‘নিষিদ্ধ হলেও অসুবিধা নাই’ by নাজনীন আখতার
‘আপনার এখানে সব পলিথিন ব্যাগ পাওয়া যায়?’
‘হুঁ, কোনটা চান! সব ধরনের আছে।’
‘হাতলওয়ালাও আছে? ধরে বহন করা যায়?’
‘হ আছে, এই যে, কোন সাইজ লাগব?’
‘এগুলো না নিষিদ্ধ!’
‘হ।’
‘তাহলে বিক্রি করেন কেন?’
‘বিক্রি করলে কোনো অসুবিধা নাই।’
‘কোত্থেকে আনেন এগুলো?’
‘কারখানা থেইকা।’
‘কারখানা কোথায়?’
‘জানি না।’
কথা হচ্ছিল কারওয়ানবাজারে পলিথিনের পাইকারি দোকান মাহিন প্যাকেজিং স্টোরের কর্মী ফেরদৌসের সঙ্গে। শুরু থেকে গা–ছাড়া একটা ভাব নিয়ে জবাব দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। জানালেন, ১৩-১৮ ইঞ্চি আকারের রঙিন পলিথিন পাইকারি দরে প্রতি কেজি ১৬০ টাকায় বিক্রি করেন। কিছুক্ষণ কথা বলার পর এই প্রতিবেদক ক্রেতা না বুঝতে পেরে ‘খামাখা’ কথা বলা থেকে বিরত রাখলেন নিজেকে। সরাসরি কথা না বলে হুঁ–হাঁ করে যেতে লাগলেন।
ঢাকার কারওয়ান বাজারে এই দোকানের মতো সারি সারি পলিথিনের দোকান রয়েছে। কেউ হাতলওয়ালা পলিথিনের স্মৃতি খুঁজতে চাইলে এখানে আসতে পারেন। কারণ, এখানে প্রায় ১৭ বছর আগে নিষিদ্ধ পলিথিনের সেই হারানো ‘শপিং ব্যাগ’ খুঁজে পাওয়া যায়। শুধু এখানে পাওয়া যায়—বললে ভুল হবে। পুরো শহর, সারা দেশের বিভিন্ন জায়গা এখন নিষিদ্ধ পলিথিন শপিং ব্যাগে সয়লাব।
প্রায় হারিয়ে যাওয়া সেই পলিথিন ব্যাগ খুঁজে পেয়ে কেউ স্মৃতি কাতর হবেন, নাকি ক্ষুব্ধ হবেন—তা ব্যক্তি–ইচ্ছার ওপর ছেড়ে যাওয়া যায়। স্বরূপে হাতওয়ালা সেই পলিথিনের শপিং ব্যাগ এখন আমার আপনার হাতেই পণ্যবোঝাই হয়ে ঘোরে।এর কিছু ‘সুবিধা’ তো আছেই! সেসব সুবিধার কথাও তো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলা যায় না। মাঝে বাজারে যেতে হলে বাসা থেকে চটের ব্যাগ বহন করে নিয়ে আসার ‘ঝামেলা' ছিল। সেই ‘ঝামেলা থেকে মুক্তি’ দিচ্ছে এই পলিথিন। মনে হতে পারে, ফুড চেইনের মাধ্যমে এই পলিথিন ঘুরে ঘুরে কত বছরে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে সমূহ বিপদ ঘটাবে, তা নিয়ে এত তাড়াতাড়িই কেন মাথা ঘামানো! এর পরও মারাত্মক স্বাস্থ্য ও পরিবেশ ঝুঁকির বিষয়টা কিন্তু উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
পলিথিন ব্যাগের পাইকারি দোকানগুলোর ওপর পণ্যের দোকান নির্ভরশীল। বিক্রি হওয়া পণ্য পলিথিনের ব্যাগে ভরে ক্রেতার হাতে তুলে দিচ্ছেন দোকানি। তএগুলোর চেহারা কিছুটা ভিন্ন। এই পলিথিনের ব্যাগগুলো হাতলহীন, ধরার মতো আলাদা সুবিধা নেই্। পণ্য ভরে ওপরে গিঁঠ মেরে ক্রেতার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করার বিষয়টি তুলে ধরতে মেসার্স আহাদ জেনারেল স্টোরের মালিক মো. জহির হোসেন তুমুলবেগে মাথা নাড়িয়ে বললেন, ‘এইগুলা ওইগুলা না। আমরা ওইগুলা রাখি না, নিচের দোকানে রাখে।’
ওই সময় পলিথিনের ব্যাগে করে পণ্য কিনে যাচ্ছিলেন এক ক্রেতা। পলিথিনের এই ব্যাগ ব্যবহার প্রশ্নে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বলেন, ‘বাসা থেকে ব্যাগ আনা হয় না। এই জন্যই...।’
২০০২ সালের ৮ এপ্রিল পরিবেশ অধিদপ্তর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কিছু শর্ত সাপেক্ষে পলিথিনের সব ধরনের শপিং ব্যাগ উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রি, বিক্রির জন্য প্রদর্শন, মজুত ও বিতরণ নিষিদ্ধ করে। সেই সময় আইনটি বেশ সফলভাবে প্রয়োগও হয়। কাগজের ঠোঙা আর কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন ক্রেতারা।
আইন প্রয়োগে ব্যর্থতার কারণেই নিষিদ্ধ পলিথিন শপিং ব্যাগ ফিরে এসেছে বলে অভিযোগ করেছেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সাধারণ সম্পাদক আবদুস সোবহান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, যারা আইন প্রয়োগ করবেন, এটা সম্পূর্ণ তাদের ব্যর্থতা। জানতে চাইলেই তাঁরা বলবেন, ‘লোকবল নেই, পলিথিন ব্যাগের বিকল্প নেই’। এসব অজুহাত অগ্রহণযোগ্য।
আবদুস সোবহান বলেন, পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ হওয়ার পর এটা বেশ সফলতা পেয়েছিল। পলিথিনের ব্যাগের জায়গায় কাগজের ঠোঙা বিক্রি হতো। নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ আবার বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিকল্প ব্যবস্থাটিও বন্ধ হয়ে গেল। সারা দেশ পলিথিনের ব্যাগে ছেয়ে গেছে। সুপার শপগুলোতে যেসব কাপড়ের ব্যাগের মতো দেখতে ব্যাগে পণ্য দেয়, সেগুলো কাপড় নয়। ওই ব্যাগগুলো পোড়ালেই বোঝা যায় যে, তা কাপড় নয়, পলিথিন। কাপড় পোড়ালে যেমন ছাই হওয়ার কথা, সেগুলো পোড়ালে তেমন হয় না। তিনি বলেন, ভোক্তাদেরও পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে সচেতন হতে হবে। পলিথিন পচনশীল না হওয়ায় তা নালা–নর্দমা বন্ধ করে ফেলে। পানিতে পলিথিনের বর্জ্যের স্তূপ দেখা যায়। পলিথিন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় ভেঙে যাওয়ার পর সেগুলো মাছ খায়। সেই মাছ আমরা চাই। এভাবে ফুড চেনের মাধ্যমে ক্ষতিকর পলিথিন আমাদের দেহে প্রবেশ করছে।
পলিথিন শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধে আবার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সুলতান আহমেদ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ৫৫ মাইক্রন পুরুত্বের নিচে পলিথিনের শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধ। বাজার থেকে এই ব্যাগগুলো নির্মূল করতে অভিযান চালানো হচ্ছে। বাজার মালিক সমিতির সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। পলিথিন তৈরির অনেক অবৈধ কারখানা সিলগালা করে দেওয়া হচ্ছে। এখন যেসব পলিথিন উৎপাদন হচ্ছে তা গোপনে তৈরি করে ভাসমান অবস্থায় বিক্রি করা হয়। খুব শিগগিরই নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর বড় ধরনের অভিযানে নামবে বলে তিনি জানান।
পলিথিনের ব্যাগ ফিরে আসার কারণ সম্পর্কে সুলতান আহমেদ বলেন, মানুষের হাতে বিকল্প কিছু দেওয়া যায়নি। মানুষকেও সচেতন হতে হবে। অনেকে বাজারে ব্যাগ ছাড়া চলে যান। বিক্রেতারা বিনা মূল্যে এই পলিথিন ব্যাগ দিয়ে থাকে।
মহাপরিচালক বলেন, পাটের তৈরি সোনালি ব্যাগ বাজারে এসেছে। এটা পলিথিনের ব্যাগ বন্ধে বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। পলিথিন থেকে জ্বালানি তেল তৈরি করে এক তরুণ সাফল্য দেখিয়েছেন। প্রতি জেলায় পলিথিন ব্যাগ থেকে জ্বালানি তেল তৈরির ব্যবস্থা নিলে বর্জ্য পলিথিনগুলো কাজে লাগানো যাবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে পলিথিনের সব ধরনের শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধ করে সাজার ব্যাপারে বলা হয়েছে, সরকার নির্ধারিত পলিথিন সামগ্রী উৎপাদন, আমদানি ও বাজারজাতকরণে প্রথম অপরাধের দায়ে অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড এবং পরবর্তী প্রতিটি অপরাধের ক্ষেত্রে অন্যূন দুই বছর, অনধিক দশ বছরের কারাদণ্ড বা ন্যূনতম দুই লাখ টাকা, অনধিক দশ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন অপরাধীরা।
বিক্রি, বিক্রির জন্য প্রদর্শন, মজুত, বিতরণ, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের দায়ে অনধিক এক বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
পরবর্তী প্রতিটি অপরাধের দায়ে অন্যূন দুই বছর, অনধিক দশ বছরের কারাদণ্ড বা অন্যূন দুই লাখ টাকা, অনধিক দশ লাখ টাকা অর্থদণ্ড (জরিমানা) বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন অপরাধীরা।
‘হুঁ, কোনটা চান! সব ধরনের আছে।’
‘হাতলওয়ালাও আছে? ধরে বহন করা যায়?’
‘হ আছে, এই যে, কোন সাইজ লাগব?’
‘এগুলো না নিষিদ্ধ!’
‘হ।’
‘তাহলে বিক্রি করেন কেন?’
‘বিক্রি করলে কোনো অসুবিধা নাই।’
‘কোত্থেকে আনেন এগুলো?’
‘কারখানা থেইকা।’
‘কারখানা কোথায়?’
‘জানি না।’
কথা হচ্ছিল কারওয়ানবাজারে পলিথিনের পাইকারি দোকান মাহিন প্যাকেজিং স্টোরের কর্মী ফেরদৌসের সঙ্গে। শুরু থেকে গা–ছাড়া একটা ভাব নিয়ে জবাব দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। জানালেন, ১৩-১৮ ইঞ্চি আকারের রঙিন পলিথিন পাইকারি দরে প্রতি কেজি ১৬০ টাকায় বিক্রি করেন। কিছুক্ষণ কথা বলার পর এই প্রতিবেদক ক্রেতা না বুঝতে পেরে ‘খামাখা’ কথা বলা থেকে বিরত রাখলেন নিজেকে। সরাসরি কথা না বলে হুঁ–হাঁ করে যেতে লাগলেন।
ঢাকার কারওয়ান বাজারে এই দোকানের মতো সারি সারি পলিথিনের দোকান রয়েছে। কেউ হাতলওয়ালা পলিথিনের স্মৃতি খুঁজতে চাইলে এখানে আসতে পারেন। কারণ, এখানে প্রায় ১৭ বছর আগে নিষিদ্ধ পলিথিনের সেই হারানো ‘শপিং ব্যাগ’ খুঁজে পাওয়া যায়। শুধু এখানে পাওয়া যায়—বললে ভুল হবে। পুরো শহর, সারা দেশের বিভিন্ন জায়গা এখন নিষিদ্ধ পলিথিন শপিং ব্যাগে সয়লাব।
প্রায় হারিয়ে যাওয়া সেই পলিথিন ব্যাগ খুঁজে পেয়ে কেউ স্মৃতি কাতর হবেন, নাকি ক্ষুব্ধ হবেন—তা ব্যক্তি–ইচ্ছার ওপর ছেড়ে যাওয়া যায়। স্বরূপে হাতওয়ালা সেই পলিথিনের শপিং ব্যাগ এখন আমার আপনার হাতেই পণ্যবোঝাই হয়ে ঘোরে।এর কিছু ‘সুবিধা’ তো আছেই! সেসব সুবিধার কথাও তো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলা যায় না। মাঝে বাজারে যেতে হলে বাসা থেকে চটের ব্যাগ বহন করে নিয়ে আসার ‘ঝামেলা' ছিল। সেই ‘ঝামেলা থেকে মুক্তি’ দিচ্ছে এই পলিথিন। মনে হতে পারে, ফুড চেইনের মাধ্যমে এই পলিথিন ঘুরে ঘুরে কত বছরে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে সমূহ বিপদ ঘটাবে, তা নিয়ে এত তাড়াতাড়িই কেন মাথা ঘামানো! এর পরও মারাত্মক স্বাস্থ্য ও পরিবেশ ঝুঁকির বিষয়টা কিন্তু উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
পলিথিন ব্যাগের পাইকারি দোকানগুলোর ওপর পণ্যের দোকান নির্ভরশীল। বিক্রি হওয়া পণ্য পলিথিনের ব্যাগে ভরে ক্রেতার হাতে তুলে দিচ্ছেন দোকানি। তএগুলোর চেহারা কিছুটা ভিন্ন। এই পলিথিনের ব্যাগগুলো হাতলহীন, ধরার মতো আলাদা সুবিধা নেই্। পণ্য ভরে ওপরে গিঁঠ মেরে ক্রেতার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করার বিষয়টি তুলে ধরতে মেসার্স আহাদ জেনারেল স্টোরের মালিক মো. জহির হোসেন তুমুলবেগে মাথা নাড়িয়ে বললেন, ‘এইগুলা ওইগুলা না। আমরা ওইগুলা রাখি না, নিচের দোকানে রাখে।’
ওই সময় পলিথিনের ব্যাগে করে পণ্য কিনে যাচ্ছিলেন এক ক্রেতা। পলিথিনের এই ব্যাগ ব্যবহার প্রশ্নে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বলেন, ‘বাসা থেকে ব্যাগ আনা হয় না। এই জন্যই...।’
২০০২ সালের ৮ এপ্রিল পরিবেশ অধিদপ্তর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কিছু শর্ত সাপেক্ষে পলিথিনের সব ধরনের শপিং ব্যাগ উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রি, বিক্রির জন্য প্রদর্শন, মজুত ও বিতরণ নিষিদ্ধ করে। সেই সময় আইনটি বেশ সফলভাবে প্রয়োগও হয়। কাগজের ঠোঙা আর কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন ক্রেতারা।
আইন প্রয়োগে ব্যর্থতার কারণেই নিষিদ্ধ পলিথিন শপিং ব্যাগ ফিরে এসেছে বলে অভিযোগ করেছেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সাধারণ সম্পাদক আবদুস সোবহান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, যারা আইন প্রয়োগ করবেন, এটা সম্পূর্ণ তাদের ব্যর্থতা। জানতে চাইলেই তাঁরা বলবেন, ‘লোকবল নেই, পলিথিন ব্যাগের বিকল্প নেই’। এসব অজুহাত অগ্রহণযোগ্য।
আবদুস সোবহান বলেন, পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ হওয়ার পর এটা বেশ সফলতা পেয়েছিল। পলিথিনের ব্যাগের জায়গায় কাগজের ঠোঙা বিক্রি হতো। নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ আবার বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিকল্প ব্যবস্থাটিও বন্ধ হয়ে গেল। সারা দেশ পলিথিনের ব্যাগে ছেয়ে গেছে। সুপার শপগুলোতে যেসব কাপড়ের ব্যাগের মতো দেখতে ব্যাগে পণ্য দেয়, সেগুলো কাপড় নয়। ওই ব্যাগগুলো পোড়ালেই বোঝা যায় যে, তা কাপড় নয়, পলিথিন। কাপড় পোড়ালে যেমন ছাই হওয়ার কথা, সেগুলো পোড়ালে তেমন হয় না। তিনি বলেন, ভোক্তাদেরও পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে সচেতন হতে হবে। পলিথিন পচনশীল না হওয়ায় তা নালা–নর্দমা বন্ধ করে ফেলে। পানিতে পলিথিনের বর্জ্যের স্তূপ দেখা যায়। পলিথিন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় ভেঙে যাওয়ার পর সেগুলো মাছ খায়। সেই মাছ আমরা চাই। এভাবে ফুড চেনের মাধ্যমে ক্ষতিকর পলিথিন আমাদের দেহে প্রবেশ করছে।
পলিথিন শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধে আবার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সুলতান আহমেদ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ৫৫ মাইক্রন পুরুত্বের নিচে পলিথিনের শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধ। বাজার থেকে এই ব্যাগগুলো নির্মূল করতে অভিযান চালানো হচ্ছে। বাজার মালিক সমিতির সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। পলিথিন তৈরির অনেক অবৈধ কারখানা সিলগালা করে দেওয়া হচ্ছে। এখন যেসব পলিথিন উৎপাদন হচ্ছে তা গোপনে তৈরি করে ভাসমান অবস্থায় বিক্রি করা হয়। খুব শিগগিরই নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর বড় ধরনের অভিযানে নামবে বলে তিনি জানান।
পলিথিনের ব্যাগ ফিরে আসার কারণ সম্পর্কে সুলতান আহমেদ বলেন, মানুষের হাতে বিকল্প কিছু দেওয়া যায়নি। মানুষকেও সচেতন হতে হবে। অনেকে বাজারে ব্যাগ ছাড়া চলে যান। বিক্রেতারা বিনা মূল্যে এই পলিথিন ব্যাগ দিয়ে থাকে।
মহাপরিচালক বলেন, পাটের তৈরি সোনালি ব্যাগ বাজারে এসেছে। এটা পলিথিনের ব্যাগ বন্ধে বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। পলিথিন থেকে জ্বালানি তেল তৈরি করে এক তরুণ সাফল্য দেখিয়েছেন। প্রতি জেলায় পলিথিন ব্যাগ থেকে জ্বালানি তেল তৈরির ব্যবস্থা নিলে বর্জ্য পলিথিনগুলো কাজে লাগানো যাবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে পলিথিনের সব ধরনের শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধ করে সাজার ব্যাপারে বলা হয়েছে, সরকার নির্ধারিত পলিথিন সামগ্রী উৎপাদন, আমদানি ও বাজারজাতকরণে প্রথম অপরাধের দায়ে অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড এবং পরবর্তী প্রতিটি অপরাধের ক্ষেত্রে অন্যূন দুই বছর, অনধিক দশ বছরের কারাদণ্ড বা ন্যূনতম দুই লাখ টাকা, অনধিক দশ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন অপরাধীরা।
বিক্রি, বিক্রির জন্য প্রদর্শন, মজুত, বিতরণ, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের দায়ে অনধিক এক বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
পরবর্তী প্রতিটি অপরাধের দায়ে অন্যূন দুই বছর, অনধিক দশ বছরের কারাদণ্ড বা অন্যূন দুই লাখ টাকা, অনধিক দশ লাখ টাকা অর্থদণ্ড (জরিমানা) বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন অপরাধীরা।
No comments