রক্তাক্ত লঙ্কা পেছনে কারা?
এত্ত
লাশ! এত্ত নৃশংসতা! মানুষের ছিন্নভিন্ন দেহাংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে চারদিকে। তার
মাঝে যারা বেঁচে ছিলেন তাদের কারো হাত নেই। কারো উড়ে গেছে পায়ের অংশবিশেষ।
রক্তাক্ত শার্ট গায়ে কেউবা হামাগুড়ি দিচ্ছিলেন বাঁচার আশায়। চারদিকে
কাকুতি। রক্তে রঞ্জিত শ্রীলঙ্কা। এ এক বীভৎস দৃশ্য। সন্ত্রাসী হামলায় রক্তে
ভেসে গেছে পবিত্র উপাসনালয় গির্জা ও পাঁচ তারকা হোটেল।
সেই সঙ্গে রক্ত ঝরেছে শ্রীলঙ্কান তো বটেই, সারা বিশ্বের মানুষের হৃদয়ে। শোকে স্তব্ধ চারপাশ। গৃহযুদ্ধে শ্রীলঙ্কানরা লাশ দেখেছেন অকাতরে। কিন্তু তারপর একসঙ্গে এত্ত লাশ, এত্ত বীভৎসতা সম্ভবত তারা দেখেন নি আর কখনো। বেদনায় মুষড়ে পড়েছে মানুষ। ধর্ম বর্ণ, নির্বিশেষে মানুষ এমন হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। মানবতার সেবায় এগিয়ে গিয়েছেন সব জাতির মানুষ। তার প্রমাণ মিলেছে রক্ত দেয়ার লাইনে। রক্ত দিতে মানুষের ভিড় পড়ে গিয়েছিল। সেখানে ছিলেন মুসলিমরাও। রোববার সিরিজ বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ২৯০। আহত হয়েছেন প্রায় ৫০০ মানুষ। তার মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এজন্য নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
সোমবার, হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি সংগঠন জামায়াত আল তাওহীদ। সংগঠনটির পূর্ন নাম জামায়াত আল-তাওহীদ আল ওয়াতানিয়া। তাদের দায় স্বীকারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে রুশ বার্তা সংস্থা তাস। এ ছাড়া সৌদি আরবের আল-অ্যারাবিয়া চ্যানেল সবার আগে দায় স্বীকারের খবর প্রকাশ করে। ইসলামপন্থী এ সংগঠনটি শ্রীলংকা ভিত্তিক বলে জানা গেছে। দায় স্বীকার সম্পর্কে কোন বিস্তারিত তথ্য জানায়নি আল-অ্যারাবিয়া। এর আগে সংগঠনটির নাম ন্যাশনাল তৌহিদ জামাত বা এনটিজে বলে জানা গিয়েছিলো। ধারণা করা হচ্ছে, জামাত আল তৌহিদ আল ওয়াতানিয়া এনটিজের কোন গ্রুপ হতে পারে। হামলার একদিন পর সংগঠনটি দায় স্বীকার করল।
রোববার অভিজাত গির্জা ও পাঁচ তারকা হোটেলে ওই হামলার পর দেশটিতে আরো সন্ত্রাসী হামলার হুঁশিয়ারি দেয়া সত্ত্বেও সোমবার সকালের দিকে প্রত্যাহার করা হয় কারফিউ। পরে অনলাইন বিবিসি জানায়, নিরাপত্তার জন্য সরকার নতুন করে স্থানীয় সময় সোমবার রাত ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৪টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করেছে। ভয়াবহ এই হামলার পর আরো হামলা হতে পারে- এমন আতঙ্কে সরকার লোকজনকে ঘর হতে বের না হতে পরামর্শ দেয়। রাস্তায় রাস্তায় টহল দিতে দেখা যায় সেনাবাহিনীকে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত নিরাপত্তা রক্ষী। একদিকে শোক। আর একদিকে আতঙ্ক। সব মিলিয়ে অন্যরকম এক দৃশ্য শ্রীলঙ্কায়।
সরকারের ফরেনসিক বিভাগের সিনিয়র কর্মকর্তা ও তদন্তকারী আরিয়ানন্দ ওয়েলিঙ্গা বলেছেন, গির্জা ও হোটেলে ভয়াবহ ওই হামলা চালিয়েছে সাত আত্মঘাতী বোমারু। তার মধ্যে সাংগ্রি-লা হোটেলে নিজেদেরকে উড়িয়ে দেয় দুই আত্মঘাতী। অন্যরা তিনটি গির্জা ও দু’টি হোটেলে হামলা চালায়। এ ছাড়া চতুর্থ একটি হোটেল ও একটি বাড়িতে টার্গেট করা হয়েছিল। তবে কীভাবে এসব হামলা হয়েছে, সে বিষয়ে সরাসরি সরকারি বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ওয়েলিঙ্গা বলেছেন, এ বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন।
রোববার সকালে ইস্টার সানডে উপলক্ষে গির্জায় যখন মানুষ প্রার্থনার জন্য সমবেত হয়েছিল, ঠিক তখন দু’টি গির্জায় সন্ত্রাসীরা আত্মঘাতী বোমা হামলা করে। ২০ মিনিট সময়ের মধ্যে রাজধানী কলম্বো ও এর আশপাশের চারটি হোটেলেও হামলা হয়। চারটি বোমা হামলা হয় সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে। এরপর ২০ মিনিটের মধ্যে অন্য হামলাগুলো হয়। এতে রক্তে রঞ্জিত হয় ওইসব স্থান। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ৩৬ জন বিদেশি। আছেন বৃটিশ, মার্কিনি, তুর্কি, ভারতীয়, চীনা, ড্যানিশ, ডাচ্, পর্তুগীজ নাগরিক। সকাল ৮.৪৫ মিনিটে একই সঙ্গে চারটি স্থানে বিস্ফোরণ ঘটে। এগুলো হলো কলম্বোর সাংগ্রি-লা হোটেল, কলম্বোর কোচ্চিকাড়েতে অবস্থিত সেইন্ট অ্যান্থনি চার্চ, নেগোম্বোতে অবস্থিত সেইন্ট সেবাস্তিয়ান ক্যাথলিক চার্ট ও কিংসবারি হোটেলে। এর দু’ঘণ্টা পরে হামলা হয় নিউ ট্রপিক্যাল ইন হোটেল ও কলম্বোর দেমাতাগোড়ায় একটি এপার্টমেন্টে। এসব স্থান থেকে খবর আসতে থাকে লাশের সংখ্যা বাড়ছে।
হামলার সময় প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা ছিলেন বিদেশে। দ্রুত তিনি দেশে ফিরে আসেন। তার ফিরে আসার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে রোববার দিনের শেষে কলম্বো বিমানবন্দরের রুট পরিষ্কার করছিল সেনাবাহিনী। এ সময় বিমানবন্দরের ডিপার্চার গেটের কাছেই একটি বোমা উদ্ধার করা হয়। পরে তা ধ্বংস করে দেয়া হয়। সোমবার প্রেসিডেন্ট দেশের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন। এতে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী রণিল বিক্রমাসিংহে।
হামলার নেপথ্যে কে?: শ্রীলঙ্কার সরকার বিশ্বাস করে স্থানীয় একটি ইসলামপন্থি সন্ত্রাসী সংগঠন রোববারের ভয়াবহ সিরিজ হামলার সঙ্গে জড়িত। ন্যাশনাল তাওহীদ জামায়াত (এনটিজে) নামের ওই সংগঠনটি এর আগেও শ্রীলঙ্কায় বেশকিছু সামপ্রদায়িক হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল। শ্রীলঙ্কা সরকারের মুখপাত্র রাজিথা সেনারত্ন সোমবার এক বিবৃতিতে এ কথা জানান। সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য সেনারত্ন আরো বলেন, ইতিমধ্যে সরকার ওই হামলার সঙ্গে আন্তর্জাতিক মদত রয়েছে কিনা সে বিষয়ে তদন্ত চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে দায় স্বীকার করেছে জামায়াত আল-তাওহীদ। বলা হচ্ছে এটি এনটিজে এর পরিবর্তীত নাম কিংবা এর কোনো শাখা। তবে এ নামে আরও কয়েকটি সংগঠন থাকায় এ নিয়ে রয়েছে ব্যাপক অসপষ্টতা।
শ্রীলঙ্কার পুলিশ প্রধান পুজুথ জয়াসুন্দরা ১০ দিন আগেই দিয়েছিলেন সতর্কবার্তা। তিনি শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে ১১ই এপ্রিল সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন। তাতে বলা হয়েছিলো উগ্রপন্থি মুসলিম গোষ্ঠী ন্যাশনাল তাওহীদ জামায়াত (এনটিজে) শ্রীলঙ্কার প্রধান গির্জাগুলোতে আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করছে। কলম্বোতে ভারতীয় হাইকমিশনেও হামলার পরিকল্পনা রয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন ওই আত্মঘাতী হামলা হলো তা তদন্ত করছে দেশটি। কেন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ব্যর্থ হলো তা খতিয়ে দেখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী রণিল বিক্রমাসিংহে।
এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে এ হামলার প্রধান পরিকল্পনাকারী হচ্ছেন মৌলভী জাহরান হাশিম। তাকে এনটিজের একজন ইমাম হিসেবে দাবি করেছে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো। সিএনএন জানিয়েছে, হাশিম ৪ঠা এপ্রিল ওই হামলার পরিকল্পনা করে। ইউটিউবে প্রকাশিত তার কিছু ভিডিওতে উস্কানিমূলক বক্তব্যও পাওয়া যায়। তবে রোববারের হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে এনটিজে। একইসঙ্গে, এ হামলার তীব্র নিন্দাও জানিয়েছে সংগঠনটি। তাই হামলার নেপথ্যে কে রয়েছে তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশার।
এদিকে, হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে হাশিমের নাম ছড়িয়ে পড়ার সমালোচনা করেছেন আল-জাজিরা সাংবাদিক সাইফ খালিদ। তিনি বলেন, মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলো ইসলাম ভীতির পরিচয় দিচ্ছে। প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতেই মুসলিমদের ওপর দোষ চাপানোকে ‘ইসলামোফোবিক’ আচরণ বলে বর্ণনা করেছেন তিনি। খালিদ একই সঙ্গে এ হামলার পর ভারতীয় গণমাধ্যমের আচরণকে অমার্জিত বলে আখ্যায়িত করেন।
রোববার হামলার পর বিকালে কলম্বোতে একটি এপার্টমেন্ট ঘেরাও করে পুলিশ। সেখানে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এ সময় তিন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ২৪ জনকে। তারা সবাই শ্রীলঙ্কার নাগরিক। আরো সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কায় স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে বড় বড় হোটেল ও বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্রের সামনে অবস্থান নিয়েছে সেনাবাহিনী। রোববার দেশটির প্রধান বিমানবন্দরে আটকে পড়া বিপুল সংখ্যক মানুষ সোমবার বিমানবন্দর ছাড়ে। হামলার পর পরই সরকার ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ সহ সব বড় বড় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দেয়।
উগ্রবাদী সংগঠন তাওহীদ জামায়াত সমপর্কে তেমন কিছু জানা যায় না। গত বছর দেশটির একটি বুদ্ধ ভাস্কর্য ধ্বংসের মধ্য দিয়ে আলোচনায় আসে সংগঠনটি। ধারণা করা হচ্ছে হামলার পর আটক ২৪ জনই এনটিজের সদস্য। তবে তাদের সাংগঠনিক শক্তি দেশজুড়ে এত বড় সিরিজ হামলা চালানোয় সক্ষম কিনা সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দেশটির সরকারের দাবি স্থানীয় সংগঠনগুলো এত বড় হামলা পরিচালনায় সক্ষম নয়। সেনারত্ন বিবৃতিতে বলেন, এককভাবে স্থানীয় কোনো সংগঠন এভাবে হামলা চালাতে পারে না। এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক জড়িত। আন্তর্জাতিক হাত না থাকলে এ হামলা সফল হতো না।
এদিকে হামলার দায় এখনো কেউ স্বীকার করেনি এবং হামলার পর কারো থেকে কোনো ধরনের বার্তাও পাওয়া যায়নি। ফলে নিশ্চিতভাবে কোনো গোষ্ঠী বা মতাদর্শকে দায়ী করা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। ইতিমধ্যে শ্রীলঙ্কায় হামলার প্রেক্ষিতে ভোট চেয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। হামলার পেছনে পার্শ্ববর্তী কোনো দেশের হাত রয়েছে কিনা সে সন্দেহের কথাও তুলে ধরেছেন অনেক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী। একইসঙ্গে আগাম তথ্য থাকার পরও এত বড় হামলা আটকাতে কেনো ব্যর্থ হলো শ্রীলঙ্কার গোয়েন্দারা সেটি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তার করা হলো কীভাবে?: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্সিয়াল সেক্রেটারিয়েটের উপদেষ্টা ও সমন্বয়কারী সেক্রেটারি শিরাল লাকথিলাকা বলেছেন, এরই মধ্যে কয়েকজনকে কলম্বোর সিনামন গ্রান্ট হোটেলে বিস্ফোরণের আগে একটি গাড়িতে সন্দেহজনক গতিবিধির ওপর ভিত্তি করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, তামিল টাইগারদের বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধের উত্তাল সময়েও এমন সিরিজ বোমা হামলা ও এত মানুষ নিহতের ঘটনা ঘটে নি। ২০১১ সালে নাইজেরিয়া ও ২০১৮ সালে পাকিস্তানে যে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল শ্রীলঙ্কার হামলা তারই মতো বলে আমরা দেখতে পাচ্ছি।
রাজধানী কলম্বোতে একটি এপার্টমেন্টে পুলিশি তল্লাশির সময় গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদেরকে নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়া হয়েছে। ফলে এখনই তাদেরকে হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত বলা যাচ্ছে না। হামলাকারীরা যেখানে অবস্থান করছিল, সেই এপার্টমেন্টে তাদেরকে দেখা গেছে। তদন্তকারীরা সন্দেহ করছেন এখনো দুই বা তিনের অধিক বোমা অবিস্ফোরিত অবস্থায় রয়েছে। তা কোথাও পুঁতে রাখা হতে পারে।
শিরাল লাকথিলাকা হামলার পর প্রথম গুরুত্বপূর্ণ এসব তথ্য প্রকাশ করেছেন। তিনি সাক্ষাৎকারে আরো বলেছেন, আমরা কলম্বোর উত্তরাঞ্চলে দেমাতাগোদা এলাকায় একটি এপার্টমেন্টে তাৎক্ষণিকভাবে একটি গাড়ি চিহ্নিত করতে পারি। ওই ভবনটি পরে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা ঘিরে ফেলেন। সেখানে তৃতীয় তলায় তল্লাশি চালাতে কর্মকর্তারা যখন প্রবেশ করবেন তখনই সেখানে আত্মঘাতী এক বোমারু বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে স্পেশাল টাস্কফোর্সের একজন কর্মকর্তা ও দু’জন কনস্টেবল নিহত হন।
নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা ঘাটতি সম্পর্কে তিনি বলেন, সব বিষয়েই বিস্তারিত তদন্ত হবে। এখনই নিরাপত্তায় ঘাটতি নিয়ে কথা বলা ঠিক নয়। আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ভেদ করতে পেরেছে সন্ত্রাসীরা। আমরা সন্দেহ করছি এ হামলায় আন্তর্জাতিক চক্রের ভূমিকা আছে। তবে রাজনৈতিক বা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা সুনির্দিষ্টভাবে এই ট্র্যাজেডির জন্য দায়ী করতে পারছি না। দেশের সব হোটেল ও উপাসনালয়ে নিরাপত্তা কঠোর করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সহায়তার জন্য প্রস্তুত রয়েছে সেনাবাহিনী। যেকোনো সংকটজনক পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত তারা।
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আশঙ্কা: রোববারের হামলার পর শ্রীলঙ্কায় নতুন করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়। কিন্তু দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করায় বড় কোনো দাঙ্গার খবর আসেনি। তবে রোববার দিনশেষে একটি মসজিদে বোমা হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। আরো বলা হয়েছে, মুসলিম মালিকানাধীন দু’টি দোকানে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। দেশটিতে মোট জনসংখ্যা ২ কোটি ২০ লাখ। এর মধ্যে আছে বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলিম, হিন্দু।
হামলাকারী আজম ছিল ব্রেকফাস্ট বুফের লাইনে: পাঁচ তারকা হোটেল সিনামন গ্র্যান্ড হোটেল। রোববার সকালে ব্রেকফাস্ট বুফের লাইনে দাঁড়ানো লোকজন। লম্বা সেই লাইনে অন্য সবার মাঝে ছদ্মবেশ ধারণ করে দাঁড়িয়েছিল এক আত্মঘাতী হামলাকারী। সেই ওই হোটেলের রেস্তোরাঁয় বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। ওই হোটেলের একজন ম্যানেজার এ তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, স্থানীয় সময় রোববার সকাল সাড়ে আটটার দিকে ব্রেকফাস্ট বুফের লাইনে অন্য সব মানুষের সঙ্গে দাঁড়ানো ছিল এক আত্মঘাতী হামলাকারী। সেই ওই হোটেলে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটায়। তার আগে চেকপোস্টে সে মিথ্যে ঠিকানা দেয়। দাবি করে, কলম্বোতে ব্যবসার জন্য গিয়েছে সে।
তারপরই ওই লাইনে দাঁড়িয়ে হামলা চালায় সে। ওই ম্যানেজার আরো বলেছেন, হামলার আগের রাতে হামলাকারী নিজেকে মোহাম্মদ আজম বলে নাম নিবন্ধন করে। সে ব্রেকফাস্ট বুফের লাইনে দাঁড়ানোর পর যখন তাকে খাবার সরবরাহ করা হচ্ছিল ঠিক সেই মুহূর্তে তার পেছনে বেঁধে রাখা বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে সে নিজে ও হোটেলের অনেক অতিথি নিহত হন।
ওই ম্যানেজার ঘটনার বর্ণনা দেন এভাবে- বেশ বিশৃঙ্খল অবস্থা চলছিল। তখন ছিল সকাল সাড়ে আটটা। সবাই ব্যস্ত ছিলেন। পরিবার নিয়ে এসেছেন বেশির ভাগ মানুষ। এ সময় ওই হামলাকারী লাইনে এসে প্রবেশ করে। আস্তে আস্তে সে সামনে চলে যায়। যখন খাবার দেয়া হবে তার ঠিক পূর্ব-মুহূর্তে সে বিস্ফোরণ ঘটায়। অতিথিদেরকে স্বাগত জানাচ্ছিলেন আমাদের ম্যানেজাররা। তাদের একজনও তাৎক্ষণিকভাবে মারা গেছেন।
অল্পের জন্য রক্ষা অভিনেত্রী রাধিকার: অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন বিখ্যাত তামিল অভিনেত্রী রাধিকা শরৎকুমার। তিনিও সিনামন গ্র্যান্ড হোটেলে ছিলেন। বোমা হামলার সামান্য আগেই তিনি বেরিয়ে পড়েন সেখান থেকে। এ বিষয়ে ১৪ লাখ টুইটার অনুসারীর কাছে তিনি লিখেছেন, আমি কলম্বোর সিনামন গ্র্যান্ড হোটেল ত্যাগ করার পর পরই সেখানে বোমা হামলা হয়েছে। এই ভয়াবহতা বিশ্বাস করতে পারছি না।
এ নিয়ে টুইট করেছেন তার স্বামী, অভিনেতা ও ভারতে তামিল রাজনৈতিক দল দ্য অল ইন্ডিয়া সামাথুভা মাক্কাল কাটছি দলের প্রতিষ্ঠাতা আর শরৎকুমারও। তিনি বলেছেন, ভয়াবহ এক সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে কলম্বোতে। এটা নিন্দনীয়। নিরপরাধ যেসব মানুষ প্রাণ হরিয়েছেন তাদের প্রতি আমাদের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা।
জাতিসংঘ মহাসচিবের ঐক্যের আহ্বান: শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরাঁ। তিনি সব ধর্মীয় উপাসনালয়ের পবিত্রতা রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন। আশা প্রকাশ করেছেন, এই হামলায় দায়ীদের দ্রুততার সঙ্গে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। বিবৃতিতে তিনি হতাহতদের পরিবার, শ্রীলঙ্কার জনগণের প্রতি গভীর সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন। এই হামলার সময়ে তিনি শ্রীলঙ্কার জনগণ ও কর্তৃপক্ষের মধ্যে ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব জাতির এই কঠিন সময়ে শ্রীলঙ্কার জনগণ ও সরকারের প্রতি সমর্থন ও সহমর্মিতা পুনর্ব্যক্ত করেন।
বিশ্বনেতাদের নিন্দা: শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী হামলায় প্রায় ৩০০ মানুষ নিহত হওয়ায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন সারা বিশ্বের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতারা। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প, জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরাঁ, বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে, আর্চবিশপ অব ক্যান্টারবারি জাস্টিন ওলেবি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, বৃটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন, পোপ ফ্রাঁসিস ও অন্যান্য নেতারা। নিন্দা জানিয়েছেন ওআইসি’র মহাসচিব ইউসেফ আল ওতাইমিন।
নিন্দা জানিয়েছে শ্রীলঙ্কার মুসলিম কাউন্সিল। তারা একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছে, খ্রিস্টান ভাইবোনেরা তাদের পবিত্র ইস্টার সানডে পালনের সময় তাদের উপাসনালয়ে ও কলম্বোর হোটেলে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। উগ্রপন্থি ও সন্ত্রাসীদের হামলার কারণে নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানিতে আমরা শোকাহত। এ হামলার মাধ্যমে তারা ধর্মীয় ও জাতিগত বিভেদ সৃষ্টি করতে চায়।
আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেবে সরকার: হামলায় নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেবে শ্রীলঙ্কা সরকার। সোমবার সরকারের মুখপাত্র রজিথা সেনারত্নে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, প্রতিজন নিহতের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার খরচ হিসেবে এক লাখ শ্রীলঙ্কান রুপি দেবে সরকার। এ ছাড়া নিহত প্রতিজন প্রতি তার পরিবারকে ১০ লাখ রুপি দেবে সরকার। আহতদের ক্ষতের অবস্থা বিবেচনা করে এক লাখ থেকে তিন লাখ রুপি করে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। তা ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত সব গির্জা মেরামতের খরচ পুরোটাই বহন করবে সরকার। নবায়ন কাজ করবে সরকারই।
সেই সঙ্গে রক্ত ঝরেছে শ্রীলঙ্কান তো বটেই, সারা বিশ্বের মানুষের হৃদয়ে। শোকে স্তব্ধ চারপাশ। গৃহযুদ্ধে শ্রীলঙ্কানরা লাশ দেখেছেন অকাতরে। কিন্তু তারপর একসঙ্গে এত্ত লাশ, এত্ত বীভৎসতা সম্ভবত তারা দেখেন নি আর কখনো। বেদনায় মুষড়ে পড়েছে মানুষ। ধর্ম বর্ণ, নির্বিশেষে মানুষ এমন হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। মানবতার সেবায় এগিয়ে গিয়েছেন সব জাতির মানুষ। তার প্রমাণ মিলেছে রক্ত দেয়ার লাইনে। রক্ত দিতে মানুষের ভিড় পড়ে গিয়েছিল। সেখানে ছিলেন মুসলিমরাও। রোববার সিরিজ বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ২৯০। আহত হয়েছেন প্রায় ৫০০ মানুষ। তার মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এজন্য নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
সোমবার, হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি সংগঠন জামায়াত আল তাওহীদ। সংগঠনটির পূর্ন নাম জামায়াত আল-তাওহীদ আল ওয়াতানিয়া। তাদের দায় স্বীকারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে রুশ বার্তা সংস্থা তাস। এ ছাড়া সৌদি আরবের আল-অ্যারাবিয়া চ্যানেল সবার আগে দায় স্বীকারের খবর প্রকাশ করে। ইসলামপন্থী এ সংগঠনটি শ্রীলংকা ভিত্তিক বলে জানা গেছে। দায় স্বীকার সম্পর্কে কোন বিস্তারিত তথ্য জানায়নি আল-অ্যারাবিয়া। এর আগে সংগঠনটির নাম ন্যাশনাল তৌহিদ জামাত বা এনটিজে বলে জানা গিয়েছিলো। ধারণা করা হচ্ছে, জামাত আল তৌহিদ আল ওয়াতানিয়া এনটিজের কোন গ্রুপ হতে পারে। হামলার একদিন পর সংগঠনটি দায় স্বীকার করল।
রোববার অভিজাত গির্জা ও পাঁচ তারকা হোটেলে ওই হামলার পর দেশটিতে আরো সন্ত্রাসী হামলার হুঁশিয়ারি দেয়া সত্ত্বেও সোমবার সকালের দিকে প্রত্যাহার করা হয় কারফিউ। পরে অনলাইন বিবিসি জানায়, নিরাপত্তার জন্য সরকার নতুন করে স্থানীয় সময় সোমবার রাত ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৪টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করেছে। ভয়াবহ এই হামলার পর আরো হামলা হতে পারে- এমন আতঙ্কে সরকার লোকজনকে ঘর হতে বের না হতে পরামর্শ দেয়। রাস্তায় রাস্তায় টহল দিতে দেখা যায় সেনাবাহিনীকে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত নিরাপত্তা রক্ষী। একদিকে শোক। আর একদিকে আতঙ্ক। সব মিলিয়ে অন্যরকম এক দৃশ্য শ্রীলঙ্কায়।
সরকারের ফরেনসিক বিভাগের সিনিয়র কর্মকর্তা ও তদন্তকারী আরিয়ানন্দ ওয়েলিঙ্গা বলেছেন, গির্জা ও হোটেলে ভয়াবহ ওই হামলা চালিয়েছে সাত আত্মঘাতী বোমারু। তার মধ্যে সাংগ্রি-লা হোটেলে নিজেদেরকে উড়িয়ে দেয় দুই আত্মঘাতী। অন্যরা তিনটি গির্জা ও দু’টি হোটেলে হামলা চালায়। এ ছাড়া চতুর্থ একটি হোটেল ও একটি বাড়িতে টার্গেট করা হয়েছিল। তবে কীভাবে এসব হামলা হয়েছে, সে বিষয়ে সরাসরি সরকারি বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ওয়েলিঙ্গা বলেছেন, এ বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন।
রোববার সকালে ইস্টার সানডে উপলক্ষে গির্জায় যখন মানুষ প্রার্থনার জন্য সমবেত হয়েছিল, ঠিক তখন দু’টি গির্জায় সন্ত্রাসীরা আত্মঘাতী বোমা হামলা করে। ২০ মিনিট সময়ের মধ্যে রাজধানী কলম্বো ও এর আশপাশের চারটি হোটেলেও হামলা হয়। চারটি বোমা হামলা হয় সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে। এরপর ২০ মিনিটের মধ্যে অন্য হামলাগুলো হয়। এতে রক্তে রঞ্জিত হয় ওইসব স্থান। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ৩৬ জন বিদেশি। আছেন বৃটিশ, মার্কিনি, তুর্কি, ভারতীয়, চীনা, ড্যানিশ, ডাচ্, পর্তুগীজ নাগরিক। সকাল ৮.৪৫ মিনিটে একই সঙ্গে চারটি স্থানে বিস্ফোরণ ঘটে। এগুলো হলো কলম্বোর সাংগ্রি-লা হোটেল, কলম্বোর কোচ্চিকাড়েতে অবস্থিত সেইন্ট অ্যান্থনি চার্চ, নেগোম্বোতে অবস্থিত সেইন্ট সেবাস্তিয়ান ক্যাথলিক চার্ট ও কিংসবারি হোটেলে। এর দু’ঘণ্টা পরে হামলা হয় নিউ ট্রপিক্যাল ইন হোটেল ও কলম্বোর দেমাতাগোড়ায় একটি এপার্টমেন্টে। এসব স্থান থেকে খবর আসতে থাকে লাশের সংখ্যা বাড়ছে।
হামলার সময় প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা ছিলেন বিদেশে। দ্রুত তিনি দেশে ফিরে আসেন। তার ফিরে আসার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে রোববার দিনের শেষে কলম্বো বিমানবন্দরের রুট পরিষ্কার করছিল সেনাবাহিনী। এ সময় বিমানবন্দরের ডিপার্চার গেটের কাছেই একটি বোমা উদ্ধার করা হয়। পরে তা ধ্বংস করে দেয়া হয়। সোমবার প্রেসিডেন্ট দেশের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন। এতে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী রণিল বিক্রমাসিংহে।
হামলার নেপথ্যে কে?: শ্রীলঙ্কার সরকার বিশ্বাস করে স্থানীয় একটি ইসলামপন্থি সন্ত্রাসী সংগঠন রোববারের ভয়াবহ সিরিজ হামলার সঙ্গে জড়িত। ন্যাশনাল তাওহীদ জামায়াত (এনটিজে) নামের ওই সংগঠনটি এর আগেও শ্রীলঙ্কায় বেশকিছু সামপ্রদায়িক হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল। শ্রীলঙ্কা সরকারের মুখপাত্র রাজিথা সেনারত্ন সোমবার এক বিবৃতিতে এ কথা জানান। সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য সেনারত্ন আরো বলেন, ইতিমধ্যে সরকার ওই হামলার সঙ্গে আন্তর্জাতিক মদত রয়েছে কিনা সে বিষয়ে তদন্ত চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে দায় স্বীকার করেছে জামায়াত আল-তাওহীদ। বলা হচ্ছে এটি এনটিজে এর পরিবর্তীত নাম কিংবা এর কোনো শাখা। তবে এ নামে আরও কয়েকটি সংগঠন থাকায় এ নিয়ে রয়েছে ব্যাপক অসপষ্টতা।
শ্রীলঙ্কার পুলিশ প্রধান পুজুথ জয়াসুন্দরা ১০ দিন আগেই দিয়েছিলেন সতর্কবার্তা। তিনি শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে ১১ই এপ্রিল সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন। তাতে বলা হয়েছিলো উগ্রপন্থি মুসলিম গোষ্ঠী ন্যাশনাল তাওহীদ জামায়াত (এনটিজে) শ্রীলঙ্কার প্রধান গির্জাগুলোতে আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করছে। কলম্বোতে ভারতীয় হাইকমিশনেও হামলার পরিকল্পনা রয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন ওই আত্মঘাতী হামলা হলো তা তদন্ত করছে দেশটি। কেন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ব্যর্থ হলো তা খতিয়ে দেখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী রণিল বিক্রমাসিংহে।
এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে এ হামলার প্রধান পরিকল্পনাকারী হচ্ছেন মৌলভী জাহরান হাশিম। তাকে এনটিজের একজন ইমাম হিসেবে দাবি করেছে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো। সিএনএন জানিয়েছে, হাশিম ৪ঠা এপ্রিল ওই হামলার পরিকল্পনা করে। ইউটিউবে প্রকাশিত তার কিছু ভিডিওতে উস্কানিমূলক বক্তব্যও পাওয়া যায়। তবে রোববারের হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে এনটিজে। একইসঙ্গে, এ হামলার তীব্র নিন্দাও জানিয়েছে সংগঠনটি। তাই হামলার নেপথ্যে কে রয়েছে তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশার।
এদিকে, হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে হাশিমের নাম ছড়িয়ে পড়ার সমালোচনা করেছেন আল-জাজিরা সাংবাদিক সাইফ খালিদ। তিনি বলেন, মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলো ইসলাম ভীতির পরিচয় দিচ্ছে। প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতেই মুসলিমদের ওপর দোষ চাপানোকে ‘ইসলামোফোবিক’ আচরণ বলে বর্ণনা করেছেন তিনি। খালিদ একই সঙ্গে এ হামলার পর ভারতীয় গণমাধ্যমের আচরণকে অমার্জিত বলে আখ্যায়িত করেন।
রোববার হামলার পর বিকালে কলম্বোতে একটি এপার্টমেন্ট ঘেরাও করে পুলিশ। সেখানে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এ সময় তিন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ২৪ জনকে। তারা সবাই শ্রীলঙ্কার নাগরিক। আরো সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কায় স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে বড় বড় হোটেল ও বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্রের সামনে অবস্থান নিয়েছে সেনাবাহিনী। রোববার দেশটির প্রধান বিমানবন্দরে আটকে পড়া বিপুল সংখ্যক মানুষ সোমবার বিমানবন্দর ছাড়ে। হামলার পর পরই সরকার ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ সহ সব বড় বড় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দেয়।
উগ্রবাদী সংগঠন তাওহীদ জামায়াত সমপর্কে তেমন কিছু জানা যায় না। গত বছর দেশটির একটি বুদ্ধ ভাস্কর্য ধ্বংসের মধ্য দিয়ে আলোচনায় আসে সংগঠনটি। ধারণা করা হচ্ছে হামলার পর আটক ২৪ জনই এনটিজের সদস্য। তবে তাদের সাংগঠনিক শক্তি দেশজুড়ে এত বড় সিরিজ হামলা চালানোয় সক্ষম কিনা সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দেশটির সরকারের দাবি স্থানীয় সংগঠনগুলো এত বড় হামলা পরিচালনায় সক্ষম নয়। সেনারত্ন বিবৃতিতে বলেন, এককভাবে স্থানীয় কোনো সংগঠন এভাবে হামলা চালাতে পারে না। এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক জড়িত। আন্তর্জাতিক হাত না থাকলে এ হামলা সফল হতো না।
এদিকে হামলার দায় এখনো কেউ স্বীকার করেনি এবং হামলার পর কারো থেকে কোনো ধরনের বার্তাও পাওয়া যায়নি। ফলে নিশ্চিতভাবে কোনো গোষ্ঠী বা মতাদর্শকে দায়ী করা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। ইতিমধ্যে শ্রীলঙ্কায় হামলার প্রেক্ষিতে ভোট চেয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। হামলার পেছনে পার্শ্ববর্তী কোনো দেশের হাত রয়েছে কিনা সে সন্দেহের কথাও তুলে ধরেছেন অনেক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী। একইসঙ্গে আগাম তথ্য থাকার পরও এত বড় হামলা আটকাতে কেনো ব্যর্থ হলো শ্রীলঙ্কার গোয়েন্দারা সেটি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তার করা হলো কীভাবে?: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্সিয়াল সেক্রেটারিয়েটের উপদেষ্টা ও সমন্বয়কারী সেক্রেটারি শিরাল লাকথিলাকা বলেছেন, এরই মধ্যে কয়েকজনকে কলম্বোর সিনামন গ্রান্ট হোটেলে বিস্ফোরণের আগে একটি গাড়িতে সন্দেহজনক গতিবিধির ওপর ভিত্তি করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, তামিল টাইগারদের বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধের উত্তাল সময়েও এমন সিরিজ বোমা হামলা ও এত মানুষ নিহতের ঘটনা ঘটে নি। ২০১১ সালে নাইজেরিয়া ও ২০১৮ সালে পাকিস্তানে যে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল শ্রীলঙ্কার হামলা তারই মতো বলে আমরা দেখতে পাচ্ছি।
রাজধানী কলম্বোতে একটি এপার্টমেন্টে পুলিশি তল্লাশির সময় গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদেরকে নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়া হয়েছে। ফলে এখনই তাদেরকে হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত বলা যাচ্ছে না। হামলাকারীরা যেখানে অবস্থান করছিল, সেই এপার্টমেন্টে তাদেরকে দেখা গেছে। তদন্তকারীরা সন্দেহ করছেন এখনো দুই বা তিনের অধিক বোমা অবিস্ফোরিত অবস্থায় রয়েছে। তা কোথাও পুঁতে রাখা হতে পারে।
শিরাল লাকথিলাকা হামলার পর প্রথম গুরুত্বপূর্ণ এসব তথ্য প্রকাশ করেছেন। তিনি সাক্ষাৎকারে আরো বলেছেন, আমরা কলম্বোর উত্তরাঞ্চলে দেমাতাগোদা এলাকায় একটি এপার্টমেন্টে তাৎক্ষণিকভাবে একটি গাড়ি চিহ্নিত করতে পারি। ওই ভবনটি পরে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা ঘিরে ফেলেন। সেখানে তৃতীয় তলায় তল্লাশি চালাতে কর্মকর্তারা যখন প্রবেশ করবেন তখনই সেখানে আত্মঘাতী এক বোমারু বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে স্পেশাল টাস্কফোর্সের একজন কর্মকর্তা ও দু’জন কনস্টেবল নিহত হন।
নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা ঘাটতি সম্পর্কে তিনি বলেন, সব বিষয়েই বিস্তারিত তদন্ত হবে। এখনই নিরাপত্তায় ঘাটতি নিয়ে কথা বলা ঠিক নয়। আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ভেদ করতে পেরেছে সন্ত্রাসীরা। আমরা সন্দেহ করছি এ হামলায় আন্তর্জাতিক চক্রের ভূমিকা আছে। তবে রাজনৈতিক বা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা সুনির্দিষ্টভাবে এই ট্র্যাজেডির জন্য দায়ী করতে পারছি না। দেশের সব হোটেল ও উপাসনালয়ে নিরাপত্তা কঠোর করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সহায়তার জন্য প্রস্তুত রয়েছে সেনাবাহিনী। যেকোনো সংকটজনক পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত তারা।
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আশঙ্কা: রোববারের হামলার পর শ্রীলঙ্কায় নতুন করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়। কিন্তু দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করায় বড় কোনো দাঙ্গার খবর আসেনি। তবে রোববার দিনশেষে একটি মসজিদে বোমা হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। আরো বলা হয়েছে, মুসলিম মালিকানাধীন দু’টি দোকানে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। দেশটিতে মোট জনসংখ্যা ২ কোটি ২০ লাখ। এর মধ্যে আছে বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলিম, হিন্দু।
হামলাকারী আজম ছিল ব্রেকফাস্ট বুফের লাইনে: পাঁচ তারকা হোটেল সিনামন গ্র্যান্ড হোটেল। রোববার সকালে ব্রেকফাস্ট বুফের লাইনে দাঁড়ানো লোকজন। লম্বা সেই লাইনে অন্য সবার মাঝে ছদ্মবেশ ধারণ করে দাঁড়িয়েছিল এক আত্মঘাতী হামলাকারী। সেই ওই হোটেলের রেস্তোরাঁয় বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। ওই হোটেলের একজন ম্যানেজার এ তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, স্থানীয় সময় রোববার সকাল সাড়ে আটটার দিকে ব্রেকফাস্ট বুফের লাইনে অন্য সব মানুষের সঙ্গে দাঁড়ানো ছিল এক আত্মঘাতী হামলাকারী। সেই ওই হোটেলে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটায়। তার আগে চেকপোস্টে সে মিথ্যে ঠিকানা দেয়। দাবি করে, কলম্বোতে ব্যবসার জন্য গিয়েছে সে।
তারপরই ওই লাইনে দাঁড়িয়ে হামলা চালায় সে। ওই ম্যানেজার আরো বলেছেন, হামলার আগের রাতে হামলাকারী নিজেকে মোহাম্মদ আজম বলে নাম নিবন্ধন করে। সে ব্রেকফাস্ট বুফের লাইনে দাঁড়ানোর পর যখন তাকে খাবার সরবরাহ করা হচ্ছিল ঠিক সেই মুহূর্তে তার পেছনে বেঁধে রাখা বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে সে নিজে ও হোটেলের অনেক অতিথি নিহত হন।
ওই ম্যানেজার ঘটনার বর্ণনা দেন এভাবে- বেশ বিশৃঙ্খল অবস্থা চলছিল। তখন ছিল সকাল সাড়ে আটটা। সবাই ব্যস্ত ছিলেন। পরিবার নিয়ে এসেছেন বেশির ভাগ মানুষ। এ সময় ওই হামলাকারী লাইনে এসে প্রবেশ করে। আস্তে আস্তে সে সামনে চলে যায়। যখন খাবার দেয়া হবে তার ঠিক পূর্ব-মুহূর্তে সে বিস্ফোরণ ঘটায়। অতিথিদেরকে স্বাগত জানাচ্ছিলেন আমাদের ম্যানেজাররা। তাদের একজনও তাৎক্ষণিকভাবে মারা গেছেন।
অল্পের জন্য রক্ষা অভিনেত্রী রাধিকার: অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন বিখ্যাত তামিল অভিনেত্রী রাধিকা শরৎকুমার। তিনিও সিনামন গ্র্যান্ড হোটেলে ছিলেন। বোমা হামলার সামান্য আগেই তিনি বেরিয়ে পড়েন সেখান থেকে। এ বিষয়ে ১৪ লাখ টুইটার অনুসারীর কাছে তিনি লিখেছেন, আমি কলম্বোর সিনামন গ্র্যান্ড হোটেল ত্যাগ করার পর পরই সেখানে বোমা হামলা হয়েছে। এই ভয়াবহতা বিশ্বাস করতে পারছি না।
এ নিয়ে টুইট করেছেন তার স্বামী, অভিনেতা ও ভারতে তামিল রাজনৈতিক দল দ্য অল ইন্ডিয়া সামাথুভা মাক্কাল কাটছি দলের প্রতিষ্ঠাতা আর শরৎকুমারও। তিনি বলেছেন, ভয়াবহ এক সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে কলম্বোতে। এটা নিন্দনীয়। নিরপরাধ যেসব মানুষ প্রাণ হরিয়েছেন তাদের প্রতি আমাদের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা।
জাতিসংঘ মহাসচিবের ঐক্যের আহ্বান: শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরাঁ। তিনি সব ধর্মীয় উপাসনালয়ের পবিত্রতা রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন। আশা প্রকাশ করেছেন, এই হামলায় দায়ীদের দ্রুততার সঙ্গে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। বিবৃতিতে তিনি হতাহতদের পরিবার, শ্রীলঙ্কার জনগণের প্রতি গভীর সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন। এই হামলার সময়ে তিনি শ্রীলঙ্কার জনগণ ও কর্তৃপক্ষের মধ্যে ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব জাতির এই কঠিন সময়ে শ্রীলঙ্কার জনগণ ও সরকারের প্রতি সমর্থন ও সহমর্মিতা পুনর্ব্যক্ত করেন।
বিশ্বনেতাদের নিন্দা: শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী হামলায় প্রায় ৩০০ মানুষ নিহত হওয়ায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন সারা বিশ্বের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতারা। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প, জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরাঁ, বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে, আর্চবিশপ অব ক্যান্টারবারি জাস্টিন ওলেবি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, বৃটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন, পোপ ফ্রাঁসিস ও অন্যান্য নেতারা। নিন্দা জানিয়েছেন ওআইসি’র মহাসচিব ইউসেফ আল ওতাইমিন।
নিন্দা জানিয়েছে শ্রীলঙ্কার মুসলিম কাউন্সিল। তারা একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছে, খ্রিস্টান ভাইবোনেরা তাদের পবিত্র ইস্টার সানডে পালনের সময় তাদের উপাসনালয়ে ও কলম্বোর হোটেলে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। উগ্রপন্থি ও সন্ত্রাসীদের হামলার কারণে নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানিতে আমরা শোকাহত। এ হামলার মাধ্যমে তারা ধর্মীয় ও জাতিগত বিভেদ সৃষ্টি করতে চায়।
আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেবে সরকার: হামলায় নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেবে শ্রীলঙ্কা সরকার। সোমবার সরকারের মুখপাত্র রজিথা সেনারত্নে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, প্রতিজন নিহতের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার খরচ হিসেবে এক লাখ শ্রীলঙ্কান রুপি দেবে সরকার। এ ছাড়া নিহত প্রতিজন প্রতি তার পরিবারকে ১০ লাখ রুপি দেবে সরকার। আহতদের ক্ষতের অবস্থা বিবেচনা করে এক লাখ থেকে তিন লাখ রুপি করে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। তা ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত সব গির্জা মেরামতের খরচ পুরোটাই বহন করবে সরকার। নবায়ন কাজ করবে সরকারই।
No comments