যেভাবে প্রাণে বাঁচলেন বিমানের যাত্রীরা by দীন ইসলাম
খারাপ
আবহাওয়ার কারণে ফ্লাইটটি অবতরণে সমস্যা হচ্ছিল। প্রথম দফায় নামতে ব্যর্থ
হয়ে আকাশে চক্কর দিচ্ছিল কিছু সময়। দ্বিতীয় দফায় যখন নামতে যায় তখনই এটি
রানওয়ে থেকে ছিটকে আছড়ে পড়ে পাশের খালি জায়গায়। ৩৪ আরোহী নিয়ে ড্যাশ
বিমানটি যেভাবে আছড়ে পড়ে তাতে বড় প্রাণহাণির ঘটনাও ঘটতে পারতো। বিমানটি
মাটিতে আছড়ে পড়ে প্রায় তিন টুকরো হয়ে গেলেও সৌভাগ্যক্রমে এটিতে আগুন ধরেনি।
এতে প্রাণে বেঁচে যান যাত্রীরা। ফ্লাইটে থাকা যাত্রীদের ভাষ্য রানওয়েতে
নামার পর যখন পাইলট শামীম নজরুল বিমানের নিয়ন্ত্রণ হারাতে যাচ্ছিলেন তখন
বুদ্ধি খাটিয়ে তিনি বিমানের ইঞ্জিন বন্ধ করে দেন। এতে বিমানের সব ধরণের
বৈদ্যুতিক সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
এতে আগুন লাগেনি। বিমানযাত্রীরা বলছেন পাইলটের তাৎক্ষণিক বুদ্ধিমত্তার কারণে বড় প্রাণহানি থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে।
এছাড়া দুর্ঘটনায় পড়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ড্যাশ-৮ কিউ-৪০০ (রেজিস্ট্রেশন নং এস২-এজিকিউ) উড়োজাহাজটি এর আগে কয়েক দফা দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায়।
২০১৫ সালে এপ্রিলে মিশরের স্মার্ট এভিয়েশন থেকে লীজ নেয়া হয় এ এয়ারক্রাফটি। আট বছর দুই মাস বয়সী এ উড়োজাহাজটি অপারেশনের উপযোগী না হলেও প্রতিদিন চার-পাঁচটি রুটে চালানো হতো। বিমান সূত্রে জানা গেছে, মিশরের স্মার্ট এভিয়েশন কোম্পানির কাছ থেকে ২০১৫ সালের এপ্রিলে ৫ বছরের জন্য দুটি ড্যাশ ৮ কিউ-৪০০ উড়োজাহাজ (রেজিস্ট্রেশন নং এস২-এজিকিউ ও এস২-এজিআর) লীজে আনে বিমান। এই উড়োজাহাজের ভাড়া বাবদ বিমান কর্তৃপক্ষকে প্রতি মাসে ১ লাখ ৬৮ হাজার ডলার অর্থ খরচ করতে হচ্ছে।
বিমান সূত্রে জানা গেছে, দূর্ঘটনায় পড়া উড়োজাহাজটি গত ৬ই মার্চ হায়দরাবাদ থেকে সি-চেক (বড় ধরনের মেরামত) সেরে দেশে আসার পথেই এয়ারক্রাফটটির ইঞ্জিনের ওপরে থাকা ব্ল্যাংকেট পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ফলে ইঞ্জিন অস্বাভাবিক উত্তপ্ত হয়ে পড়ে এবং ইঞ্জিন অয়েল বিপজ্জনক মাত্রায় চলে আসে। তখন আকাশেই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। কিন্তু অল্পের জন্য রক্ষা পায়। যদিও বিমানটিতে ওই সময় কোনো যাত্রী ছিল না। সেদিন এয়ারক্রাফটটির নিউমেটিক লাইনের পাইপে ক্ল্যাপ খোলা ছিল। যে কারণে, অয়েল লিক করায় এই সমস্যা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ই মার্চ ব্ল্যাংকেট পুড়ে যাওয়ার পর কানাডার-বোম্বারডিয়ান কোম্পানির প্রতিনিধিরা এসে উড়োজাহাজটিকে চলাচলের ঘোষণা দিলে বিমান আবার সেটিকে অপারেশনে নিয়ে আসে। তার দুই মাসের মধ্যেই বিধ্বস্ত হলো সেটি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিন টুকরো হয়ে যাওয়ায় উড়োজাহাজটি বিমান বহরে আর যুক্ত হতে পারবে না। এর আগে গত ২৫শে জানুয়ারি এয়ারক্রাফটটিকে ভারতের হায়দারাবাদের ‘জিএমআর অ্যারো টেক কোম্পানি’তে পাঠানো হয় ‘সি-চেক’ করানোর জন্য। ১৫ দিনে ‘সি-চেক’ শেষ করার কথা থাকলেও সময় লেগে যায় প্রায় দেড় মাস। আবার সমস্যা সারানোর বদলে নতুন সমস্যা তৈরি করে এয়ারক্রাফটটিকে ঢাকায় পাঠানো হয়। এ ঘটনার পর ‘জিএমআর অ্যারো টেক কোম্পানি’র সি-চেকের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিবুল হক জানান, কিছুদিন আগে হায়দারাবাদ থেকে সি- চেক সেরে দেশে ফেরার পথে আকাশে বিকল হওয়া এয়ারক্রাফটিকে কেন অপারেশনে রাখা হচ্ছে- তা খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে পরিস্থিত বুঝে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি করা হবে। আগামীতে বিমানবহরে লিজের নামে নিম্নমানের উড়োজাহাজ যোগ করা বন্ধ করব। এদিকে উড়োজাহাজটি ভারত থেকে ঠিক করে আনার দুই মাস না যেতেই আবারও দুর্ঘটনার কবলে পড়ল বিমানের এজিকিউ। জরাজীর্ণ এই এয়ারক্রাফট গত বুধবার বিকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে। বিমানটিতে পাইলটের দায়িত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন শামিম নজরুল। মিয়ানমারের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ২২মিনিটে দেশটির ইয়াংগুন বিমানবন্দরের রানওয়েতে ওই দুর্ঘটনা ঘটে।
বিমানটিতে পাইলট ও কেবিন ক্রুসহ মোট ৩৪ জন আরোহী ছিলেন। ৩০ জন আরোহীর মধ্যে একজন শিশু, পাইলট ও কেবিন ক্রু ছিলেন আরও চারজন। তাদের মধ্যে আহত ১৯ জনকে ইয়াংগুনের নর্থ ওকলাপা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার তদন্তে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে এ কমিটি করা হয়। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের চিফ অব ফ্লাইট সেফটি শোয়েব চৌধুরীকে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে। তিনিসহ এ কমিটিতে রয়েছেন ছয়জন। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ জানান, বিমানে চিফ অব ফ্লাইট সেইফটি ক্যাপ্টেন শোয়েব চৌধুরী ৬ সদস্যের তদন্ত দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ড্যাস ৮-কিউ ৪০০ উড়োজাহাজটির ক্ষতি নিরূপণে বিমানের গ্রাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারদের একটি দল মিয়ানমারে গেছে।
শাকিল মেরাজ বলেন, ইয়াঙ্গুন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ওই উড়োজাহাজের আরোহীদের মধ্যে মোট ১৮ জনকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করেছিল। তাদের মধ্যে চারজনকে বুধবার রাতেই প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়া হয়েছে। বাকিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি বলেন, মিয়ানমারে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা সেখানে আছেন। তারা সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নিচ্ছেন, তদারকি করছেন। যে ১৪ জন সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদের সর্বোচ্চ ভালো চিকিৎসা দেয়ার জন্য যা যা করা দরকার, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে তার সবকিছুই করা হচ্ছে। শাকিল মেরাজ বলেন, বিমানের কান্ট্রি ম্যানেজার মীর আক্তার সেখানে আছেন, গতকাল সন্ধা থেকে সার্বক্ষণিক আপডেট নিচ্ছেন। এখন পর্যন্ত সব ঠিক ঠাক আছে।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী যাত্রীদের জন্য যে ধরনের সাপোর্ট লাগবে সেটা বিমানের পক্ষ থেকে দেয়া হবে। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হল, এই দুর্ঘটনায়, আমাদের যাত্রী এবং ক্রু, সবাই নিরাপদে আছেন, বড় কোনো সমস্যা হয়নি। তাদের চিকিৎসা চলছে, আশা করছি তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। এর আগে মিয়ানমার থেকে বুধবার যে যাত্রীদের নিয়ে বিমানের ওই ফ্লাইটের ফেরার কথা ছিল, তারা ইয়াঙ্গুন বিমানবন্দরে আটকা পড়েছিলেন। তাদের নিয়ে আসার জন্য বিমানের বিশেষ ফ্লাইট বিজি ১০৬০ রাতে ঢাকা থেকে মিয়ানমার পাঠানো হয়। পরবর্তীতে বৃহস্পতিবার ভোর পৌনে ৫টায় ১৭ জন অপেক্ষমাণ যাত্রীকে নিয়ে ফ্লাইটটি ঢাকায় ফেরে। বিমানের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দূর্ঘটনায় পড়া উড়োজাহাজটিতে আগুন না ধরলেও ফিউজিলাজ ভেঙে তিন টুকরো হয়েছে। ফরোয়ার্ড প্যাসেঞ্জার ডোরের পেছনে এবং রিয়ার সার্ভিস ডোরের ঠিক পেছনে কাঠামো ভেঙে গেছে। উড়োজাহাজের তলাও ফেটে গেছে। ডান পাশের ডানাও জোড়া থেকে ভেঙে গেছে।
এ অবস্থায় উড়োজাহাজটি মেরামত করে পূণরায় ব্যবহার করা সম্ভব না। এ বিষয়ে শাকিল মেরাজ বলেন, আমরা যেটুকু ছবিতে দেখেছি, একটা হিউজ ইমপ্যাক্ট তৈরি হয়েছে অ্যাক্সিডন্টের পর, বডির স্ট্রাকচারাল ড্যামেজ হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করার জন্য বিমানের পক্ষ থেকে গ্রাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারদের একটি টিম সেখানে গেছেন। তারা সেখান থেকে এসে অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট দিলে আমরা মিডিয়া আপডেট দেব। এদিকে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে যেসব যাত্রী আহত হয়েছেন, তাদের চিকিৎসা খরচ ও ক্ষতিপূরণ দেবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। শাকিল মেরাজ বলেন, উড়োজাহাজটি বীমার আওতায় রয়েছে। বীমার শর্ত অনুসারে আহত যাত্রীরা ক্ষতিপূরণ পাবেন। তবে কে কতটা আহত হয়েছেন এসব পর্যবেক্ষণ করে বীমা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। জানা গেছে, দূর্ঘটনায় পড়া ওই ফ্লাইটে বাংলাদেশের ১৫ জন, চীনের পাঁচ জন, মিয়ানমারের তিন জন, ডেনমার্কের একজন, ফ্রান্সের একজন, ব্রিটেনের দু’জন, কানাডার একজন ও ভারতের একজন যাত্রী ছিলেন। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, চীনের দু’জন, মিয়ানমারের দু’জন, ভারতের একজন, কানাডার একজন ও বাংলাদেশের ১২ জন যাত্রী।
এতে আগুন লাগেনি। বিমানযাত্রীরা বলছেন পাইলটের তাৎক্ষণিক বুদ্ধিমত্তার কারণে বড় প্রাণহানি থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে।
এছাড়া দুর্ঘটনায় পড়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ড্যাশ-৮ কিউ-৪০০ (রেজিস্ট্রেশন নং এস২-এজিকিউ) উড়োজাহাজটি এর আগে কয়েক দফা দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায়।
২০১৫ সালে এপ্রিলে মিশরের স্মার্ট এভিয়েশন থেকে লীজ নেয়া হয় এ এয়ারক্রাফটি। আট বছর দুই মাস বয়সী এ উড়োজাহাজটি অপারেশনের উপযোগী না হলেও প্রতিদিন চার-পাঁচটি রুটে চালানো হতো। বিমান সূত্রে জানা গেছে, মিশরের স্মার্ট এভিয়েশন কোম্পানির কাছ থেকে ২০১৫ সালের এপ্রিলে ৫ বছরের জন্য দুটি ড্যাশ ৮ কিউ-৪০০ উড়োজাহাজ (রেজিস্ট্রেশন নং এস২-এজিকিউ ও এস২-এজিআর) লীজে আনে বিমান। এই উড়োজাহাজের ভাড়া বাবদ বিমান কর্তৃপক্ষকে প্রতি মাসে ১ লাখ ৬৮ হাজার ডলার অর্থ খরচ করতে হচ্ছে।
বিমান সূত্রে জানা গেছে, দূর্ঘটনায় পড়া উড়োজাহাজটি গত ৬ই মার্চ হায়দরাবাদ থেকে সি-চেক (বড় ধরনের মেরামত) সেরে দেশে আসার পথেই এয়ারক্রাফটটির ইঞ্জিনের ওপরে থাকা ব্ল্যাংকেট পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ফলে ইঞ্জিন অস্বাভাবিক উত্তপ্ত হয়ে পড়ে এবং ইঞ্জিন অয়েল বিপজ্জনক মাত্রায় চলে আসে। তখন আকাশেই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। কিন্তু অল্পের জন্য রক্ষা পায়। যদিও বিমানটিতে ওই সময় কোনো যাত্রী ছিল না। সেদিন এয়ারক্রাফটটির নিউমেটিক লাইনের পাইপে ক্ল্যাপ খোলা ছিল। যে কারণে, অয়েল লিক করায় এই সমস্যা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ই মার্চ ব্ল্যাংকেট পুড়ে যাওয়ার পর কানাডার-বোম্বারডিয়ান কোম্পানির প্রতিনিধিরা এসে উড়োজাহাজটিকে চলাচলের ঘোষণা দিলে বিমান আবার সেটিকে অপারেশনে নিয়ে আসে। তার দুই মাসের মধ্যেই বিধ্বস্ত হলো সেটি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিন টুকরো হয়ে যাওয়ায় উড়োজাহাজটি বিমান বহরে আর যুক্ত হতে পারবে না। এর আগে গত ২৫শে জানুয়ারি এয়ারক্রাফটটিকে ভারতের হায়দারাবাদের ‘জিএমআর অ্যারো টেক কোম্পানি’তে পাঠানো হয় ‘সি-চেক’ করানোর জন্য। ১৫ দিনে ‘সি-চেক’ শেষ করার কথা থাকলেও সময় লেগে যায় প্রায় দেড় মাস। আবার সমস্যা সারানোর বদলে নতুন সমস্যা তৈরি করে এয়ারক্রাফটটিকে ঢাকায় পাঠানো হয়। এ ঘটনার পর ‘জিএমআর অ্যারো টেক কোম্পানি’র সি-চেকের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিবুল হক জানান, কিছুদিন আগে হায়দারাবাদ থেকে সি- চেক সেরে দেশে ফেরার পথে আকাশে বিকল হওয়া এয়ারক্রাফটিকে কেন অপারেশনে রাখা হচ্ছে- তা খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে পরিস্থিত বুঝে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি করা হবে। আগামীতে বিমানবহরে লিজের নামে নিম্নমানের উড়োজাহাজ যোগ করা বন্ধ করব। এদিকে উড়োজাহাজটি ভারত থেকে ঠিক করে আনার দুই মাস না যেতেই আবারও দুর্ঘটনার কবলে পড়ল বিমানের এজিকিউ। জরাজীর্ণ এই এয়ারক্রাফট গত বুধবার বিকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে। বিমানটিতে পাইলটের দায়িত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন শামিম নজরুল। মিয়ানমারের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ২২মিনিটে দেশটির ইয়াংগুন বিমানবন্দরের রানওয়েতে ওই দুর্ঘটনা ঘটে।
বিমানটিতে পাইলট ও কেবিন ক্রুসহ মোট ৩৪ জন আরোহী ছিলেন। ৩০ জন আরোহীর মধ্যে একজন শিশু, পাইলট ও কেবিন ক্রু ছিলেন আরও চারজন। তাদের মধ্যে আহত ১৯ জনকে ইয়াংগুনের নর্থ ওকলাপা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার তদন্তে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে এ কমিটি করা হয়। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের চিফ অব ফ্লাইট সেফটি শোয়েব চৌধুরীকে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে। তিনিসহ এ কমিটিতে রয়েছেন ছয়জন। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ জানান, বিমানে চিফ অব ফ্লাইট সেইফটি ক্যাপ্টেন শোয়েব চৌধুরী ৬ সদস্যের তদন্ত দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ড্যাস ৮-কিউ ৪০০ উড়োজাহাজটির ক্ষতি নিরূপণে বিমানের গ্রাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারদের একটি দল মিয়ানমারে গেছে।
শাকিল মেরাজ বলেন, ইয়াঙ্গুন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ওই উড়োজাহাজের আরোহীদের মধ্যে মোট ১৮ জনকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করেছিল। তাদের মধ্যে চারজনকে বুধবার রাতেই প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়া হয়েছে। বাকিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি বলেন, মিয়ানমারে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা সেখানে আছেন। তারা সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নিচ্ছেন, তদারকি করছেন। যে ১৪ জন সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদের সর্বোচ্চ ভালো চিকিৎসা দেয়ার জন্য যা যা করা দরকার, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে তার সবকিছুই করা হচ্ছে। শাকিল মেরাজ বলেন, বিমানের কান্ট্রি ম্যানেজার মীর আক্তার সেখানে আছেন, গতকাল সন্ধা থেকে সার্বক্ষণিক আপডেট নিচ্ছেন। এখন পর্যন্ত সব ঠিক ঠাক আছে।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী যাত্রীদের জন্য যে ধরনের সাপোর্ট লাগবে সেটা বিমানের পক্ষ থেকে দেয়া হবে। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হল, এই দুর্ঘটনায়, আমাদের যাত্রী এবং ক্রু, সবাই নিরাপদে আছেন, বড় কোনো সমস্যা হয়নি। তাদের চিকিৎসা চলছে, আশা করছি তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। এর আগে মিয়ানমার থেকে বুধবার যে যাত্রীদের নিয়ে বিমানের ওই ফ্লাইটের ফেরার কথা ছিল, তারা ইয়াঙ্গুন বিমানবন্দরে আটকা পড়েছিলেন। তাদের নিয়ে আসার জন্য বিমানের বিশেষ ফ্লাইট বিজি ১০৬০ রাতে ঢাকা থেকে মিয়ানমার পাঠানো হয়। পরবর্তীতে বৃহস্পতিবার ভোর পৌনে ৫টায় ১৭ জন অপেক্ষমাণ যাত্রীকে নিয়ে ফ্লাইটটি ঢাকায় ফেরে। বিমানের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দূর্ঘটনায় পড়া উড়োজাহাজটিতে আগুন না ধরলেও ফিউজিলাজ ভেঙে তিন টুকরো হয়েছে। ফরোয়ার্ড প্যাসেঞ্জার ডোরের পেছনে এবং রিয়ার সার্ভিস ডোরের ঠিক পেছনে কাঠামো ভেঙে গেছে। উড়োজাহাজের তলাও ফেটে গেছে। ডান পাশের ডানাও জোড়া থেকে ভেঙে গেছে।
এ অবস্থায় উড়োজাহাজটি মেরামত করে পূণরায় ব্যবহার করা সম্ভব না। এ বিষয়ে শাকিল মেরাজ বলেন, আমরা যেটুকু ছবিতে দেখেছি, একটা হিউজ ইমপ্যাক্ট তৈরি হয়েছে অ্যাক্সিডন্টের পর, বডির স্ট্রাকচারাল ড্যামেজ হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করার জন্য বিমানের পক্ষ থেকে গ্রাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারদের একটি টিম সেখানে গেছেন। তারা সেখান থেকে এসে অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট দিলে আমরা মিডিয়া আপডেট দেব। এদিকে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে যেসব যাত্রী আহত হয়েছেন, তাদের চিকিৎসা খরচ ও ক্ষতিপূরণ দেবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। শাকিল মেরাজ বলেন, উড়োজাহাজটি বীমার আওতায় রয়েছে। বীমার শর্ত অনুসারে আহত যাত্রীরা ক্ষতিপূরণ পাবেন। তবে কে কতটা আহত হয়েছেন এসব পর্যবেক্ষণ করে বীমা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। জানা গেছে, দূর্ঘটনায় পড়া ওই ফ্লাইটে বাংলাদেশের ১৫ জন, চীনের পাঁচ জন, মিয়ানমারের তিন জন, ডেনমার্কের একজন, ফ্রান্সের একজন, ব্রিটেনের দু’জন, কানাডার একজন ও ভারতের একজন যাত্রী ছিলেন। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, চীনের দু’জন, মিয়ানমারের দু’জন, ভারতের একজন, কানাডার একজন ও বাংলাদেশের ১২ জন যাত্রী।
No comments