ব্যাংকিং খাত নিয়ে প্রশ্ন
খেলাপি
ঋণ অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া, অর্থ পাচার বৃদ্ধি, চুরি হওয়া রিজার্ভ উদ্ধার,
ব্যাংক কোম্পানি আইনে সংশোধনী এনে এক পরিবারের চারজন পর্যন্ত পরিচালক থাকার
সুযোগ, সঞ্চয়পত্রের বিক্রি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া এবং এ খাতে সরকারের সুদ
পরিশোধের হার দ্বিগুণ হয়ে পড়াসহ ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত এবং গোটা অর্থনীতি
সংক্রান্ত ৩০টি প্রশ্ন সরকারের কাছে জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা
তহবিল- আইএমএফ। গতকাল ১২ দিনের সফরে বাংলাদেশে আসা সংস্থাটির প্রতিনিধি
দলের কাছে ব্যাংকিং খাতসংক্রান্ত প্রশ্নগুলোর জবাব দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আর ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন থেকে সরকারের সরে আসা এবং মুদ্রানীতিসহ অন্য
প্রশ্নগুলোর জবাব রাজস্ব বোর্ড, অর্থ এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে
দেয়া হবে। জানা যায়, প্রতিনিধি দলটির সফরের অনেক আগেই প্রশ্নগুলো আইএমএফের
ঢাকা অফিস থেকে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে এবং এরই মধ্যে
জবাবও তৈরি হয়ে গেছে। আমরা মনে করি, কেবল দাতা সংস্থা হওয়ায় কোনোমতে
আইএমএফ প্রতিনিধিদের কাছে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের অনিয়মের জবাব দিয়ে দায়িত্ব
সারলেই হবে না, এগুলোর সমাধানে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদি
উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ, বাজেটের আগে আইএমএফের সফর ও আর্থিক খাতের
অনিয়ম-দুর্নীতি এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পর্কে জানতে চাওয়া একটি রুটিন
ওয়ার্ক। তারা বিভিন্ন ইস্যুতে তাগাদা দেবে; কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়ন ও
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ দরকার আমাদের স্বার্থেই।
আমাদের ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম
কীভাবে জেঁকে বসেছে তা বোঝার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট- ২০১৭ সাল ছিল ব্যাংক
লুটের বছর। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের
প্রথম ৯ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর সঙ্গে
অবলোপনকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ যোগ করলে এ অঙ্ক ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা
ছাড়িয়ে যায়। এ ছাড়া ঋণ কেলেঙ্কারি, জালিয়াতি-লুটপাট যোগ করলে আমাদের মতো
উন্নয়নশীল অর্থনীতি কত বিরূপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা অনুমান করা
কঠিন নয়। এ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে হলে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা
ফেরানোর বিকল্প নেই। এ জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা নিয়ে
সরকারের শীর্ষমহল কেন এগিয়ে আসছে না, তা আমাদের বোধগম্য নয়। চলতি অর্থবছরে
বাজেট ঘাটতি অর্থায়নের জন্য সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেয়নি। এটি
বিনিয়োগের গতি ও বেসরকারি ঋণপ্রবাহ বাড়াবে এবং ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি কমাবে;
কিন্তু একই সঙ্গে অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসেই সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ঋণ নেয়ার
লক্ষ্যমাত্রা ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকার মধ্যে ২৩ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা বা ৮০
শতাংশ পূরণ হয়ে যাওয়া থেকে স্পষ্ট যে, মানুষ ব্যাংকে আমানত রাখার পরিবর্তে
সঞ্চয়পত্রের দিকে বেশি ঝুঁকছে। এটি ব্যাংকিং খাতের জন্য ভালো লক্ষণ নয়।
দুর্ভাগ্যের বিষয়, নিয়ন্ত্রক হিসেবে ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো তো দূরের
কথা, নিজেদের চুরি হওয়া রিজার্ভ উদ্ধার এবং দায়ীদের ব্যাপারে প্রতিবেদনই
প্রকাশ করতে পারেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সুতরাং দুর্নীতি-অনিয়মের লাগাম টেনে
ধরা এবং ব্যাংক, আর্থিক খাত ও সরকারি ব্যয়ে স্বচ্ছতা ফেরানোর কার্যকর
উদ্যোগ নিতে হবে এখনই।
No comments