ্যের ক্ষমতাসীন তৃণমূল ও বিজেপির
মধ্যে রাজনৈতিক সংঘাত চরমে পৌঁছেছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও
মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দোপাধ্যায়ের মধ্যে বাগযুদ্ধ চলছে। এছাড়া
বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা নিয়ে তুলকালাম চলছে রাজ্যে। এজন্যই পশ্চিমবঙ্গ
এখন ভারতীয় সব সংবাদ মাধ্যমের মনোযোগের শীর্ষে।
এখানেই শেষ নয়, বুধবার (১৫ মে) রাতে ভারতের জাতীয় নির্বাচন কমিশন পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনি প্রচারের মেয়াদ একদিন কমিয়ে দেয়। এ পদক্ষেপ ছিল নজিরবিহীন। সেই সঙ্গেই ‘নির্বাচনি প্রক্রিয়াতে হস্তক্ষেপে’র অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ এনে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্যকে। ভোটের সময় একটা রাজ্যের প্রশাসনের বিরুদ্ধে কমিশনের এত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘটনা সত্যিই বিরল।
নির্বাচন কমিশনের এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনটা এখন বিজেপি আর আরএসএসের দালালে ভরে গেছে।’ বিজেপিও কম যায় না, দলীয় সভাপতি অমিত শাহ দিল্লিতে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘কই, গোটা ভারতে আর কোনও রাজ্যে তো এ পরিমাণ সহিংসতা হচ্ছে না। কারণটা আপনারা মমতাকেই জিজ্ঞেস করে নিন।’
ভারতের জাতীয় নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ আচমকা বিজেপি ও তৃণমূলের সংঘাতের ‘ফ্ল্যাশ পয়েন্টে’ পরিণত হওয়া প্রসঙ্গে দিল্লির রাজনৈতিক বিশ্লেষক কল্যাণ গোস্বামী বলেন, ‘কারণ এবার ভারতে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, সেই উত্তরটা সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গ থেকেই আসবে। কথাটা একটু অদ্ভুত শোনাতে পারে, কিন্তু রাজনৈতিক বাস্তবতা সে কথাই বলছে। সেজন্যই পশ্চিমবঙ্গে এত রাজনৈতিক উত্তাপ।’
হিন্দি বলয়ের ক্ষতি পোষাতে বিজেপির ভরসা বাংলাই। বিজেপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হিন্দি ভাষাভাষী রাজ্যগুলোতে ২০১৪ সালের চমকপ্রদ ফলাফলের পুনরাবৃত্তি করা বস্তুত অসম্ভব। পাঁচ বছর আগে বিজেপি উত্তরপ্রদেশে ৮০-র মধ্যে ৭৩, রাজস্থানে ২৫, মধ্যপ্রদেশে ২৯ এর মধ্যে ২৭, ছত্তিশগড়ে ১১ এর মধ্যে ১০, হরিয়ানায় ১০টি এবং দিল্লির সাতটি আসনই পেয়েছিল। যা বিজেপিকে একার শক্তিতেই লোকসভায় গরিষ্ঠতা পেতে সাহায্য করেছিল। কিন্তু এবার এই ফলাফল পুনরাবৃত্তির কোনও সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
প্রথম কারণ হলো, উত্তরপ্রদেশে এবার পুরনো শত্রুতা ভুলে হাত মিলিয়েছে অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি (এসপি) ও মায়াবতীর নেতৃত্বাধীন বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি)। ফলে রাজ্যে বিজেপিবিরোধী ভোট ভাগ হওয়া অনেকটাই ঠেকানো যাবে। পর্যবেক্ষকরা ধারণা করছেন, উত্তরপ্রদেশে বিজেপি গতবারের তুলনায় কম করেও ৩০ আসন হারাবে। কারও কারও মতে, সংখ্যাটা আরও বেশি হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
অন্য দিকে, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তিশগড় এই তিন রাজ্যেও মাত্র চার-পাঁচমাস হলো বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে সরকার গড়েছে কংগ্রেস। ফলে এই তিন রাজ্যেও বিরোধীদের মনোবল তুঙ্গে, বিজেপির আসন এখানেও কমবে বই বাড়বে না।
এই ক্ষতির হিসাবটা বিজেপিও করেছে, আর সেই হারানো আসনগুলো পুষিয়ে নেওয়ার জন্য তারা বহুদিন ধরেই ‘পাখির চোখ’ করেছে পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতকে। এই অঞ্চলে ৯০টির মতো লোকসভা আসন আছে। বিজেপির নীতি-নির্ধারকরা বিশ্বাস করেন, এখানেই তাদের শক্তি বাড়ানোর সুযোগ সবচেয়ে বেশি। এই রাজ্যগুলোর মধ্যে ভোট বাকি আছে শুধু পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি আসনেই। আর গত কয়েকদিন ধরে সেই পশ্চিমবঙ্গই তাই যাবতীয় রাজনৈতিক তৎপরতার কেন্দ্রে।
গত নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ৪২আসনের মধ্যে মাত্র দু’টি পেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ নিয়ম করে রাজ্যের প্রতিটি জনসভায় বলে চলেছেন, তারা এবার রাজ্যে অন্তত ২৩টি আসনে জিতবেন। প্রধানমন্ত্রী মোদিও দু-একদিন বাদে বাদেই পশ্চিমবঙ্গে এসে জনসভা করে যাচ্ছেন। এবারে তিনি ১০ দিন পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন। আর ১৭টির মতো সমাবেশে ভাষণ দিয়েছেন। কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলটি টাকাও খরচ করছে জলের মতো।
ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেরই বিশ্বাস, বিজেপি জোট এবার পার্লামেন্টে গরিষ্ঠতা পাবে কিনা বা তার কাছাকাছি পৌঁছতে পারবে কিনা, তা এখন অনেকটাই নির্ভর করছে পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে তাদের এই ‘মরিয়া ক্যাম্পেন’ কতটা সাফল্য পায় তার ওপর।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক জীবনের প্রথম দিকে ধ্যান-জ্ঞান ছিল রাজ্যের ক্ষমতা থেকে বামফ্রন্টকে হঠানো। আট বছরেরও বেশি হলো সেই লক্ষ্য তিনি হাসিল করে ফেলেছেন। আর এখন যে রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় পর্বে তিনি যে প্রধানমন্ত্রী হতে চান সেকথাও একেবারেই গোপন নয়।
মমতার ঘনিষ্ঠরা বলছেন, তিনি গভীরভাবে বিশ্বাস করেন ২০১৯ সালের নির্বাচন তার সামনে দেশের প্রধানমন্ত্রিত্বের চমৎকার সুযোগ এনে দিয়েছে। বিজেপি কোনোভোবেই একশো থেকে সোয়াশ’র গণ্ডি পেরোবে না। আর কংগ্রেসও একশোর নিচেই থাকবে। সেক্ষেত্রে নন-কংগ্রেস, নন-বিজেপি একটি তৃতীয় বা ফেডারেল ফ্রন্টের সরকার গড়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হতে পারে। যার প্রধান হিসেবে মমতা ব্যানার্জি আত্মপ্রকাশ করতেই পারেন।
কলকাতায় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক অধ্যাপক শিবাজী বসুরায় বলেন, ‘গত নির্বাচনে তৃণমূল ৩৪টি আসনে জিতেছিল। এবার তাদের তার চেয়ে একটিও কম পেলে চলবে না। বরং নেত্রীকে প্রধানমন্ত্রীর আসনে দেখতে চাইলে সংখ্যাটা বাড়িয়ে চল্লিশের কাছাকাছি নিয়ে যেতে হবে।’
এ কারণেই মমতা রাজ্যের জনসভায় বারবার বলছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে আমাদের বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশটাই চাই।’
এরই মধ্যে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলকাতা অমিত শাহ’র রোড শো উত্তাল হয়ে উঠেছিল। বিজেপি সমর্থকরা সেখানে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেওয়ার পর তৃণমূলের কর্মীরা বিজেপি সভাপতিকে ‘গো ব্যাক’ আর ‘মুর্দাবাদে’ বরণ করেছেন। সেই সংঘাতের জেরেই যেখানে ভাঙা হয়েছে বিদ্যাসাগরের মূর্তি। বিদ্যাসাগরের মূর্তি কে বা কারা ভেঙেছে কোনওটা থেকেই তা এখনও প্রমাণিত নয়। তৃণমূল ও বিজেপি অবশ্য পরস্পরকে দোষারোপ করেই চলেছে।
মমতা বলছেন, ‘হিন্দুধর্মের সংস্কারের প্রবর্তক বিদ্যাসাগরকে বিজেপি যে সইতে পারবে না সেটাই তো স্বাভাবিক।’
আর প্রধানমন্ত্রী মোদী মূর্তি ভাঙার জন্য তৃণমূলকে দায়ী করেছেন। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, ‘ক্ষমতায় এলে তারা আরও বড়, আরও দামী বিদ্যাসাগরের মূর্তি নির্মাণ করবেন।’
ভারতের কোনও জাতীয় নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ বা এই রাজ্যের ৪২টি আসনের এত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা কোনও দিনই ছিল না। কিন্তু ২০১৯ সালের নির্বাচন এই রাজ্যকে একটা আলাদা মাত্রা দিয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বিশ্বাস করতে শুরু করছেন হয়তো দেখা যাবে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রিত্বের ফয়সালা করে দেবে পশ্চিমবঙ্গই।
এখানেই শেষ নয়, বুধবার (১৫ মে) রাতে ভারতের জাতীয় নির্বাচন কমিশন পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনি প্রচারের মেয়াদ একদিন কমিয়ে দেয়। এ পদক্ষেপ ছিল নজিরবিহীন। সেই সঙ্গেই ‘নির্বাচনি প্রক্রিয়াতে হস্তক্ষেপে’র অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ এনে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্যকে। ভোটের সময় একটা রাজ্যের প্রশাসনের বিরুদ্ধে কমিশনের এত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘটনা সত্যিই বিরল।
নির্বাচন কমিশনের এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনটা এখন বিজেপি আর আরএসএসের দালালে ভরে গেছে।’ বিজেপিও কম যায় না, দলীয় সভাপতি অমিত শাহ দিল্লিতে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘কই, গোটা ভারতে আর কোনও রাজ্যে তো এ পরিমাণ সহিংসতা হচ্ছে না। কারণটা আপনারা মমতাকেই জিজ্ঞেস করে নিন।’
ভারতের জাতীয় নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ আচমকা বিজেপি ও তৃণমূলের সংঘাতের ‘ফ্ল্যাশ পয়েন্টে’ পরিণত হওয়া প্রসঙ্গে দিল্লির রাজনৈতিক বিশ্লেষক কল্যাণ গোস্বামী বলেন, ‘কারণ এবার ভারতে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, সেই উত্তরটা সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গ থেকেই আসবে। কথাটা একটু অদ্ভুত শোনাতে পারে, কিন্তু রাজনৈতিক বাস্তবতা সে কথাই বলছে। সেজন্যই পশ্চিমবঙ্গে এত রাজনৈতিক উত্তাপ।’
হিন্দি বলয়ের ক্ষতি পোষাতে বিজেপির ভরসা বাংলাই। বিজেপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হিন্দি ভাষাভাষী রাজ্যগুলোতে ২০১৪ সালের চমকপ্রদ ফলাফলের পুনরাবৃত্তি করা বস্তুত অসম্ভব। পাঁচ বছর আগে বিজেপি উত্তরপ্রদেশে ৮০-র মধ্যে ৭৩, রাজস্থানে ২৫, মধ্যপ্রদেশে ২৯ এর মধ্যে ২৭, ছত্তিশগড়ে ১১ এর মধ্যে ১০, হরিয়ানায় ১০টি এবং দিল্লির সাতটি আসনই পেয়েছিল। যা বিজেপিকে একার শক্তিতেই লোকসভায় গরিষ্ঠতা পেতে সাহায্য করেছিল। কিন্তু এবার এই ফলাফল পুনরাবৃত্তির কোনও সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
প্রথম কারণ হলো, উত্তরপ্রদেশে এবার পুরনো শত্রুতা ভুলে হাত মিলিয়েছে অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি (এসপি) ও মায়াবতীর নেতৃত্বাধীন বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি)। ফলে রাজ্যে বিজেপিবিরোধী ভোট ভাগ হওয়া অনেকটাই ঠেকানো যাবে। পর্যবেক্ষকরা ধারণা করছেন, উত্তরপ্রদেশে বিজেপি গতবারের তুলনায় কম করেও ৩০ আসন হারাবে। কারও কারও মতে, সংখ্যাটা আরও বেশি হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
অন্য দিকে, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তিশগড় এই তিন রাজ্যেও মাত্র চার-পাঁচমাস হলো বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে সরকার গড়েছে কংগ্রেস। ফলে এই তিন রাজ্যেও বিরোধীদের মনোবল তুঙ্গে, বিজেপির আসন এখানেও কমবে বই বাড়বে না।
এই ক্ষতির হিসাবটা বিজেপিও করেছে, আর সেই হারানো আসনগুলো পুষিয়ে নেওয়ার জন্য তারা বহুদিন ধরেই ‘পাখির চোখ’ করেছে পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতকে। এই অঞ্চলে ৯০টির মতো লোকসভা আসন আছে। বিজেপির নীতি-নির্ধারকরা বিশ্বাস করেন, এখানেই তাদের শক্তি বাড়ানোর সুযোগ সবচেয়ে বেশি। এই রাজ্যগুলোর মধ্যে ভোট বাকি আছে শুধু পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি আসনেই। আর গত কয়েকদিন ধরে সেই পশ্চিমবঙ্গই তাই যাবতীয় রাজনৈতিক তৎপরতার কেন্দ্রে।
গত নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ৪২আসনের মধ্যে মাত্র দু’টি পেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ নিয়ম করে রাজ্যের প্রতিটি জনসভায় বলে চলেছেন, তারা এবার রাজ্যে অন্তত ২৩টি আসনে জিতবেন। প্রধানমন্ত্রী মোদিও দু-একদিন বাদে বাদেই পশ্চিমবঙ্গে এসে জনসভা করে যাচ্ছেন। এবারে তিনি ১০ দিন পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন। আর ১৭টির মতো সমাবেশে ভাষণ দিয়েছেন। কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলটি টাকাও খরচ করছে জলের মতো।
ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেরই বিশ্বাস, বিজেপি জোট এবার পার্লামেন্টে গরিষ্ঠতা পাবে কিনা বা তার কাছাকাছি পৌঁছতে পারবে কিনা, তা এখন অনেকটাই নির্ভর করছে পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে তাদের এই ‘মরিয়া ক্যাম্পেন’ কতটা সাফল্য পায় তার ওপর।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক জীবনের প্রথম দিকে ধ্যান-জ্ঞান ছিল রাজ্যের ক্ষমতা থেকে বামফ্রন্টকে হঠানো। আট বছরেরও বেশি হলো সেই লক্ষ্য তিনি হাসিল করে ফেলেছেন। আর এখন যে রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় পর্বে তিনি যে প্রধানমন্ত্রী হতে চান সেকথাও একেবারেই গোপন নয়।
মমতার ঘনিষ্ঠরা বলছেন, তিনি গভীরভাবে বিশ্বাস করেন ২০১৯ সালের নির্বাচন তার সামনে দেশের প্রধানমন্ত্রিত্বের চমৎকার সুযোগ এনে দিয়েছে। বিজেপি কোনোভোবেই একশো থেকে সোয়াশ’র গণ্ডি পেরোবে না। আর কংগ্রেসও একশোর নিচেই থাকবে। সেক্ষেত্রে নন-কংগ্রেস, নন-বিজেপি একটি তৃতীয় বা ফেডারেল ফ্রন্টের সরকার গড়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হতে পারে। যার প্রধান হিসেবে মমতা ব্যানার্জি আত্মপ্রকাশ করতেই পারেন।
কলকাতায় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক অধ্যাপক শিবাজী বসুরায় বলেন, ‘গত নির্বাচনে তৃণমূল ৩৪টি আসনে জিতেছিল। এবার তাদের তার চেয়ে একটিও কম পেলে চলবে না। বরং নেত্রীকে প্রধানমন্ত্রীর আসনে দেখতে চাইলে সংখ্যাটা বাড়িয়ে চল্লিশের কাছাকাছি নিয়ে যেতে হবে।’
এ কারণেই মমতা রাজ্যের জনসভায় বারবার বলছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে আমাদের বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশটাই চাই।’
এরই মধ্যে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলকাতা অমিত শাহ’র রোড শো উত্তাল হয়ে উঠেছিল। বিজেপি সমর্থকরা সেখানে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেওয়ার পর তৃণমূলের কর্মীরা বিজেপি সভাপতিকে ‘গো ব্যাক’ আর ‘মুর্দাবাদে’ বরণ করেছেন। সেই সংঘাতের জেরেই যেখানে ভাঙা হয়েছে বিদ্যাসাগরের মূর্তি। বিদ্যাসাগরের মূর্তি কে বা কারা ভেঙেছে কোনওটা থেকেই তা এখনও প্রমাণিত নয়। তৃণমূল ও বিজেপি অবশ্য পরস্পরকে দোষারোপ করেই চলেছে।
মমতা বলছেন, ‘হিন্দুধর্মের সংস্কারের প্রবর্তক বিদ্যাসাগরকে বিজেপি যে সইতে পারবে না সেটাই তো স্বাভাবিক।’
আর প্রধানমন্ত্রী মোদী মূর্তি ভাঙার জন্য তৃণমূলকে দায়ী করেছেন। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, ‘ক্ষমতায় এলে তারা আরও বড়, আরও দামী বিদ্যাসাগরের মূর্তি নির্মাণ করবেন।’
ভারতের কোনও জাতীয় নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ বা এই রাজ্যের ৪২টি আসনের এত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা কোনও দিনই ছিল না। কিন্তু ২০১৯ সালের নির্বাচন এই রাজ্যকে একটা আলাদা মাত্রা দিয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বিশ্বাস করতে শুরু করছেন হয়তো দেখা যাবে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রিত্বের ফয়সালা করে দেবে পশ্চিমবঙ্গই।
No comments