কুষ্টিয়া–ঈশ্বরদী সড়ক
গতকাল
প্রথম আলোর কুষ্টিয়া–ঈশ্বরদী মহাসড়কের যে ছবি ছাপা হয়েছে, তাতে এটিকে
মহাসড়ক না বলে মহাদুর্যোগ বলাই শ্রেয়। ছবিতে দেখা যায় পিচ-পাথরের চিহ্ন
নেই। শুধু লাল ইটের খোয়া আর ধুলা। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো বরাদ্দ কম হওয়ায়
মেরামতের কাজে কোনো ঠিকাদার না পাওয়া। কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ
কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়ক মেরামতের জন্য চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ২৩ কোটি
টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরে দরপত্র আহ্বান করে। কিন্তু নির্ধারিত দিন বাক্স
খুলে দেখা যায়, একটিও দরপত্র পড়েনি। দ্বিতীয়বার দরপত্রেও কোনো সাড়া পাওয়া
যায়নি। প্রথম আলোর প্রতিবেদক সরেজমিন ঘুরে জানিয়েছেন, সড়কের বুকজুড়ে শুধু
বড় বড় গর্ত, খানাখন্দ, কার্পেটিং ও ইটের খোয়া উঠে গেছে। এ রকম আর কিছুদিন
চললে হয়তো বলতে হবে, একদা এখানে মহাসড়ক ছিল। একদিকে সরকার যোগাযোগের
ক্ষেত্রে বিরাট সাফল্য দাবি করছে, অন্যদিকে দেশের অধিকাংশ সড়ক–মহাসড়ক
খানাখন্দে ভরা। অনেক সড়ক যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়লেও কর্তৃপক্ষের
টনক নড়েছে বলে মনে হয় না। ঠিকাদারদের অভিযোগ মহাসড়কটির যেই বেহাল অবস্থা
হয়েছে, তাতে সড়কটি যেনতেনভাবে মেরামত করলে হবে না। প্রতিদিন গড়ে ১০-১২টি
গাড়ি বিকল হয়ে পড়ে। ফলে এটি ভালোভাবে মেরামত করতে হবে এবং সে জন্য ২৩ কোটি
টাকা খুবই অপর্যাপ্ত। উল্লেখ্য, দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের ৩২টি জেলার
সড়ক যোগাযোগের একমাত্র পথটি চলাচলের অনুপযোগী হলে কয়েক কোটি মানুষ বিপদে
পড়বে। খুব শিগগির কাজ শুরু করতে না পারলে বর্ষা মৌসুমের আগে মেরামতের কাজও
শেষ করা যাবে না। ঠিকাদারদের যুক্তি ভিত্তিহীন বলা যাবে না।
যেখানে
সড়ক-সেতুর নির্মাণকাজের জন্য ঠিকাদারদের প্রতিযোগিতা দেখা যায়, সেখানে
দু–দুবার দরপত্র আহ্বান করেও কোনো সাড়া না পাওয়ার বিষয়টি গভীরভাবে ভাবতে
হবে। কেবল কুষ্টিয়া-ভেড়ামারা নয়, দেশের অধিকাংশ সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা খুবই
শোচনীয়। সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণও সড়কের বেহাল দশা। সড়কের সঙ্গে শুধু
জনগণের যাতায়াত নয়, এর সঙ্গে অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের বিষয়টিও
ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দেশের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সম্পর্কে
কর্তৃপক্ষের ঔদাসীন্য অমার্জনীয় বলে মনে করি। সওজ বলেছে, শিগগিরই নতুন করে
দরপত্র আহ্বান করা হবে। তৃতীয় দফায়ও যদি একই ফল হয়, তাহলে লাখ লাখ মানুষ
ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে পড়বে। অতএব পুরো বিষয়টি সমীক্ষা করে দেখা হোক সত্যি
সত্যি বরাদ্দ কম হয়েছে কি না। কম হলে সেটি বাড়াতে হবে। সামনে বর্ষা মৌসুম।
তাই সময়ক্ষেপণ করার কোনো সুযোগ নেই।
No comments