নির্বাচন বর্জন নয়, কেন্দ্র পাহারা দিন -ড. কামাল হোসেন
সরকার
ক্ষমতায় থেকে যত ধরনের ১০ নম্বরি করুক ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বয়কট করবে না
বলে মন্তব্য করেছেন গণফোরাম সভাপতি ও ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল
হোসেন। বলেছেন, একবার নির্বাচন বয়কট করে তার খেসারত দিতে হয়েছে, এবার আমরা
বয়কট করবো না। গতকাল বিকালে রাজধানীর সুপ্রিম কোর্ট বার প্রাঙ্গণে জাতীয়
আইনজীবী ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত আইনজীবী মহাসমাবেশ তিনি এসব কথা বলেন। কামাল
হোসেন বলেন, আমরা ভোট করবো। ভোট কেন্দ্র পাহারা দিয়ে ভোট করবো। হাজারে
হাজারে গিয়ে ভোট দেবো। তরুণ ভোটারদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, দুই কোটি
তরুণ ভোটার যারা আছেন সকলে সংঘবদ্ধ হোন।
১৬ কোটি মানুষের অধিকার আমরা ফিরিয়ে দেবো।
ঐক্যফ্রন্টের এই প্রধান নেতা বলেন, এই দেশের মালিক জনগণ। তারা ভোটের মাধ্যমে দেশের শাসনক্ষমতা নির্ধারণ করবে। কিন্তু দেশের মানুষকে এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করে ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। তখন তারা কোর্টে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, আমরা পরিস্থিতির আলোকে এই নির্বাচন করছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে আরেকটি নির্বাচন দেবো। এরপর ৫ বছর পেরিয়ে গেল। দ্রুত নির্বাচন করার অর্থ যে ৫ বছর তা আমরা জানতাম না। ডিকশনারিতে কি বাংলা ভাষায় নতুন করে দ্রুত মানে ৫ বছর যুক্ত হয়েছে? এ সময় মহাজোট সরকারকে ‘ভাঁওতাবাজির সরকার’ অ্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ভাঁওতাবাজির জন্য কোনো গোল্ড মেডেল হলে সেটা এই সরকারকে দেয়া উচিত। কারণ আওয়ামী লীগ সরকার ভাঁওতাবাজি করে ৫ বছর কাটিয়ে দিলো।
আমরা চেয়ে চেয়ে দেখলাম। আমার কাছে ভাবতেই অবাক লাগে কিভাবে ৫ বছর মেনে নিলাম। ড. কামাল বলেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের অপমান করেছে। তারা হয়তো মনে মনে বলে- শহীদরা ১৬ কোটি মানুষের হাতে ক্ষমতা দিয়ে গিয়েছিলে। এখন দেখো আমরা কিভাবে চালাচ্ছি। তিনি বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা রায় দেয়ার পর সম্ভবত একজন মন্ত্রী বলেছিলেন- তোকে কে নিয়োগ দিয়েছে? একজন প্রধান বিচারপতিকে এভাবে কেউ বলতে পারে না। এটা নিয়ে এখনো মামলা হতে পারে। আপনারা কেউ এটা নিয়ে মামলা করেন। আমি লড়বো সেই কেইস। ড. কামাল বলেন, সরকার কথায় কথায় সংবিধান সংবিধান করে। সংবিধানের প্রথম লাইনে লেখা আছে সংবিধান। আমার মনে হয় সরকারের নেতা-মন্ত্রীরা এই লাইন ছাড়া আর কিছু পড়ে না। কারণ তারা সকাল থেকে শুরু করে পরদিন পর্যন্ত সংবিধান লঙ্ঘন করেন। এভাবে ৫ বছর সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। তিনি বলেন, পৃথিবীতে প্রথম ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হয়েছেন। এটা সংবিধান সম্মত নয়। এরা লজ্জাহীন তাই নিজেদের এমপি পরিচয় দেন। এদের লজ্জাবোধ থাকা উচিত। কারণ মানুষের সন্তানদের লজ্জা থাকে।
আল্লাহর কাছে একটা দোয়া করবো। তাদের যেন একটু লজ্জাবোধ দেন। আদমের সন্তানদের পৃথিবীতে পাঠানোর পর যে কয়েকটি বোধ দেয়া হয় তার মধ্যে লজ্জাবোধ অন্যতম। এ সময় তিনি বর্তমান এমপিদের ব্যঙ্গ করে বলেন- এমপি মানে মনোনীত প্রতিনিধি। এটাকে এখন থেকে জিপি বলা উচিত। কারণ জিপি মানে হল ঘোষিত প্রতিনিধি। এমপি হিসেবে ঘোষণার গেজেট প্রকাশেরও সমালোচনা করেন ড. কামাল। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় অর্থ খরচ করে এসব এমপিদের নামে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। গেজেটে কি কি ছাপা যায় তারও একটা আইন আছে। এই সম্পর্কে বললে হয়তো তারা বলবে আমরা কম জানি নাকি আইন। আমি বলবো- ভাই তোমরা কম জানো না। তবে একটু বেশিই জানো। সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব ও ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে বলেছিলেন সরকার বিভিন্নভাবে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করবে। কোনো ফাঁদে পা দেয়া যাবে না।
একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। কারাগারে যাওয়ার পর তার সঙ্গে কয়েকবার দেখা করার সুযোগ হয়েছে আমার। জাতীয় ঐক্যে ড. কামাল হোসেন আসার পর তিনি বলেছেন- খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে যেন তাকে সালাম জানানো হয়। প্রত্যেকবার তিনি বলেছেন, জাতীয় ঐক্য অটুট রাখতে হবে। ম্যাডামের কথায় আমরা সবার কাছে গিয়েছিলাম। বার বার গিয়েছি। সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। বৃহত্তর ঐক্যের লক্ষ্যে আমরা বি. চৌধুরীর কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, আমরা তাকে বুঝাতে পারিনি। কিন্তু ড. কামাল হোসেন, আসম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না এসেছেন। বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, শুক্রবার গুলশানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সম্পাদকদের মতবিনিময়ে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। এর মধ্যে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের একটি কথা আমার খুব ভালো লেগেছে।
তিনি বিখ্যাত একটি উক্তি উল্লেখ করে বলেন- ‘স্বাধীনতার সব অর্জন শেষ হয়ে গেছে। আবার নতুন করে গড়তে হবে।’ খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি খুব জোর গলায় বলতে পারি- সম্পূর্ণ সরকারি চাপের মুখে খালেদা জিয়াকে বেআইনিভাবে সাজা দেয়া হয়েছে। আমি আজ দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, এই ব্যবস্থার পরিবর্তন হতে হবে। বিচার বিচারের মতো হতে হবে। রাজনৈতিক বিবেচনায় যেন কোনো ব্যক্তির বিচার না করা হয় সেজন্য আইনজীবীদের এগিয়ে আসতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকারকে দানব আখ্যা দেয়ার ব্যাখ্যা দিয়ে ফখরুল বলেন, এই শব্দটি শিখেছি সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার কাছ থেকে। তিনি এই সরকারকে দানব আখ্যা দিয়েছিলেন। এই দানবের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ। এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে তাদের পরাজিত করতে হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাদের পরাজিত করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা বিচার বিভাগের দিকে তাকিয়ে থাকি। যখন সরকার দ্বারা আক্রান্ত হই তখন এই মহান ভবনে আসি একটু আশ্রয়ের আশায়। কিন্তু বিচার বিভাগে সেই আশ্রয়টুকুও আমাদের আজ নেই। বিএনপি মহাসচিব বলেন, উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে নিম্ন আদালতে গেলে সেখানে বিচার পাওয়া যায় না। আমাদের বহু নেতাকর্মী এই অবস্থার সম্মুখীন। এর পরিবর্তন আনতে হবে। মির্জা আলমগীর বলেন, আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বলতে চাই- দেশের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা এই বন্ধাত্বের যুগে সত্য কথা বলেছেন। যখন কেউ কোনো প্রতিবাদ করে না। সত্য বলে না। তখন এই মানুষটি দাঁড়িয়েছিলেন। একা প্রতিবাদ করেছিলেন। তিনি সত্য রায় দিয়েছিলেন, সত্য বলেছিলেন। এজন্য সরকার তাকে জোর জবরদস্তি করে দেশ থেকে বের করে দিয়েছে। তিনি বলেন, আজকের এই আইনজীবী সমাবেশে কোনো আইনজীবী তাদের বক্তব্যে বিচারপতি সিনহার কথা উল্লেখ না করায় আমি মর্মাহত হয়েছি।
আমি আশা করেছিলাম আপনারা আজ তাকে স্মরণ করবেন। কিন্তু কেউ সেটি করলেন না। আমাদের সবার উচিত তাকে গভীর শ্রদ্ধা জানানো এবং তিনি যে কথাগুলো উচ্চারণ করে গেছেন সেগুলো বারবার বলা উচিত। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য সব আইনজীবীদের আন্দোলনে নামার আহ্বান জানিয়ে মির্জা আলমগীর বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত না হলে মানুষ আইনের শাসন থেকে বঞ্চিত হবে। এ সময় তিনি বলেন, আমরা এমন একটি রাষ্ট্রে বাস করছি যেখানে আইনজীবীরাও মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছে। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন আজ রংপুরের কারাগারে বন্দি। অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী রিমান্ডে। দুর্ভাগ্য আমাদের আজ আইনজীবীরাও মিথ্যা মামলায় কারাগারে রয়েছেন। সাম্প্রদায়িক শক্তিরা ঐক্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা আলমগীর বলেন, আমাদের এখানে ড. কামাল সাম্প্রদায়িক, আ স ম আবদুর রব সাম্প্রদায়িক, মাহমুদুর রহমান মান্না সাম্প্রদায়িক।
তাহলে আপনারা কি? প্রকৃতপক্ষে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে আপনারাই প্রশ্রয় দিয়েছেন। এখনো তাদের সঙ্গে আপনাদের বসবাস। এমনকি হেফাজতের সঙ্গে অনুষ্ঠান করে প্রধানমন্ত্রী কওমি জননী হয়ে গেছেন। এগুলো সবাই জানে। তিনি বলেন, আমাদের দেশের নির্বাচনের চিরাচরিত নিয়ম ভোটাররা ভোট দেয়ার পর কেন্দ্রে ভোট গণনা করে সেখানেই ফলাফল ঘোষণা করে পরে উপজেলায় নিয়ে যাওয়া হয়। শুনেছি এবার নাকি কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণা না করে নিয়ে যাওয়া হবে। নির্বাচন কমিশনকে সাবধান করে দিচ্ছি কেন্দ্র থেকে ফলাফল ঘোষণার সিদ্ধান্ত বাতিল করা হলে জনগণ তা মেনে নেবে না। নির্বাচনে ইভিএমও চলবে না। কারণ ইভিএম এ হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি করার সুযোগ রয়েছে। তাই এটা গ্রহণযোগ্য হবে না। এ সময় তিনি আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আসুন আমরা নির্বাচনের যুদ্ধে অবতীর্ণ হই।
সেই নির্বাচনী যুদ্ধে জয়ী হওয়াকে আন্দোলন হিসেবে নিতে হবে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে মানুষের স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার হারিয়ে গেছে। এই সরকারের পরিবর্তন প্রয়োজন। কারণ মানুষ পরিবর্তন দেখতে চায়। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রির প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে লাখ লাখ লোক এসেছে। এটা দেখে সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। মওদুদ বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন আজ্ঞাবহ। আমরা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে কমিশনে গিয়েছিলাম। সেখানে বলেছি- আপনারা আগে কেন এই নির্দেশনা দেননি। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বিক্রির সময় এমন শোডাউন করেছে। তাহলে শুধু বিএনপির সময় লোক সরানোর নির্দেশনা দেয়া হলো কেন? তিনি বলেন, আমাদের কার্যালয়ের সামনে পুলিশের গাড়িতে আগুন দিয়েছে তাদেরই লোক। ছাত্রলীগ-যুবলীগের হেলমেট পরা ছেলেরা এই কাজ করেছে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকনের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন- বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ বিভিন্ন জেলা বারের নেতৃবৃন্দ। সমাবেশে খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে সংগীত পরিবেশন করেন- কণ্ঠশিল্পী ও বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক বেবী নাজনীন ও মহিলা আইনজীবীরা।
১৬ কোটি মানুষের অধিকার আমরা ফিরিয়ে দেবো।
ঐক্যফ্রন্টের এই প্রধান নেতা বলেন, এই দেশের মালিক জনগণ। তারা ভোটের মাধ্যমে দেশের শাসনক্ষমতা নির্ধারণ করবে। কিন্তু দেশের মানুষকে এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করে ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। তখন তারা কোর্টে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, আমরা পরিস্থিতির আলোকে এই নির্বাচন করছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে আরেকটি নির্বাচন দেবো। এরপর ৫ বছর পেরিয়ে গেল। দ্রুত নির্বাচন করার অর্থ যে ৫ বছর তা আমরা জানতাম না। ডিকশনারিতে কি বাংলা ভাষায় নতুন করে দ্রুত মানে ৫ বছর যুক্ত হয়েছে? এ সময় মহাজোট সরকারকে ‘ভাঁওতাবাজির সরকার’ অ্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ভাঁওতাবাজির জন্য কোনো গোল্ড মেডেল হলে সেটা এই সরকারকে দেয়া উচিত। কারণ আওয়ামী লীগ সরকার ভাঁওতাবাজি করে ৫ বছর কাটিয়ে দিলো।
আমরা চেয়ে চেয়ে দেখলাম। আমার কাছে ভাবতেই অবাক লাগে কিভাবে ৫ বছর মেনে নিলাম। ড. কামাল বলেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের অপমান করেছে। তারা হয়তো মনে মনে বলে- শহীদরা ১৬ কোটি মানুষের হাতে ক্ষমতা দিয়ে গিয়েছিলে। এখন দেখো আমরা কিভাবে চালাচ্ছি। তিনি বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা রায় দেয়ার পর সম্ভবত একজন মন্ত্রী বলেছিলেন- তোকে কে নিয়োগ দিয়েছে? একজন প্রধান বিচারপতিকে এভাবে কেউ বলতে পারে না। এটা নিয়ে এখনো মামলা হতে পারে। আপনারা কেউ এটা নিয়ে মামলা করেন। আমি লড়বো সেই কেইস। ড. কামাল বলেন, সরকার কথায় কথায় সংবিধান সংবিধান করে। সংবিধানের প্রথম লাইনে লেখা আছে সংবিধান। আমার মনে হয় সরকারের নেতা-মন্ত্রীরা এই লাইন ছাড়া আর কিছু পড়ে না। কারণ তারা সকাল থেকে শুরু করে পরদিন পর্যন্ত সংবিধান লঙ্ঘন করেন। এভাবে ৫ বছর সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। তিনি বলেন, পৃথিবীতে প্রথম ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হয়েছেন। এটা সংবিধান সম্মত নয়। এরা লজ্জাহীন তাই নিজেদের এমপি পরিচয় দেন। এদের লজ্জাবোধ থাকা উচিত। কারণ মানুষের সন্তানদের লজ্জা থাকে।
আল্লাহর কাছে একটা দোয়া করবো। তাদের যেন একটু লজ্জাবোধ দেন। আদমের সন্তানদের পৃথিবীতে পাঠানোর পর যে কয়েকটি বোধ দেয়া হয় তার মধ্যে লজ্জাবোধ অন্যতম। এ সময় তিনি বর্তমান এমপিদের ব্যঙ্গ করে বলেন- এমপি মানে মনোনীত প্রতিনিধি। এটাকে এখন থেকে জিপি বলা উচিত। কারণ জিপি মানে হল ঘোষিত প্রতিনিধি। এমপি হিসেবে ঘোষণার গেজেট প্রকাশেরও সমালোচনা করেন ড. কামাল। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় অর্থ খরচ করে এসব এমপিদের নামে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। গেজেটে কি কি ছাপা যায় তারও একটা আইন আছে। এই সম্পর্কে বললে হয়তো তারা বলবে আমরা কম জানি নাকি আইন। আমি বলবো- ভাই তোমরা কম জানো না। তবে একটু বেশিই জানো। সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব ও ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে বলেছিলেন সরকার বিভিন্নভাবে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করবে। কোনো ফাঁদে পা দেয়া যাবে না।
একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। কারাগারে যাওয়ার পর তার সঙ্গে কয়েকবার দেখা করার সুযোগ হয়েছে আমার। জাতীয় ঐক্যে ড. কামাল হোসেন আসার পর তিনি বলেছেন- খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে যেন তাকে সালাম জানানো হয়। প্রত্যেকবার তিনি বলেছেন, জাতীয় ঐক্য অটুট রাখতে হবে। ম্যাডামের কথায় আমরা সবার কাছে গিয়েছিলাম। বার বার গিয়েছি। সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। বৃহত্তর ঐক্যের লক্ষ্যে আমরা বি. চৌধুরীর কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, আমরা তাকে বুঝাতে পারিনি। কিন্তু ড. কামাল হোসেন, আসম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না এসেছেন। বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, শুক্রবার গুলশানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সম্পাদকদের মতবিনিময়ে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। এর মধ্যে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের একটি কথা আমার খুব ভালো লেগেছে।
তিনি বিখ্যাত একটি উক্তি উল্লেখ করে বলেন- ‘স্বাধীনতার সব অর্জন শেষ হয়ে গেছে। আবার নতুন করে গড়তে হবে।’ খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি খুব জোর গলায় বলতে পারি- সম্পূর্ণ সরকারি চাপের মুখে খালেদা জিয়াকে বেআইনিভাবে সাজা দেয়া হয়েছে। আমি আজ দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, এই ব্যবস্থার পরিবর্তন হতে হবে। বিচার বিচারের মতো হতে হবে। রাজনৈতিক বিবেচনায় যেন কোনো ব্যক্তির বিচার না করা হয় সেজন্য আইনজীবীদের এগিয়ে আসতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকারকে দানব আখ্যা দেয়ার ব্যাখ্যা দিয়ে ফখরুল বলেন, এই শব্দটি শিখেছি সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার কাছ থেকে। তিনি এই সরকারকে দানব আখ্যা দিয়েছিলেন। এই দানবের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ। এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে তাদের পরাজিত করতে হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাদের পরাজিত করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা বিচার বিভাগের দিকে তাকিয়ে থাকি। যখন সরকার দ্বারা আক্রান্ত হই তখন এই মহান ভবনে আসি একটু আশ্রয়ের আশায়। কিন্তু বিচার বিভাগে সেই আশ্রয়টুকুও আমাদের আজ নেই। বিএনপি মহাসচিব বলেন, উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে নিম্ন আদালতে গেলে সেখানে বিচার পাওয়া যায় না। আমাদের বহু নেতাকর্মী এই অবস্থার সম্মুখীন। এর পরিবর্তন আনতে হবে। মির্জা আলমগীর বলেন, আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বলতে চাই- দেশের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা এই বন্ধাত্বের যুগে সত্য কথা বলেছেন। যখন কেউ কোনো প্রতিবাদ করে না। সত্য বলে না। তখন এই মানুষটি দাঁড়িয়েছিলেন। একা প্রতিবাদ করেছিলেন। তিনি সত্য রায় দিয়েছিলেন, সত্য বলেছিলেন। এজন্য সরকার তাকে জোর জবরদস্তি করে দেশ থেকে বের করে দিয়েছে। তিনি বলেন, আজকের এই আইনজীবী সমাবেশে কোনো আইনজীবী তাদের বক্তব্যে বিচারপতি সিনহার কথা উল্লেখ না করায় আমি মর্মাহত হয়েছি।
আমি আশা করেছিলাম আপনারা আজ তাকে স্মরণ করবেন। কিন্তু কেউ সেটি করলেন না। আমাদের সবার উচিত তাকে গভীর শ্রদ্ধা জানানো এবং তিনি যে কথাগুলো উচ্চারণ করে গেছেন সেগুলো বারবার বলা উচিত। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য সব আইনজীবীদের আন্দোলনে নামার আহ্বান জানিয়ে মির্জা আলমগীর বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত না হলে মানুষ আইনের শাসন থেকে বঞ্চিত হবে। এ সময় তিনি বলেন, আমরা এমন একটি রাষ্ট্রে বাস করছি যেখানে আইনজীবীরাও মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছে। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন আজ রংপুরের কারাগারে বন্দি। অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী রিমান্ডে। দুর্ভাগ্য আমাদের আজ আইনজীবীরাও মিথ্যা মামলায় কারাগারে রয়েছেন। সাম্প্রদায়িক শক্তিরা ঐক্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা আলমগীর বলেন, আমাদের এখানে ড. কামাল সাম্প্রদায়িক, আ স ম আবদুর রব সাম্প্রদায়িক, মাহমুদুর রহমান মান্না সাম্প্রদায়িক।
তাহলে আপনারা কি? প্রকৃতপক্ষে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে আপনারাই প্রশ্রয় দিয়েছেন। এখনো তাদের সঙ্গে আপনাদের বসবাস। এমনকি হেফাজতের সঙ্গে অনুষ্ঠান করে প্রধানমন্ত্রী কওমি জননী হয়ে গেছেন। এগুলো সবাই জানে। তিনি বলেন, আমাদের দেশের নির্বাচনের চিরাচরিত নিয়ম ভোটাররা ভোট দেয়ার পর কেন্দ্রে ভোট গণনা করে সেখানেই ফলাফল ঘোষণা করে পরে উপজেলায় নিয়ে যাওয়া হয়। শুনেছি এবার নাকি কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণা না করে নিয়ে যাওয়া হবে। নির্বাচন কমিশনকে সাবধান করে দিচ্ছি কেন্দ্র থেকে ফলাফল ঘোষণার সিদ্ধান্ত বাতিল করা হলে জনগণ তা মেনে নেবে না। নির্বাচনে ইভিএমও চলবে না। কারণ ইভিএম এ হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি করার সুযোগ রয়েছে। তাই এটা গ্রহণযোগ্য হবে না। এ সময় তিনি আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আসুন আমরা নির্বাচনের যুদ্ধে অবতীর্ণ হই।
সেই নির্বাচনী যুদ্ধে জয়ী হওয়াকে আন্দোলন হিসেবে নিতে হবে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে মানুষের স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার হারিয়ে গেছে। এই সরকারের পরিবর্তন প্রয়োজন। কারণ মানুষ পরিবর্তন দেখতে চায়। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রির প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে লাখ লাখ লোক এসেছে। এটা দেখে সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। মওদুদ বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন আজ্ঞাবহ। আমরা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে কমিশনে গিয়েছিলাম। সেখানে বলেছি- আপনারা আগে কেন এই নির্দেশনা দেননি। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বিক্রির সময় এমন শোডাউন করেছে। তাহলে শুধু বিএনপির সময় লোক সরানোর নির্দেশনা দেয়া হলো কেন? তিনি বলেন, আমাদের কার্যালয়ের সামনে পুলিশের গাড়িতে আগুন দিয়েছে তাদেরই লোক। ছাত্রলীগ-যুবলীগের হেলমেট পরা ছেলেরা এই কাজ করেছে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকনের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন- বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ বিভিন্ন জেলা বারের নেতৃবৃন্দ। সমাবেশে খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে সংগীত পরিবেশন করেন- কণ্ঠশিল্পী ও বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক বেবী নাজনীন ও মহিলা আইনজীবীরা।
No comments