৬ মাসের শিশু ভাড়া খাটে দুই শিফটে by পিয়াস সরকার
ধানমন্ডি
লেক। সূর্য উঠছে। সেই সঙ্গে লেকে বাড়ছে মানুষ। প্রায় সকলের উদ্দেশ্য শরীর
চর্চা করা। তবে এরই মাঝে ধানমন্ডি লেকের রবীন্দ্রসরোবর ৮নং ব্রিজের পাশে
বসে পড়েছেন প্রায় ৫০ জনেক ভিক্ষুক। এদের মাঝে কয়েকজনের কোলে শিশু। বিভিন্ন
বয়সের শিশু। আবার তাদের কোলের শিশুদের মধ্যে অধিকাংশই ঘুমে কাতর।
মাঝে-মধ্যে জেগে উঠলে খাওয়ানো হচ্ছে ফিডার। আবার ঘুমিয়ে পড়ছে শিশুগুলো। এই ঘুম কোনো স্বাভাবিক ঘুম নয়। এই ঘুম চেতনাশকের ঘুম। যা স্বাস্থ্যের জন্য ব্যাপক ক্ষতিকর ও স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার অন্তরায়।
রাকিব হাসান। বয়স মাত্র ৬ মাস। তাকে কোলে নিয়ে ভিক্ষা করছেন আরেক শিশু। নাম তানিয়া, বয়স আনুমানিক ৬ বছর। শিশুটিকে কোলে নিয়ে লেকে আসা বিভিন্ন লোকেদের কাছে হাত পাতছে মেয়েটি। ভিক্ষা পাচ্ছে অন্য ভিক্ষুকদের তুলনায় বেশি। সকাল ৬ টা থেকে ১০টা পর্যন্ত কখনো হেঁটে কখনো বসে ভিক্ষা করতে থাকে তানিয়া। তবে দীর্ঘ এই সময়ে কয়েকবার ঘুম থেকে জাগলেও ফের ঘুমিয়ে পড়ে রাকিব।
তানিয়া জানায়, কোলের সন্তানটি তার ভাই। সারাক্ষণ ঘুমিয়ে কেন? এই প্রশ্নের জবাবে জানায়, ছোট বাচ্চা ঘুমিয়ে থাকাটাই স্বাভাবিক।
সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে তানিয়াকে দেখা যায় এক মহিলার সঙ্গে চায়ের দোকানে। সারছে সকালের নাস্তা। তখন সেই মহিলার কোলে শিশু রাকিব। তবে তানিয়ার প্রতি যে মমতা দেখা গেল তা নেই রাকিবের জন্য। শুধু কোলেই ঠাঁই মিলেছে তার। কিছু পর ওই মহিলা হাঁটা শুরু করলেন। পিছন পিছন লাঠি চকলেট হাতে তানিয়া।
হেঁটেই গেলেন রায়ের বাজার বস্তিতে। বস্তির মুখে ঢোকার আগেই মোবাইলে যোগাযোগ করলেন। আটতলীতে যাওয়ার পর বেরুলেন এক মহিলা। তার কোলে রাকিবকে দিয়ে আবার চললেন তানিয়া ও তার মা।
রাকিবের মা’র সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি কোনো জবাব না দিয়ে চলে যান। একটি ছাপড়া ঘরের ভিতর। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও বেরুলেন না তারা। আটতলী পাড়ার গলির মুখেই সবুজ মিয়ার চায়ের দোকান। তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা। তিনি জানান, রাকিবের মা কাজ করেন মানুষের বাসায়। রাকিবের জন্মের আগেই তার বাবা তাদের ছেড়ে চলে যায়। আর সবসময় ঘুমানোর কারণ হিসেবে জানানো হয়, ফিডারে মেশানো থাকে চেতনানাশক ওষুধ। শিশুটি যখন জেগে ওঠে তখন তাকে খাওয়ানো হয় বা একটু পরপর খাওয়ানো হয়।
চায়ের দোকানে থাকা অবস্থায় বের হয় রাকিব ও রাকিবের মা। এবার শিশুটি জাগনা অবস্থায় রয়েছে। বেশ হাসি-খুশি তখন শিশুটি। কথা বলতে ভয় পেলেও চা ওয়ালার সহযোগিতায় তার মায়ের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পেটের দায়ে শিশুকে ভাড়া দেন তানিয়ার মায়ের কাছে। তিনি মানুষের বাসায় কাজ করে যে অর্থ পান তা দিয়ে সংসার চলে না।
স্বামী প্রায় বছরখানেক হলো আসে না। কোনো খোঁজ নেয় না। শুনেছেন আরেকটি বিয়ে করে চট্টগ্রামে থাকেন। রাকিবের মা আমেনা বেগম জানান, এই শিশুটিকে দিনে দুইবার পাঠান তানিয়ার সঙ্গে। ভোর ৫টার দিকে নিয়ে যায় লেকে আর দিয়ে যায় ১১ টার দিকে। আবার ৪ টার দিকে নিয়ে যায় কখনো ফার্মগেটে আবার কখনো বসুন্ধরা সিটি শপিংমলের সামনে। প্রতি বেলার জন্য পান ৬০ টাকা করে। দিনশেষে ১২০ টাকা। বিশেষ দিনে আয় বেশি হলে ২০ থেকে ৩০টাকা বাড়িয়েও দেন।
আর শিশুটিকে ঘুমিয়ে রাখার বিষয়ে জানান, ছোট বাচ্চা যে কোনো সময় কান্না করতে পারে। কান্না করলে মা ছাড়া সামলানো কঠিন। আর শিশুর খাবারের জন্য বানানো ফিডারে দেয়া হয় চেতনানাশক ওষুধ। ওষুধের নাম বলতে পারলেন না তিনি। এই ওষুধ শিশুর জন্য ক্ষতির কারণ কিনা জানতে চাইলে- এই বিষয়ে কোনো ধারণা নেই তার বলে জানান। এই ওষুধ গুঁড়া করে ফিডারের মধ্যে দিয়ে দেন রাকিবের মা। এক ট্যাবলেটে দিয়ে ২ বার ফিডার বানান। তাতেই কাজ হয়ে যায়।
ওষুধ কেনেন পাশেই অবস্থিত আলেয়া-আরিফ ফার্মেসি থেকে। সেখানে এসব বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান দোকানের এক কর্মচারী। তবে তার অনুপস্থিতিতে দোকানের আরেক কর্মচারী জানান, এসব বাচ্চাকে ফিডারে মেশানো হয় সেডিল কিংবা বারবিট। তার কথা অনুযায়ী অনেকে এখান থেকে এসব ওষুধ কিনে থাকেন।
এই বিষয়ে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজের শিশু বিশেষঞ্জ ড. মুমতানিয়া সেতু বলেন, এসব চেতনানাশক ওষুধ খাওয়ানোর কারণে বাচ্চা সমাজের সঙ্গে অন্য মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। এছাড়াও তন্দ্রাচ্ছন্নতা, ঘুমের ওষুধের ওপর নির্ভরশীলতা তৈরি হবে। সে স্বাভাবিক জীবন যাপনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। এমনকি বিকলাঙ্গও হয়ে যেতে পারে।
এরপর রাকিবের দিনে দ্বিতীয়বারের মতো ভাড়ায় বের হবে বিকাল ৪টার দিকে। এক অসহায় মায়ের অসহায় সেই দুধের শিশুকে বিকাল ৫টার দিকে ফের দেখা যায় ফার্মগেইটের ওভারব্রিজে। সেই পাতানো বোন তানিয়ার কোলে। সকালের মতো এখনো সে ঘুমে। আর তানিয়ার হাত ব্যাগে উঁকি দিচ্ছে আত্মঘাতী ফিডার। যা দিয়ে ক্ষুধা নিবারণ হচ্ছে। আর ধীরে ধীরে ঢলে পড়ছে দীর্ঘ মেয়াদি জটিলতায়।
মাঝে-মধ্যে জেগে উঠলে খাওয়ানো হচ্ছে ফিডার। আবার ঘুমিয়ে পড়ছে শিশুগুলো। এই ঘুম কোনো স্বাভাবিক ঘুম নয়। এই ঘুম চেতনাশকের ঘুম। যা স্বাস্থ্যের জন্য ব্যাপক ক্ষতিকর ও স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার অন্তরায়।
রাকিব হাসান। বয়স মাত্র ৬ মাস। তাকে কোলে নিয়ে ভিক্ষা করছেন আরেক শিশু। নাম তানিয়া, বয়স আনুমানিক ৬ বছর। শিশুটিকে কোলে নিয়ে লেকে আসা বিভিন্ন লোকেদের কাছে হাত পাতছে মেয়েটি। ভিক্ষা পাচ্ছে অন্য ভিক্ষুকদের তুলনায় বেশি। সকাল ৬ টা থেকে ১০টা পর্যন্ত কখনো হেঁটে কখনো বসে ভিক্ষা করতে থাকে তানিয়া। তবে দীর্ঘ এই সময়ে কয়েকবার ঘুম থেকে জাগলেও ফের ঘুমিয়ে পড়ে রাকিব।
তানিয়া জানায়, কোলের সন্তানটি তার ভাই। সারাক্ষণ ঘুমিয়ে কেন? এই প্রশ্নের জবাবে জানায়, ছোট বাচ্চা ঘুমিয়ে থাকাটাই স্বাভাবিক।
সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে তানিয়াকে দেখা যায় এক মহিলার সঙ্গে চায়ের দোকানে। সারছে সকালের নাস্তা। তখন সেই মহিলার কোলে শিশু রাকিব। তবে তানিয়ার প্রতি যে মমতা দেখা গেল তা নেই রাকিবের জন্য। শুধু কোলেই ঠাঁই মিলেছে তার। কিছু পর ওই মহিলা হাঁটা শুরু করলেন। পিছন পিছন লাঠি চকলেট হাতে তানিয়া।
হেঁটেই গেলেন রায়ের বাজার বস্তিতে। বস্তির মুখে ঢোকার আগেই মোবাইলে যোগাযোগ করলেন। আটতলীতে যাওয়ার পর বেরুলেন এক মহিলা। তার কোলে রাকিবকে দিয়ে আবার চললেন তানিয়া ও তার মা।
রাকিবের মা’র সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি কোনো জবাব না দিয়ে চলে যান। একটি ছাপড়া ঘরের ভিতর। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও বেরুলেন না তারা। আটতলী পাড়ার গলির মুখেই সবুজ মিয়ার চায়ের দোকান। তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা। তিনি জানান, রাকিবের মা কাজ করেন মানুষের বাসায়। রাকিবের জন্মের আগেই তার বাবা তাদের ছেড়ে চলে যায়। আর সবসময় ঘুমানোর কারণ হিসেবে জানানো হয়, ফিডারে মেশানো থাকে চেতনানাশক ওষুধ। শিশুটি যখন জেগে ওঠে তখন তাকে খাওয়ানো হয় বা একটু পরপর খাওয়ানো হয়।
চায়ের দোকানে থাকা অবস্থায় বের হয় রাকিব ও রাকিবের মা। এবার শিশুটি জাগনা অবস্থায় রয়েছে। বেশ হাসি-খুশি তখন শিশুটি। কথা বলতে ভয় পেলেও চা ওয়ালার সহযোগিতায় তার মায়ের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পেটের দায়ে শিশুকে ভাড়া দেন তানিয়ার মায়ের কাছে। তিনি মানুষের বাসায় কাজ করে যে অর্থ পান তা দিয়ে সংসার চলে না।
স্বামী প্রায় বছরখানেক হলো আসে না। কোনো খোঁজ নেয় না। শুনেছেন আরেকটি বিয়ে করে চট্টগ্রামে থাকেন। রাকিবের মা আমেনা বেগম জানান, এই শিশুটিকে দিনে দুইবার পাঠান তানিয়ার সঙ্গে। ভোর ৫টার দিকে নিয়ে যায় লেকে আর দিয়ে যায় ১১ টার দিকে। আবার ৪ টার দিকে নিয়ে যায় কখনো ফার্মগেটে আবার কখনো বসুন্ধরা সিটি শপিংমলের সামনে। প্রতি বেলার জন্য পান ৬০ টাকা করে। দিনশেষে ১২০ টাকা। বিশেষ দিনে আয় বেশি হলে ২০ থেকে ৩০টাকা বাড়িয়েও দেন।
আর শিশুটিকে ঘুমিয়ে রাখার বিষয়ে জানান, ছোট বাচ্চা যে কোনো সময় কান্না করতে পারে। কান্না করলে মা ছাড়া সামলানো কঠিন। আর শিশুর খাবারের জন্য বানানো ফিডারে দেয়া হয় চেতনানাশক ওষুধ। ওষুধের নাম বলতে পারলেন না তিনি। এই ওষুধ শিশুর জন্য ক্ষতির কারণ কিনা জানতে চাইলে- এই বিষয়ে কোনো ধারণা নেই তার বলে জানান। এই ওষুধ গুঁড়া করে ফিডারের মধ্যে দিয়ে দেন রাকিবের মা। এক ট্যাবলেটে দিয়ে ২ বার ফিডার বানান। তাতেই কাজ হয়ে যায়।
ওষুধ কেনেন পাশেই অবস্থিত আলেয়া-আরিফ ফার্মেসি থেকে। সেখানে এসব বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান দোকানের এক কর্মচারী। তবে তার অনুপস্থিতিতে দোকানের আরেক কর্মচারী জানান, এসব বাচ্চাকে ফিডারে মেশানো হয় সেডিল কিংবা বারবিট। তার কথা অনুযায়ী অনেকে এখান থেকে এসব ওষুধ কিনে থাকেন।
এই বিষয়ে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজের শিশু বিশেষঞ্জ ড. মুমতানিয়া সেতু বলেন, এসব চেতনানাশক ওষুধ খাওয়ানোর কারণে বাচ্চা সমাজের সঙ্গে অন্য মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। এছাড়াও তন্দ্রাচ্ছন্নতা, ঘুমের ওষুধের ওপর নির্ভরশীলতা তৈরি হবে। সে স্বাভাবিক জীবন যাপনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। এমনকি বিকলাঙ্গও হয়ে যেতে পারে।
এরপর রাকিবের দিনে দ্বিতীয়বারের মতো ভাড়ায় বের হবে বিকাল ৪টার দিকে। এক অসহায় মায়ের অসহায় সেই দুধের শিশুকে বিকাল ৫টার দিকে ফের দেখা যায় ফার্মগেইটের ওভারব্রিজে। সেই পাতানো বোন তানিয়ার কোলে। সকালের মতো এখনো সে ঘুমে। আর তানিয়ার হাত ব্যাগে উঁকি দিচ্ছে আত্মঘাতী ফিডার। যা দিয়ে ক্ষুধা নিবারণ হচ্ছে। আর ধীরে ধীরে ঢলে পড়ছে দীর্ঘ মেয়াদি জটিলতায়।
No comments