স্বৈরাচারদের নির্বাচনী রঙ্গ by ভ্লাদিমির কারা-মুর্জা
দারুণ
সব নির্বাচনী ফলাফল উপহার দেওয়ার এক বিশেষ প্রতিভা রয়েছে স্বৈরাচারী
শাসকদের। ইন্দোনেশিয়ার স্বৈরাচার সুহারতো নিজের লড়া সর্বশেষ নির্বাচনে মোট
ভোটের ৭৫ শতাংশ পেয়েছিলেন। মিশরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক পেয়েছিলেন ৮৯
শতাংশ ভোট। রোমানিয়ার কম্যুনিস্ট নেতা নিকোলে সিউজেসকু পেয়েছিলেন ৯৮ শতাংশ
ভোট! রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের নেতৃত্বস্থানীয় বিরোধী দলীয় আইনপ্রণেতা ও
আমার বন্ধু বরিস ভিশনেভস্কি ১৯৮৯ সালের ডিসেম্বর অবদি ৯৯ শতাংশ জনসমর্থন
ভোগ করছিলেন! এর এক সপ্তাহ পরই তার বিচার হয়। এই সব ‘বিজয়ী’রা শেষ পর্যন্ত
আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন যে, কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থায় কারসাজির ‘নির্বাচন’
প্রকৃত জনমত বোঝার ক্ষেত্রে খুবই বাজে সূচক।
রাশিয়ায় যে প্রেসিডেন্ট ‘নির্বাচন’ হলো তাতে নিয়মমাফিক ‘ভোটগ্রহণের পদ্ধতি’ দেখা গেছে। ওপেন রাশিয়া, গোলোস ও অ্যান্টি করাপশন ফাউন্ডেশনের মতো সংস্থার করা পর্যবেক্ষণে নানা ধরণের অনিয়ম উঠে আসে। গণহারে ব্যালট ঢুকানো, মৃত মানুষের ভোটপ্রদান, স্ফীত ভোটার তালিকা, জোরাজুরি, নির্বাচন পর্যবেক্ষক বহিষ্কার, জালভোট - সবই দেখা গেছে। এই নির্বাচনে কার্যত প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভ্লাদিমির পুতিনের চতুর্থ মেয়াদের পথ খুলে দেয়।
তিনি আনুষ্ঠানিক হিসাবে মোট ভোটের ৭৭ শতাংশ পেয়েছেন!
শেষ পর্যন্ত, ভোটাভুটির দিনে কতটা সহিংসতা হয়েছে, সেটা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়ায়। এই নির্বাচনে প্রথম ভোট পড়ার বহু আগে থেকেই এটি পাতানো ছিল। রাশিয়ার ২০১৮ সালের নির্বাচনের বৈশিষ্ট্য ছিল যে, এটি এমন এক নির্বাচন ছিল, যেখানে কোনো বিকল্প ছিল না। যে দুই প্রথিতযশা বিরোধী প্রার্থী পুতিনের বিরুদ্ধে লড়তে চেয়েছিলেন তাদের নাম রোববার ব্যালটে ছিল না। ২০১৫ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের বাসভবন ক্রেমলিনের সামনে একটি সেতুতে গুলি করে হত্যা করা হয় সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী ও পিপল’স ফ্রিডম পার্টির নেতা বরিস নেমতসভকে। প্রখ্যাত দুর্নীতিবিরোধী প্রচারক অ্যালেক্সেই নাভালনিকে নির্বাচনে লড়তে দেয়া হয়নি। এখানে বাধা হয়ে দাঁড়ায় রাশিয়ার আদালতের একটি দ-াদেশ। এই রায়কে ইউরোপিয়ান মানবাধিকার আদালত ‘বাছবিচারহীন’ হিসেবে আখ্যা দেয়। যখন আপনার প্রতিপক্ষের নামই ব্যালট পেপারে থাকবে না, জেতাটা খুব কঠিন নয়।
‘সত্যিকার অর্থে প্রতিযোগিতা ছাড়া যদি কাউকে বিকল্প হিসেবে জনগণের সামনে উপস্থাপন করা হয় তারা আসলে প্রকৃত বিকল্প নন, যেমনটা এখানে দেখা গেছে,’ বলছিলেন অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কোঅপারেশন ইন ইউরোপের পর্যবেক্ষক মিশনের প্রধান মাইকেল জর্জ লিঙ্ক। এছাড়া সভা সমাবেশ, সংগঠন করা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও প্রার্থী নিবন্ধনের সুযোগ, ইত্যাদি মৌলিক অধিকারের ওপর কড়াকড়ি আরোপের কারণে প্রকৃত প্রতিযোগিতা হয়নি।
এই যখন পরিস্থিতি, যেসব বিদেশী নেতা পুতিনকে অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন তাদের তালিকার দিকে একবার চোখ বুলানো যাক: বাশার আল আসাদ, নিকোলাস মাদুরো, শি জিনপিং, রাউল ক্যাস্ত্রো, নুর সুলতান নাজারবায়েভ ও আলেক্সান্দার লুকাশেঙ্কো। নির্বাচন আয়োজন নিয়ে তাদেরও জানাশোনা কম নয়।
ক্রেমলিন-বিরোধী ও ওপেন রাশিয়া’র প্রতিষ্ঠাতা মিখাইল খোদরকোভস্কি বলেন, ‘এই ক্ষমতা ব্যবস্থা আর ৬-১০ বছরের জন্য থাকবে। পুতিনের স্বাস্থ্য আর দেশের অর্থনৈতিক শক্তিমত্তা কোনোটিই এর বেশি টিকবে না। সুতরাং, এই কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতন অনিবার্য। কিন্তু এর সঙ্গে যেন পুরো দেশই ধ্বংসের কবলে না পড়ে সেজন্য আমাদের অনেক কাজ করা বাকি।’ তার এই সংগঠন রাশিয়ায় নাগরিক সমাজের উদ্যোগকে সমর্থন দেওয়া, রাজনৈতিক শিক্ষা কর্মসূচি প্রণয়ন করা ও নির্বাচনে গণতন্ত্রপন্থী প্রার্থীদেরকে সমর্থন দেওয়া অব্যাহত রাখবে।
প্রকৃত প্রতিযোগিতা হয়নি এমন নির্বাচনে সরকারি পরিসংখ্যান দেখে কারও বিভ্রান্ত হওয়া উচিৎ নয়। এই পরিসংখ্যান থেকে এই তথ্য লুকানো যাবে না যে, রাশিয়ান নাগরিকরা যখনই প্রকৃত সুযোগ পেয়েছে তখন তারা বিরোধী প্রার্থীদেরকে নির্বাচনে জয়ী করেছে। ইয়ারো¯¬াভলে আঞ্চলিক পার্লামেন্টে জয় পেয়েছেন নেমতসভ। মস্কোর মেয়র পদে লড়ার সময় ৩০ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন নাভালনি। ইয়েকাতেরিংবার্গে জিতেছেন ইয়েভজেনি রইজম্যান, পসকভে জিতেছেন লেভ শ্লোসবার্গ। মস্কোর পৌরসভায় প্রায় ৩০০ বিরোধী দলীয় আইনপ্রণেতা রয়েছেন।
এই পরিসংখ্যানের কারণেই ক্রেমলিন নির্বাচনের আগে প্রকৃত প্রতিযোগিতা হতে দিতে চায় না। যেই সরকার রাজপথের আন্দোলনকে এত ভয় পায় তারা ব্যালটের মাধ্যমেও জনগণকে নিজের ভিন্নমত প্রকাশ করতে দিতে চায় না। এর চেয়ে হাস্যকর আর কী হতে পারে!
(ভ্লাদিমির কারা-মুর্জা একজন বিরোধী দলীয় রাশিয়ান রাজনীতিক। তার এই নিবন্ধ ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত হয়েছে)
রাশিয়ায় যে প্রেসিডেন্ট ‘নির্বাচন’ হলো তাতে নিয়মমাফিক ‘ভোটগ্রহণের পদ্ধতি’ দেখা গেছে। ওপেন রাশিয়া, গোলোস ও অ্যান্টি করাপশন ফাউন্ডেশনের মতো সংস্থার করা পর্যবেক্ষণে নানা ধরণের অনিয়ম উঠে আসে। গণহারে ব্যালট ঢুকানো, মৃত মানুষের ভোটপ্রদান, স্ফীত ভোটার তালিকা, জোরাজুরি, নির্বাচন পর্যবেক্ষক বহিষ্কার, জালভোট - সবই দেখা গেছে। এই নির্বাচনে কার্যত প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভ্লাদিমির পুতিনের চতুর্থ মেয়াদের পথ খুলে দেয়।
তিনি আনুষ্ঠানিক হিসাবে মোট ভোটের ৭৭ শতাংশ পেয়েছেন!
শেষ পর্যন্ত, ভোটাভুটির দিনে কতটা সহিংসতা হয়েছে, সেটা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়ায়। এই নির্বাচনে প্রথম ভোট পড়ার বহু আগে থেকেই এটি পাতানো ছিল। রাশিয়ার ২০১৮ সালের নির্বাচনের বৈশিষ্ট্য ছিল যে, এটি এমন এক নির্বাচন ছিল, যেখানে কোনো বিকল্প ছিল না। যে দুই প্রথিতযশা বিরোধী প্রার্থী পুতিনের বিরুদ্ধে লড়তে চেয়েছিলেন তাদের নাম রোববার ব্যালটে ছিল না। ২০১৫ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের বাসভবন ক্রেমলিনের সামনে একটি সেতুতে গুলি করে হত্যা করা হয় সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী ও পিপল’স ফ্রিডম পার্টির নেতা বরিস নেমতসভকে। প্রখ্যাত দুর্নীতিবিরোধী প্রচারক অ্যালেক্সেই নাভালনিকে নির্বাচনে লড়তে দেয়া হয়নি। এখানে বাধা হয়ে দাঁড়ায় রাশিয়ার আদালতের একটি দ-াদেশ। এই রায়কে ইউরোপিয়ান মানবাধিকার আদালত ‘বাছবিচারহীন’ হিসেবে আখ্যা দেয়। যখন আপনার প্রতিপক্ষের নামই ব্যালট পেপারে থাকবে না, জেতাটা খুব কঠিন নয়।
‘সত্যিকার অর্থে প্রতিযোগিতা ছাড়া যদি কাউকে বিকল্প হিসেবে জনগণের সামনে উপস্থাপন করা হয় তারা আসলে প্রকৃত বিকল্প নন, যেমনটা এখানে দেখা গেছে,’ বলছিলেন অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কোঅপারেশন ইন ইউরোপের পর্যবেক্ষক মিশনের প্রধান মাইকেল জর্জ লিঙ্ক। এছাড়া সভা সমাবেশ, সংগঠন করা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও প্রার্থী নিবন্ধনের সুযোগ, ইত্যাদি মৌলিক অধিকারের ওপর কড়াকড়ি আরোপের কারণে প্রকৃত প্রতিযোগিতা হয়নি।
এই যখন পরিস্থিতি, যেসব বিদেশী নেতা পুতিনকে অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন তাদের তালিকার দিকে একবার চোখ বুলানো যাক: বাশার আল আসাদ, নিকোলাস মাদুরো, শি জিনপিং, রাউল ক্যাস্ত্রো, নুর সুলতান নাজারবায়েভ ও আলেক্সান্দার লুকাশেঙ্কো। নির্বাচন আয়োজন নিয়ে তাদেরও জানাশোনা কম নয়।
ক্রেমলিন-বিরোধী ও ওপেন রাশিয়া’র প্রতিষ্ঠাতা মিখাইল খোদরকোভস্কি বলেন, ‘এই ক্ষমতা ব্যবস্থা আর ৬-১০ বছরের জন্য থাকবে। পুতিনের স্বাস্থ্য আর দেশের অর্থনৈতিক শক্তিমত্তা কোনোটিই এর বেশি টিকবে না। সুতরাং, এই কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতন অনিবার্য। কিন্তু এর সঙ্গে যেন পুরো দেশই ধ্বংসের কবলে না পড়ে সেজন্য আমাদের অনেক কাজ করা বাকি।’ তার এই সংগঠন রাশিয়ায় নাগরিক সমাজের উদ্যোগকে সমর্থন দেওয়া, রাজনৈতিক শিক্ষা কর্মসূচি প্রণয়ন করা ও নির্বাচনে গণতন্ত্রপন্থী প্রার্থীদেরকে সমর্থন দেওয়া অব্যাহত রাখবে।
প্রকৃত প্রতিযোগিতা হয়নি এমন নির্বাচনে সরকারি পরিসংখ্যান দেখে কারও বিভ্রান্ত হওয়া উচিৎ নয়। এই পরিসংখ্যান থেকে এই তথ্য লুকানো যাবে না যে, রাশিয়ান নাগরিকরা যখনই প্রকৃত সুযোগ পেয়েছে তখন তারা বিরোধী প্রার্থীদেরকে নির্বাচনে জয়ী করেছে। ইয়ারো¯¬াভলে আঞ্চলিক পার্লামেন্টে জয় পেয়েছেন নেমতসভ। মস্কোর মেয়র পদে লড়ার সময় ৩০ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন নাভালনি। ইয়েকাতেরিংবার্গে জিতেছেন ইয়েভজেনি রইজম্যান, পসকভে জিতেছেন লেভ শ্লোসবার্গ। মস্কোর পৌরসভায় প্রায় ৩০০ বিরোধী দলীয় আইনপ্রণেতা রয়েছেন।
এই পরিসংখ্যানের কারণেই ক্রেমলিন নির্বাচনের আগে প্রকৃত প্রতিযোগিতা হতে দিতে চায় না। যেই সরকার রাজপথের আন্দোলনকে এত ভয় পায় তারা ব্যালটের মাধ্যমেও জনগণকে নিজের ভিন্নমত প্রকাশ করতে দিতে চায় না। এর চেয়ে হাস্যকর আর কী হতে পারে!
(ভ্লাদিমির কারা-মুর্জা একজন বিরোধী দলীয় রাশিয়ান রাজনীতিক। তার এই নিবন্ধ ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত হয়েছে)
No comments