ছাত্রী হলে অন্যরকম চিত্র by মরিয়ম চম্পা
শনিবার।
দুপুর ২টা ৫০ মিনিট। রোকেয়া হলের সামনে যেতেই একদল যুবক-যুবতী নির্বাচনী
প্রচারণার লিফলেট নিয়ে এগিয়ে আসে। ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে রোকেয়া হলে
নির্বাচন করছেন এমনই একজন নেত্রীর পক্ষে ভোট চাইছেন তারা। গেটের সামনে,
ডানে-বামে সর্বত্রই প্রার্থীদের পোস্টারের ছড়াছড়ি। হলের প্রবেশদ্বারের
ভেতরে বাম পাশে কাঠের বেঞ্চে একদল তরুণ তরুণী বসে আছে। তারা প্রচারণা
চালিয়ে অনেকটা ক্লান্ত। জিরিয়ে নিচ্ছে খানিকটা।
শামছুন নাহার হলেরও একই চিত্র।
হলের বাইরে পোস্টারে সয়লাব। থেমে নেই টং দোকানে চায়ের কাপে নারী ভোটারদের ভোটের তুমুল আলোচনা। প্রথম বর্ষের একাধিক শিক্ষার্থীকে তাদের বড় আপুদের হয়ে প্রচারণায় ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। এদিকে নির্বাচনী বুথ তৈরিতে ব্যস্ত হলের কর্মচারীরা।
রোকেয়া হলের প্রগতিশীল ছাত্র ঐক্য সমর্থিত প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক (জি.এস) পদপ্রার্থী মুনিরা দিলশাদ ইলা বলেন, রোকেয়া হলে প্রায় ৪ হাজারের মতো ভোটার রয়েছে। এর মধ্যে আবাসিক ভোটারের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আশা করছি হলের পরিচিত ছাত্রীদের ভোট অবশ্যই পাবো। তাছাড়া আমাদের হলে সকল দলের প্রার্থীরা তাদের মতো করে স্বাধীন ভাবেই প্রচারণা চালাচ্ছে। ৩০শে ডিসেম্বও জাতীয় নির্বাচনের পর ডাকসু নির্বাচন আসলে কেমন হবে এটা নিয়ে কিছুটা সংশয় আছে। তবে এটা সত্য জাতীয় নির্বাচন টাইপের নির্বাচন হলে যৌথভাবে অবশ্যই সেটা প্রতিহত করা হবে। তবে ভয়ের বিষয় হচ্ছে ফলাফল কি হবে।
আসন্ন নির্বাচনে জয়যুক্ত হলে সর্বপ্রথম যে কাজটি করবো সেটা হচ্ছে হলকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে হল দখল সংস্কৃতিকে বিদায় জানানো। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের প্রথম তিন মাসের মধ্যে হলে সিটের ব্যবস্থা করা দেয়া। হলের ভেতরে একটি ফার্মাসি-অ্যাম্বুলেন্স, ওয়াইফাই সংযোগ, ডায়নিং-এর খাবারের মান উন্নয়ন। রিডিংরুমের সিট দখলমুক্ত করা। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের আলাদা আলাদা প্রার্থনা কক্ষের ব্যবস্থা ইত্যাদি। এ ছাড়া রুমমেট কর্তৃক শারীরিক ও মানসিক টর্চার বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে।
স্বতন্ত্র সহ-সভাপতি (ভিপি) মৌসুমি বলেন, আমরা সবাই চাই সুষ্ঠু একটি নির্বাচন। যেখানে স্বচ্ছতা থাকবে। বিগত জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় ডাকসু নির্বাচন নিয়েও অনেকের মনেই প্রশ্ন আদৌ কি নির্বাচন হবে।
তার পরেও আমরা যতটুকু সম্ভব হলের সব রুমে রুমে গিয়েছি। এবং তাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করেছি যে রোকেয়া হল হচ্ছে একটি ঐতিহ্যবাহী হল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় ভোট ব্যাংক হচ্ছে রোকেয়া হলো। কাজেই আমরা রোকেয়া হলের ছাত্রীরা এই ধরনের অনিয়ম-কারচুপি হতে দেবো না। আমরা মাঠে থেকে সেটা প্রতিরোধ করবো। আমি রোকেয়া হলে বিগত ৫ বছর ধরে খেলাধুলা অর্থাৎ ক্রীড়াঙ্গনে জড়িত। টানা দু’বছর ধরে আমি রোকেয়া হলের ক্রীড়া বিষয়ক ক্যাপ্টেন। এমন কোনো ট্রফি আসেনি আমার হাতের ছোঁয়া ছাড়া। কাজেই সাধারণের মধ্যে আমার বড় হওয়া। তাই সাধারণ ছাত্রীরা কি চায় তা আমি জানি। আমিও বেড শেয়ার করেছি। আমার মা ও গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি তেমন কোনো বাড়তি সুবিধা পাইনি। তাই আমি বঞ্চিতদের জন্য কাজ করতে চাই। তিনি বলেন, যেহেতু ২৮ বছর পর নির্বাচন হচ্ছে তাই ভোটাররা চায় একটি ভালো নির্বাচন হোক।
একই হলের প্রগতিশীল ছাত্র ঐক্য পরিষদের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক তাসলিমা হোসেন নদী বলেন, নেত্রী হতে নয় বরং কোনো নেত্রীর অধীনে যেন থাকতে না হয় তাই নির্বাচন করছি। হলের নেতানেত্রীদের অত্যাচার সম্পর্কে কম বেশি ধারণা আছে। যদিও আমি হলের আবাসিক ছাত্রী নই। আমার বিরোধী নেত্রী হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের। তাই নির্বাচন নিয়ে কিছুটা সংশয় অবশ্য থেকেই যায়। আমাদের হলে শুধুমাত্র সরস্বতী পূজা ছাড়া সেভাবে কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় না। তাই নির্বাচিত হলে হলের মাঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন, বৈশাখী মেলা, বুটিক মেলা, হলে কালচারাল ক্লাব তৈরি করা হবে। অর্র্থাৎ রোকেয়া হল যেন স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং সব সময় সব কিছুর জন্য প্রস্তুত থাকি সে ব্যবস্থা করা হবে।
শামসুন নাহার হলের ছাত্রলীগের ইনডোর গেইম বিষয়ক সম্পাদক পদ প্রার্থী ফারজানা আক্তার নিপা বলেন, অনেক বছর পর নির্বাচন হচ্ছে তাই সাধারণ ভোটারদের কাছ থেকে ব্যাপক সারা পাচ্ছি। তাছাড়া কয়েকটি নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে ভোটাররা বুথে প্রবেশ করে ভোট প্রদান করবে। যেখানে তাদের ভয়ভীতি বা জোরজবরদস্তি করার কোনো সুযোগ নেই। কাজেই আসন্ন নির্বাচন ও নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে আমি যথেষ্ট আশাবাদী। প্রতি বছর আমাদের হলগুলোতে যে ইনডোর গেইম অনুষ্ঠিত হয় তখন আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা উন্মুখ হয়ে বসে থাকি একটি জার্সির আশায়। কিন্তু কেবলমাত্র যারা অংশগ্রহণ করে তারাই জার্সি পায়। তাই আমি নির্বাচিত হলে হলের প্রত্যেকটি মেয়ের জন্য জার্সির ব্যবস্থা করবো। টেবিল টেনিস, দাবা, লুডু ইত্যাদি খেলা বছরে ৩ থেকে ৪ বার আয়োজনের ব্যবস্থা করা হবে। যারা জিতবে তাদের জন্য ব্যতিক্রমধর্মী পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।
ছাত্রলীগের প্যানেলের সাংস্কৃতিক সম্পাদক সাবরিনা তাবাসসুম নিথিয়া বলেন, প্রতিদিনই আমরা নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছি। অনাবাসিকদের কাছে প্রচারণা করতে বাসে বাসে গিয়ে লিফলেট বিতরণ করেছি। আবাসিক হলের সবগুলোতে সমানভাবে প্রচারণা চালিয়েছি। প্রচারণার শেষ দিনেও হল কেন্দ্রিক প্রচারণা কিন্তু থেমে থাকেনি। ক্লাস বন্ধ থাকায় ভোটারদের সংখ্যা যদিও কিছুটা কম। আমি ছোটবেলা থেকে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে জড়িত। তাছাড়া আমি যেহেতু এই বিভাগের শিক্ষার্থী তাই এ বিষয়ে আমার দক্ষতা অন্য প্রার্থীদের থেকে অনেক বেশি বলে মনে করছি। আমি নির্বাচিত হলে সংগীত, নৃত্যকলা, থিয়েটার এন্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ এই তিন ডিপার্টমেন্টের জন্য ‘কালচারাল অডিটরিয়াম’ বা আলাদা মিউজিক রুমের ব্যবস্থা করবো।
ছাত্রলীগের সদস্য পদ প্রার্থী মাকসুদা আক্তার তমা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থীরা আজ শুধুমাত্র আত্মকেন্দ্রিক স্থানে নেই। তারা এখন রাষ্ট্র নিয়ে ভাবে। রাষ্ট্রের যেকোনো সংকটময় মুহূর্তে দেশের সাধারণ জনগণ এই বিদ্যাপীঠের দিকেই অতীতেও তাকিয়ে ছিল, এখনো আছে। আমরা তারই ধারাবাহিকতা রক্ষা করার প্রত্যয়ে এগিয়ে যাবো।
শামছুন নাহার হলের ভোটার শামীমা সুলতানা বলেন, ছাত্রলীগের দল যেহেতু ভারি তাই তারা নিজেদের মতো করে প্রচারণা চালাচ্ছে। অন্য দলের প্রার্থীদের প্রচারণা কিছুটা কম মনে হচ্ছে। তবে আশা করছি সুষ্ঠু ভোট হবে। তবে এখনো বোঝা যাচ্ছে না কেমন নির্বাচন হবে।
উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী রুবিনা খাতুন বলেন, ভোট সুষ্ঠু হবে বলে মনে করছি। তবে সুষ্ঠু না হলে অবশ্যই প্রতিবাদ আসবে। আমরা সবাই মিলে প্রতিবাদ করবো।
ম্যাথম্যাটিকস বিভাগের শিক্ষার্থী সৈয়দা আইরিন আক্তার বলেন, প্রচারণা দেখে মনে হচ্ছে ভালো ভোট হবে। সব দলের প্রার্থীরাই ভোট চাইতে রুমে আসছে। তবে যারা দলে ভারি তারা প্রচারণাটা বেশি চালাচ্ছে। এ বছর যদি ভোট খারাপ হয় তাহলে সামনের বছর কেউ ভোট দিতে যাবে না।
ভাষা বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার বলেন, আমরা ছাত্রলীগের হয়ে প্রচারণা চালাতে অন্য প্রার্থীদের কাছে যাই একইভাবে তারাও আমাদের কাছে ভোট চাইতে আসে। তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় ভোট কারচুপির কোনো সুযোগ নেই এবং আমরা সেটা করতে দেবো না।
পালি এন্ড বুদ্ধিষ্ট-এর শিক্ষার্থী শারমিন বলেন, এখানে সবাই সচেতন ভোটার। তাই ভোট জালিয়াতির কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচনী উত্তাপ দেখে খুব ভালো লাগছে।
রোকেয়া হলের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে পূর্ণ প্যানেলে প্রার্থী দিয়েছে ছাত্রলীগ। কোটা সংস্কার আন্দোলন ও রোকেয়া পরিষদ স্বতন্ত্র হিসেবে আংশিক প্যানেল ঘোষণা করেছে। যার কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোট দুই ভাগ হয়ে যাবে। এখানে ১৩ পদের বিপরীতে লড়াই করবেন ৩০ জন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের ৫টি হলে ছাত্রদলের একমাত্র ভিপি প্রার্থী দিয়েছে শামসুন্নাহার হলে। এ কারণে ছাত্রলীগের প্রার্থীকে দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়তে হবে। এ হলে ভোটার রয়েছে ৩ হাজার ৭৬৪ জন।
বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে নির্বাচন করা প্রার্থীরা এগিয়ে রয়েছেন। ছাত্রলীগের প্রার্থীর পরিচিতি কম, বিপক্ষ প্যানেলে ছাত্রলীগের সমর্থন থাকা ও সাধারণ ছাত্রদের সমর্থনের কারণে এমনটা ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ১ হাজার ৯২৮ ভোটার রয়েছে এই হলে।
শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ছাত্রলীগের ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ছাত্রলীগের পূর্ণ প্যানেল ছাড়াও তিনজন প্রার্থী স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছেন। ভিপি ও সাহিত্য সম্পাদক পদে তারা শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিয়েছেন। এ হলে মোট ভোটার ২ হাজার ২২৮ জন।
কবি সুফিয়া কামাল হলে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ছাত্রলীগ ও স্বতন্ত্র প্যানেলের সঙ্গে। মেয়েদের হলের মধ্যে সর্বোচ্চ পাঁচজন ভিপি পদে এ হলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কবি সুফিয়া কামাল হলে ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ৭২৪ জন। এর মধ্যে আবাসিক ১৮৫৬ জন, বাকিরা অনাবাসিক।
শামছুন নাহার হলেরও একই চিত্র।
হলের বাইরে পোস্টারে সয়লাব। থেমে নেই টং দোকানে চায়ের কাপে নারী ভোটারদের ভোটের তুমুল আলোচনা। প্রথম বর্ষের একাধিক শিক্ষার্থীকে তাদের বড় আপুদের হয়ে প্রচারণায় ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। এদিকে নির্বাচনী বুথ তৈরিতে ব্যস্ত হলের কর্মচারীরা।
রোকেয়া হলের প্রগতিশীল ছাত্র ঐক্য সমর্থিত প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক (জি.এস) পদপ্রার্থী মুনিরা দিলশাদ ইলা বলেন, রোকেয়া হলে প্রায় ৪ হাজারের মতো ভোটার রয়েছে। এর মধ্যে আবাসিক ভোটারের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আশা করছি হলের পরিচিত ছাত্রীদের ভোট অবশ্যই পাবো। তাছাড়া আমাদের হলে সকল দলের প্রার্থীরা তাদের মতো করে স্বাধীন ভাবেই প্রচারণা চালাচ্ছে। ৩০শে ডিসেম্বও জাতীয় নির্বাচনের পর ডাকসু নির্বাচন আসলে কেমন হবে এটা নিয়ে কিছুটা সংশয় আছে। তবে এটা সত্য জাতীয় নির্বাচন টাইপের নির্বাচন হলে যৌথভাবে অবশ্যই সেটা প্রতিহত করা হবে। তবে ভয়ের বিষয় হচ্ছে ফলাফল কি হবে।
আসন্ন নির্বাচনে জয়যুক্ত হলে সর্বপ্রথম যে কাজটি করবো সেটা হচ্ছে হলকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে হল দখল সংস্কৃতিকে বিদায় জানানো। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের প্রথম তিন মাসের মধ্যে হলে সিটের ব্যবস্থা করা দেয়া। হলের ভেতরে একটি ফার্মাসি-অ্যাম্বুলেন্স, ওয়াইফাই সংযোগ, ডায়নিং-এর খাবারের মান উন্নয়ন। রিডিংরুমের সিট দখলমুক্ত করা। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের আলাদা আলাদা প্রার্থনা কক্ষের ব্যবস্থা ইত্যাদি। এ ছাড়া রুমমেট কর্তৃক শারীরিক ও মানসিক টর্চার বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে।
স্বতন্ত্র সহ-সভাপতি (ভিপি) মৌসুমি বলেন, আমরা সবাই চাই সুষ্ঠু একটি নির্বাচন। যেখানে স্বচ্ছতা থাকবে। বিগত জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় ডাকসু নির্বাচন নিয়েও অনেকের মনেই প্রশ্ন আদৌ কি নির্বাচন হবে।
তার পরেও আমরা যতটুকু সম্ভব হলের সব রুমে রুমে গিয়েছি। এবং তাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করেছি যে রোকেয়া হল হচ্ছে একটি ঐতিহ্যবাহী হল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় ভোট ব্যাংক হচ্ছে রোকেয়া হলো। কাজেই আমরা রোকেয়া হলের ছাত্রীরা এই ধরনের অনিয়ম-কারচুপি হতে দেবো না। আমরা মাঠে থেকে সেটা প্রতিরোধ করবো। আমি রোকেয়া হলে বিগত ৫ বছর ধরে খেলাধুলা অর্থাৎ ক্রীড়াঙ্গনে জড়িত। টানা দু’বছর ধরে আমি রোকেয়া হলের ক্রীড়া বিষয়ক ক্যাপ্টেন। এমন কোনো ট্রফি আসেনি আমার হাতের ছোঁয়া ছাড়া। কাজেই সাধারণের মধ্যে আমার বড় হওয়া। তাই সাধারণ ছাত্রীরা কি চায় তা আমি জানি। আমিও বেড শেয়ার করেছি। আমার মা ও গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি তেমন কোনো বাড়তি সুবিধা পাইনি। তাই আমি বঞ্চিতদের জন্য কাজ করতে চাই। তিনি বলেন, যেহেতু ২৮ বছর পর নির্বাচন হচ্ছে তাই ভোটাররা চায় একটি ভালো নির্বাচন হোক।
একই হলের প্রগতিশীল ছাত্র ঐক্য পরিষদের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক তাসলিমা হোসেন নদী বলেন, নেত্রী হতে নয় বরং কোনো নেত্রীর অধীনে যেন থাকতে না হয় তাই নির্বাচন করছি। হলের নেতানেত্রীদের অত্যাচার সম্পর্কে কম বেশি ধারণা আছে। যদিও আমি হলের আবাসিক ছাত্রী নই। আমার বিরোধী নেত্রী হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের। তাই নির্বাচন নিয়ে কিছুটা সংশয় অবশ্য থেকেই যায়। আমাদের হলে শুধুমাত্র সরস্বতী পূজা ছাড়া সেভাবে কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় না। তাই নির্বাচিত হলে হলের মাঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন, বৈশাখী মেলা, বুটিক মেলা, হলে কালচারাল ক্লাব তৈরি করা হবে। অর্র্থাৎ রোকেয়া হল যেন স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং সব সময় সব কিছুর জন্য প্রস্তুত থাকি সে ব্যবস্থা করা হবে।
শামসুন নাহার হলের ছাত্রলীগের ইনডোর গেইম বিষয়ক সম্পাদক পদ প্রার্থী ফারজানা আক্তার নিপা বলেন, অনেক বছর পর নির্বাচন হচ্ছে তাই সাধারণ ভোটারদের কাছ থেকে ব্যাপক সারা পাচ্ছি। তাছাড়া কয়েকটি নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে ভোটাররা বুথে প্রবেশ করে ভোট প্রদান করবে। যেখানে তাদের ভয়ভীতি বা জোরজবরদস্তি করার কোনো সুযোগ নেই। কাজেই আসন্ন নির্বাচন ও নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে আমি যথেষ্ট আশাবাদী। প্রতি বছর আমাদের হলগুলোতে যে ইনডোর গেইম অনুষ্ঠিত হয় তখন আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা উন্মুখ হয়ে বসে থাকি একটি জার্সির আশায়। কিন্তু কেবলমাত্র যারা অংশগ্রহণ করে তারাই জার্সি পায়। তাই আমি নির্বাচিত হলে হলের প্রত্যেকটি মেয়ের জন্য জার্সির ব্যবস্থা করবো। টেবিল টেনিস, দাবা, লুডু ইত্যাদি খেলা বছরে ৩ থেকে ৪ বার আয়োজনের ব্যবস্থা করা হবে। যারা জিতবে তাদের জন্য ব্যতিক্রমধর্মী পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।
ছাত্রলীগের প্যানেলের সাংস্কৃতিক সম্পাদক সাবরিনা তাবাসসুম নিথিয়া বলেন, প্রতিদিনই আমরা নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছি। অনাবাসিকদের কাছে প্রচারণা করতে বাসে বাসে গিয়ে লিফলেট বিতরণ করেছি। আবাসিক হলের সবগুলোতে সমানভাবে প্রচারণা চালিয়েছি। প্রচারণার শেষ দিনেও হল কেন্দ্রিক প্রচারণা কিন্তু থেমে থাকেনি। ক্লাস বন্ধ থাকায় ভোটারদের সংখ্যা যদিও কিছুটা কম। আমি ছোটবেলা থেকে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে জড়িত। তাছাড়া আমি যেহেতু এই বিভাগের শিক্ষার্থী তাই এ বিষয়ে আমার দক্ষতা অন্য প্রার্থীদের থেকে অনেক বেশি বলে মনে করছি। আমি নির্বাচিত হলে সংগীত, নৃত্যকলা, থিয়েটার এন্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ এই তিন ডিপার্টমেন্টের জন্য ‘কালচারাল অডিটরিয়াম’ বা আলাদা মিউজিক রুমের ব্যবস্থা করবো।
ছাত্রলীগের সদস্য পদ প্রার্থী মাকসুদা আক্তার তমা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থীরা আজ শুধুমাত্র আত্মকেন্দ্রিক স্থানে নেই। তারা এখন রাষ্ট্র নিয়ে ভাবে। রাষ্ট্রের যেকোনো সংকটময় মুহূর্তে দেশের সাধারণ জনগণ এই বিদ্যাপীঠের দিকেই অতীতেও তাকিয়ে ছিল, এখনো আছে। আমরা তারই ধারাবাহিকতা রক্ষা করার প্রত্যয়ে এগিয়ে যাবো।
শামছুন নাহার হলের ভোটার শামীমা সুলতানা বলেন, ছাত্রলীগের দল যেহেতু ভারি তাই তারা নিজেদের মতো করে প্রচারণা চালাচ্ছে। অন্য দলের প্রার্থীদের প্রচারণা কিছুটা কম মনে হচ্ছে। তবে আশা করছি সুষ্ঠু ভোট হবে। তবে এখনো বোঝা যাচ্ছে না কেমন নির্বাচন হবে।
উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী রুবিনা খাতুন বলেন, ভোট সুষ্ঠু হবে বলে মনে করছি। তবে সুষ্ঠু না হলে অবশ্যই প্রতিবাদ আসবে। আমরা সবাই মিলে প্রতিবাদ করবো।
ম্যাথম্যাটিকস বিভাগের শিক্ষার্থী সৈয়দা আইরিন আক্তার বলেন, প্রচারণা দেখে মনে হচ্ছে ভালো ভোট হবে। সব দলের প্রার্থীরাই ভোট চাইতে রুমে আসছে। তবে যারা দলে ভারি তারা প্রচারণাটা বেশি চালাচ্ছে। এ বছর যদি ভোট খারাপ হয় তাহলে সামনের বছর কেউ ভোট দিতে যাবে না।
ভাষা বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার বলেন, আমরা ছাত্রলীগের হয়ে প্রচারণা চালাতে অন্য প্রার্থীদের কাছে যাই একইভাবে তারাও আমাদের কাছে ভোট চাইতে আসে। তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় ভোট কারচুপির কোনো সুযোগ নেই এবং আমরা সেটা করতে দেবো না।
পালি এন্ড বুদ্ধিষ্ট-এর শিক্ষার্থী শারমিন বলেন, এখানে সবাই সচেতন ভোটার। তাই ভোট জালিয়াতির কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচনী উত্তাপ দেখে খুব ভালো লাগছে।
রোকেয়া হলের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে পূর্ণ প্যানেলে প্রার্থী দিয়েছে ছাত্রলীগ। কোটা সংস্কার আন্দোলন ও রোকেয়া পরিষদ স্বতন্ত্র হিসেবে আংশিক প্যানেল ঘোষণা করেছে। যার কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোট দুই ভাগ হয়ে যাবে। এখানে ১৩ পদের বিপরীতে লড়াই করবেন ৩০ জন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের ৫টি হলে ছাত্রদলের একমাত্র ভিপি প্রার্থী দিয়েছে শামসুন্নাহার হলে। এ কারণে ছাত্রলীগের প্রার্থীকে দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়তে হবে। এ হলে ভোটার রয়েছে ৩ হাজার ৭৬৪ জন।
বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে নির্বাচন করা প্রার্থীরা এগিয়ে রয়েছেন। ছাত্রলীগের প্রার্থীর পরিচিতি কম, বিপক্ষ প্যানেলে ছাত্রলীগের সমর্থন থাকা ও সাধারণ ছাত্রদের সমর্থনের কারণে এমনটা ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ১ হাজার ৯২৮ ভোটার রয়েছে এই হলে।
শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ছাত্রলীগের ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ছাত্রলীগের পূর্ণ প্যানেল ছাড়াও তিনজন প্রার্থী স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছেন। ভিপি ও সাহিত্য সম্পাদক পদে তারা শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিয়েছেন। এ হলে মোট ভোটার ২ হাজার ২২৮ জন।
কবি সুফিয়া কামাল হলে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ছাত্রলীগ ও স্বতন্ত্র প্যানেলের সঙ্গে। মেয়েদের হলের মধ্যে সর্বোচ্চ পাঁচজন ভিপি পদে এ হলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কবি সুফিয়া কামাল হলে ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ৭২৪ জন। এর মধ্যে আবাসিক ১৮৫৬ জন, বাকিরা অনাবাসিক।
No comments