সংকটে বাংলাদেশের গণতন্ত্র
মোটরসাইকেলে
করে একদল অস্ত্রধারী যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের ওপর হামলা চালাচ্ছে, এটি
কোনো নিয়মিত ঘটনা নয়। কিন্তু গত গ্রীষ্মের এক রাতে বাংলাদেশে নিযুক্ত
মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট এরকমই এক হামলার শিকার হন। রাজধানী
ঢাকায় ৪ঠা আগস্ট তিনি এক নৈশভোজ থেকে বের হওয়ার সময় তার গাড়ি লক্ষ্য করে
একটি মোটরসাইকেল থেকে ইট ছোড়া হয়। এতে তিনি অক্ষত থাকেন। তবে হামলার সঙ্গে
জড়িত কারো নাম জানা যায়নি। ঘটনাটি বাংলাদেশের রাজনীতির উগ্র ও ক্রমবর্ধমান
অনিশ্চয়তাকেই তুলে ধরে। দুর্বল গণতন্ত্র ও উদার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠের
দেশটি সম্প্রতি কয়েক বছরে একটি একদলীয় রাষ্ট্রের দিকে এগিয়ে গেছে।
বার্নিকাটের ওপর হামলার কিছুদিন পূর্বেই ঢাকায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিল।
আন্দোলনের মাধ্যমে তারা সরকারের কাছে সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি উত্থাপন করে। তাদের আন্দোলন ছিল একান্তই শান্তিপূর্ণ। কিন্তু এ আন্দোলন দমন করতে সরকার কঠিন পথ অবলম্বন করে। শাসক দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায় বলে সংবাদ প্রকাশ করে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো। এমনকি যে সাংবাদিকরা আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহ করছিল তারাও হামলার শিকার হন। কারো কারো ক্যামেরা ভেঙ্গে ফেলা হয়। সেসময়, আন্দোলন থামাতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টহল দিয়েছে। আল-জাজিরার এক সাক্ষাৎকারে আন্দোলন দমনের নামে সরকারের কঠিন পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করায় খ্যাতিমান অধিকারকর্মী শহিদুল আলমকে তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, কারাগারে তাকে নির্যাতনও করা হয়েছে। চিকিৎসার প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও তাকে কারাগারে রাখা হয়। সম্প্রতি বেশ কয়েকবার তার জামিন নামঞ্জুরের পর ১৫ই নভেম্বর আদালত তাকে জামিন প্রদান করে।
সমালোচকদের এভাবে কঠিন হস্তে দমন বাংলাদেশে এখন সাধারণ বিষয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এসবের ন্যায্যতা প্রমাণ করতে আইনের অজুহাত দেখানো হচ্ছে। গত মাসে সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস করা হয়। এর মাধ্যমে সরকার ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। যেসব সাংবাদিকের লেখা সরকারের পছন্দ হয় না তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানি মামলা দেয়া হচ্ছে। এমনকি দেশের সর্বোচ্চ পদাধিকারীরাও ছাড় পাচ্ছেন না। গত নভেম্বর মাসে সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের একটি সংশোধনী বাতিল করে দিয়েছে। এ সংশোধনীর মাধ্যমে সরকার চাইলে খুব সহজেই বিচারপতি বরখাস্ত করতে পারত। তখন সংশোধনী বাতিল হওয়ায় আদালতের সিদ্ধান্তের প্রতি ক্ষুব্ধ হয় সরকার এবং প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকেও হুমকি দেয়া হয়। সরকারের হুমকির মুখে দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেয়ার পর সরকার তাকে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করে। এসকে সিনহা এখন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইছেন।
যেকোনো মানদন্ডেই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বর্তমান অবস্থা ভয়াবহ। সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় ১৮০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৪৪তম। ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে গণতন্ত্রের মানদন্ডে ১৬৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৫তম থেকে ৯২তমতে পৌঁছেছে। এ বছরের মার্চে জার্মান গবেষণা প্রতিষ্ঠান বেরটেলসম্যান স্টিফটুং জানায়, বাংলাদেশ এখন স্বৈরশাসনের অধীন ও এখানে এখন গণতন্ত্রের ন্যূনতম মানদ- পর্যন্ত মানা হচ্ছে না। বাংলাদেশ ক্রমশ একটি অগণতান্ত্রিক দেশে পরিণত হচ্ছে। যদিও ১৫ বছর সামরিক শাসনের মধ্যে থাকা দেশের কাছে স্বৈরশাসন নতুন কিছু নয়।
২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পুনরায় জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে। এই নির্বাচনকে কিছু বিদেশি পর্যবেক্ষক অগ্রহণযোগ্য বলে দাবি করেন। এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের পর্যবেক্ষক দল পাঠাতেও অস্বীকৃতি জানায়। বাংলাদেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্বে নির্বাচনের দাবিতে এ নির্বাচন বয়কট করে। এতে ৩০০ আসনের ১৫৩টি আসন থেকেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন। গত চার বছর ধরে সরকার বিরোধীদলের সঙ্গে সেতু স্থাপনের পরিবর্তে উল্টো তাদেরকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামির বেশ কিছু নেতাকে আটক ও কারাদ- দেয়া হয়েছে। এর পেছনে ঢাকা সন্ত্রাস দমনের অজুহাত দাঁড় করিয়েছে। সরকারের দাবি জামায়াতে ইসলামির উগ্র গোষ্ঠীদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। গবেষকরা জঙ্গি সংগঠন জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা চিহ্নিত করেছে।
ঘনিয়ে এসেছে জাতীয় নির্বাচন। বাংলাদেশের জন্য পরবর্তী কয়েক মাস সংকটপূর্ণ হতে চলেছে। গণতন্ত্রে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে এখন একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। আরেকটি অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন বাংলাদেশকে একদলীয় রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করে তুলবে।
( দ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্টে প্রকাশিত আতিফ জালাল আহমেদ ও মাইকেল কুগেলম্যানের লেখা থেকে)
বার্নিকাটের ওপর হামলার কিছুদিন পূর্বেই ঢাকায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিল।
আন্দোলনের মাধ্যমে তারা সরকারের কাছে সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি উত্থাপন করে। তাদের আন্দোলন ছিল একান্তই শান্তিপূর্ণ। কিন্তু এ আন্দোলন দমন করতে সরকার কঠিন পথ অবলম্বন করে। শাসক দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায় বলে সংবাদ প্রকাশ করে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো। এমনকি যে সাংবাদিকরা আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহ করছিল তারাও হামলার শিকার হন। কারো কারো ক্যামেরা ভেঙ্গে ফেলা হয়। সেসময়, আন্দোলন থামাতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টহল দিয়েছে। আল-জাজিরার এক সাক্ষাৎকারে আন্দোলন দমনের নামে সরকারের কঠিন পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করায় খ্যাতিমান অধিকারকর্মী শহিদুল আলমকে তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, কারাগারে তাকে নির্যাতনও করা হয়েছে। চিকিৎসার প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও তাকে কারাগারে রাখা হয়। সম্প্রতি বেশ কয়েকবার তার জামিন নামঞ্জুরের পর ১৫ই নভেম্বর আদালত তাকে জামিন প্রদান করে।
সমালোচকদের এভাবে কঠিন হস্তে দমন বাংলাদেশে এখন সাধারণ বিষয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এসবের ন্যায্যতা প্রমাণ করতে আইনের অজুহাত দেখানো হচ্ছে। গত মাসে সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস করা হয়। এর মাধ্যমে সরকার ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। যেসব সাংবাদিকের লেখা সরকারের পছন্দ হয় না তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানি মামলা দেয়া হচ্ছে। এমনকি দেশের সর্বোচ্চ পদাধিকারীরাও ছাড় পাচ্ছেন না। গত নভেম্বর মাসে সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের একটি সংশোধনী বাতিল করে দিয়েছে। এ সংশোধনীর মাধ্যমে সরকার চাইলে খুব সহজেই বিচারপতি বরখাস্ত করতে পারত। তখন সংশোধনী বাতিল হওয়ায় আদালতের সিদ্ধান্তের প্রতি ক্ষুব্ধ হয় সরকার এবং প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকেও হুমকি দেয়া হয়। সরকারের হুমকির মুখে দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেয়ার পর সরকার তাকে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করে। এসকে সিনহা এখন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইছেন।
যেকোনো মানদন্ডেই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বর্তমান অবস্থা ভয়াবহ। সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় ১৮০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৪৪তম। ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে গণতন্ত্রের মানদন্ডে ১৬৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৫তম থেকে ৯২তমতে পৌঁছেছে। এ বছরের মার্চে জার্মান গবেষণা প্রতিষ্ঠান বেরটেলসম্যান স্টিফটুং জানায়, বাংলাদেশ এখন স্বৈরশাসনের অধীন ও এখানে এখন গণতন্ত্রের ন্যূনতম মানদ- পর্যন্ত মানা হচ্ছে না। বাংলাদেশ ক্রমশ একটি অগণতান্ত্রিক দেশে পরিণত হচ্ছে। যদিও ১৫ বছর সামরিক শাসনের মধ্যে থাকা দেশের কাছে স্বৈরশাসন নতুন কিছু নয়।
২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পুনরায় জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে। এই নির্বাচনকে কিছু বিদেশি পর্যবেক্ষক অগ্রহণযোগ্য বলে দাবি করেন। এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের পর্যবেক্ষক দল পাঠাতেও অস্বীকৃতি জানায়। বাংলাদেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্বে নির্বাচনের দাবিতে এ নির্বাচন বয়কট করে। এতে ৩০০ আসনের ১৫৩টি আসন থেকেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন। গত চার বছর ধরে সরকার বিরোধীদলের সঙ্গে সেতু স্থাপনের পরিবর্তে উল্টো তাদেরকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামির বেশ কিছু নেতাকে আটক ও কারাদ- দেয়া হয়েছে। এর পেছনে ঢাকা সন্ত্রাস দমনের অজুহাত দাঁড় করিয়েছে। সরকারের দাবি জামায়াতে ইসলামির উগ্র গোষ্ঠীদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। গবেষকরা জঙ্গি সংগঠন জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা চিহ্নিত করেছে।
ঘনিয়ে এসেছে জাতীয় নির্বাচন। বাংলাদেশের জন্য পরবর্তী কয়েক মাস সংকটপূর্ণ হতে চলেছে। গণতন্ত্রে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে এখন একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। আরেকটি অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন বাংলাদেশকে একদলীয় রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করে তুলবে।
( দ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্টে প্রকাশিত আতিফ জালাল আহমেদ ও মাইকেল কুগেলম্যানের লেখা থেকে)
No comments