৫ বছর পর রাতারগুলে শামুকখোল by উজ্জ্বল মেহেদী
• শামুকখোল নিরাপত্তাহীন হয়ে রাতারগুল ছেড়েছিল।
• পর্যটক চলাচল নিয়ন্ত্রণে রাতারগুলে ফিরছে শামুকখোল।
• ২০১৩ সালের পর এই প্রথম অনেক শামুকখোলের দেখা।
জল আর বনের মিতালি, তাই তো এটি জলাবন। দূর থেকে বনের সবুজে চোখ পড়লে থোকা থোকা বস্তুর মতো দেখায়। কাছে গেলে নড়াচড়া আর ওড়াউড়িতে দেখা মেলে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি। এ পাখি সিলেটের জলাবন রাতারগুলের বাসিন্দা শামুকখোল। প্রায় পাঁচ বছর পর রাতারগুলে দেখা মিলল।
বন বিভাগ বলছে, পর্যটকদের আনাগোনায় একসময় শামুকখোল নিরাপত্তাহীন হয়ে রাতারগুল ছেড়েছিল। বন বিভাগের সহব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে পর্যটকদের চলাচল নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় রাতারগুলে ফিরছে শামুকখোল। ২০১৩ সালের পর এবারই প্রথম ঝাঁকে ঝাঁকে শামুকখোলের দেখা মিলছে। দিনভর ওড়াউড়ি, দল বেঁধে খাবারের সন্ধানে দূরে ছুটে গেলেও দিনের শেষে আবার শামুকখোল ফিরছে রাতারগুলে।
জলাবন রাতারগুলের অবস্থান সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নে। ১৯৭৩ সালে বন বিভাগ জলাবন (সোয়াম্প ফরেস্ট) হিসেবে সংরক্ষিত ঘোষণা করে। নদী ও হাওরবেষ্টিত ৫০৪ দশমিক ৫০ একর আয়তনের পুরো এলাকা প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে অনেকটা অজানা ছিল। ২০১২ সালের বিশ্ব পর্যটন দিবসে প্রথম আলোর প্রথম পাতায় রাতারগুলের একটি আলোকচিত্র নতুন করে পরিচিত করে তোলে একে। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা হিজল-করচ-বরুণগাছের পাশাপাশি বেত, ইকরা, খাগড়া, মুর্তা ও শণজাতীয় গাছ রাতারগুলকে জলাবন হিসেবে অনন্য করেছে। বনে ৭৩ প্রজাতির উদ্ভিদের সঙ্গে ২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২০ প্রজাতির সরীসৃপ, ১৭৫ প্রজাতির পাখি ও ৯ প্রজাতির উভচর প্রাণীর অস্তিত্ব রয়েছে।
বনের পাশের গ্রামগুলোর বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ২০১৩ সাল থেকে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ায় পাখিদের আনাগোনা কমে যায়। এর মধ্যে শামুকখোল ছিল রাতারগুলের বাসিন্দা স্থায়ী একটি পাখি। নিচে অবারিত জলরাশি আর গাছে গাছে শামুকখোলের বিচরণ ছিল। ২০১৩ সালের পর থেকে আর এ পাখিকে রাতারগুলে দেখা যায়নি। প্রায় পাঁচ বছর বিরতি দিয়ে শামুকখোল আবার ফেরায় বনের আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা রাতারগুলের ‘প্রাণ’ ফিরছে বলে মন্তব্য করছেন।
সম্প্রতি সকালে ও বিকেলে দুই দফা রাতারগুলে গিয়ে দেখা গেছে শামুকখোলের নিরাপদ বিচরণ। বনের পাশের গ্রামের বাসিন্দা সোনা মিয়া জানালেন, পাঁচ-সাত বছর আগে এভাবেই দেখেছিলেন তিনি। গত বছর হাতে গোনা কয়েকটি দেখেছিলেন। এবার তাঁর দেখামতে হাজারো পাখি এসেছে। একসঙ্গে এত পাখি আগে দেখা যায়নি। শীত শেষেও রাতারগুল ছেড়ে না যাওয়ায় তাঁর আশা, শামুকখোল আর রাতারগুল ছেড়ে যাবে না।
বাংলাদেশের পাখি বিশেষজ্ঞ শরীফ খান প্রথম আলোকে বলেন, শামুকখোল বাংলাদেশের আবাসিক পাখি এবং বন বিভাগের প্রাণী সংরক্ষণ দপ্তর থেকে ‘বিপদগ্রস্ত’ বলে ঘোষিত। শামুকখোল (বৈজ্ঞানিক নাম anastomus oscitans) শামুক ভেঙে খেতে ওস্তাদ, তাই পাখিটির এই নাম। মাছ, কাঁকড়া, ছোট ছোট প্রাণী, ব্যাঙ ইত্যাদিও আছে খাদ্যের তালিকায়। বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক এই পাখি বর্তমানে বন্য প্রাণী আইনে সংরক্ষিত পাখির তালিকায় আছে। এটি দেখতে বকের মতো, তবে ঠোঁট লম্বা ও ভারী। গায়ের রং ধূসর-সাদা। জলাভূমিগুলোতে এখন প্রায়ই এদের দলে দলে শামুক খুঁজতে দেখা যায়। সারসজাতীয় পাখি শামুকখোলের পৃথিবীতে দুটি প্রজাতি আছে। একটি হচ্ছে এশীয়, আরেকটি আফ্রিকান। বাংলাদেশে যে পাখিটি দেখা যায়, তা হচ্ছে এশীয় প্রজাতির।
এই প্রজাতির শামুকখোলই রাতারগুলে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আর এস এম মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ২০১৩ সাল থেকে রাতারগুলে পর্যটকদের বাঁধভাঙা যাতায়াত পরিলক্ষিত হয়। সংরক্ষিত বনে পর্যটকদের নিয়ন্ত্রিতভাবে চলাফেরা করতে কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। এর মধ্যে বন বিভাগের সহব্যবস্থাপনা কার্যক্রম রাতারগুলের আশপাশের ৯টি গ্রামের বাসিন্দাদের নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। এ কমিটির সচেতনতায় রাতারগুল এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রিত। তাই কয়েক বছর বিরতি দিয়ে আবার ফিরতে দেখা গেছে শামুকখোলকে। পাশাপাশি অন্যান্য জলজ উদ্ভিদের দেখা মিলছে।
শামুকখোলের নিরাপদ আবাস স্থায়ী হবে—এমন আশাবাদ জানিয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘রাতারগুলে কয়েকটি জলাশয় ছিল। এগুলো মাছ ধরার মৌসুমে বন্দোবস্ত দেওয়ার প্রথা ছিল। শুষ্ক মৌসুমে জলাশয় শুকিয়ে মাছ ধরা হতো। আমি জলাশয় বন্দোবস্ত বাতিল করেছি। জলাশয় সংরক্ষিত থাকায় জলাভূমির জীববৈচিত্র্য ক্রমে দৃশ্যমান হচ্ছে। বলা যায়, এরই একটি সুফল শামুকখোল ফেরা।’
• পর্যটক চলাচল নিয়ন্ত্রণে রাতারগুলে ফিরছে শামুকখোল।
• ২০১৩ সালের পর এই প্রথম অনেক শামুকখোলের দেখা।
জল আর বনের মিতালি, তাই তো এটি জলাবন। দূর থেকে বনের সবুজে চোখ পড়লে থোকা থোকা বস্তুর মতো দেখায়। কাছে গেলে নড়াচড়া আর ওড়াউড়িতে দেখা মেলে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি। এ পাখি সিলেটের জলাবন রাতারগুলের বাসিন্দা শামুকখোল। প্রায় পাঁচ বছর পর রাতারগুলে দেখা মিলল।
বন বিভাগ বলছে, পর্যটকদের আনাগোনায় একসময় শামুকখোল নিরাপত্তাহীন হয়ে রাতারগুল ছেড়েছিল। বন বিভাগের সহব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে পর্যটকদের চলাচল নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় রাতারগুলে ফিরছে শামুকখোল। ২০১৩ সালের পর এবারই প্রথম ঝাঁকে ঝাঁকে শামুকখোলের দেখা মিলছে। দিনভর ওড়াউড়ি, দল বেঁধে খাবারের সন্ধানে দূরে ছুটে গেলেও দিনের শেষে আবার শামুকখোল ফিরছে রাতারগুলে।
জলাবন রাতারগুলের অবস্থান সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নে। ১৯৭৩ সালে বন বিভাগ জলাবন (সোয়াম্প ফরেস্ট) হিসেবে সংরক্ষিত ঘোষণা করে। নদী ও হাওরবেষ্টিত ৫০৪ দশমিক ৫০ একর আয়তনের পুরো এলাকা প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে অনেকটা অজানা ছিল। ২০১২ সালের বিশ্ব পর্যটন দিবসে প্রথম আলোর প্রথম পাতায় রাতারগুলের একটি আলোকচিত্র নতুন করে পরিচিত করে তোলে একে। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা হিজল-করচ-বরুণগাছের পাশাপাশি বেত, ইকরা, খাগড়া, মুর্তা ও শণজাতীয় গাছ রাতারগুলকে জলাবন হিসেবে অনন্য করেছে। বনে ৭৩ প্রজাতির উদ্ভিদের সঙ্গে ২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২০ প্রজাতির সরীসৃপ, ১৭৫ প্রজাতির পাখি ও ৯ প্রজাতির উভচর প্রাণীর অস্তিত্ব রয়েছে।
বনের পাশের গ্রামগুলোর বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ২০১৩ সাল থেকে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ায় পাখিদের আনাগোনা কমে যায়। এর মধ্যে শামুকখোল ছিল রাতারগুলের বাসিন্দা স্থায়ী একটি পাখি। নিচে অবারিত জলরাশি আর গাছে গাছে শামুকখোলের বিচরণ ছিল। ২০১৩ সালের পর থেকে আর এ পাখিকে রাতারগুলে দেখা যায়নি। প্রায় পাঁচ বছর বিরতি দিয়ে শামুকখোল আবার ফেরায় বনের আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা রাতারগুলের ‘প্রাণ’ ফিরছে বলে মন্তব্য করছেন।
সম্প্রতি সকালে ও বিকেলে দুই দফা রাতারগুলে গিয়ে দেখা গেছে শামুকখোলের নিরাপদ বিচরণ। বনের পাশের গ্রামের বাসিন্দা সোনা মিয়া জানালেন, পাঁচ-সাত বছর আগে এভাবেই দেখেছিলেন তিনি। গত বছর হাতে গোনা কয়েকটি দেখেছিলেন। এবার তাঁর দেখামতে হাজারো পাখি এসেছে। একসঙ্গে এত পাখি আগে দেখা যায়নি। শীত শেষেও রাতারগুল ছেড়ে না যাওয়ায় তাঁর আশা, শামুকখোল আর রাতারগুল ছেড়ে যাবে না।
বাংলাদেশের পাখি বিশেষজ্ঞ শরীফ খান প্রথম আলোকে বলেন, শামুকখোল বাংলাদেশের আবাসিক পাখি এবং বন বিভাগের প্রাণী সংরক্ষণ দপ্তর থেকে ‘বিপদগ্রস্ত’ বলে ঘোষিত। শামুকখোল (বৈজ্ঞানিক নাম anastomus oscitans) শামুক ভেঙে খেতে ওস্তাদ, তাই পাখিটির এই নাম। মাছ, কাঁকড়া, ছোট ছোট প্রাণী, ব্যাঙ ইত্যাদিও আছে খাদ্যের তালিকায়। বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক এই পাখি বর্তমানে বন্য প্রাণী আইনে সংরক্ষিত পাখির তালিকায় আছে। এটি দেখতে বকের মতো, তবে ঠোঁট লম্বা ও ভারী। গায়ের রং ধূসর-সাদা। জলাভূমিগুলোতে এখন প্রায়ই এদের দলে দলে শামুক খুঁজতে দেখা যায়। সারসজাতীয় পাখি শামুকখোলের পৃথিবীতে দুটি প্রজাতি আছে। একটি হচ্ছে এশীয়, আরেকটি আফ্রিকান। বাংলাদেশে যে পাখিটি দেখা যায়, তা হচ্ছে এশীয় প্রজাতির।
এই প্রজাতির শামুকখোলই রাতারগুলে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আর এস এম মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ২০১৩ সাল থেকে রাতারগুলে পর্যটকদের বাঁধভাঙা যাতায়াত পরিলক্ষিত হয়। সংরক্ষিত বনে পর্যটকদের নিয়ন্ত্রিতভাবে চলাফেরা করতে কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। এর মধ্যে বন বিভাগের সহব্যবস্থাপনা কার্যক্রম রাতারগুলের আশপাশের ৯টি গ্রামের বাসিন্দাদের নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। এ কমিটির সচেতনতায় রাতারগুল এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রিত। তাই কয়েক বছর বিরতি দিয়ে আবার ফিরতে দেখা গেছে শামুকখোলকে। পাশাপাশি অন্যান্য জলজ উদ্ভিদের দেখা মিলছে।
শামুকখোলের নিরাপদ আবাস স্থায়ী হবে—এমন আশাবাদ জানিয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘রাতারগুলে কয়েকটি জলাশয় ছিল। এগুলো মাছ ধরার মৌসুমে বন্দোবস্ত দেওয়ার প্রথা ছিল। শুষ্ক মৌসুমে জলাশয় শুকিয়ে মাছ ধরা হতো। আমি জলাশয় বন্দোবস্ত বাতিল করেছি। জলাশয় সংরক্ষিত থাকায় জলাভূমির জীববৈচিত্র্য ক্রমে দৃশ্যমান হচ্ছে। বলা যায়, এরই একটি সুফল শামুকখোল ফেরা।’
No comments