সুদানের গণঅভ্যুত্থানের মুখ by মিসবাহুল হক
বিক্ষোভকারী
লাখো মানুষের মাঝে একটি সাদা রঙের প্রাইভেট কারের ওপরে দাঁড়িয়ে আছেন
অভিজাত পোশাক পরিহিতা নারী আলা সালাহ। উচ্চস্বরে স্লোগান দিয়ে উজ্জীবিত
করছেন আন্দোলনকারীদের। তার কানের দুলে প্রতিফলিত হচ্ছে অস্তপ্রায় সূর্যের
ছবি। সেটি যেন সুদানে দীর্ঘ ৩০ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসানের ইঙ্গিত
দিচ্ছে। অবশেষে সত্যিই লাখো সুদানির আন্দোলন সফলতার মুখ দেখেছে। পর পর
দুইদিনে দু’দফা সরকার পতনের বিরল কৃতিত্ব দেখিয়েছে তারা। আর এতে সরব
অংশগ্রহণ করেছে আলা সালাহর মতো হাজার হাজার সুদানি নারী।
সফল আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতনের পর এই আলা সালাহ পরিচিতি পেয়েছেন কান্দাকা বা নুবিয়ান রানী হিসেবে।
সুদানের প্রাচীন কুশ সাম্র্রাজ্যের রানীদেরকে কান্দাকা বলা হতো। এর অধিবাসীরা নুবিয়ান জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। ওই সাম্র্রাজ্যের রানীরা সাহসিকতা ও বীরত্বের জন্য বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হতেন। সুদানীরা তাদের প্রাচীন সেই রানীর সঙ্গে আলা সালাহর মিল খুঁজে পেয়েছেন। তাকে আখ্যায়িত করেছেন এ যুগের কান্দাকা বা নুবিয়ান রানী হিসেবে।
বৃহস্পতিবার তীব্র আন্দোলনের মুখে সুদানে ওমর আল বশিরের ৩০ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটে। তাকে সরিয়ে দিয়ে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। কিন্তু সেই সরকারের প্রধানও ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্টের অনুগত হওয়ায় আন্দোলন চালিয়ে যায় সুদানিরা। উপায়ান্তর না দেখে অবশেষে সেই সরকারও শুক্রবার বিদায় নেয়। আর এর মধ্য দিয়ে রচিত হয়েছে সুদানিদের অসাধারণ বীরত্বগাথা। যাতে আরো একবার ফুটে উঠেছে সুদানি নারীদের সাহসিকতার গল্প।
খার্তুমের আর্মি হেড কোয়ার্টারের সামনে স্ল্লোগানরত আলা সালাহর একটি ছবি অনলাইন জগতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যান তিনি। তার সাহসিকতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয় গোটা বিশ্ব। এক সাক্ষাৎকারে বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, এদেশের বিপ্লবগুলোতে সবসময়ই নারীরা অংশ নিয়েছে। ইতিহাসের দিকে তাকালে আপনি দেখবেন, আমাদের সব রানীই রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। এই বিপ্লবে অংশ নিয়ে আমি খুবই গর্বিত। আশা করি, আমাদের বিপ্লব কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করবে।
সুদান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড আর্কিটেকচার বিভাগের শিক্ষার্থী আলা সালাহ রাতারাতি অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি একটি টুইটার অ্যাকাউন্টও চালু করেছেন তিনি। এতে ভক্তদের ধন্যবাদ জানিয়ে টুইটও করেছেন। বলেছেন, গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ সুদান গঠনে সংগ্রাম অব্যাহত রাখবেন তিনি। আরেকটি টুইটে বলেছেন, আমি তরুণদের পক্ষে কথা বলতে চেয়েছিলাম। আমি সামনে এগিয়ে বলতে চেয়েছি, সুদান সবার জন্য। আলা সালাহর এসব কথার প্রশংসায় পঞ্চমুখ ভক্তরা। জাতীয় বীর, আদর্শ নেতা- এ জাতীয় মন্তব্যে ভরে উঠেছে তার টুইটার অ্যাকাউন্ট।
তবে দুঃখজনক বিষয় হলো, গত বৃহস্পতিবার সকালে এক বার্তায় তিনি জানান, ছবি ভাইরাল হওয়ার পর হত্যার হুমকি পেতে শুরু করেছেন তিনি। টুইটারে এ খবর জানিয়ে তিনি লেখেন, আমি মাথা নত করবো না। আমার কণ্ঠরোধ করা যাবে না।
প্রসঙ্গত, সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরের পতনের দাবিতে প্রায় চার মাস ধরে আন্দোলন চলছিল। বৃহস্পতিবার এক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী আওয়াদ বিন আউফের নেতৃত্বে ক্ষমতা গ্রহণ করে সেনাবাহিনী। অভ্যুত্থানের পরেও আবারো বশিরের অনুগত প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে দেশের প্রধান হিসেবে মানতে পারেনি সুদানের জনগণ।
এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে খার্তুমের সেনা সদর দপ্তরের সামনে অবস্থান নেয় হাজার হাজার মানুষ। দীর্ঘ এই আন্দোলনে নারীদের সরব উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। গত শনিবার থেকে আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ ব্যাপকহারে বাড়তে থাকে। আলা সালাহ বলেন, এ ধরনের আন্দোলনে নারীরা শুধু নিজেদের অধিকারের জন্য না, বরং পুরো সমাজের অধিকার রক্ষার দাবিতে অংশ নেয়। নারী ও সমাজের অধিকারের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সুদানের নারীরা সবসময়ই তাদের তরুণ সন্তানদেরকে সংগ্রামে উৎসাহিত করেন। এটা প্রাচীন সুদানের ইতিহাসের অংশ।
সালাহ আরো জানান, ১৯শে ডিসেম্বর আন্দোলন শুরুর পর থেকে তিনি সক্রিয়ভাবে এতে অংশ নিয়েছেন।
প্রাথমিকভাবে শুরু হওয়া ওই আন্দোলন ক্রমেই বশির বিরোধী জাতীয় আন্দোলনে রূপ নেয়। গ্রাম, গঞ্জ, শহর সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলনের ঢেউ। এর পরেও বশির ক্ষমতা ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান। তিনি জরুরি অবস্থা জারি করেন। দীর্ঘ এই আন্দোলনে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪৯ জন। তবে কোনো কিছুতেই শেষ রক্ষা করতে পারেননি বশির।
সফল আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতনের পর এই আলা সালাহ পরিচিতি পেয়েছেন কান্দাকা বা নুবিয়ান রানী হিসেবে।
সুদানের প্রাচীন কুশ সাম্র্রাজ্যের রানীদেরকে কান্দাকা বলা হতো। এর অধিবাসীরা নুবিয়ান জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। ওই সাম্র্রাজ্যের রানীরা সাহসিকতা ও বীরত্বের জন্য বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হতেন। সুদানীরা তাদের প্রাচীন সেই রানীর সঙ্গে আলা সালাহর মিল খুঁজে পেয়েছেন। তাকে আখ্যায়িত করেছেন এ যুগের কান্দাকা বা নুবিয়ান রানী হিসেবে।
বৃহস্পতিবার তীব্র আন্দোলনের মুখে সুদানে ওমর আল বশিরের ৩০ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটে। তাকে সরিয়ে দিয়ে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। কিন্তু সেই সরকারের প্রধানও ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্টের অনুগত হওয়ায় আন্দোলন চালিয়ে যায় সুদানিরা। উপায়ান্তর না দেখে অবশেষে সেই সরকারও শুক্রবার বিদায় নেয়। আর এর মধ্য দিয়ে রচিত হয়েছে সুদানিদের অসাধারণ বীরত্বগাথা। যাতে আরো একবার ফুটে উঠেছে সুদানি নারীদের সাহসিকতার গল্প।
খার্তুমের আর্মি হেড কোয়ার্টারের সামনে স্ল্লোগানরত আলা সালাহর একটি ছবি অনলাইন জগতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যান তিনি। তার সাহসিকতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয় গোটা বিশ্ব। এক সাক্ষাৎকারে বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, এদেশের বিপ্লবগুলোতে সবসময়ই নারীরা অংশ নিয়েছে। ইতিহাসের দিকে তাকালে আপনি দেখবেন, আমাদের সব রানীই রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। এই বিপ্লবে অংশ নিয়ে আমি খুবই গর্বিত। আশা করি, আমাদের বিপ্লব কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করবে।
সুদান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড আর্কিটেকচার বিভাগের শিক্ষার্থী আলা সালাহ রাতারাতি অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি একটি টুইটার অ্যাকাউন্টও চালু করেছেন তিনি। এতে ভক্তদের ধন্যবাদ জানিয়ে টুইটও করেছেন। বলেছেন, গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ সুদান গঠনে সংগ্রাম অব্যাহত রাখবেন তিনি। আরেকটি টুইটে বলেছেন, আমি তরুণদের পক্ষে কথা বলতে চেয়েছিলাম। আমি সামনে এগিয়ে বলতে চেয়েছি, সুদান সবার জন্য। আলা সালাহর এসব কথার প্রশংসায় পঞ্চমুখ ভক্তরা। জাতীয় বীর, আদর্শ নেতা- এ জাতীয় মন্তব্যে ভরে উঠেছে তার টুইটার অ্যাকাউন্ট।
তবে দুঃখজনক বিষয় হলো, গত বৃহস্পতিবার সকালে এক বার্তায় তিনি জানান, ছবি ভাইরাল হওয়ার পর হত্যার হুমকি পেতে শুরু করেছেন তিনি। টুইটারে এ খবর জানিয়ে তিনি লেখেন, আমি মাথা নত করবো না। আমার কণ্ঠরোধ করা যাবে না।
প্রসঙ্গত, সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরের পতনের দাবিতে প্রায় চার মাস ধরে আন্দোলন চলছিল। বৃহস্পতিবার এক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী আওয়াদ বিন আউফের নেতৃত্বে ক্ষমতা গ্রহণ করে সেনাবাহিনী। অভ্যুত্থানের পরেও আবারো বশিরের অনুগত প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে দেশের প্রধান হিসেবে মানতে পারেনি সুদানের জনগণ।
এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে খার্তুমের সেনা সদর দপ্তরের সামনে অবস্থান নেয় হাজার হাজার মানুষ। দীর্ঘ এই আন্দোলনে নারীদের সরব উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। গত শনিবার থেকে আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ ব্যাপকহারে বাড়তে থাকে। আলা সালাহ বলেন, এ ধরনের আন্দোলনে নারীরা শুধু নিজেদের অধিকারের জন্য না, বরং পুরো সমাজের অধিকার রক্ষার দাবিতে অংশ নেয়। নারী ও সমাজের অধিকারের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সুদানের নারীরা সবসময়ই তাদের তরুণ সন্তানদেরকে সংগ্রামে উৎসাহিত করেন। এটা প্রাচীন সুদানের ইতিহাসের অংশ।
সালাহ আরো জানান, ১৯শে ডিসেম্বর আন্দোলন শুরুর পর থেকে তিনি সক্রিয়ভাবে এতে অংশ নিয়েছেন।
প্রাথমিকভাবে শুরু হওয়া ওই আন্দোলন ক্রমেই বশির বিরোধী জাতীয় আন্দোলনে রূপ নেয়। গ্রাম, গঞ্জ, শহর সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলনের ঢেউ। এর পরেও বশির ক্ষমতা ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান। তিনি জরুরি অবস্থা জারি করেন। দীর্ঘ এই আন্দোলনে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪৯ জন। তবে কোনো কিছুতেই শেষ রক্ষা করতে পারেননি বশির।
No comments