ফৈজাবাদ হবে অযোধ্যা, আহমেদাবাদ হবে কর্ণবতী: এটা ইতিহাস বিকৃতি-গৌতম পাল
ভারতের বিজেপিশসিত উত্তর প্রদেশের ফৈজাবাদ জেলার নাম
পরিবর্তন করে অযোধ্যা করার ঘোষণা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।
গতকাল (মঙ্গলবার) অযোধ্যায় দীপাবলির এক অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে তিনি
নামকরণের প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আজ থেকে
‘অযোধ্যা’র নামে এই জেলা পরিচিত হবে।
গুজরাটের উপ-মুখ্যমন্ত্রী নীতিনভাই প্যাটেল
অন্যদিকে, একইদিনে বিজেপিশাসিত গুজরাটের
উপ-মুখ্যমন্ত্রী নীতিনভাই প্যাটেল ঐতিহ্যবাহী ‘আহমেদাবাদ’ শহরের নাম
পরিবর্তন করে ‘কর্ণবতী’ রাখার পক্ষে সাফাই দিয়েছেন।
আহমেদাবাদের নাম পরিবর্তন করে কর্ণবতী রাখার চেষ্টা
আহমেদাবাদের নাম পরিবর্তন করে কর্ণবতী রাখার চেষ্টা
উপ-মুখ্যমন্ত্রী নীতিনভাই প্যাটেলের দাবি,
‘এখানকার মানুষ অনেকদিন ধরে আহমেদাবাদের নাম পরিবর্তন করে কর্ণবতী রাখতে
চাচ্ছেন। আইনি প্রক্রিয়া অতিক্রম করতে যদি মানুষের সমর্থন পাওয়া যায় তাহলে
আমরা ওই শহরের নাম পরিবর্তন করার জন্য তৈরি আছি।’
তিনি বলেন, ‘আহমেদাবাদের মানুষ কর্ণবতী নাম পছন্দ করেন। সঠিক সময়েই আমরা নাম পরিবর্তন করে দেবো।’
‘ফৈজাবাদ’ জেলার নাম পরিবর্তন করে ‘অযোধ্যা’ রাখা হচ্ছে
‘ফৈজাবাদ’ জেলার নাম পরিবর্তন করে ‘অযোধ্যা’ রাখা হচ্ছে
উত্তর প্রদেশে এরআগে ঐতিহাসিক ‘এলাহাবাদ’ শহরের নাম পরিবর্তন করে
‘প্রয়াগরাজ’ করা হয়েছে। এবার ‘ফৈজাবাদ’ জেলার নাম পরিবর্তন করে ‘অযোধ্যা’
করা হবে বলে গতকাল (মঙ্গলবার) মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘অযোধ্যা আমাদের সম্মান, গর্ব এবং মর্যাদার প্রতীক। কেউ
অযোধ্যার প্রতি অন্যায় করতে পারবে না।’
একইদিনে
তিনি শ্রীরামের নামে বিমানবন্দর করার পাশপাশি রামের পিতা দশরথের নামে
মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ
বলেন,‘অযোধ্যায় এক নয়া মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণ হচ্ছে। ওই মেডিক্যাল কলেজের
নামকরণ রাজর্ষি দশরথের নামে হবে। এখানে বিমানবন্দরও নির্মাণ করা হচ্ছে। ওই
বিমানবন্দরের নাম রাখা হবে মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরামের নামে।’
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপক ড. গৌতম পাল
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপক ড. গৌতম পাল
বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোতে নাম পরিবর্তনের
হিড়িক প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট সিনিয়র
অধ্যাপক ড. গৌতম পাল আজ (বুধবার) রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘আসলে কেন্দ্রে যে
বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আছে তারা সবক্ষেত্রেই তাদের অপদার্থতা প্রমাণ করেছেন।
আর্থিক ক্ষেত্র থেকে সাধারণ প্রশাসন পর্যন্ত সবক্ষেত্রেই তারা ব্যর্থ। এই
অবস্থায় আগামী ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের জন্য তাদের হাতে আর কোনো ইস্যু
নেই। নরেন্দ্র মোদি সরকারে আসার সময় উনি দু’কোটি বেকারের চাকরি দেয়ার কথা
বলেছিলেন। আমরা সকলেই ভালো থাকব, অর্থাৎ ‘আচ্ছে দিন’ আমাদের সকলের সামনে
আসছে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা দেখছি মানুষের জীবন দুর্বিষহ
হয়ে উঠেছে! তারা ধর্মীয়ভাবে সমাজকে বিভক্ত করতে চাচ্ছেন, সাম্প্রদায়িকতা
সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন। মন্দির বা নাম পরিবর্তনের ইস্যুর মধ্য দিয়ে তারা ভোট
নেয়ার ফন্দি করছেন।’
অধ্যাপক
ড. গৌতম পাল বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় যে নাম পরিবর্তন হচ্ছে, আমি
ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এগুলোর কোনও প্রয়োজন নেই। এর মধ্যদিয়ে ইতিহাসকে
বিকৃত করা হচ্ছে। নাম পরিবর্তনের ফলে সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার
বিন্দুমাত্র উপকার হবে না। আমার মনে হয় এই ধরণের প্রচেষ্টা থেকে বিরত থাকা
উচিত। নাম পরিবর্তন করে যে নাম দেয়া হচ্ছে, একটা ধর্মকে এগিয়ে দেয়া হচ্ছে,
এরফলে কার্যত হিন্দু ধর্মকে অপমান করা হচ্ছে। কারণ, হিন্দু ধর্মের মূল কথা
হচ্ছে সহিষ্ণুতা। ভারতের মধ্যে যে বিভিন্ন ভাষাভাষী ও ধর্মের মানুষ আছেন
তাঁদের সহাবস্থান, ভারতীয় সংস্কৃতিকে বজায় রাখা উচিত। এই যে বিভাজন সৃষ্টি
করা হচ্ছে তা আগামী লোকসভা নির্বাচনে পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসার জন্য। আমি
এই ধরণের নাম করণের প্রচেষ্টাকে ব্যক্তিগতভাবে নিন্দা জানাই। আমার মনে হয়
সামগ্রিকভাবে ভারতের ইতিহাসকে বিকৃত করার ওই অপচেষ্টাকে প্রতিহত করা উচিত।’
সিপিআইয়ের
শীর্ষনেতা এস সুধাকর রেড্ডির মতে, প্রশাসনিক ব্যর্থতা ঢাকার জন্যই যোগী
আদিত্যনাথ ফৈজাবাদের নাম পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছেন। এরফলে বিজেপি’র
মুসলিম-বিরোধী ভাবনাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
No comments