সাক্ষাৎকারে ফেরদৌস: বৈশাখের র্যালি ভেবে সেদিন গিয়েছিলাম by ওয়ালিউল বিশ্বাস
ভারতে
নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নেওয়ার বিতর্কের মধ্য দিয়ে ১৬ এপ্রিল ভারত থেকে
দেশে ফিরেছেন নায়ক ফেরদৌস। স্থগিত হয়েছে তার ভারতীয় ভিসা। আর এ কারণে
টলিউডে এখন হুমকির মুখে পড়েছে তাকে নিয়ে নির্মিতব্য ছবিগুলো। এমনটাই জানান
দিচ্ছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। আটকে গেছে ‘দত্তা’সহ নতুন বেশক’টি চলচ্চিত্রের
কাজ। কেন সেদিন নির্বাচনি প্রচারণায় গিয়েছিলেন ফেরদৌস বা কাদের কথায় সেখানে
গিয়েছিলেন—তা নিয়ে এবার মুখ খুললেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এ নায়ক।
পত্রিকাটিতে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সেদিনের ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তুলে
ধরলেন তিনি। বাংলা ট্রিবিউন পাঠকদের জন্য থাকলো তা-
প্রশ্ন: ভারতের রাজনৈতিক দল তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচনি প্রচারণায় যুক্ত হলেন কীভাবে?
উত্তর: আমি আসলে তাদের নির্বাচনি প্রচারণায় যুক্ত ছিলাম না। আমার এক প্রযোজক বন্ধু রায়গঞ্জ (নির্বাচনি এলাকা) থাকেন। যখনই তিনি ঢাকা আসেন আমরা একসঙ্গে আড্ডা দিতাম। খুবই ভালো সম্পর্ক আমাদের। মূলত তিন বছর আগে তার নির্মিত ‘ছেড়ে যাস না' ছবিতে আমি কাজ করেছিলাম। সেই থেকে তার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব। সেদিন অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল আমরা চলচ্চিত্রের ডিজিটাল রাইট নিয়ে কথা বলছিলাম। পাশাপাশি আমরা নতুন চলচ্চিত্র নিয়েও আলোচনা করছিলাম। অঙ্কুশ ও পায়েলও সেখানে ছিল। আমার কিছু সহকর্মী পহেলা বৈশাখের র্যালিতে যাওয়ার কথা বলে। আমি বলি, বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখে বেশ বড় আকারে র্যালি করা হয়। বলি, চলো মজা হবে। সরল মনে, আগেপিছে কিছু না ভেবে সেখানে গিয়েছিলাম আমি। তাদের র্যালি প্রসঙ্গে আমি পুরোপুরি জানতাম না। এটি পূর্বনির্ধারিত ছিল না এবং কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রতি আনুগত্যের প্রদর্শনী ছিল না এবং আবার কারও প্রতি কোনও অসম্মান প্রকাশও ছিল না সেটা।
প্রশ্ন: র্যালিটি (পহেলা বৈশাখ) যে রাজনৈতিকভাবে আয়োজিত, এ বিষয়টি আপনি কখন জানতে পারলেন?
উত্তর: র্যালি শেষে আমি ফিরে আসছিলাম। তখন রাত হয়ে গিয়েছিল। প্রযোজক বন্ধুর বাসায় নৈশভোজ শেষ করে ফিরছিলাম। তখন দেখি আমার মোবাইলে মেসেজ আসা শুরু হয়েছে। অনেকে জানতে চাইছেন, যার র্যালি মাত্র করে এসেছি তৃণমূল কংগ্রেসের সেই প্রার্থী কানাইয়ালাল আগারওয়ালকে আমি চিনি কিনা? সত্যি বলতে, আমি তাকে চিনতাম না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও দেখলাম আমার ছবি ভাইরাল হয়ে গেছে। এর পরদিনই আমি কলকাতা চলে আসি। এবং ঢাকায় চলে আসার জন্য প্রস্তুতি নিই। ততক্ষণে বুঝতে পারি, এটা বিশাল বড় একটি ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। এরপর আমি টিকিট অনুযায়ী ঢাকা ফেরত আসি।
প্রশ্ন: আপনি ভারতের কালো তালিকাভুক্ত হয়েছেন। একজন শিল্পীর জন্য এটা বড় বাধা। আর আপনার জন্য এটি অনেক বড় বিষয়ও। কারণ, আপনি একসঙ্গে দুই বাংলায় কাজ করেন। বিষয়টি নিয়ে কী ভাবছেন?
উত্তর: দুই দশক ধরে আমি কলকাতা ও বাংলাদেশে কাজ করছি। আমার প্রথম চলচ্চিত্র ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ ১৯৯৮ সালে দুই বাংলায় মুক্তি পায়। চলচ্চিত্র ছাড়াও নানা উৎসবে আমি কলকাতায় আমন্ত্রিত হয়েছি। সেখানে আমাকে কখনও বিদেশি মনে হয়নি। কারণ, তারা আমাকে সেভাবেই ‘ট্রিট’ করত। কলকাতায় চলচ্চিত্রের অনেক বন্ধুই আমার আছে। আমি বাংলাদেশি, কিন্তু কলকাতা আমার দ্বিতীয় বাড়ি। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে ভারতের ভিসা সংক্রান্ত নিয়মের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। আমার বোকামির জন্যই এমন জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তাই আমি তাদের সব শর্ত বা আরোপের প্রতি সম্মান জানাবো।
প্রশ্ন: দেশের ফেরার পর কেমন প্রতিক্রিয়া পেলেন?
উত্তর: বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমার ভালোবাসা অবিরাম এবং আমি তাদের আবেগকে সম্মান জানাই। আমার মনে হয়, দর্শকদের আমার অনভিপ্রেত ভুল প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা দিতে পেরেছি। আমি বাংলাদেশের নাগরিক, তাই অন্য যে কোনও দেশে নির্বাচনি প্রচারাভিযানে অংশগ্রহণ করাটা আমার জন্য ভুল। আমি এই অপ্রত্যাশিত ভুলের জন্য নিঃশর্তভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। পাশাপাশি, আমি চাই না যে আমার জন্য দুই দেশের সম্পর্ক শীতল হোক। 'কালো তালিকাভুক্ত' হচ্ছে আমার ভুলের শাস্তি। আমি মনে করি, সময়ই সবকিছু ঠিক করে দেবে এবং সবকিছু আগের মতোই হবে।
প্রশ্ন: আপনার বেশ কিছু অসম্পূর্ণ কাজ রয়েছে কলকাতায়। এগুলোর বিষয়ে তাহলে সিদ্ধান্ত কী হবে?
উত্তর: আমার দু’টি চলচ্চিত্র ‘সাধের জোনাকি’ ও ‘তুই যদি আমার হতিস’-এর কাজ শেষ। এখন এ দুটি মুক্তির অপেক্ষায় আছে। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের সঙ্গে ‘দত্তা’ ছবির কাজ মাত্র শুরু করেছিলাম। আমি তাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে আমার যদি কোনও অবদান থাকে, সেখানের দর্শকরাও ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি। আমার ভুলের লোকসান প্রযোজকের দেওয়ার কোনও যুক্তি আমি দেখি না।
উল্লেখ্য, ভারত সফরে গিয়ে গত ১৪ ও ১৫ এপ্রিল রায়গঞ্জের তৃণমূল প্রার্থী কানাইয়ালাল আগরওয়ালের হয়ে স্থানীয় চলচ্চিত্র শিল্পীদের সঙ্গে ভোট প্রচারে গিয়েছিলেন ফেরদৌস। স্থানীয় বিজেপি দাবি তোলে, বাংলাদেশের অভিনেতা টুরিস্ট ভিসা নিয়ে এসে এভাবে ভোটের প্রচার করতে পারেন না। এতে যেমন নির্বাচনি বিধি ভঙ্গ হয়েছে, তেমনই ভিসার শর্তও লঙ্ঘন হয়েছে। মঙ্গলবার নির্বাচনি কর্মকর্তার দফতরে গিয়ে বাংলাদেশের অভিনেতা ফেরদৌসকে গ্রেফতারের দাবিও জানান বিজেপি নেতারা। এছাড়াও রায়গঞ্জ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দফতরে তার বিরুদ্ধে নালিশ করা হয়।
পরে জানা যায়, ‘দত্তা’ নামের একটি সিনেমার শুটিংয়ের জন্য সম্প্রতি বিজনেস ভিসায় ভারতে গিয়েছিলেন দুই বাংলার জনপ্রিয় এই অভিনেতা।
এদিকে ঢাকায় ফিরে গতকাল (১৭ এপ্রিল) পুরো বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন ফেরদৌস। বললেন, ‘ভারতের নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নেওয়াটা আমার ভুল ছিল। এর জন্য আমি দুঃখিত।’
প্রশ্ন: ভারতের রাজনৈতিক দল তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচনি প্রচারণায় যুক্ত হলেন কীভাবে?
উত্তর: আমি আসলে তাদের নির্বাচনি প্রচারণায় যুক্ত ছিলাম না। আমার এক প্রযোজক বন্ধু রায়গঞ্জ (নির্বাচনি এলাকা) থাকেন। যখনই তিনি ঢাকা আসেন আমরা একসঙ্গে আড্ডা দিতাম। খুবই ভালো সম্পর্ক আমাদের। মূলত তিন বছর আগে তার নির্মিত ‘ছেড়ে যাস না' ছবিতে আমি কাজ করেছিলাম। সেই থেকে তার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব। সেদিন অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল আমরা চলচ্চিত্রের ডিজিটাল রাইট নিয়ে কথা বলছিলাম। পাশাপাশি আমরা নতুন চলচ্চিত্র নিয়েও আলোচনা করছিলাম। অঙ্কুশ ও পায়েলও সেখানে ছিল। আমার কিছু সহকর্মী পহেলা বৈশাখের র্যালিতে যাওয়ার কথা বলে। আমি বলি, বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখে বেশ বড় আকারে র্যালি করা হয়। বলি, চলো মজা হবে। সরল মনে, আগেপিছে কিছু না ভেবে সেখানে গিয়েছিলাম আমি। তাদের র্যালি প্রসঙ্গে আমি পুরোপুরি জানতাম না। এটি পূর্বনির্ধারিত ছিল না এবং কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রতি আনুগত্যের প্রদর্শনী ছিল না এবং আবার কারও প্রতি কোনও অসম্মান প্রকাশও ছিল না সেটা।
প্রশ্ন: র্যালিটি (পহেলা বৈশাখ) যে রাজনৈতিকভাবে আয়োজিত, এ বিষয়টি আপনি কখন জানতে পারলেন?
উত্তর: র্যালি শেষে আমি ফিরে আসছিলাম। তখন রাত হয়ে গিয়েছিল। প্রযোজক বন্ধুর বাসায় নৈশভোজ শেষ করে ফিরছিলাম। তখন দেখি আমার মোবাইলে মেসেজ আসা শুরু হয়েছে। অনেকে জানতে চাইছেন, যার র্যালি মাত্র করে এসেছি তৃণমূল কংগ্রেসের সেই প্রার্থী কানাইয়ালাল আগারওয়ালকে আমি চিনি কিনা? সত্যি বলতে, আমি তাকে চিনতাম না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও দেখলাম আমার ছবি ভাইরাল হয়ে গেছে। এর পরদিনই আমি কলকাতা চলে আসি। এবং ঢাকায় চলে আসার জন্য প্রস্তুতি নিই। ততক্ষণে বুঝতে পারি, এটা বিশাল বড় একটি ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। এরপর আমি টিকিট অনুযায়ী ঢাকা ফেরত আসি।
প্রশ্ন: আপনি ভারতের কালো তালিকাভুক্ত হয়েছেন। একজন শিল্পীর জন্য এটা বড় বাধা। আর আপনার জন্য এটি অনেক বড় বিষয়ও। কারণ, আপনি একসঙ্গে দুই বাংলায় কাজ করেন। বিষয়টি নিয়ে কী ভাবছেন?
উত্তর: দুই দশক ধরে আমি কলকাতা ও বাংলাদেশে কাজ করছি। আমার প্রথম চলচ্চিত্র ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ ১৯৯৮ সালে দুই বাংলায় মুক্তি পায়। চলচ্চিত্র ছাড়াও নানা উৎসবে আমি কলকাতায় আমন্ত্রিত হয়েছি। সেখানে আমাকে কখনও বিদেশি মনে হয়নি। কারণ, তারা আমাকে সেভাবেই ‘ট্রিট’ করত। কলকাতায় চলচ্চিত্রের অনেক বন্ধুই আমার আছে। আমি বাংলাদেশি, কিন্তু কলকাতা আমার দ্বিতীয় বাড়ি। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে ভারতের ভিসা সংক্রান্ত নিয়মের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। আমার বোকামির জন্যই এমন জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তাই আমি তাদের সব শর্ত বা আরোপের প্রতি সম্মান জানাবো।
প্রশ্ন: দেশের ফেরার পর কেমন প্রতিক্রিয়া পেলেন?
উত্তর: বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমার ভালোবাসা অবিরাম এবং আমি তাদের আবেগকে সম্মান জানাই। আমার মনে হয়, দর্শকদের আমার অনভিপ্রেত ভুল প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা দিতে পেরেছি। আমি বাংলাদেশের নাগরিক, তাই অন্য যে কোনও দেশে নির্বাচনি প্রচারাভিযানে অংশগ্রহণ করাটা আমার জন্য ভুল। আমি এই অপ্রত্যাশিত ভুলের জন্য নিঃশর্তভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। পাশাপাশি, আমি চাই না যে আমার জন্য দুই দেশের সম্পর্ক শীতল হোক। 'কালো তালিকাভুক্ত' হচ্ছে আমার ভুলের শাস্তি। আমি মনে করি, সময়ই সবকিছু ঠিক করে দেবে এবং সবকিছু আগের মতোই হবে।
প্রশ্ন: আপনার বেশ কিছু অসম্পূর্ণ কাজ রয়েছে কলকাতায়। এগুলোর বিষয়ে তাহলে সিদ্ধান্ত কী হবে?
উত্তর: আমার দু’টি চলচ্চিত্র ‘সাধের জোনাকি’ ও ‘তুই যদি আমার হতিস’-এর কাজ শেষ। এখন এ দুটি মুক্তির অপেক্ষায় আছে। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের সঙ্গে ‘দত্তা’ ছবির কাজ মাত্র শুরু করেছিলাম। আমি তাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে আমার যদি কোনও অবদান থাকে, সেখানের দর্শকরাও ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি। আমার ভুলের লোকসান প্রযোজকের দেওয়ার কোনও যুক্তি আমি দেখি না।
উল্লেখ্য, ভারত সফরে গিয়ে গত ১৪ ও ১৫ এপ্রিল রায়গঞ্জের তৃণমূল প্রার্থী কানাইয়ালাল আগরওয়ালের হয়ে স্থানীয় চলচ্চিত্র শিল্পীদের সঙ্গে ভোট প্রচারে গিয়েছিলেন ফেরদৌস। স্থানীয় বিজেপি দাবি তোলে, বাংলাদেশের অভিনেতা টুরিস্ট ভিসা নিয়ে এসে এভাবে ভোটের প্রচার করতে পারেন না। এতে যেমন নির্বাচনি বিধি ভঙ্গ হয়েছে, তেমনই ভিসার শর্তও লঙ্ঘন হয়েছে। মঙ্গলবার নির্বাচনি কর্মকর্তার দফতরে গিয়ে বাংলাদেশের অভিনেতা ফেরদৌসকে গ্রেফতারের দাবিও জানান বিজেপি নেতারা। এছাড়াও রায়গঞ্জ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দফতরে তার বিরুদ্ধে নালিশ করা হয়।
পরে জানা যায়, ‘দত্তা’ নামের একটি সিনেমার শুটিংয়ের জন্য সম্প্রতি বিজনেস ভিসায় ভারতে গিয়েছিলেন দুই বাংলার জনপ্রিয় এই অভিনেতা।
এদিকে ঢাকায় ফিরে গতকাল (১৭ এপ্রিল) পুরো বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন ফেরদৌস। বললেন, ‘ভারতের নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নেওয়াটা আমার ভুল ছিল। এর জন্য আমি দুঃখিত।’
No comments