চীনে যেভাবে একটি শহরকে ‘জেলখানায়’ রূপ দেয়া হয়েছে
চীনের
উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রাচীন শহর কাশগড়। এ শহরের হাজার হাজার উইঘুর ও
অন্যান্য মুসলিমকে গ্রেপ্তার করে আটক রাখা হয়েছে বিভিন্ন ক্যাম্পে। ফলে
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কড়া নিন্দা জানিয়েছে। কিন্তু ওই ক্যাম্পগুলোর বাইরে
যেসব উইঘুর আছেন, তারা কি ভালো আছেন? কার্যত তারা বন্দি জীবন যাপন করছেন। এ
রিপোর্ট প্রকাশ করেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।
এতে বলা হয়েছে চীন নিয়ন্ত্রণের একটি কড়া নেটওয়ার্ক বিস্তার ঘটিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দেশটির কমিউনিস্ট পার্টি তাদের কর্তৃত্ববাদকে আরো জোরালো করেছে। প্রতিবেশীদের বানানো হয়েছে তথ্যপ্রদানকারী বা ইনফরমার।
শিশুদের ধরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। নজরদারি করা হয় মসজিদগুলোতে। এ বিষয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক লিখেছেন, আমরা সেখানকার বাস্তব জীবন কেমন তা প্রত্যক্ষ করতে বেশ কয়েকবার কাশগড় পরিদর্শন করেছি। স্থানীয়দের সাক্ষাৎকার নিতে পারি নি। কারণ, বিদেশি সাংবাদিকদের এমন সাক্ষাৎকার দিলে তাতে তাদের জীবন ঝুঁকিতে পড়তে পারে। আমাদেরকে অব্যাহতভাবে নজরদারি করছিল পুলিশ। সর্বত্রই ছিল এক রকম বিধিনিষেধ।
প্রতি ১০০ গজ দূরত্বে পুলিশের চেকপয়েন্ট। সেখানে তারা বন্দুক, ঢাল নিয়ে অবস্থান করছে। তাদের অনেকে আবার উইঘুর। এ কাজে কিছু উইঘুরকে নিয়োগ না দিলে নজরদারি করাটা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। মুসলিম সংখ্যালঘুদের লাইনে দাঁড়িয়ে প্রদর্শন করতে হয় তাদের সরকারি পরিচয়পত্র। বড় বড় চেকপয়েন্টে তাদের থুঁতনি উঁচু করে দাঁড়াতে হয়। ছবি তোলা হয়। তারপর তাদের শনাক্ত করে সিদ্ধান্ত দেয়া হয় তারা যেতে পারবেন কিনা। কখনো কখনো উইঘুর মুসলিমদের মোবাইল ফোন নিয়ে নেয় পুলিশ। তা চেক করে দেখে তারা এমন কোনো সফটওয়্যার ইন্সটল করেছে কিনা, যা দিয়ে ফোনকল ও ম্যাসেজ মনিটরিং করা যায়।
চীনের সর্ব পশ্চিমে সিনজিয়ান। এখানকার মানুষগুলো মনে করে তারা এর চেয়েও বেশি মধ্য এশিয়ার। এখানে আছে জাতিগত সংখ্যালঘু- উইঘুর, কাজাখ, তাজিক। বসবাসকারী হ্যান চীনাদের চেয়ে তাদের সংখ্যা বেশি। এসব জাতিগত সংখ্যালঘুর বেশির ভাগই সুন্নী মুসলিম। তাদের রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি ও ভাষা।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিককে বেশ কয়েকবার একজন পুলিশ কর্মকর্তা থামিয়েছেন। তার মোবাইল ফোন চেক করেছেন। দেখেছেন তাতে কি কি ছবি আছে। যদি স্পর্শকাতর কিছু থাকে তাহলে তা তিনি ডিলিট বা মুছে দিয়েছেন। কখনো কখনো তাদের এই পছন্দ বা অপছন্দের বিষয়টি কোনো কিছু বিবেচনা করে হয় না। একজন পুলিশ কর্মকর্তা একটি উটের ছবি মুছে দিয়েছেন। কিন্তু কেন? এর কোনো ব্যাখ্যা নেই। ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, চীনে কেন বলতে কোনো প্রশ্ন নেই।
উইঘুরদের জন্য এই নজরদারি আরো বেশি পরিব্যাপ্ত। প্রতিবেশীরা মনিটরিং করে বিশেষ কোনো পরিবারের ওপর। পুলিশ ও নজরদারি কর্মকর্তারা যেকোনো উইঘুরকে প্রশ্ন করতে পারে। তাদের বাড়িঘর তল্লাশি করতে পারে। তিন বছর আগে কাশগড় থেকে তুরস্কে পালিয়ে গিয়েছেন দিলনুর। তারপর থেকে তিনি সিনজিয়ানে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারেন নি। তবে তিনি তল্লাশির বিষয়টি স্মরণ করতে পারেন। তিনি বলেন, সকাল বা রাত হোক কোনো কিছুর পরোয়া না করেই তল্লাশি চালানো হয়। তারা যখনই চায় তখনই তল্লাশি করতে পারে, যেকোনো সময়ে। আটক ব্যক্তিদের বাচ্চাদের এতিমের মতো নিয়ে যাওয়া হয়েছে দূরে। আমরা জানি না তাদের সংখ্যা কত। তবে সরকার বলছে, শুধু গত বছরে কাশগড়ে এমন ৭০০০ শিশুকে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এখানেই শেষ নয়। সর্বত্রই বিরাজমান নজরদারিকারী ক্যামেরা বসানো। রাস্তা, ঘরের দরজা, দোকান, মসজিদ- সব স্থানেই এমন ক্যামেরা বসানো। নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক লিখেছেন, আমরা শুধু একটি সড়কের এক অংশে এমন ২০টি ক্যামেরা গণনা করে দেখেছি। একটি ছোট্ট দোকানে স্থানীয় অনেক মানুষ প্রতিদিন সমুচা কিনতে যান। এই দোকানটিতে এবং এর পাশের প্রতিটি দোকানে এমন ক্যামেরা বসিয়ে মনিটরিং করা হচ্ছে। এসব ক্যামেরা ও চেকপয়েন্টের মাধ্যমে জনগণ সম্পর্কে তথ্য শুষে নেয়া হচ্ছে। কিন্তু এসব ছবি, তথ্য কে যাচাই করে দেখছে?
এই প্রযুক্তি বিক্রি করে চীনা কোম্পানিগুলো প্রচুর অর্থ আয় করছে। তারা যেন সায়েন্স ফিকশনের অলৌকিকত্বকে বাস্তবে দেখাতে চাইছে। লেজার ব্যবহার করে লোকজনকে ধরতে সহায়তা করছে। কিন্তু সিনজিয়ানে যদি আপনি সময় কাটান তাহলে দেখতে পাবেন রাষ্ট্রীয় নজরদারির এই বিষয়টি অধিকন্তু আঘাত করার হাতুড়ির সমতুল্য। এর মাধ্যমে নির্বিচারে, বাছবিচারহীনভাবে জনগণকে ভীতির মধ্যে রেখে তাদের ওপর মনিটরিং করা হচ্ছে।
এই ভীতিকর পরিস্থিতি কাজও করছে। ওই সাংবাদিক লিখেছেন, আমরা শহরের কয়েকটি মসজিদপরিদর্শন করেছি, যা তখনও খোলা ছিল। এমন একটি মসজিদ হলো শহরের বিখ্যাত ঈদ গা মসজিদ। সেখানে শুক্রবার জুমার নামাজের দিন মাত্র কয়েক ডজন মুসল্লি যোগ দিয়েছিলেন। এর দু’চার বছর আগে, এ নামাজ আদায় করতে এখানে আসতেন কয়েক হাজার মুসল্লি। এখানে নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লিদের প্রথমে নিবন্ধিত করা হয়। তারপর তাদেরকে নিরাপত্তা তল্লাশির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এরপরই মসজিদের ভিতরে প্রবেশ করতে পারেন। মসজিদের ভিতরে বসানো আছে নজরদারি করা ক্যামেরা। এই ক্যামেরা দিয়ে পুলিশ মনিটরিং করে ভিতরে কি হচ্ছে।
শিশুদের পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দিলনুর বলেছেন, কিন্ডারগার্টেনে ছোট্ট ছোট্ট শিশুদের তারা জিজ্ঞেস করে- তোমার বাবা-মা কি পবিত্র কোরআন পড়েন? আমার মেয়ের এক সহপাঠী একদিন বলেছিল- আমার মা আমাকে পবিত্র কোরআন শিক্ষা দেন। এর পরের দিন তারা কোথায় গেছেন বা তাদের কি হয়েছে কেউ বলতে পারেন না।
কাশগড়ে যে ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে তার মধ্য দিয়ে শহরকে নিয়ন্ত্রণ করা আরো সহজ হয়ে গেছে। শহরের পুরনো অংশ, মাটির তৈরি বাড়িগুলোর বেশির ভাগই ভেঙেচুরে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। সরকার বলেছে, এটা করা হয়েছে নিরাপত্তা ও পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য। সেখানে সড়ক প্রশস্ত করা হয়েছে। এর ফলে নজরদারি ও টহল সহজ হয়েছে। অনেক এলাকায় এখনও ধ্বংস চালিয়ে সেখানে পুনর্গঠন করা হচ্ছে এভাবে। ইটের তৈরি নতুন বাড়িগুলো অধিক আরামদায়ক। কিন্তু উইঘুররা তাদের পুরনো বাড়িঘরের জন্য, পুরনো প্রতিবেশীদের জন্য বেদনাবোধ করেন। নতুন করে সাজানো এসব এলাকা দেখে পর্যটকরা বিস্মিত হন। কিন্তু তাদের ওইসব শিবির, যেখানে উইঘুরদের আটক রাখা হয়েছে, সেখান থেকে দূরে রাখা হয়।
২০১৬ সালের আগস্টে কাশগড়ের দক্ষিণে একখণ্ড জমি ছিল ফাঁকা। এখন সেটা নতুন করে ‘রি-এডুকেশন’ সেন্টার বানানো হয়েছে। তাতে আছেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ। সরকার বলছে, এটা হলো একটি ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। সাম্প্রতিক স্যাটেলাইটের ছবিতে দেখা গেছে, এই ক্যাম্পটি ২০ লাখ বর্গফুট এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। এটাই এখানকার একমাত্র শিবির বা ক্যাম্প নয়। কাশগড়ে এমন ১৩টি ক্যাম্প আছে। তা এই ক্যাম্পটির আকারকে ছাড়িয়ে গেছে। গত বছর তার আয়তন ছিল এক কোটি বর্গফুটেরও বেশি।
পর্যটকরা ফিরে যান সেখানে। কিন্তু বহু উইঘুর এখনও বসবাস করছেন ক্ষয়ক্ষতির আতঙ্ক নিয়ে। মুখ ফসকে বেরিয়ে যাওয়া একটি মন্তব্য, একজন প্রতিহিংসামূলক প্রতিবেশী, একটি ভীতসন্ত্রস্ত শিশু- এসবের কারণে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হতে পারে। চালানো হতে পারে তল্লাশি। আর গন্তব্য হতে পারে কুখ্যাত ওইসব শিবির।
এতে বলা হয়েছে চীন নিয়ন্ত্রণের একটি কড়া নেটওয়ার্ক বিস্তার ঘটিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দেশটির কমিউনিস্ট পার্টি তাদের কর্তৃত্ববাদকে আরো জোরালো করেছে। প্রতিবেশীদের বানানো হয়েছে তথ্যপ্রদানকারী বা ইনফরমার।
শিশুদের ধরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। নজরদারি করা হয় মসজিদগুলোতে। এ বিষয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক লিখেছেন, আমরা সেখানকার বাস্তব জীবন কেমন তা প্রত্যক্ষ করতে বেশ কয়েকবার কাশগড় পরিদর্শন করেছি। স্থানীয়দের সাক্ষাৎকার নিতে পারি নি। কারণ, বিদেশি সাংবাদিকদের এমন সাক্ষাৎকার দিলে তাতে তাদের জীবন ঝুঁকিতে পড়তে পারে। আমাদেরকে অব্যাহতভাবে নজরদারি করছিল পুলিশ। সর্বত্রই ছিল এক রকম বিধিনিষেধ।
প্রতি ১০০ গজ দূরত্বে পুলিশের চেকপয়েন্ট। সেখানে তারা বন্দুক, ঢাল নিয়ে অবস্থান করছে। তাদের অনেকে আবার উইঘুর। এ কাজে কিছু উইঘুরকে নিয়োগ না দিলে নজরদারি করাটা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। মুসলিম সংখ্যালঘুদের লাইনে দাঁড়িয়ে প্রদর্শন করতে হয় তাদের সরকারি পরিচয়পত্র। বড় বড় চেকপয়েন্টে তাদের থুঁতনি উঁচু করে দাঁড়াতে হয়। ছবি তোলা হয়। তারপর তাদের শনাক্ত করে সিদ্ধান্ত দেয়া হয় তারা যেতে পারবেন কিনা। কখনো কখনো উইঘুর মুসলিমদের মোবাইল ফোন নিয়ে নেয় পুলিশ। তা চেক করে দেখে তারা এমন কোনো সফটওয়্যার ইন্সটল করেছে কিনা, যা দিয়ে ফোনকল ও ম্যাসেজ মনিটরিং করা যায়।
চীনের সর্ব পশ্চিমে সিনজিয়ান। এখানকার মানুষগুলো মনে করে তারা এর চেয়েও বেশি মধ্য এশিয়ার। এখানে আছে জাতিগত সংখ্যালঘু- উইঘুর, কাজাখ, তাজিক। বসবাসকারী হ্যান চীনাদের চেয়ে তাদের সংখ্যা বেশি। এসব জাতিগত সংখ্যালঘুর বেশির ভাগই সুন্নী মুসলিম। তাদের রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি ও ভাষা।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিককে বেশ কয়েকবার একজন পুলিশ কর্মকর্তা থামিয়েছেন। তার মোবাইল ফোন চেক করেছেন। দেখেছেন তাতে কি কি ছবি আছে। যদি স্পর্শকাতর কিছু থাকে তাহলে তা তিনি ডিলিট বা মুছে দিয়েছেন। কখনো কখনো তাদের এই পছন্দ বা অপছন্দের বিষয়টি কোনো কিছু বিবেচনা করে হয় না। একজন পুলিশ কর্মকর্তা একটি উটের ছবি মুছে দিয়েছেন। কিন্তু কেন? এর কোনো ব্যাখ্যা নেই। ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, চীনে কেন বলতে কোনো প্রশ্ন নেই।
উইঘুরদের জন্য এই নজরদারি আরো বেশি পরিব্যাপ্ত। প্রতিবেশীরা মনিটরিং করে বিশেষ কোনো পরিবারের ওপর। পুলিশ ও নজরদারি কর্মকর্তারা যেকোনো উইঘুরকে প্রশ্ন করতে পারে। তাদের বাড়িঘর তল্লাশি করতে পারে। তিন বছর আগে কাশগড় থেকে তুরস্কে পালিয়ে গিয়েছেন দিলনুর। তারপর থেকে তিনি সিনজিয়ানে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারেন নি। তবে তিনি তল্লাশির বিষয়টি স্মরণ করতে পারেন। তিনি বলেন, সকাল বা রাত হোক কোনো কিছুর পরোয়া না করেই তল্লাশি চালানো হয়। তারা যখনই চায় তখনই তল্লাশি করতে পারে, যেকোনো সময়ে। আটক ব্যক্তিদের বাচ্চাদের এতিমের মতো নিয়ে যাওয়া হয়েছে দূরে। আমরা জানি না তাদের সংখ্যা কত। তবে সরকার বলছে, শুধু গত বছরে কাশগড়ে এমন ৭০০০ শিশুকে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এখানেই শেষ নয়। সর্বত্রই বিরাজমান নজরদারিকারী ক্যামেরা বসানো। রাস্তা, ঘরের দরজা, দোকান, মসজিদ- সব স্থানেই এমন ক্যামেরা বসানো। নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক লিখেছেন, আমরা শুধু একটি সড়কের এক অংশে এমন ২০টি ক্যামেরা গণনা করে দেখেছি। একটি ছোট্ট দোকানে স্থানীয় অনেক মানুষ প্রতিদিন সমুচা কিনতে যান। এই দোকানটিতে এবং এর পাশের প্রতিটি দোকানে এমন ক্যামেরা বসিয়ে মনিটরিং করা হচ্ছে। এসব ক্যামেরা ও চেকপয়েন্টের মাধ্যমে জনগণ সম্পর্কে তথ্য শুষে নেয়া হচ্ছে। কিন্তু এসব ছবি, তথ্য কে যাচাই করে দেখছে?
এই প্রযুক্তি বিক্রি করে চীনা কোম্পানিগুলো প্রচুর অর্থ আয় করছে। তারা যেন সায়েন্স ফিকশনের অলৌকিকত্বকে বাস্তবে দেখাতে চাইছে। লেজার ব্যবহার করে লোকজনকে ধরতে সহায়তা করছে। কিন্তু সিনজিয়ানে যদি আপনি সময় কাটান তাহলে দেখতে পাবেন রাষ্ট্রীয় নজরদারির এই বিষয়টি অধিকন্তু আঘাত করার হাতুড়ির সমতুল্য। এর মাধ্যমে নির্বিচারে, বাছবিচারহীনভাবে জনগণকে ভীতির মধ্যে রেখে তাদের ওপর মনিটরিং করা হচ্ছে।
এই ভীতিকর পরিস্থিতি কাজও করছে। ওই সাংবাদিক লিখেছেন, আমরা শহরের কয়েকটি মসজিদপরিদর্শন করেছি, যা তখনও খোলা ছিল। এমন একটি মসজিদ হলো শহরের বিখ্যাত ঈদ গা মসজিদ। সেখানে শুক্রবার জুমার নামাজের দিন মাত্র কয়েক ডজন মুসল্লি যোগ দিয়েছিলেন। এর দু’চার বছর আগে, এ নামাজ আদায় করতে এখানে আসতেন কয়েক হাজার মুসল্লি। এখানে নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লিদের প্রথমে নিবন্ধিত করা হয়। তারপর তাদেরকে নিরাপত্তা তল্লাশির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এরপরই মসজিদের ভিতরে প্রবেশ করতে পারেন। মসজিদের ভিতরে বসানো আছে নজরদারি করা ক্যামেরা। এই ক্যামেরা দিয়ে পুলিশ মনিটরিং করে ভিতরে কি হচ্ছে।
শিশুদের পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দিলনুর বলেছেন, কিন্ডারগার্টেনে ছোট্ট ছোট্ট শিশুদের তারা জিজ্ঞেস করে- তোমার বাবা-মা কি পবিত্র কোরআন পড়েন? আমার মেয়ের এক সহপাঠী একদিন বলেছিল- আমার মা আমাকে পবিত্র কোরআন শিক্ষা দেন। এর পরের দিন তারা কোথায় গেছেন বা তাদের কি হয়েছে কেউ বলতে পারেন না।
কাশগড়ে যে ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে তার মধ্য দিয়ে শহরকে নিয়ন্ত্রণ করা আরো সহজ হয়ে গেছে। শহরের পুরনো অংশ, মাটির তৈরি বাড়িগুলোর বেশির ভাগই ভেঙেচুরে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। সরকার বলেছে, এটা করা হয়েছে নিরাপত্তা ও পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য। সেখানে সড়ক প্রশস্ত করা হয়েছে। এর ফলে নজরদারি ও টহল সহজ হয়েছে। অনেক এলাকায় এখনও ধ্বংস চালিয়ে সেখানে পুনর্গঠন করা হচ্ছে এভাবে। ইটের তৈরি নতুন বাড়িগুলো অধিক আরামদায়ক। কিন্তু উইঘুররা তাদের পুরনো বাড়িঘরের জন্য, পুরনো প্রতিবেশীদের জন্য বেদনাবোধ করেন। নতুন করে সাজানো এসব এলাকা দেখে পর্যটকরা বিস্মিত হন। কিন্তু তাদের ওইসব শিবির, যেখানে উইঘুরদের আটক রাখা হয়েছে, সেখান থেকে দূরে রাখা হয়।
২০১৬ সালের আগস্টে কাশগড়ের দক্ষিণে একখণ্ড জমি ছিল ফাঁকা। এখন সেটা নতুন করে ‘রি-এডুকেশন’ সেন্টার বানানো হয়েছে। তাতে আছেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ। সরকার বলছে, এটা হলো একটি ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। সাম্প্রতিক স্যাটেলাইটের ছবিতে দেখা গেছে, এই ক্যাম্পটি ২০ লাখ বর্গফুট এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। এটাই এখানকার একমাত্র শিবির বা ক্যাম্প নয়। কাশগড়ে এমন ১৩টি ক্যাম্প আছে। তা এই ক্যাম্পটির আকারকে ছাড়িয়ে গেছে। গত বছর তার আয়তন ছিল এক কোটি বর্গফুটেরও বেশি।
পর্যটকরা ফিরে যান সেখানে। কিন্তু বহু উইঘুর এখনও বসবাস করছেন ক্ষয়ক্ষতির আতঙ্ক নিয়ে। মুখ ফসকে বেরিয়ে যাওয়া একটি মন্তব্য, একজন প্রতিহিংসামূলক প্রতিবেশী, একটি ভীতসন্ত্রস্ত শিশু- এসবের কারণে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হতে পারে। চালানো হতে পারে তল্লাশি। আর গন্তব্য হতে পারে কুখ্যাত ওইসব শিবির।
No comments