প্রবীণদের কাছে মানুষের চেয়ে যন্ত্র আপন! by সাদ্দিফ অভি
প্রবীণ
হিতৈসী সংঘ পরিচালিত প্রবীণ নিবাসের চার তলার বারান্দায় উদাস চোখে বসে
আছেন মুজিবুল হক। তার মন খারাপের কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘একমাত্র সঙ্গী
টেলিভিশনটি নষ্ট, তাই মন খারাপ।’ বৃদ্ধ বয়সে একা প্রবীণ নিবাসে মানুষের
বদলে যন্ত্রকে আপন করে নিয়েছেন তিনি। কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এই
যন্ত্রের সঙ্গে আমার ভালো সময় কাটে, মানুষের সঙ্গে নয়!’
রবিবার (১৭ জুন) ঈদের পর দিন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে প্রবীণ হিতৈষী সংঘে গিয়ে দেখা যায় একা বারান্দায় বসে উদাস হয়ে চারতলা থেকে প্রধান গেটের দিকে তাকিয়ে আছেন। তার প্রশ্ন এই গেট কেন বন্ধ করে রাখে? কেউ আসতে চাইলে কীভাবে আসবে? এ রকম অনেক প্রশ্ন মনে নিয়ে বারান্দায় বসে ভাবেন তিনি। তার সঙ্গী টেলিভিশনটি কবে ঠিক হবে তাও জানেন না তিনি। তাই আফসোস করে মন খারাপ করে বসে আছেন। ঈদের দিন কেমন কাটালেন, জানতে চাইলে মুজিবুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঈদের মধ্যে আহামরি কিছু খুঁজে পাই না। আগে শুয়ে থাকতাম, টিভি দেখতাম। ঈদে শুয়ে ঘুমিয়ে কাটিয়েছি। মেয়ে এসেছিল খিচুড়ি নিয়ে, খেয়ে দেখলাম খুব একটা ভালো হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘মেয়ে হাতের নখ কেটে দিয়ে গেছে। তবে এবার ঈদে মন ভরে খাওয়া হয়নি।’
প্রবীণ হিতৈসী সংঘের বারান্দায় বাইরে তাকিয়ে থাকেন মুজিবুল হকসহ প্রবীণ নিবাসে থাকা কিছু মানুষ। স্বজনদের সাক্ষাতে বিশেষ খাবার খেয়ে ঈদের দিনটি কাটালেও পরের দিনই আবারও নিঃসঙ্গ একাকিত্বের জীবনে ফিরে যান তারা।
সকালে প্রবীণ হিতৈসী সংঘে গিয়ে দেখা যায়, সুনসান নীরবতা। যে যার ঘরে নিজেদের মতো আছেন। আজ আর তাদের সঙ্গে কেউ দেখা করতে আসেননি। নেই কোনও বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা। রান্নাঘরে চলছে অন্যান্য দিনের মতো সাধারণ খাবারের আয়োজন।
বর্তমানে এই নিবাসে অবস্থান করছেন ৪৬ জন প্রবীণ। তাদের কারও কারও পরিবারের লোকজন ঈদে দেখা করতে এলেও কেউ কেউ ঈদ কাটিয়েছেন একদম একা। যাদের স্বজনরা ঈদের দিন এসেছিলেন, তারাও আজ একা।
নিবাসের বারান্দায় নিজের বানানো সিংহাসনে বসেই রাস্তার দিকে নীরব দৃষ্টিতে চেয়ে থাকেন মুজিবুল হক।গেটের কাছে কেউ গাড়ি নিয়ে এলেই ওপর থেকে সবাইকে ডাকা শুরু করেন গেট খোলার জন্য। তার মতে, ‘গেট কেন লাগানো থাকবে? গেট থাকবে সবার জন্য উন্মুক্ত, যে যখন চাইবে তখনই আসবে।’ মুজিবুল হক বলেন, ‘মানুষকে ঠকিও না কোনোদিন। জীবন অনেক কঠিন ব্যাপার, এখানে নিঃশ্বাস নেওয়াও কঠিন। নিজের মতো চলতে পারি না।’
বাড়ি যেতে মন চায় না?—এমন প্রশ্নের জবাবে মজিবুল হক বলেন, ‘ওরা জানে আমি এখানে ভালো আছি।’
দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে আগারগাঁওয়ের প্রবীণ নিবাসে আছেন শেখ মুজিবুল হক। তার বাড়ি যশোরে। ষাটের দশকে ঢাকায় এসেছিলে তিনি। প্রমিত উচ্চারণ কথা বলেন। ১৯৬৯ সালে লেখাপড়া শেষ করে শিক্ষকতা শুরু করেন। বাসায় টিউশনি করাতেন তিনি। বেশিরভাগই ইংরেজি পড়াতেন। এর পাশাপাশি বিভিন্ন ইংরেজি দৈনিকে নিয়মিত লেখালেখি করতেন। বৈশ্বিক রাজনীতি নিয়ে লিখেছেন প্রচুর। দেশের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললেই তার উপযুক্ত জবাব দিতেন লেখালেখির মাধ্যমে। কাজ করেছেন লালমাটিয়ার একটি প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্রিন্সিপাল হিসেবেও। পারিবারিক কলহের কারণে ছেলে-মেয়েরা উত্তরায় একটি অ্যাপার্টমেন্টে থাকলেও বৃদ্ধ বয়সে মুজিবুল হক এখন বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দা।
মুজিবুল হকের মতো এই প্রবীণ নিবাসে কেউ থাকেন বাধ্য হয়ে কেউবা ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের শিকার হয়ে। তেমন আরেকজন মীরা চৌধুরী। তার বয়স ৮০’র বেশি। ছেলে আমেরিকায় গিয়েছে কয়েক মাস হলো তাই তাকে থাকতে হচ্ছে প্রবীণ নিবাসে। মাস চারেক হলো তিনি এসেছেন এখানে। ছেলের সঙ্গে কথা হয় তার নিয়মিত। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ছেলের সম্প্রতি নতুন চাকরি হয়েছে আমেরিকায়। গতকালকেও ফোন দিয়েছিল, কথা হয়েছে।’
প্রবীণ হিতৈষী সংঘের সভাপতি ক্যাপ্টেন (অব.) একে এম শামসুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের এখানে ৫০ জনের ব্যবস্থা আছে। বর্তমানে ৪৬ জন আছেন নিবাসে। আমরা আরও কিছু আবেদন পেয়েছি। যাচাই-বাছাই করে দেখছি কিভাবে কাকে দেওয়া যায়।
রবিবার (১৭ জুন) ঈদের পর দিন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে প্রবীণ হিতৈষী সংঘে গিয়ে দেখা যায় একা বারান্দায় বসে উদাস হয়ে চারতলা থেকে প্রধান গেটের দিকে তাকিয়ে আছেন। তার প্রশ্ন এই গেট কেন বন্ধ করে রাখে? কেউ আসতে চাইলে কীভাবে আসবে? এ রকম অনেক প্রশ্ন মনে নিয়ে বারান্দায় বসে ভাবেন তিনি। তার সঙ্গী টেলিভিশনটি কবে ঠিক হবে তাও জানেন না তিনি। তাই আফসোস করে মন খারাপ করে বসে আছেন। ঈদের দিন কেমন কাটালেন, জানতে চাইলে মুজিবুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঈদের মধ্যে আহামরি কিছু খুঁজে পাই না। আগে শুয়ে থাকতাম, টিভি দেখতাম। ঈদে শুয়ে ঘুমিয়ে কাটিয়েছি। মেয়ে এসেছিল খিচুড়ি নিয়ে, খেয়ে দেখলাম খুব একটা ভালো হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘মেয়ে হাতের নখ কেটে দিয়ে গেছে। তবে এবার ঈদে মন ভরে খাওয়া হয়নি।’
প্রবীণ হিতৈসী সংঘের বারান্দায় বাইরে তাকিয়ে থাকেন মুজিবুল হকসহ প্রবীণ নিবাসে থাকা কিছু মানুষ। স্বজনদের সাক্ষাতে বিশেষ খাবার খেয়ে ঈদের দিনটি কাটালেও পরের দিনই আবারও নিঃসঙ্গ একাকিত্বের জীবনে ফিরে যান তারা।
সকালে প্রবীণ হিতৈসী সংঘে গিয়ে দেখা যায়, সুনসান নীরবতা। যে যার ঘরে নিজেদের মতো আছেন। আজ আর তাদের সঙ্গে কেউ দেখা করতে আসেননি। নেই কোনও বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা। রান্নাঘরে চলছে অন্যান্য দিনের মতো সাধারণ খাবারের আয়োজন।
বর্তমানে এই নিবাসে অবস্থান করছেন ৪৬ জন প্রবীণ। তাদের কারও কারও পরিবারের লোকজন ঈদে দেখা করতে এলেও কেউ কেউ ঈদ কাটিয়েছেন একদম একা। যাদের স্বজনরা ঈদের দিন এসেছিলেন, তারাও আজ একা।
নিবাসের বারান্দায় নিজের বানানো সিংহাসনে বসেই রাস্তার দিকে নীরব দৃষ্টিতে চেয়ে থাকেন মুজিবুল হক।গেটের কাছে কেউ গাড়ি নিয়ে এলেই ওপর থেকে সবাইকে ডাকা শুরু করেন গেট খোলার জন্য। তার মতে, ‘গেট কেন লাগানো থাকবে? গেট থাকবে সবার জন্য উন্মুক্ত, যে যখন চাইবে তখনই আসবে।’ মুজিবুল হক বলেন, ‘মানুষকে ঠকিও না কোনোদিন। জীবন অনেক কঠিন ব্যাপার, এখানে নিঃশ্বাস নেওয়াও কঠিন। নিজের মতো চলতে পারি না।’
বাড়ি যেতে মন চায় না?—এমন প্রশ্নের জবাবে মজিবুল হক বলেন, ‘ওরা জানে আমি এখানে ভালো আছি।’
দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে আগারগাঁওয়ের প্রবীণ নিবাসে আছেন শেখ মুজিবুল হক। তার বাড়ি যশোরে। ষাটের দশকে ঢাকায় এসেছিলে তিনি। প্রমিত উচ্চারণ কথা বলেন। ১৯৬৯ সালে লেখাপড়া শেষ করে শিক্ষকতা শুরু করেন। বাসায় টিউশনি করাতেন তিনি। বেশিরভাগই ইংরেজি পড়াতেন। এর পাশাপাশি বিভিন্ন ইংরেজি দৈনিকে নিয়মিত লেখালেখি করতেন। বৈশ্বিক রাজনীতি নিয়ে লিখেছেন প্রচুর। দেশের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললেই তার উপযুক্ত জবাব দিতেন লেখালেখির মাধ্যমে। কাজ করেছেন লালমাটিয়ার একটি প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্রিন্সিপাল হিসেবেও। পারিবারিক কলহের কারণে ছেলে-মেয়েরা উত্তরায় একটি অ্যাপার্টমেন্টে থাকলেও বৃদ্ধ বয়সে মুজিবুল হক এখন বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দা।
মুজিবুল হকের মতো এই প্রবীণ নিবাসে কেউ থাকেন বাধ্য হয়ে কেউবা ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের শিকার হয়ে। তেমন আরেকজন মীরা চৌধুরী। তার বয়স ৮০’র বেশি। ছেলে আমেরিকায় গিয়েছে কয়েক মাস হলো তাই তাকে থাকতে হচ্ছে প্রবীণ নিবাসে। মাস চারেক হলো তিনি এসেছেন এখানে। ছেলের সঙ্গে কথা হয় তার নিয়মিত। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ছেলের সম্প্রতি নতুন চাকরি হয়েছে আমেরিকায়। গতকালকেও ফোন দিয়েছিল, কথা হয়েছে।’
প্রবীণ হিতৈষী সংঘের সভাপতি ক্যাপ্টেন (অব.) একে এম শামসুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের এখানে ৫০ জনের ব্যবস্থা আছে। বর্তমানে ৪৬ জন আছেন নিবাসে। আমরা আরও কিছু আবেদন পেয়েছি। যাচাই-বাছাই করে দেখছি কিভাবে কাকে দেওয়া যায়।
No comments