দু’দশকে বন্ধ হয়েছে এক হাজারের বেশি সিনেমা হল by কামরুজ্জামান মিলু
বিনোদনের
সবচেয়ে বড় মাধ্যম সিনেমা। আর এই সিনেমা দেখার জন্য চাই প্রেক্ষাগৃহ বা হল।
দেশে কেমন ছিল সিনেমা হলের সূচনাকাল? অতঃপর ক্রমে হলের সংখ্যা বেড়ে চলা,
এসবের আধুনিকায়নের পথ পেরিয়ে দেশজুড়ে সিনেমা হলের বর্তমান অবস্থা নিয়ে
সাজানো হয়েছে ধারাবাহিক প্রতিবেদন বাংলাদেশের সিনেমা হল। লিখেছেন কামরুজ্জামান মিলু। আজ প্রকাশ হচ্ছে এর পঞ্চম ও শেষ পর্ব দু’দশকে বন্ধ হয়েছে এক হাজারের বেশি সিনেমা হল।
সিনেমার ব্যবসা যখন ছিল তুঙ্গে তখন দেশের বিভিন্ন জায়গায় একের পর এক সিনেমা হল নির্মাণ হয়। অথচ সেই সিনেমা হলের ব্যবসায় নেমেছে ধস। নিভে যাচ্ছে একের পর এক সিনেমা হলের আলো। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির এক তথ্যে জানা যায়, বাংলাদেশে বর্তমানে সিনেমা হল চালু রয়েছে মোট ১৭৪টি।
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে সারা দেশে এই সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪৩৫টি। সিনেমা হলে দর্শকের আনাগোনা কমে যাওয়া, বেশিরভাগ সিনেমা ফ্লপের খাতায় নাম লেখার পাশাপাশি ব্যবসায়িক বিপর্যয়সহ নানা কারণে গত দু’দশকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এক হাজারের বেশি সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে।
শুধু তাই নয়, এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেক কর্মী পেশা পরিবর্তনও করেছেন। এদিকে এসব কারণে আগামী ১২ই এপ্রিল থেকে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির নেতারা সারা দেশের সব সিনেমা হল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের এই ঘোষণায় সম্প্রতি সায় দিয়েছে বুকিং এজেন্ট সমিতি। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জল বলেন, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায় আমার একটি সিনেমা হল আছে। নাম ‘স্বপ্নপুরী’। আগে এই উপজেলায় চারটি সিনেমা হল ছিল। এখন আমারটাসহ ‘ঝুমুর’ নামে আরেকটি সিনেমা হল টিকে আছে। আসলে সিনেমা হতে হবে সিনেমার মতো। নাটক নির্মাণ করে সিনেমা হলে চালালে তো দর্শক আসবে না। এ ধরনের ছবি ঢাকার সিনেমা হলে চললেও এখানে চলে না। যে কারণে সারা দেশের সিনেমা হলে ধীরে ধীরে দর্শক কমেছে।
৩৬ শতাংশের বেশি জায়গা বিশিষ্ট আমার সিনেমা হলটি ১০ কোটি টাকা দিয়ে কিনতে চাওয়া হয়েছিল। চায়নার একটি কর্পোরেট অফিস করার কথা ছিল এখানে। কিন্তু আমি বিক্রি করিনি এবং সিনেমা হলটি এখনো বিক্রি করতে চাই না। আমি চাই সিনেমা হলের সেই রমরমা ব্যবসাটা আবার ফিরে আসুক। সেই অপেক্ষায় রয়েছি। তিনি আরো জানান, দেশের বিভিন্ন জেলা শহরেই এখন সিনেমা হল নেই। রাঙ্গামাটির মতো পর্যটন শহরে নেই কোনো সিনেমা হল। আগে এখানে তিনটি হল ছিল। নরসিংদী জেলা শহরে ছবিঘর, মিতালী, সংগীতা, সুরভী নামে চারটি সিনেমা হলের একটিও এখন চালু নেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে তিনটি হলের সবকটিই এখন বন্ধ। সিনেমা হল নেই ঝালকাঠি, নড়াইল, পঞ্চগড়, রাজশাহী ও কুমিল্লায়। নেত্রকোনা জেলা শহরে হীরামন নামে একটিমাত্র সিনেমা হল আছে এখন। এ ছাড়া পটুয়াখালী, দিনাজপুর, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, নেত্রকোনা, জামালপুরে বর্তমানে মাত্র একটি করে সিনেমা হল চালু আছে। যেখানে আগে এসব জায়গায় তিন-চারটি করে সিনেমা হল ছিল।
রাজধানীর পরেই চলচ্চিত্রের বড় বাজার ছিল চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইল, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, যশোর। প্রদর্শক সমিতির দেয়া তথ্যমতে, গত দু’দশকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বন্ধ হয়ে গেছে ২০টি সিনেমা হল। হারিয়ে গেছে অলঙ্কার, লায়ন্স, সানাই, রঙ্গম, সাগরিকা, বনানী কমপ্লেক্স, নূপুর, জলসা, গুলজার, উপহার, রিদম, উজালা, আকাশ, মেলোডি, সিনেমা কর্ণফুলী। ঢাকার মধ্যে পুরান ঢাকার গুলিস্তান, নাজ, সদরঘাটের রূপমহল, মুন, স্টার, আরমানিটোলার শাবিস্তান, এলিফ্যান্ট রোডের মল্লিকা, বাসাবোর অতিথি, আগমন, ইসলামপুরের লায়ন, চকবাজারের তাজমহল, পোস্তগোলার মেঘনা, যমুনা, ডায়না, নারায়ণগঞ্জের মিনতি, কাওরান বাজারের পূর্ণিমা এবং সবশেষ বংশালের মানসী হলটির মূল মিলনায়তন ভেঙে সেখানে মার্কেট করা হয়েছে।
এদিকে একসময় যশোরের পরিচিতি ছিল সিনেমা হলের শহর হিসেবে। সেখানকার ২১টি সিনেমা হল থেকে কমতে কমতে এখন মাত্র ২টি চালু আছে। খুলনায় সিনেমা হল ছিল ১১টি। এখন আছে তিনটি। সিলেটের সাতটির মধ্যে একটি এবং রংপুরের পাঁচটি সিনেমা হলের মধ্যে বর্তমানে একটি টিকে আছে। এ প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু বলেন, বিভিন্ন জায়গায় সিনেমা হল বন্ধ হচ্ছে দেশের জন্য এটি খুবই দুঃখজনক সংবাদ। ভালো মানের ছবির অভাব ও হলের ভালো পরিবেশ না থাকা অবশ্যই সিনেমা হল বন্ধের জন্য দুটি কারণ। তবে সবচেয়ে মূল্যবান বিষয় হচ্ছে গুদামঘর মার্কা সিনেমা হল এখন আর কোথাও চলবে না।
সারা দেশে এখন আধুনিক সিনেমা হল নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে। সিনেপ্লেক্সের মতো করে আধুনিক হলে দর্শকরা এখন সিনেমা দেখতে চান। ১২০০ সিটের মতো বিশাল সিনেমা হল এখন আর চলবে না। কম আসন হলেও সুসজ্জিত ও সুন্দর পরিবেশের আধুনিক সিনেমা হল নির্মাণ হলে সিনেমা ব্যবসা অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াবে। পাশাপাশি লোকাল ডিশ লাইনে বাংলা সিনেমা দেখানো বন্ধ করতে হবে এবং টেলিভিশনেও প্রতিদিন অবাধে সিনেমা দেখানোর বিষয়টির নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। নির্দিষ্ট দিনে ছোট পর্দায় দর্শকদের সিনেমা দেখানো দরকার। কারণ, গ্রামের বাজারে চায়ের দোকানে বসে দর্শকরা এসব সিনেমা দেখতে থাকে। এর ফলে সিনেমা হলে গিয়ে আর সিনেমা দেখার আগ্রহ তাদের থাকছে না।
একের পর এক সিনেমা হলও তাই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, যেসব সিনেমা হলের মালিকরা সিনেমা হল বন্ধ করেছেন তাদের সহজ শর্তে ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে আধুনিক সিনেপ্লেক্স বানানোর জন্য আগ্রহী করতে হবে। আর সিনেপ্লেক্সের মতো ফুডকোর্টসহ আধুনিক সিনেমা হল নির্মাণ করলে আমার বিশ্বাস অবশ্যই সিনেমা হল চলবে।
সিনেমার ব্যবসা যখন ছিল তুঙ্গে তখন দেশের বিভিন্ন জায়গায় একের পর এক সিনেমা হল নির্মাণ হয়। অথচ সেই সিনেমা হলের ব্যবসায় নেমেছে ধস। নিভে যাচ্ছে একের পর এক সিনেমা হলের আলো। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির এক তথ্যে জানা যায়, বাংলাদেশে বর্তমানে সিনেমা হল চালু রয়েছে মোট ১৭৪টি।
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে সারা দেশে এই সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪৩৫টি। সিনেমা হলে দর্শকের আনাগোনা কমে যাওয়া, বেশিরভাগ সিনেমা ফ্লপের খাতায় নাম লেখার পাশাপাশি ব্যবসায়িক বিপর্যয়সহ নানা কারণে গত দু’দশকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এক হাজারের বেশি সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে।
শুধু তাই নয়, এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেক কর্মী পেশা পরিবর্তনও করেছেন। এদিকে এসব কারণে আগামী ১২ই এপ্রিল থেকে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির নেতারা সারা দেশের সব সিনেমা হল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের এই ঘোষণায় সম্প্রতি সায় দিয়েছে বুকিং এজেন্ট সমিতি। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জল বলেন, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায় আমার একটি সিনেমা হল আছে। নাম ‘স্বপ্নপুরী’। আগে এই উপজেলায় চারটি সিনেমা হল ছিল। এখন আমারটাসহ ‘ঝুমুর’ নামে আরেকটি সিনেমা হল টিকে আছে। আসলে সিনেমা হতে হবে সিনেমার মতো। নাটক নির্মাণ করে সিনেমা হলে চালালে তো দর্শক আসবে না। এ ধরনের ছবি ঢাকার সিনেমা হলে চললেও এখানে চলে না। যে কারণে সারা দেশের সিনেমা হলে ধীরে ধীরে দর্শক কমেছে।
৩৬ শতাংশের বেশি জায়গা বিশিষ্ট আমার সিনেমা হলটি ১০ কোটি টাকা দিয়ে কিনতে চাওয়া হয়েছিল। চায়নার একটি কর্পোরেট অফিস করার কথা ছিল এখানে। কিন্তু আমি বিক্রি করিনি এবং সিনেমা হলটি এখনো বিক্রি করতে চাই না। আমি চাই সিনেমা হলের সেই রমরমা ব্যবসাটা আবার ফিরে আসুক। সেই অপেক্ষায় রয়েছি। তিনি আরো জানান, দেশের বিভিন্ন জেলা শহরেই এখন সিনেমা হল নেই। রাঙ্গামাটির মতো পর্যটন শহরে নেই কোনো সিনেমা হল। আগে এখানে তিনটি হল ছিল। নরসিংদী জেলা শহরে ছবিঘর, মিতালী, সংগীতা, সুরভী নামে চারটি সিনেমা হলের একটিও এখন চালু নেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে তিনটি হলের সবকটিই এখন বন্ধ। সিনেমা হল নেই ঝালকাঠি, নড়াইল, পঞ্চগড়, রাজশাহী ও কুমিল্লায়। নেত্রকোনা জেলা শহরে হীরামন নামে একটিমাত্র সিনেমা হল আছে এখন। এ ছাড়া পটুয়াখালী, দিনাজপুর, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, নেত্রকোনা, জামালপুরে বর্তমানে মাত্র একটি করে সিনেমা হল চালু আছে। যেখানে আগে এসব জায়গায় তিন-চারটি করে সিনেমা হল ছিল।
রাজধানীর পরেই চলচ্চিত্রের বড় বাজার ছিল চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইল, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, যশোর। প্রদর্শক সমিতির দেয়া তথ্যমতে, গত দু’দশকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বন্ধ হয়ে গেছে ২০টি সিনেমা হল। হারিয়ে গেছে অলঙ্কার, লায়ন্স, সানাই, রঙ্গম, সাগরিকা, বনানী কমপ্লেক্স, নূপুর, জলসা, গুলজার, উপহার, রিদম, উজালা, আকাশ, মেলোডি, সিনেমা কর্ণফুলী। ঢাকার মধ্যে পুরান ঢাকার গুলিস্তান, নাজ, সদরঘাটের রূপমহল, মুন, স্টার, আরমানিটোলার শাবিস্তান, এলিফ্যান্ট রোডের মল্লিকা, বাসাবোর অতিথি, আগমন, ইসলামপুরের লায়ন, চকবাজারের তাজমহল, পোস্তগোলার মেঘনা, যমুনা, ডায়না, নারায়ণগঞ্জের মিনতি, কাওরান বাজারের পূর্ণিমা এবং সবশেষ বংশালের মানসী হলটির মূল মিলনায়তন ভেঙে সেখানে মার্কেট করা হয়েছে।
এদিকে একসময় যশোরের পরিচিতি ছিল সিনেমা হলের শহর হিসেবে। সেখানকার ২১টি সিনেমা হল থেকে কমতে কমতে এখন মাত্র ২টি চালু আছে। খুলনায় সিনেমা হল ছিল ১১টি। এখন আছে তিনটি। সিলেটের সাতটির মধ্যে একটি এবং রংপুরের পাঁচটি সিনেমা হলের মধ্যে বর্তমানে একটি টিকে আছে। এ প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু বলেন, বিভিন্ন জায়গায় সিনেমা হল বন্ধ হচ্ছে দেশের জন্য এটি খুবই দুঃখজনক সংবাদ। ভালো মানের ছবির অভাব ও হলের ভালো পরিবেশ না থাকা অবশ্যই সিনেমা হল বন্ধের জন্য দুটি কারণ। তবে সবচেয়ে মূল্যবান বিষয় হচ্ছে গুদামঘর মার্কা সিনেমা হল এখন আর কোথাও চলবে না।
সারা দেশে এখন আধুনিক সিনেমা হল নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে। সিনেপ্লেক্সের মতো করে আধুনিক হলে দর্শকরা এখন সিনেমা দেখতে চান। ১২০০ সিটের মতো বিশাল সিনেমা হল এখন আর চলবে না। কম আসন হলেও সুসজ্জিত ও সুন্দর পরিবেশের আধুনিক সিনেমা হল নির্মাণ হলে সিনেমা ব্যবসা অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াবে। পাশাপাশি লোকাল ডিশ লাইনে বাংলা সিনেমা দেখানো বন্ধ করতে হবে এবং টেলিভিশনেও প্রতিদিন অবাধে সিনেমা দেখানোর বিষয়টির নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। নির্দিষ্ট দিনে ছোট পর্দায় দর্শকদের সিনেমা দেখানো দরকার। কারণ, গ্রামের বাজারে চায়ের দোকানে বসে দর্শকরা এসব সিনেমা দেখতে থাকে। এর ফলে সিনেমা হলে গিয়ে আর সিনেমা দেখার আগ্রহ তাদের থাকছে না।
একের পর এক সিনেমা হলও তাই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, যেসব সিনেমা হলের মালিকরা সিনেমা হল বন্ধ করেছেন তাদের সহজ শর্তে ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে আধুনিক সিনেপ্লেক্স বানানোর জন্য আগ্রহী করতে হবে। আর সিনেপ্লেক্সের মতো ফুডকোর্টসহ আধুনিক সিনেমা হল নির্মাণ করলে আমার বিশ্বাস অবশ্যই সিনেমা হল চলবে।
No comments