নিজের স্বার্থেই পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়া উচিত: আসমা জাহাঙ্গীর
মতিউর
রহমান : ঢাকায় নিযুক্ত একজন পাকিস্তানি কূটনীতিক ইরফান রাজা একাত্তরের
মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সম্প্রতি আপত্তিকর মন্তব্য করার পর এ ব্যাপারে আপনি
প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বিবৃতি দেওয়ায় আপনাকে ধন্যবাদ।
আসমা জাহাঙ্গীর : আমার কিন্তু মনে হয় না এ কারণে আমাকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। আমি মনে করি, এটা হলো বিবেকের তাড়না। আমি যে এ ঘটনায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে পেরেছি, সে জন্য নিজেকে যথেষ্ট সৌভাগ্যবান মনে হয়। আসলে চরম বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে হিসাব-নিকাশ করে ব্যাপক পরিসরে সংঘটিত যেকোনো ধরনের হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধেই ধিক্কার জানানো উচিত। শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, গোটা বিশ্বের সব মানুষেরই উচিত এসব হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করা।
মতিউর রহমান : আমাদের মনে আছে, কয়েক মাস আগে হামুদুর রহমান কমিশন রিপোর্ট পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর আপনি সুদৃঢ় অবস্থান নিয়ে ’৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার দাবি করেছিলেন।
আসমা জাহাঙ্গীর : আমি যা ভাবি সেটাই তো আমি বলব। অতীত ইতিহাসের প্রামাণ্য স্মৃতি আমি ধারণ করছি। ’৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর তৎপরতা সম্পর্কে সে সময় পশ্চিম পাকিস্তানে যে প্রতিক্রিয়া হয়েছিল, সেটা আমি প্রত্যক্ষ করেছি। প্রচার-প্রোপাগান্ডায় প্রভাবিত হয়ে মানুষ কী করে তার নিজের সৃষ্ট মিথ্যাচারই পরে বিশ্বাস করে ফেলে সেটা ভেবে আমি মাঝে মাঝে বিস্মিত হই। একাত্তর ছিল ইতিহাসের তেমনই এক লগ্ন। আমি দেখেছি, পশ্চিম পাকিস্তানের লোকেরা তখন সত্যি সত্যি বিশ্বাস করতে থাকে যে, তারা জনগণের ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষাকে দমন করতে পারবে। জনগণের চাওয়া-পাওয়া নয়, যুদ্ধটাই তখন তাদের কাছে মুখ্য হয়ে উঠেছিল। সুতরাং আমি মনে করি, সে সময়টাতে যে অল্প কজন লোক সত্য কথা বলছিলেন, তাদের জন্য হামুদুর রহমান কমিশন রিপোর্ট একটা বড় অবলম্বন। সত্য কথা বলার খেসারত দিতে এই লোকগুলোকে জেলে যেতে হয়েছিল, সইতে হয়েছিল চরম ভোগান্তি। সত্য কথা বলায় এই লোকগুলো পশ্চিম পাকিস্তানিদের কাছে হয়েছিলেন ‘বেইমান’। হামুদুর রহমান কমিশন রিপোর্ট মারফত পাকিস্তানবাসী জানতে পেরেছে, সে সময় এই লোকগুলো কেবল সত্য কথাই বলেননি, কী ঘটতে চলেছে সে ব্যাপারে দূরদৃষ্টিও তাদের ছিল। সর্বনাশা কাজে বিশ্বাসী যারা তারা নয়, বরং ওই সত্য কথা বলা লোকগুলোই ছিলেন প্রকৃত নেতা।
মতিউর রহমান : অর্থাৎ, আপনি বলতে চান রিপোর্ট ছাপা হওয়ার আগেও পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতন ও গণহত্যার বিরুদ্ধে পাকিস্তানে প্রতিবাদ উঠেছিল?
আসমা জাহাঙ্গীর : নিশ্চয়ই। স্মরণ করে দেখুন, সেই মহৎ ব্যক্তি মাজহার আলী খান জেলে গিয়েছিলেন। সাংবাদিক আই এ রহমানকে জেলে ঢোকানো হয়েছিল। একই ঘটনা ঘটেছে নকীব হোসেনের ক্ষেত্রেও। আমার বাবা তখন আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন। তাকে জেলে পাঠানো হয়েছিল। কাজেই এ বিষয়টা নিয়ে আমি যা বলেছি তা নিজের মতো করে চিন্তা করেই বলেছি। আমি আমার বাবাকে বলেছি, আপনি ঠিক কাজটাই করেছিলেন। আপনার কাছে যা সত্য ও ন্যায় বলে মনে হয়েছে, অত্যন্ত কঠিন সময়েও তা আপনি জোর গলায় বলেছেন। আর, আপনার এই ন্যায়পরায়ণতার উত্তরাধিকার আপনি রেখে গেছেন আমার জন্য। আমার বাবা বেঁচে নেই।
মতিউর রহমান : আমরা জানতে পেরেছি যে, পাকিস্তানের বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, আপনার মতো ব্যক্তিত্ব ও মানবাধিকার সংগঠন ’৭১ সালে সংঘটিত পাক বাহিনীর অপরাধের জন্য ক্ষমা চাওয়ার দাবি করছে। এটা আমাদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক। একাত্তরের ভূমিকার জন্য পাকিস্তানি সরকার ক্ষমা চাক, এই দাবিতে আমাদের দেশেও আন্দোলন চলছে।
আসমা জাহাঙ্গীর : আমি এ বিষয়ে আমার অবস্থান আরও স্পষ্ট করার জন্য বলতে চাই, আপনাদের কথা চিন্তা করে পাকিস্তানি সরকারের ক্ষমা চাওয়া উচিত সে কথা আমরা বলছি না। ক্ষমা চাওয়া উচিত আমাদের নিজেদের স্বার্থেই। আমরা যাতে আমাদের নিজেদের মতো করে থাকতে পারি সে জন্যই ক্ষমা চাইতে হবে। আর বাংলাদেশের জনগণ, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও যুদ্ধাহত নারী-পুরুষ এবং তাদের পরিবারবর্গের কথা চিন্তা করে আমাদের দাবি হচ্ছে, এই অপরাধ যারা করেছে তাদের অবশ্যই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। অতীত কলঙ্কের এই ভার আমাদের নিজেদের মতো করে থাকতে দিচ্ছে না, এ থেকে আমাদের মুক্ত হওয়া দরকার। আর সে কারণেই ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপারে আমাদের কাছে পাকিস্তান সরকারের বাধ্যবাধকতা।
মতিউর রহমান : এই বিষয়গুলোর ব্যাপারে পাকিস্তানের জনগণ ও প্রচারমাধ্যমের মনোভাব কেমন?
আসমা জাহাঙ্গীর : ঠিক এ মুহূর্তে পাকিস্তান এক ছোটখাটো সংকটকাল অতিক্রম করছে। তাই জনমনে গভীর হতাশা। কাজেই পাকিস্তানে এগুলো আদৌ কোনো ইস্যু নয়। অবশ্য পাকিস্তানে দুটো চরমপন্থী ধারা রয়েছে, যার অনুসারীরা বাস করছে পাশাপাশি। আর আমি এতে সন্তুষ্ট যে, একটি ধারার অনুসারীরা আমাদের মতোই মানবাধিকার সংক্রান্ত নীতিমালা অনুসরণ করে যাবে। পাশাপাশি পাকিস্তানে আরেকটি গোষ্ঠী রয়েছে, যারা মনে করে ক্ষমা চাওয়াটা মোটেও জরুরি নয়। ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপারে যারা কথা বলে তারা এই দ্বিতীয় গোষ্ঠীর কাছে হয়ে যায় বেইমান। কাজেই পাকিস্তানে এখন এই দুটো শক্তিই সক্রিয় রয়েছে এবং বাদবাকিরা নীরব দর্শক মাত্র।
মতিউর রহমান : এবার রাজনীতি প্রসঙ্গে আসা যাক। জেনারেল মোশাররফ ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু বলুন?
আসমা জাহাঙ্গীর : গণতন্ত্রের পটপরিবর্তন পাকিস্তানের অনেক ক্ষতি করেছে। কেননা, আমাদের এখন কোনো দিকনির্দেশনা নেই। আর আপনি যখন কোনো পদ্ধতির ব্যত্যয় ঘটাবেন তখন আসলে আপনি সেটির পূর্বাবস্থায় না আসাটাই নিশ্চিত করছেন মাত্র, তা ওই পদ্ধতি যতই নড়বড়ে হোক না কেন। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে ঠিক এ ঘটনাই ঘটেছে। আমরা পরিত্রাণ পাওয়ার কোনো পথ দেখছি না। রেহাই পাওয়ার পথ খঁুজছি। আমরা সব সময় বিশ্বাস করেছি, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সূচনা আমাদের করতে হবে নির্বাচন পদ্ধতির মাধ্যমে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, এটা স্রেফ ক্ষুদ্র একটা পদক্ষেপ মাত্র। আমরা এই ক্ষুদ্র পদক্ষেপ নিয়েছিলাম একটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর ছত্রচ্ছায়ায়। এখন ওই একটি মাত্র ধাপও উপড়ে ফেলা হয়েছে।
কাজেই এখন আমরা কোথা থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু করব, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। আপনি জানেন, কোনো আত্মমর্যাদাশীল সমাজই রাজনৈতিক দল ও জনগণের প্রতিনিধিত্ব ছাড়া টিকে থাকতে পারে না।
আমরা এ কথা ভেবেও উদ্বিগ্ন যে, যথাযথভাবে দেশ শাসন করার দক্ষতা সামরিক বাহিনীর নেই, যা কিনা এ মুহূর্তে অতীব প্রয়োজন। এটা স্নায়ুযুদ্ধের সময় নয় যে, সামরিক সরকারগুলোকে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা দেওয়া হবে। আগে জনমনে এমন একটা ধারণা ছিল, সামরিক সরকার মানেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নির্বিঘ্ন থাকা এবং সেই সঙ্গে দেশের সমৃদ্ধি। কিন্তু এবার সামরিক শাসনের সময় তেমনটা হচ্ছে না বলে লোকে দেখছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ, অর্থনৈতিকভাবেও আমরা ভোগান্তির শিকার। এই প্রথমবারের মতো লোকজন সামরিক সরকারের সঙ্গে দারিদ্র্যের সম্পর্ক খঁুজতে শুরু করেছে। ব্যাপারটা অবশ্য দূর-ভবিষ্যতে পাকিস্তানের জন্যই মঙ্গলজনক হবে। কিন্তু স্বল্প মেয়াদের কথা চিন্তা করলে বলা যায়, আমাদের খুবই নড়বড়ে ও হতাশাজনক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করতে হতে পারে। এরপর হয়তোবা আমরা এমন একটা প্ল্যাটফর্মে দাঁড়াতে পারব, যেখানে আমরা আমাদের লক্ষ্যের ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারব।
মতিউর রহমান : এসবের জন্য তো আপনি রাজনীতিবিদ অর্থাৎ জনগণ-নির্বাচিত পরপর দুটো সরকারকে দায়ী করবেন? তারা সামান্যতম গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে অথবা জনগণের মঙ্গল সাধন করতে ব্যর্থ হয়েছেন?
আসমা জাহাঙ্গীর : আমি কাউকে আলাদাভাবে দায়ী করছি না। আমি আমাদের নিজেদেরই দায়ী করছি, কেননা আমরাই এত কিছু হতে দিয়েছি। ভেবে দেখুন, আমাদের দেশে কোনো অনন্য ব্যক্তিত্বসম্পন্ন রাজনীতিবিদ নেই। কিন্তু যে দেশ তার ইতিহাসের অর্ধেকের বেশি সময় ধরে সামরিক শাসনের অধীনে রয়েছে সেখানে এই পরিস্থিতির মধ্য থেকে কীভাবে প্রজ্ঞাবান নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে? দক্ষিণ আফ্রিকায় একজন নেলসন ম্যান্ডেলা রয়েছেন। কিন্তু ম্যান্ডেলারা তো প্রতিদিন জন্মান না। দক্ষিণ আফ্রিকার মতো সৌভাগ্য আমাদের নেই। তবে আপনি যদি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের রাজনীতিবিদদের সঙ্গেই আমাদের রাজনীতিকদের তুলনা করেন, তাহলে দেখবেন পাকিস্তানি রাজনীতিকেরা অন্যদের চেয়ে ভালোও নন, আবার খারাপও নন।
যা হোক, একটা বিষয় কিন্তু বেশ মজার। আমাদের দেশে এমন একটা প্রচারণা আছে যে, সব রাজনীতিকই দুর্নীতিগ্রস্ত। কিন্তু পাকিস্তানের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখবেন, প্রথম দিককার কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ নেই। লিয়াকত আলী খান, শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মোহাম্মদ আলী (বগুড়া), চৌধুরী মোহাম্মদ আলী, আই আই চন্দ্রীগড়, ফিরোজ খান নুন- এদের কারও বিরুদ্ধেই টাকা-পয়সা সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ নেই। তাহলে দুর্নীতির সূত্রপাত কখন থেকে হলো? সেনাবাহিনীই দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। অসাধু কাজ-কারবার শুরু করেছিল সেনাবাহিনীই। আর নওয়াজ শরিফ যদি দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েই থাকেন, তা তিনি শিখেছেন তার মুরব্বিদের কাছ থেকে। কাজেই সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত লোক হচ্ছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জেনারেলরা। হ্যাঁ, দুর্নীতিপরায়ণ কিছুসংখ্যক রাজনীতিবিদও রয়েছে। কিন্তু হাবিব জালিসও একজন রাজনীতিক ছিলেন। ৪ ফুট বাই ৬ ফুট একটা ঘরে তিনি মারা গিয়েছিলেন। এমনকি আমার বাবাও একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন, যিনি মৃত্যুর আগে স্রেফ একটা বাড়ি ছাড়া আর কিছুই রেখে যাননি। অথচ তার জন্ম হয়েছিল আরও অবস্থাসম্পন্ন পরিবারে। আই এ রহমানও রাজনীতিতে আছেন। তিনি খুব সাদাসিধে জীবনযাপন করেন। তিনি আমার জানা সবচেয়ে সৎ মানুষ। কাজেই লোকে তাহলে দুর্নীতির কথা বলার সময় কোন রাজনীতিকদের কথা বলে? তারা গুটিকয়েক দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিকের কথা বলে। এরা দুর্নীতিপরায়ণ সেটা অস্বীকার করার জো নেই। কিন্তু সবাইকে এক কাতারে দাঁড় করানো যায় না।
দ্বিতীয়ত, পাকিস্তানে কোনো বেসামরিক সরকারই ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় ছিলেন জুলফিকার আলী ভুট্টো। আর এর মূল্য তিনি দিয়েছেন ফাঁসিতে ঝুলে। অর্থাৎ আমরা কখনোই সত্যিকার বেসামরিক সরকার পাইনি। আমরা এমন কিছু লোক পেয়েছিলাম, যারা দেশ শাসন করেছেন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাবাধীনে।
মতিউর রহমান : পাকিস্তানে ক্ষমতায় আবার আসীন রয়েছে সেনাবাহিনী এবং আরও কিছু সময় তারা দেশ শাসন করবে বলে বোঝা যাচ্ছে। আমরাও একসময় পাকিস্তানের অংশ ছিলাম, অনুরূপ অভিজ্ঞতা আমাদেরও আছে। আমাদেরও সামরিক সরকার ছিল। যদিও এখন আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছি। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক দুরবস্থা, বেকারত্ব, নারী নির্যাতন - এসব আমরাও মোকাবিলা করছি। আসলে পরিত্রাণ পাওয়ার পথ কোথায়? পাকিস্তানে যা হচ্ছে তা থেকে বাংলাদেশ কী অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে?
আসমা জাহাঙ্গীর : আমার তো ইচ্ছে করে আমাদের দেশে ভালো কিছুর চর্চা হোক এবং তা আমরা আপনাদের দেশেও সঞ্চার করতে পারি। কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা তো অন্যরকম।
আমি লক্ষ করেছি, কার্যকরী স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার সহায়তা ছাড়া কোনো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াই টিকে থাকতে পারে না। বাংলাদেশের জন্য সত্যি যা প্রয়োজন, তা হলো বেশি বেশি গণতন্ত্র, কম কম নয়। এমন একটা সময় আসবে, যখন মানুষ সংঘাতের রাজনীতি বা মেরুকরণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়বে। তখন একটা তৃতীয় শক্তির উত্থান ঘটবে। কিন্তু জনগণকে ধৈর্য ধরতে হবে। কারণ এটা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য প্রক্রিয়া। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সহজ কিন্তু তা টিকিয়ে রাখা কঠিন।
মতিউর রহমান : এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে আমাদের মেলা সময় লাগছে। ক্ষমতার শীর্ষে আমরা কাদের দেখছি তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি সেখানে ভালো লোকদের না পাই তাহলে গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখা কঠিন।
আসমা জাহাঙ্গীর : হ্যাঁ, ভালো লোক কাজটা সহজতর করতে পারে। খারাপ, অদক্ষ, অকার্যকর, দুর্নীতিপরায়ণ লোক সমাজে বড় ধরনের হতাশা ডেকে আনতে পারে। আর এখানেই যত গন্ডগোলের সূত্রপাত। আমি আপনাদের সমস্যা অনুধাবন করি। এখানে গণতন্ত্রের ভিত দুর্বল। গণতন্ত্র খুব শক্তভাবে শেকড় গাড়তে পারছে না। এমন নয় যে, জনগণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে ইচ্ছুক নয়। এই ব্যর্থতার জন্য মূলত দায়ী রাজনীতিকদের মধ্যে ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্ব।
আমরা বুঝতে পেরেছি এবং আমি মনে করি, আমাদের নেতৃবৃন্দও ইতিমধ্যে বুঝতে পেরেছেন যে, রাজনীতিতে প্রতিপক্ষের প্রতি সম্মান প্রদর্শন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
মতিউর রহমান : সহনশীলতাও খুব জরুরি।
আসমা জাহাঙ্গীর : হ্যাঁ, সহনশীলতা। আসলে আমি মনে করি, নব্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিরোধী দলও উল্লেখযোগ্য। তারাও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে। আর সরকার যদি তাদের সঙ্গে মানিয়ে না চলে, তাহলে পরে দেখা যাবে সরকার তার নিজের স্বার্থের বিরুদ্ধেই কাজ করছে। কারণ জনগণ ব্যাপারটা বেশি দিন সহ্য করতে পারবে না।
মতিউর রহমান : পাকিস্তানে জে. মোশাররফ কীভাবে ক্ষমতা সংগঠিত করতে যাচ্ছেন? তিনি কীভাবে তার রাজনৈতিক ভিত তৈরি করছেন? তিনি কি কোনো নতুন দল গঠন করবেন? এ ব্যাপারে আপনার কোনো ধারণা আছে?
আসমা জাহাঙ্গীর : আমি শুধু বিষয়টা বিশ্লেষণ করতে পারি। অবশ্য আমার সঙ্গে সরকারের কোনো সম্বন্ধ নেই। তাদের কার্যকলাপের মাধ্যমেই কেবল বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। এই সামরিক সরকার তার পূর্বপুরুষদের পথই অনুসরণ করছে। তারা কোনো রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ ছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচন করবে। রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ থাকায় এই নির্বাচন হবে নিয়ন্ত্রিত। সামরিক বাহিনী তাদের ক্ষমতা সংগঠিত করবে ধাপে ধাপে। তারা সেনা সদর সুদৃঢ় করার জন্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন মুখ, নতুন নেতৃত্ব পাবে। আর এভাবেই তারা ধাপে ধাপে প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ক্ষমতা সংগঠিত করবে। এই পদ্ধতি অন্য সামরিক সরকারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ভালো কাজ দিতে পারে। কিন্তু এ যাত্রা তা কাজে আসবে কি না সে ব্যাপারে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কারণ, এবার তারা সংবিধান পরিবর্তন করার পরিকল্পনা করছে। জাতীয় প্রতিরক্ষা কমিটি গঠনের মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে রাজনীতিতে নিয়ে আসা হচ্ছে। আপনার যদি সেনাবাহিনী আর অস্ত্র থাকে তাহলে তাদের কাজে লাগিয়ে আপনি যেকোনো কিছু করতে পারেন। কিন্তু সামরিক সরকার অবশ্যই নাগরিক সমাজ তথা জনগণের সহযোগিতা পাবে না। জনগণ শুধু তীব্র অসন্তোষ নিয়ে কী ঘটছে তা দেখছে।
মতিউর রহমান : পত্রপত্রিকায় আমরা পড়েছি, পাকিস্তানের সব রাজনৈতিক দল একজোট হচ্ছে। তাদের আন্দোলন গড়ে তোলার কোনো সম্ভাবনা আছে বলে আপনি মনে করেন?
আসমা জাহাঙ্গীর : আমি মনে করি এটা ইতিবাচক ঘটনা। কেননা, তারা অন্তত একসুরে কণ্ঠ মিলিয়ে বলছে, আমরা কখনোই সেনাবাহিনীকে ক্ষমতায় ডেকে আনব না, যেমনটা হয়েছে অতীতে। দ্বিতীয়ত, আমরা এই ঐক্যজোটের ওপর এ ব্যাপারে জনমতের চাপ সৃষ্টি করার পরিকল্পনা করছি যে, তাদের এবার অবশ্যই একটা আচরণবিধি মেনে চলতে হবে। তাদের ন্যূনতম একটা এজেন্ডায় একমত হতে হবে, যাতে যদি তারা কখনো ক্ষমতায় ফিরে আসে, তখন যেন আমাদের অতীতের মতো বাধা-বিঘ্ন না পেরোতে হয়। রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কয়েকজনকে নিয়ে আমরা একটা বৈঠকের আয়োজন করতে যাচ্ছি, যেখানে কয়েকটি বিষয় উত্থাপন করা হবে। পাকিস্তানের রাজনীতিতে পরিবর্তনের সূচনা করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে এই উত্থাপিত বিষয়গুলো গ্রহণ করার জন্য ঐকজোটের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হবে।
মতিউর রহমান : শেষ প্রশ্ন। দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক তাত্ত্বিক মার্কিন লেখক স্টিফেন কোহেনের একটি লেখা পড়েছি। তাতে তিনি বলেছেন, পাকিস্তানের রাজনৈতিক সমস্যার একটা সমাধান আছে। তা হলো, সামরিক বাহিনী ও বেসামরিক রাজনৈতিক দলের মধ্যে এক ধরনের কোয়ালিশন বা সমঝোতা। আপনি কি এই ধারণার সঙ্গে একমত পোষণ করেন?
আসমা জাহাঙ্গীর : আমার মনে হয়, কোহেন সাহেবের উচিত তার নিজ দেশের সরকারকেই এমন পরামর্শ দেওয়া। বিশুদ্ধ গণতন্ত্র যে শুধু আমেরিকাতেই থাকবে, পাকিস্তানে থাকবে না, সেটা তো হয় না। গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করা আমেরিকানদের কাছে যেমন কাঙ্ক্ষিত, আমাদের কাছেও সমান কাঙ্ক্ষিত।
মতিউর রহমান : বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য কিছু বলবেন?
আসমা জাহাঙ্গীর : আমার কাছে জাতি বা জাতীয়তা মুখ্য বিষয় নয়, আমার কাছে জনগণই মুখ্য। আমরা পাকিস্তানিরা খুব অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছিলাম বলেই পূর্ব পাকিস্তান হারিয়েছিলাম। পূর্ব পাকিস্তান থেকে তখন আমাদের দিকে ধর্মনিরপেক্ষতার হাওয়া বইছিল এবং আমাদের বন্ধ জানালা একটু একটু করে খুলে যাচ্ছিল, তাতে আমরা কিছু মানুষ প্রাণভরে নিশ্বাস নিচ্ছিলাম। কিন্তু তারা সেটা বন্ধ করে দিল। আমি এ কথাই বলব।
মতিউর রহমান: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আসমা জাহাঙ্গীর: আপনাকেও ধন্যবাদ।
আসমা জাহাঙ্গীর : আমার কিন্তু মনে হয় না এ কারণে আমাকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। আমি মনে করি, এটা হলো বিবেকের তাড়না। আমি যে এ ঘটনায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে পেরেছি, সে জন্য নিজেকে যথেষ্ট সৌভাগ্যবান মনে হয়। আসলে চরম বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে হিসাব-নিকাশ করে ব্যাপক পরিসরে সংঘটিত যেকোনো ধরনের হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধেই ধিক্কার জানানো উচিত। শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, গোটা বিশ্বের সব মানুষেরই উচিত এসব হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করা।
মতিউর রহমান : আমাদের মনে আছে, কয়েক মাস আগে হামুদুর রহমান কমিশন রিপোর্ট পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর আপনি সুদৃঢ় অবস্থান নিয়ে ’৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার দাবি করেছিলেন।
আসমা জাহাঙ্গীর : আমি যা ভাবি সেটাই তো আমি বলব। অতীত ইতিহাসের প্রামাণ্য স্মৃতি আমি ধারণ করছি। ’৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর তৎপরতা সম্পর্কে সে সময় পশ্চিম পাকিস্তানে যে প্রতিক্রিয়া হয়েছিল, সেটা আমি প্রত্যক্ষ করেছি। প্রচার-প্রোপাগান্ডায় প্রভাবিত হয়ে মানুষ কী করে তার নিজের সৃষ্ট মিথ্যাচারই পরে বিশ্বাস করে ফেলে সেটা ভেবে আমি মাঝে মাঝে বিস্মিত হই। একাত্তর ছিল ইতিহাসের তেমনই এক লগ্ন। আমি দেখেছি, পশ্চিম পাকিস্তানের লোকেরা তখন সত্যি সত্যি বিশ্বাস করতে থাকে যে, তারা জনগণের ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষাকে দমন করতে পারবে। জনগণের চাওয়া-পাওয়া নয়, যুদ্ধটাই তখন তাদের কাছে মুখ্য হয়ে উঠেছিল। সুতরাং আমি মনে করি, সে সময়টাতে যে অল্প কজন লোক সত্য কথা বলছিলেন, তাদের জন্য হামুদুর রহমান কমিশন রিপোর্ট একটা বড় অবলম্বন। সত্য কথা বলার খেসারত দিতে এই লোকগুলোকে জেলে যেতে হয়েছিল, সইতে হয়েছিল চরম ভোগান্তি। সত্য কথা বলায় এই লোকগুলো পশ্চিম পাকিস্তানিদের কাছে হয়েছিলেন ‘বেইমান’। হামুদুর রহমান কমিশন রিপোর্ট মারফত পাকিস্তানবাসী জানতে পেরেছে, সে সময় এই লোকগুলো কেবল সত্য কথাই বলেননি, কী ঘটতে চলেছে সে ব্যাপারে দূরদৃষ্টিও তাদের ছিল। সর্বনাশা কাজে বিশ্বাসী যারা তারা নয়, বরং ওই সত্য কথা বলা লোকগুলোই ছিলেন প্রকৃত নেতা।
মতিউর রহমান : অর্থাৎ, আপনি বলতে চান রিপোর্ট ছাপা হওয়ার আগেও পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতন ও গণহত্যার বিরুদ্ধে পাকিস্তানে প্রতিবাদ উঠেছিল?
আসমা জাহাঙ্গীর : নিশ্চয়ই। স্মরণ করে দেখুন, সেই মহৎ ব্যক্তি মাজহার আলী খান জেলে গিয়েছিলেন। সাংবাদিক আই এ রহমানকে জেলে ঢোকানো হয়েছিল। একই ঘটনা ঘটেছে নকীব হোসেনের ক্ষেত্রেও। আমার বাবা তখন আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন। তাকে জেলে পাঠানো হয়েছিল। কাজেই এ বিষয়টা নিয়ে আমি যা বলেছি তা নিজের মতো করে চিন্তা করেই বলেছি। আমি আমার বাবাকে বলেছি, আপনি ঠিক কাজটাই করেছিলেন। আপনার কাছে যা সত্য ও ন্যায় বলে মনে হয়েছে, অত্যন্ত কঠিন সময়েও তা আপনি জোর গলায় বলেছেন। আর, আপনার এই ন্যায়পরায়ণতার উত্তরাধিকার আপনি রেখে গেছেন আমার জন্য। আমার বাবা বেঁচে নেই।
মতিউর রহমান : আমরা জানতে পেরেছি যে, পাকিস্তানের বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, আপনার মতো ব্যক্তিত্ব ও মানবাধিকার সংগঠন ’৭১ সালে সংঘটিত পাক বাহিনীর অপরাধের জন্য ক্ষমা চাওয়ার দাবি করছে। এটা আমাদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক। একাত্তরের ভূমিকার জন্য পাকিস্তানি সরকার ক্ষমা চাক, এই দাবিতে আমাদের দেশেও আন্দোলন চলছে।
আসমা জাহাঙ্গীর : আমি এ বিষয়ে আমার অবস্থান আরও স্পষ্ট করার জন্য বলতে চাই, আপনাদের কথা চিন্তা করে পাকিস্তানি সরকারের ক্ষমা চাওয়া উচিত সে কথা আমরা বলছি না। ক্ষমা চাওয়া উচিত আমাদের নিজেদের স্বার্থেই। আমরা যাতে আমাদের নিজেদের মতো করে থাকতে পারি সে জন্যই ক্ষমা চাইতে হবে। আর বাংলাদেশের জনগণ, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও যুদ্ধাহত নারী-পুরুষ এবং তাদের পরিবারবর্গের কথা চিন্তা করে আমাদের দাবি হচ্ছে, এই অপরাধ যারা করেছে তাদের অবশ্যই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। অতীত কলঙ্কের এই ভার আমাদের নিজেদের মতো করে থাকতে দিচ্ছে না, এ থেকে আমাদের মুক্ত হওয়া দরকার। আর সে কারণেই ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপারে আমাদের কাছে পাকিস্তান সরকারের বাধ্যবাধকতা।
মতিউর রহমান : এই বিষয়গুলোর ব্যাপারে পাকিস্তানের জনগণ ও প্রচারমাধ্যমের মনোভাব কেমন?
আসমা জাহাঙ্গীর : ঠিক এ মুহূর্তে পাকিস্তান এক ছোটখাটো সংকটকাল অতিক্রম করছে। তাই জনমনে গভীর হতাশা। কাজেই পাকিস্তানে এগুলো আদৌ কোনো ইস্যু নয়। অবশ্য পাকিস্তানে দুটো চরমপন্থী ধারা রয়েছে, যার অনুসারীরা বাস করছে পাশাপাশি। আর আমি এতে সন্তুষ্ট যে, একটি ধারার অনুসারীরা আমাদের মতোই মানবাধিকার সংক্রান্ত নীতিমালা অনুসরণ করে যাবে। পাশাপাশি পাকিস্তানে আরেকটি গোষ্ঠী রয়েছে, যারা মনে করে ক্ষমা চাওয়াটা মোটেও জরুরি নয়। ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপারে যারা কথা বলে তারা এই দ্বিতীয় গোষ্ঠীর কাছে হয়ে যায় বেইমান। কাজেই পাকিস্তানে এখন এই দুটো শক্তিই সক্রিয় রয়েছে এবং বাদবাকিরা নীরব দর্শক মাত্র।
মতিউর রহমান : এবার রাজনীতি প্রসঙ্গে আসা যাক। জেনারেল মোশাররফ ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু বলুন?
আসমা জাহাঙ্গীর : গণতন্ত্রের পটপরিবর্তন পাকিস্তানের অনেক ক্ষতি করেছে। কেননা, আমাদের এখন কোনো দিকনির্দেশনা নেই। আর আপনি যখন কোনো পদ্ধতির ব্যত্যয় ঘটাবেন তখন আসলে আপনি সেটির পূর্বাবস্থায় না আসাটাই নিশ্চিত করছেন মাত্র, তা ওই পদ্ধতি যতই নড়বড়ে হোক না কেন। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে ঠিক এ ঘটনাই ঘটেছে। আমরা পরিত্রাণ পাওয়ার কোনো পথ দেখছি না। রেহাই পাওয়ার পথ খঁুজছি। আমরা সব সময় বিশ্বাস করেছি, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সূচনা আমাদের করতে হবে নির্বাচন পদ্ধতির মাধ্যমে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, এটা স্রেফ ক্ষুদ্র একটা পদক্ষেপ মাত্র। আমরা এই ক্ষুদ্র পদক্ষেপ নিয়েছিলাম একটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর ছত্রচ্ছায়ায়। এখন ওই একটি মাত্র ধাপও উপড়ে ফেলা হয়েছে।
কাজেই এখন আমরা কোথা থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু করব, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। আপনি জানেন, কোনো আত্মমর্যাদাশীল সমাজই রাজনৈতিক দল ও জনগণের প্রতিনিধিত্ব ছাড়া টিকে থাকতে পারে না।
আমরা এ কথা ভেবেও উদ্বিগ্ন যে, যথাযথভাবে দেশ শাসন করার দক্ষতা সামরিক বাহিনীর নেই, যা কিনা এ মুহূর্তে অতীব প্রয়োজন। এটা স্নায়ুযুদ্ধের সময় নয় যে, সামরিক সরকারগুলোকে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা দেওয়া হবে। আগে জনমনে এমন একটা ধারণা ছিল, সামরিক সরকার মানেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নির্বিঘ্ন থাকা এবং সেই সঙ্গে দেশের সমৃদ্ধি। কিন্তু এবার সামরিক শাসনের সময় তেমনটা হচ্ছে না বলে লোকে দেখছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ, অর্থনৈতিকভাবেও আমরা ভোগান্তির শিকার। এই প্রথমবারের মতো লোকজন সামরিক সরকারের সঙ্গে দারিদ্র্যের সম্পর্ক খঁুজতে শুরু করেছে। ব্যাপারটা অবশ্য দূর-ভবিষ্যতে পাকিস্তানের জন্যই মঙ্গলজনক হবে। কিন্তু স্বল্প মেয়াদের কথা চিন্তা করলে বলা যায়, আমাদের খুবই নড়বড়ে ও হতাশাজনক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করতে হতে পারে। এরপর হয়তোবা আমরা এমন একটা প্ল্যাটফর্মে দাঁড়াতে পারব, যেখানে আমরা আমাদের লক্ষ্যের ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারব।
মতিউর রহমান : এসবের জন্য তো আপনি রাজনীতিবিদ অর্থাৎ জনগণ-নির্বাচিত পরপর দুটো সরকারকে দায়ী করবেন? তারা সামান্যতম গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে অথবা জনগণের মঙ্গল সাধন করতে ব্যর্থ হয়েছেন?
আসমা জাহাঙ্গীর : আমি কাউকে আলাদাভাবে দায়ী করছি না। আমি আমাদের নিজেদেরই দায়ী করছি, কেননা আমরাই এত কিছু হতে দিয়েছি। ভেবে দেখুন, আমাদের দেশে কোনো অনন্য ব্যক্তিত্বসম্পন্ন রাজনীতিবিদ নেই। কিন্তু যে দেশ তার ইতিহাসের অর্ধেকের বেশি সময় ধরে সামরিক শাসনের অধীনে রয়েছে সেখানে এই পরিস্থিতির মধ্য থেকে কীভাবে প্রজ্ঞাবান নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে? দক্ষিণ আফ্রিকায় একজন নেলসন ম্যান্ডেলা রয়েছেন। কিন্তু ম্যান্ডেলারা তো প্রতিদিন জন্মান না। দক্ষিণ আফ্রিকার মতো সৌভাগ্য আমাদের নেই। তবে আপনি যদি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের রাজনীতিবিদদের সঙ্গেই আমাদের রাজনীতিকদের তুলনা করেন, তাহলে দেখবেন পাকিস্তানি রাজনীতিকেরা অন্যদের চেয়ে ভালোও নন, আবার খারাপও নন।
যা হোক, একটা বিষয় কিন্তু বেশ মজার। আমাদের দেশে এমন একটা প্রচারণা আছে যে, সব রাজনীতিকই দুর্নীতিগ্রস্ত। কিন্তু পাকিস্তানের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখবেন, প্রথম দিককার কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ নেই। লিয়াকত আলী খান, শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মোহাম্মদ আলী (বগুড়া), চৌধুরী মোহাম্মদ আলী, আই আই চন্দ্রীগড়, ফিরোজ খান নুন- এদের কারও বিরুদ্ধেই টাকা-পয়সা সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ নেই। তাহলে দুর্নীতির সূত্রপাত কখন থেকে হলো? সেনাবাহিনীই দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। অসাধু কাজ-কারবার শুরু করেছিল সেনাবাহিনীই। আর নওয়াজ শরিফ যদি দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েই থাকেন, তা তিনি শিখেছেন তার মুরব্বিদের কাছ থেকে। কাজেই সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত লোক হচ্ছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জেনারেলরা। হ্যাঁ, দুর্নীতিপরায়ণ কিছুসংখ্যক রাজনীতিবিদও রয়েছে। কিন্তু হাবিব জালিসও একজন রাজনীতিক ছিলেন। ৪ ফুট বাই ৬ ফুট একটা ঘরে তিনি মারা গিয়েছিলেন। এমনকি আমার বাবাও একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন, যিনি মৃত্যুর আগে স্রেফ একটা বাড়ি ছাড়া আর কিছুই রেখে যাননি। অথচ তার জন্ম হয়েছিল আরও অবস্থাসম্পন্ন পরিবারে। আই এ রহমানও রাজনীতিতে আছেন। তিনি খুব সাদাসিধে জীবনযাপন করেন। তিনি আমার জানা সবচেয়ে সৎ মানুষ। কাজেই লোকে তাহলে দুর্নীতির কথা বলার সময় কোন রাজনীতিকদের কথা বলে? তারা গুটিকয়েক দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিকের কথা বলে। এরা দুর্নীতিপরায়ণ সেটা অস্বীকার করার জো নেই। কিন্তু সবাইকে এক কাতারে দাঁড় করানো যায় না।
দ্বিতীয়ত, পাকিস্তানে কোনো বেসামরিক সরকারই ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় ছিলেন জুলফিকার আলী ভুট্টো। আর এর মূল্য তিনি দিয়েছেন ফাঁসিতে ঝুলে। অর্থাৎ আমরা কখনোই সত্যিকার বেসামরিক সরকার পাইনি। আমরা এমন কিছু লোক পেয়েছিলাম, যারা দেশ শাসন করেছেন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাবাধীনে।
মতিউর রহমান : পাকিস্তানে ক্ষমতায় আবার আসীন রয়েছে সেনাবাহিনী এবং আরও কিছু সময় তারা দেশ শাসন করবে বলে বোঝা যাচ্ছে। আমরাও একসময় পাকিস্তানের অংশ ছিলাম, অনুরূপ অভিজ্ঞতা আমাদেরও আছে। আমাদেরও সামরিক সরকার ছিল। যদিও এখন আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছি। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক দুরবস্থা, বেকারত্ব, নারী নির্যাতন - এসব আমরাও মোকাবিলা করছি। আসলে পরিত্রাণ পাওয়ার পথ কোথায়? পাকিস্তানে যা হচ্ছে তা থেকে বাংলাদেশ কী অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে?
আসমা জাহাঙ্গীর : আমার তো ইচ্ছে করে আমাদের দেশে ভালো কিছুর চর্চা হোক এবং তা আমরা আপনাদের দেশেও সঞ্চার করতে পারি। কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা তো অন্যরকম।
আমি লক্ষ করেছি, কার্যকরী স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার সহায়তা ছাড়া কোনো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াই টিকে থাকতে পারে না। বাংলাদেশের জন্য সত্যি যা প্রয়োজন, তা হলো বেশি বেশি গণতন্ত্র, কম কম নয়। এমন একটা সময় আসবে, যখন মানুষ সংঘাতের রাজনীতি বা মেরুকরণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়বে। তখন একটা তৃতীয় শক্তির উত্থান ঘটবে। কিন্তু জনগণকে ধৈর্য ধরতে হবে। কারণ এটা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য প্রক্রিয়া। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সহজ কিন্তু তা টিকিয়ে রাখা কঠিন।
মতিউর রহমান : এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে আমাদের মেলা সময় লাগছে। ক্ষমতার শীর্ষে আমরা কাদের দেখছি তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি সেখানে ভালো লোকদের না পাই তাহলে গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখা কঠিন।
আসমা জাহাঙ্গীর : হ্যাঁ, ভালো লোক কাজটা সহজতর করতে পারে। খারাপ, অদক্ষ, অকার্যকর, দুর্নীতিপরায়ণ লোক সমাজে বড় ধরনের হতাশা ডেকে আনতে পারে। আর এখানেই যত গন্ডগোলের সূত্রপাত। আমি আপনাদের সমস্যা অনুধাবন করি। এখানে গণতন্ত্রের ভিত দুর্বল। গণতন্ত্র খুব শক্তভাবে শেকড় গাড়তে পারছে না। এমন নয় যে, জনগণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে ইচ্ছুক নয়। এই ব্যর্থতার জন্য মূলত দায়ী রাজনীতিকদের মধ্যে ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্ব।
আমরা বুঝতে পেরেছি এবং আমি মনে করি, আমাদের নেতৃবৃন্দও ইতিমধ্যে বুঝতে পেরেছেন যে, রাজনীতিতে প্রতিপক্ষের প্রতি সম্মান প্রদর্শন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
মতিউর রহমান : সহনশীলতাও খুব জরুরি।
আসমা জাহাঙ্গীর : হ্যাঁ, সহনশীলতা। আসলে আমি মনে করি, নব্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিরোধী দলও উল্লেখযোগ্য। তারাও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে। আর সরকার যদি তাদের সঙ্গে মানিয়ে না চলে, তাহলে পরে দেখা যাবে সরকার তার নিজের স্বার্থের বিরুদ্ধেই কাজ করছে। কারণ জনগণ ব্যাপারটা বেশি দিন সহ্য করতে পারবে না।
মতিউর রহমান : পাকিস্তানে জে. মোশাররফ কীভাবে ক্ষমতা সংগঠিত করতে যাচ্ছেন? তিনি কীভাবে তার রাজনৈতিক ভিত তৈরি করছেন? তিনি কি কোনো নতুন দল গঠন করবেন? এ ব্যাপারে আপনার কোনো ধারণা আছে?
আসমা জাহাঙ্গীর : আমি শুধু বিষয়টা বিশ্লেষণ করতে পারি। অবশ্য আমার সঙ্গে সরকারের কোনো সম্বন্ধ নেই। তাদের কার্যকলাপের মাধ্যমেই কেবল বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। এই সামরিক সরকার তার পূর্বপুরুষদের পথই অনুসরণ করছে। তারা কোনো রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ ছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচন করবে। রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ থাকায় এই নির্বাচন হবে নিয়ন্ত্রিত। সামরিক বাহিনী তাদের ক্ষমতা সংগঠিত করবে ধাপে ধাপে। তারা সেনা সদর সুদৃঢ় করার জন্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন মুখ, নতুন নেতৃত্ব পাবে। আর এভাবেই তারা ধাপে ধাপে প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ক্ষমতা সংগঠিত করবে। এই পদ্ধতি অন্য সামরিক সরকারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ভালো কাজ দিতে পারে। কিন্তু এ যাত্রা তা কাজে আসবে কি না সে ব্যাপারে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কারণ, এবার তারা সংবিধান পরিবর্তন করার পরিকল্পনা করছে। জাতীয় প্রতিরক্ষা কমিটি গঠনের মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে রাজনীতিতে নিয়ে আসা হচ্ছে। আপনার যদি সেনাবাহিনী আর অস্ত্র থাকে তাহলে তাদের কাজে লাগিয়ে আপনি যেকোনো কিছু করতে পারেন। কিন্তু সামরিক সরকার অবশ্যই নাগরিক সমাজ তথা জনগণের সহযোগিতা পাবে না। জনগণ শুধু তীব্র অসন্তোষ নিয়ে কী ঘটছে তা দেখছে।
মতিউর রহমান : পত্রপত্রিকায় আমরা পড়েছি, পাকিস্তানের সব রাজনৈতিক দল একজোট হচ্ছে। তাদের আন্দোলন গড়ে তোলার কোনো সম্ভাবনা আছে বলে আপনি মনে করেন?
আসমা জাহাঙ্গীর : আমি মনে করি এটা ইতিবাচক ঘটনা। কেননা, তারা অন্তত একসুরে কণ্ঠ মিলিয়ে বলছে, আমরা কখনোই সেনাবাহিনীকে ক্ষমতায় ডেকে আনব না, যেমনটা হয়েছে অতীতে। দ্বিতীয়ত, আমরা এই ঐক্যজোটের ওপর এ ব্যাপারে জনমতের চাপ সৃষ্টি করার পরিকল্পনা করছি যে, তাদের এবার অবশ্যই একটা আচরণবিধি মেনে চলতে হবে। তাদের ন্যূনতম একটা এজেন্ডায় একমত হতে হবে, যাতে যদি তারা কখনো ক্ষমতায় ফিরে আসে, তখন যেন আমাদের অতীতের মতো বাধা-বিঘ্ন না পেরোতে হয়। রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কয়েকজনকে নিয়ে আমরা একটা বৈঠকের আয়োজন করতে যাচ্ছি, যেখানে কয়েকটি বিষয় উত্থাপন করা হবে। পাকিস্তানের রাজনীতিতে পরিবর্তনের সূচনা করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে এই উত্থাপিত বিষয়গুলো গ্রহণ করার জন্য ঐকজোটের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হবে।
মতিউর রহমান : শেষ প্রশ্ন। দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক তাত্ত্বিক মার্কিন লেখক স্টিফেন কোহেনের একটি লেখা পড়েছি। তাতে তিনি বলেছেন, পাকিস্তানের রাজনৈতিক সমস্যার একটা সমাধান আছে। তা হলো, সামরিক বাহিনী ও বেসামরিক রাজনৈতিক দলের মধ্যে এক ধরনের কোয়ালিশন বা সমঝোতা। আপনি কি এই ধারণার সঙ্গে একমত পোষণ করেন?
আসমা জাহাঙ্গীর : আমার মনে হয়, কোহেন সাহেবের উচিত তার নিজ দেশের সরকারকেই এমন পরামর্শ দেওয়া। বিশুদ্ধ গণতন্ত্র যে শুধু আমেরিকাতেই থাকবে, পাকিস্তানে থাকবে না, সেটা তো হয় না। গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করা আমেরিকানদের কাছে যেমন কাঙ্ক্ষিত, আমাদের কাছেও সমান কাঙ্ক্ষিত।
মতিউর রহমান : বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য কিছু বলবেন?
আসমা জাহাঙ্গীর : আমার কাছে জাতি বা জাতীয়তা মুখ্য বিষয় নয়, আমার কাছে জনগণই মুখ্য। আমরা পাকিস্তানিরা খুব অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছিলাম বলেই পূর্ব পাকিস্তান হারিয়েছিলাম। পূর্ব পাকিস্তান থেকে তখন আমাদের দিকে ধর্মনিরপেক্ষতার হাওয়া বইছিল এবং আমাদের বন্ধ জানালা একটু একটু করে খুলে যাচ্ছিল, তাতে আমরা কিছু মানুষ প্রাণভরে নিশ্বাস নিচ্ছিলাম। কিন্তু তারা সেটা বন্ধ করে দিল। আমি এ কথাই বলব।
মতিউর রহমান: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আসমা জাহাঙ্গীর: আপনাকেও ধন্যবাদ।
No comments