ফেসবুকে সম্পর্ক তৈরির নামে ফাঁদ by রাফসান জানি
রাজধানীর
পুরান ঢাকার যুবক রায়হান আবদুল্লাহ (ছদ্মনাম)। ২০১৮ সালের আগস্টে তাকে
ফেসবুকে নিতিশা নামে একজন বন্ধু হওয়ার অনুরোধ পাঠায়। নিতিশার পরিচয় নিশ্চিত
না হয়েই অনুরোধ গ্রহণ করেন রায়হান। হাই, হ্যালো দিয়ে কথা শুরু। ফেসবুকের
ম্যাসেঞ্জার ও মোবাইলে কথা হতো তাদের। একদিন দু’জন দেখা করতে সম্মত হন।
নভেম্বরে বনানীর একটি রেস্টুরেন্টে দেখা হয় তাদের। আলাপচারিতা ও খাওয়া
দাওয়া শেষে ফেরার পথে গাড়িতে করে নামিয়ে দেওয়ার কথা বলে রায়হানকে একটি
প্রাইভেটকারে উঠিয়ে নেন নিতিশা। রাত সাড়ে ১০টার দিকে গাড়িটি বনানী থেকে বের
হয়ে মহাখালী ওভারব্রিজ হয়ে বের হয়। পরে বিজয় সরণি ক্রস করার সময় রায়হানের
নাকে কিছু একটা স্প্রে করেন নিতিশা। মুহূর্তেই অজ্ঞান হয়ে যান রায়হান।
পরদিন সকালে তার জ্ঞান ফেরে। তখন রায়হান জানতে পারেন, তাকে অপহরণ করা
হয়েছে।
নিতিশা নামের যে মেয়েটি ভুয়া পরিচয় দিয়ে রায়হানের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। মূলত সে অপহরণকারী চক্রের সদস্য।
রায়হান জানান, অপহরণের পর তার পরিবারের কাছে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরে দুই লাখ টাকা দেওয়া হলে রায়হানকে তিনদিন পর ছেড়ে দেওয়া হয়। ছেড়ে দেওয়ার আগে নিতিশার সঙ্গে রায়হানের কিছু অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি তুলে রাখে অপহরণকারীরা। তখন তাকে হুঁশিয়ার করে বলে দেওয়া হয়, ছাড়া পাওয়ার পর পুলিশ, র্যাব বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গেলে ছবিগুলো ভাইরাল করে দেওয়া হবে।
হুমকি পেয়ে রায়হান আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে যাননি। কারণ হিসেবে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, একেতো ছবিগুলো ছড়িয়ে পরার ভয়, তার ওপর স্ত্রী আছে। নারীঘটিত অভিযোগ ও ছবি ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে আর মামলা করিনি। আমি চেয়েছিলাম, যা হয়েছে তা যেন আর না বাড়ে।
তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা এমন ঘটনায় অবশ্যই তাদের সহায়তা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। কারণ আইনের আওতায় না আসায় অপরাধীরা ফের অপরাধের সুযোগ পায়।
তারা বলছেন, সবার আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপরিচিত কারও সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানো ঠিক না। এতে ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং টিমের এডিসি নাজমুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘না জেনে ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায় কারও সঙ্গে পরিচিত হওয়া উচিত না, কোনও সম্পর্কে যাওয়া যাবে না। যার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্ত হতে যাচ্ছেন তাকে সঠিকভাবে জানতে হবে। এমনকি তার ঠিকানা নিশ্চিত হতে হবে।’
ফাঁদে পড়ে কেউ ভিকটিম হলে অবশ্যই পুলিশকে অভিযোগ করার অনুরোধ করেছেন এডিসি নাজমুল। তিনি বলেন, কেউ যদি ভিকটিম হন, তাহলে পুলিশকে জানাতে হবে। এ বিষয়ে লজ্জা পাওয়া যাবে না। আমরা অভিযোগ পেলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবো। তা না হলে পরে অন্য কেউ ভিকটিম হবে।
সম্প্রতি ফেসবুকের মাধ্যমে সম্পর্ক স্থাপন করে প্রতারণা ও অপহরণের অভিযোগে দুটি সংঘবদ্ধ চক্রকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৪। একই সঙ্গে উদ্ধার করা হয়েছেন দুই অপহৃত ব্যক্তি।
গত ৩ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মিরপুর-১০ থেকে অপহরণ করা হয় ডা. মোনায়েমুল বাশার (৪০) নামে এক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসককে। অভিযোগ পেয়ে ৪ এপ্রিল ভোর সাড়ে ৬টার দিকে অভিযান চালিয়ে নগদ ২৭৫০০ টাকাসহ অপহরণ চক্রের ৬ সদস্যকে আটক করা হয় এবং ভিকটিমকে উদ্ধার করে র্যাব-৪ এর সদস্যরা।
একইভাবে গত ১২ এপ্রিল কলাবাগান থেকে অপহৃত হন মো. রায়হান নামে এক ব্যক্তি। তার কাছ থেকে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ নেয় অপহরণকারীরা। অপহরণের ছয় দিন পর (১৭ এপ্রিল) রায়হানকে সাভারের আমিন বাজার থেকে উদ্ধার করে র্যাব। একইসঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে অপহরণকারী চক্রের পাঁচ সদস্যকে।
র্যাব-৪ এর সিপিসি-১ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর কাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমিন বাজার থেকে যে চক্রটিকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তারা একজন নারীকে ব্যবহার করে ফাঁদ পাততো। এরপর দেখা করার কথা বলে, টার্গেটেড ব্যক্তিকে সুবিধামতো স্থানে নিয়ে যেতো তারা। পরে অপহরণ করে আগে থেকে ঠিক করে রাখা বাসায় নিয়ে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় তরতো।’
র্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা এ ধরনের বেশ কয়েকটি প্রতারকচক্রকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করেছি। কিন্তু অনেক ভিকটিম ঘটনার পর পুলিশ বা র্যাবকে জানাতে চায় না। কারণ ছেড়ে দেওয়ার সময় ভিকটিমের সঙ্গে নারীর অন্তরঙ্গ ছবি তুলে রাখে অপহরণকারীরা। পাশাপাশি হুমকি দেওয়া হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের সহায়তা নিলে ছবিগুলো ভাইরাল করে দেওয়া হবে। এই হুমকিতে ভয় পেয়ে ভিকটিম ছাড়া পেয়ে আর কোনও অভিযোগ করে না।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপরিচিত কারও সঙ্গে পরিচিত হতে হলে অবশ্যই যাচাই বাছাই করে পরিচিত হওয়া উচিত বলে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। না হয় এ ধরনের প্রতারণা এবং অপহরণের ঘটনা ঘটতে থাকবে। প্রতারকদের কৌশল সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে। ডিজিটাল মাধ্যমে যুক্ত হওয়ার পাশাপাশি এর সদ্ব্যবহারও নিশ্চিত করতে হবে।
নিতিশা নামের যে মেয়েটি ভুয়া পরিচয় দিয়ে রায়হানের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। মূলত সে অপহরণকারী চক্রের সদস্য।
রায়হান জানান, অপহরণের পর তার পরিবারের কাছে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরে দুই লাখ টাকা দেওয়া হলে রায়হানকে তিনদিন পর ছেড়ে দেওয়া হয়। ছেড়ে দেওয়ার আগে নিতিশার সঙ্গে রায়হানের কিছু অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি তুলে রাখে অপহরণকারীরা। তখন তাকে হুঁশিয়ার করে বলে দেওয়া হয়, ছাড়া পাওয়ার পর পুলিশ, র্যাব বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গেলে ছবিগুলো ভাইরাল করে দেওয়া হবে।
হুমকি পেয়ে রায়হান আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে যাননি। কারণ হিসেবে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, একেতো ছবিগুলো ছড়িয়ে পরার ভয়, তার ওপর স্ত্রী আছে। নারীঘটিত অভিযোগ ও ছবি ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে আর মামলা করিনি। আমি চেয়েছিলাম, যা হয়েছে তা যেন আর না বাড়ে।
তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা এমন ঘটনায় অবশ্যই তাদের সহায়তা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। কারণ আইনের আওতায় না আসায় অপরাধীরা ফের অপরাধের সুযোগ পায়।
তারা বলছেন, সবার আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপরিচিত কারও সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানো ঠিক না। এতে ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং টিমের এডিসি নাজমুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘না জেনে ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায় কারও সঙ্গে পরিচিত হওয়া উচিত না, কোনও সম্পর্কে যাওয়া যাবে না। যার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্ত হতে যাচ্ছেন তাকে সঠিকভাবে জানতে হবে। এমনকি তার ঠিকানা নিশ্চিত হতে হবে।’
ফাঁদে পড়ে কেউ ভিকটিম হলে অবশ্যই পুলিশকে অভিযোগ করার অনুরোধ করেছেন এডিসি নাজমুল। তিনি বলেন, কেউ যদি ভিকটিম হন, তাহলে পুলিশকে জানাতে হবে। এ বিষয়ে লজ্জা পাওয়া যাবে না। আমরা অভিযোগ পেলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবো। তা না হলে পরে অন্য কেউ ভিকটিম হবে।
সম্প্রতি ফেসবুকের মাধ্যমে সম্পর্ক স্থাপন করে প্রতারণা ও অপহরণের অভিযোগে দুটি সংঘবদ্ধ চক্রকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৪। একই সঙ্গে উদ্ধার করা হয়েছেন দুই অপহৃত ব্যক্তি।
গত ৩ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মিরপুর-১০ থেকে অপহরণ করা হয় ডা. মোনায়েমুল বাশার (৪০) নামে এক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসককে। অভিযোগ পেয়ে ৪ এপ্রিল ভোর সাড়ে ৬টার দিকে অভিযান চালিয়ে নগদ ২৭৫০০ টাকাসহ অপহরণ চক্রের ৬ সদস্যকে আটক করা হয় এবং ভিকটিমকে উদ্ধার করে র্যাব-৪ এর সদস্যরা।
একইভাবে গত ১২ এপ্রিল কলাবাগান থেকে অপহৃত হন মো. রায়হান নামে এক ব্যক্তি। তার কাছ থেকে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ নেয় অপহরণকারীরা। অপহরণের ছয় দিন পর (১৭ এপ্রিল) রায়হানকে সাভারের আমিন বাজার থেকে উদ্ধার করে র্যাব। একইসঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে অপহরণকারী চক্রের পাঁচ সদস্যকে।
র্যাব-৪ এর সিপিসি-১ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর কাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমিন বাজার থেকে যে চক্রটিকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তারা একজন নারীকে ব্যবহার করে ফাঁদ পাততো। এরপর দেখা করার কথা বলে, টার্গেটেড ব্যক্তিকে সুবিধামতো স্থানে নিয়ে যেতো তারা। পরে অপহরণ করে আগে থেকে ঠিক করে রাখা বাসায় নিয়ে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় তরতো।’
র্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা এ ধরনের বেশ কয়েকটি প্রতারকচক্রকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করেছি। কিন্তু অনেক ভিকটিম ঘটনার পর পুলিশ বা র্যাবকে জানাতে চায় না। কারণ ছেড়ে দেওয়ার সময় ভিকটিমের সঙ্গে নারীর অন্তরঙ্গ ছবি তুলে রাখে অপহরণকারীরা। পাশাপাশি হুমকি দেওয়া হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের সহায়তা নিলে ছবিগুলো ভাইরাল করে দেওয়া হবে। এই হুমকিতে ভয় পেয়ে ভিকটিম ছাড়া পেয়ে আর কোনও অভিযোগ করে না।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপরিচিত কারও সঙ্গে পরিচিত হতে হলে অবশ্যই যাচাই বাছাই করে পরিচিত হওয়া উচিত বলে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। না হয় এ ধরনের প্রতারণা এবং অপহরণের ঘটনা ঘটতে থাকবে। প্রতারকদের কৌশল সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে। ডিজিটাল মাধ্যমে যুক্ত হওয়ার পাশাপাশি এর সদ্ব্যবহারও নিশ্চিত করতে হবে।
No comments