‘আমরা বেদখল হয়ে আছি’
গণফোরাম
সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, দেশের মালিক জনগণ এখন ক্ষমতায় নেই। তাদের
ক্ষমতা বেদখল হয়ে আছে। দেশের মালিকের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে অবাধ ও
সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার। এজন্য জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা জরুরি। গতকাল সোমবার
জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’ আয়োজিত
‘গণতন্ত্রের সংগ্রাম, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ও আমাদের স্বাধীনতা’ শীর্ষক
আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সভায় লিখিত বক্তব্যে ড.
কামাল হোসেন বলেন, সংবিধানে বলা হয়েছে প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক
জনগণ।
জনগণ তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে। আর অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রথম ও প্রধান শর্ত। নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি রাষ্ট্র ও সমাজের সকল স্তরে জনগণের পক্ষে জনগণের ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। এটাই গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক রাজনীতির মূল কথা। তিনি বলেন, কার্যকর গণতন্ত্রের অভাবে জনগণ এখনো মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে। দেশব্যাপী ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের ওপর ধারাবাহিক নির্যাতন ও নিপীড়ন অব্যাহত রয়েছে এবং সাম্প্রদায়িক শক্তিকে উস্কে দিচ্ছে। অপরদিকে শিক্ষায় নানা প্রকার পরীক্ষা এবং প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা জাতিকে পঙ্গু করে দিচ্ছে। কার্যকর গণতন্ত্রের মাধ্যমে দেশ, জাতি ও জনগণকে সন্ত্রাস ও দুর্নীতির কবল থেকে মুক্ত করা সম্ভব। কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অপরিহার্য। ড. কামাল বলেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আকাঙ্ক্ষা জনমনে প্রত্যাশিত। আশা করি রাজনৈতিক দল ও শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরকার মতবিনিময়ের মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হবেন। প্রবীণ এ রাজনীতিক আরো বলেন, দেশের জন্য জীবন দেয়া শহীদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য জনগণের ক্ষমতা দরকার। দেশের ভেতর আমরা বেদখল হয়ে আছি। ১৭ কোটি মানুষকে বেদখল করে রাখা যাবে না। আমরা মালিকের ভূমিকায় থাকতে চাই। আমরা সত্যিকার অর্থে একটি নির্বাচিত সরকার চাই। দেশে গুম-খুন হচ্ছে মানুষ। জনগণের ঐক্যের মাধ্যমে এসবের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের শক্তি অর্জন করতে হবে। প্রশ্নফাঁস মহামারী আকার ধারণ করেছে। প্রশ্নফাঁস বন্ধ করতে কমিশন গঠনের দাবি উঠেছে। জনগণের সরকার হলে এ দাবি করতে হতো না। দেশের মানুষ আজ পরিবর্তন চায়। দেশে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করা হচ্ছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিকল্প ধারার সভাপতি ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সবাই ক্ষমতায় যেতে চায়। কেউ দায়িত্ব নিতে চায় না। রাজনীতিতে যে বিরাট দ্বন্দ্ব চলছে তার প্রধান কারণ হচ্ছে উচ্চ ঝুঁকির রাজনীতি। আমি যদি আজকে কোনোভাবে ক্ষমতায় যেতে পারি আমরা দারুণ ক্ষমতা দেখাই। আমরা গ্রেপ্তার করতে পারি, গুম করতে পারি। আড়াই হাজার কোটি টাকার বিচার না করে আড়াই টাকার মামলায় জেলে দিতে পারি। আর অন্যদের বলা হচ্ছে ঘরে বসে রাজনীতি করতে। আর তারা মাঠে-ঘাটে ঘুরে দলের পতাকা, ভোটের বাক্সের প্রতীকের প্রচার চালাচ্ছে। উচ্চ ঝুঁকির রাজনীতি না হলে ক্ষমতায় গেলে যে সম্মান এবং ক্ষমতায় না থাকলে একই সম্মান পেতো সবাই। সাবেক এই প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, ক্ষমতায় থাকতে যে রাজনীতি সেটা ভুল। এটা মৌলিক ভুল। সবাই ক্ষমতা দেখাতে চায়, কেউ দায়িত্ব নিতে চায় না। রাজনীতির মান অনেক নিচে নেমে গেছে উল্লেখ করে বি. চৌধুরী বলেন, বর্তমানে উচ্চ ঝুঁকির রাজনীতি নির্মূল না হলে দেশে শান্তি আসবে না। ক্ষমতায় গেলে সরকারি দল বিরোধী দলের ক্ষতি করবে না- এই নিশ্চয়তা দিতে হবে। ভারতে এই নিশ্চয়তা আছে। রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ঐক্য প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করার জন্য আগে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্য প্রক্রিয়ায় কোনো সংকীর্ণতা থাকা যাবে না। এর পাশাপাশি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকলকে উদার গণতন্ত্র চর্চার আহ্বান জানান বিকল্প ধারার সভাপতি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, দেশে আজ গণতান্ত্রিক অধিকার নেই। ঘরে থেকেও স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই। ফ্যাসিবাদকে আদেশ-উপদেশ দিয়ে স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখা যাবে না। ইয়াহিয়া খান এ সরকারের কাছে শিক্ষা নিতে পারলে আন্দোলন সংগ্রাম করতে দিতো না। গুলি চালাতো। বলা হয়, পুলিশ জনগণের বন্ধু। ‘দেশের মালিক জনগণ’ এটা আভিধানিক কথা, বইয়ের কথা। এটা সত্যিকার হলে পুলিশ বুটের লাথি মারতো না মানুষের ওপর। ভোটের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারের পতন হয় না। লড়াই-সংগ্রাম ছাড়া এর আগেও স্বৈরাচারের পতন হয়নি এখনো হবে না। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বলেন, গণতন্ত্রের সঙ্গে উন্নয়নের বিন্দুমাত্র কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা প্রাণ খুলে হাসতে পারি না, কথা বলতে পারি না। তাহলে এ উন্নয়ন দিয়ে কী হবে? কীসের গণতন্ত্র আর কীসের উন্নয়ন? আমরা মাটির থালায় ভাত খাবো। কিন্তু এমন উন্নয়ন চাই না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সঠিকভাবে হয়নি দাবি করে তিনি আরো বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে যারা সরকারের বাইরে ছিল তাদের বিচার হয়েছে। সরকারের ভেতরে যারা ছিল তাদের বিচার হয় নি। বিচারের চেষ্টা হয়নি। যুদ্ধাপরাধের ৮০ শতাংশ সঠিক বিচার হয়নি। বিচারের চেষ্টা করা হয়নি। দেশের মানুষ সুখে নাই। শুধু উন্নয়নের কথা বলে কিছুই বলা যাবে না। বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জেল হত্যার বিচারও সঠিকভাবে হয়নি বলে দাবি করেন কাদের সিদ্দিকী। খালেদার রায় নিয়ে আদালতের দীর্ঘসূত্রতার সমালোচনা করে তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকীতে জন্মদিন পালন করেন। যেকারণে তাকে পছন্দ করি না। তবে তাকে আড়াই কোটি টাকার মামলায় জেলে নেয়াকে সমর্থন করি না। খালেদার রায় ছয় পৃষ্ঠায় লেখা যেত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বিকল্প ধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান বলেন, দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা বর্তমানে আশংকাজনক। বর্তমান সরকার দেশকে যে অবস্থায় নিয়ে গেছে তা বর্ণনাতীত। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে দেশের নাম লেখা হবে। তিনি আরো বলেন, সুকৌশলে দেশকে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে। ঐক্য প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই বিভক্তি দূর করতে হবে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান খান বলেন, দেশের জনগণ স্বাধীন চিন্তা করতে পারছে না। দেশের পরিস্থিতি ফ্যাসিবাদের দিকে যাচ্ছে। গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল শক্তি যদি ঐক্যবদ্ধ না হয় তবে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। তিনি আরো বলেন, মানুষ অতিষ্ঠ। দেশে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। রাজনীতিতে ফ্যাসিস্ট প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে গণতান্ত্রিক প্রবণতা কমে যাচ্ছে। বামপন্থিদের মধ্যেও সংকীর্ণতা দেখা দিয়েছে। তারাও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে ভাগ হয়েছে। বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সকলকে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি তৈরির জন্য এগিয়ে আসতে হবে। যার মাধ্যমে ত্রিশ লক্ষ শহীদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে। সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমীন, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ।
জনগণ তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে। আর অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রথম ও প্রধান শর্ত। নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি রাষ্ট্র ও সমাজের সকল স্তরে জনগণের পক্ষে জনগণের ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। এটাই গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক রাজনীতির মূল কথা। তিনি বলেন, কার্যকর গণতন্ত্রের অভাবে জনগণ এখনো মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে। দেশব্যাপী ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের ওপর ধারাবাহিক নির্যাতন ও নিপীড়ন অব্যাহত রয়েছে এবং সাম্প্রদায়িক শক্তিকে উস্কে দিচ্ছে। অপরদিকে শিক্ষায় নানা প্রকার পরীক্ষা এবং প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা জাতিকে পঙ্গু করে দিচ্ছে। কার্যকর গণতন্ত্রের মাধ্যমে দেশ, জাতি ও জনগণকে সন্ত্রাস ও দুর্নীতির কবল থেকে মুক্ত করা সম্ভব। কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অপরিহার্য। ড. কামাল বলেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আকাঙ্ক্ষা জনমনে প্রত্যাশিত। আশা করি রাজনৈতিক দল ও শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরকার মতবিনিময়ের মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হবেন। প্রবীণ এ রাজনীতিক আরো বলেন, দেশের জন্য জীবন দেয়া শহীদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য জনগণের ক্ষমতা দরকার। দেশের ভেতর আমরা বেদখল হয়ে আছি। ১৭ কোটি মানুষকে বেদখল করে রাখা যাবে না। আমরা মালিকের ভূমিকায় থাকতে চাই। আমরা সত্যিকার অর্থে একটি নির্বাচিত সরকার চাই। দেশে গুম-খুন হচ্ছে মানুষ। জনগণের ঐক্যের মাধ্যমে এসবের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের শক্তি অর্জন করতে হবে। প্রশ্নফাঁস মহামারী আকার ধারণ করেছে। প্রশ্নফাঁস বন্ধ করতে কমিশন গঠনের দাবি উঠেছে। জনগণের সরকার হলে এ দাবি করতে হতো না। দেশের মানুষ আজ পরিবর্তন চায়। দেশে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করা হচ্ছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিকল্প ধারার সভাপতি ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সবাই ক্ষমতায় যেতে চায়। কেউ দায়িত্ব নিতে চায় না। রাজনীতিতে যে বিরাট দ্বন্দ্ব চলছে তার প্রধান কারণ হচ্ছে উচ্চ ঝুঁকির রাজনীতি। আমি যদি আজকে কোনোভাবে ক্ষমতায় যেতে পারি আমরা দারুণ ক্ষমতা দেখাই। আমরা গ্রেপ্তার করতে পারি, গুম করতে পারি। আড়াই হাজার কোটি টাকার বিচার না করে আড়াই টাকার মামলায় জেলে দিতে পারি। আর অন্যদের বলা হচ্ছে ঘরে বসে রাজনীতি করতে। আর তারা মাঠে-ঘাটে ঘুরে দলের পতাকা, ভোটের বাক্সের প্রতীকের প্রচার চালাচ্ছে। উচ্চ ঝুঁকির রাজনীতি না হলে ক্ষমতায় গেলে যে সম্মান এবং ক্ষমতায় না থাকলে একই সম্মান পেতো সবাই। সাবেক এই প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, ক্ষমতায় থাকতে যে রাজনীতি সেটা ভুল। এটা মৌলিক ভুল। সবাই ক্ষমতা দেখাতে চায়, কেউ দায়িত্ব নিতে চায় না। রাজনীতির মান অনেক নিচে নেমে গেছে উল্লেখ করে বি. চৌধুরী বলেন, বর্তমানে উচ্চ ঝুঁকির রাজনীতি নির্মূল না হলে দেশে শান্তি আসবে না। ক্ষমতায় গেলে সরকারি দল বিরোধী দলের ক্ষতি করবে না- এই নিশ্চয়তা দিতে হবে। ভারতে এই নিশ্চয়তা আছে। রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ঐক্য প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করার জন্য আগে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্য প্রক্রিয়ায় কোনো সংকীর্ণতা থাকা যাবে না। এর পাশাপাশি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকলকে উদার গণতন্ত্র চর্চার আহ্বান জানান বিকল্প ধারার সভাপতি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, দেশে আজ গণতান্ত্রিক অধিকার নেই। ঘরে থেকেও স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই। ফ্যাসিবাদকে আদেশ-উপদেশ দিয়ে স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখা যাবে না। ইয়াহিয়া খান এ সরকারের কাছে শিক্ষা নিতে পারলে আন্দোলন সংগ্রাম করতে দিতো না। গুলি চালাতো। বলা হয়, পুলিশ জনগণের বন্ধু। ‘দেশের মালিক জনগণ’ এটা আভিধানিক কথা, বইয়ের কথা। এটা সত্যিকার হলে পুলিশ বুটের লাথি মারতো না মানুষের ওপর। ভোটের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারের পতন হয় না। লড়াই-সংগ্রাম ছাড়া এর আগেও স্বৈরাচারের পতন হয়নি এখনো হবে না। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বলেন, গণতন্ত্রের সঙ্গে উন্নয়নের বিন্দুমাত্র কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা প্রাণ খুলে হাসতে পারি না, কথা বলতে পারি না। তাহলে এ উন্নয়ন দিয়ে কী হবে? কীসের গণতন্ত্র আর কীসের উন্নয়ন? আমরা মাটির থালায় ভাত খাবো। কিন্তু এমন উন্নয়ন চাই না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সঠিকভাবে হয়নি দাবি করে তিনি আরো বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে যারা সরকারের বাইরে ছিল তাদের বিচার হয়েছে। সরকারের ভেতরে যারা ছিল তাদের বিচার হয় নি। বিচারের চেষ্টা হয়নি। যুদ্ধাপরাধের ৮০ শতাংশ সঠিক বিচার হয়নি। বিচারের চেষ্টা করা হয়নি। দেশের মানুষ সুখে নাই। শুধু উন্নয়নের কথা বলে কিছুই বলা যাবে না। বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জেল হত্যার বিচারও সঠিকভাবে হয়নি বলে দাবি করেন কাদের সিদ্দিকী। খালেদার রায় নিয়ে আদালতের দীর্ঘসূত্রতার সমালোচনা করে তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকীতে জন্মদিন পালন করেন। যেকারণে তাকে পছন্দ করি না। তবে তাকে আড়াই কোটি টাকার মামলায় জেলে নেয়াকে সমর্থন করি না। খালেদার রায় ছয় পৃষ্ঠায় লেখা যেত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বিকল্প ধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান বলেন, দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা বর্তমানে আশংকাজনক। বর্তমান সরকার দেশকে যে অবস্থায় নিয়ে গেছে তা বর্ণনাতীত। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে দেশের নাম লেখা হবে। তিনি আরো বলেন, সুকৌশলে দেশকে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে। ঐক্য প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই বিভক্তি দূর করতে হবে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান খান বলেন, দেশের জনগণ স্বাধীন চিন্তা করতে পারছে না। দেশের পরিস্থিতি ফ্যাসিবাদের দিকে যাচ্ছে। গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল শক্তি যদি ঐক্যবদ্ধ না হয় তবে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। তিনি আরো বলেন, মানুষ অতিষ্ঠ। দেশে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। রাজনীতিতে ফ্যাসিস্ট প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে গণতান্ত্রিক প্রবণতা কমে যাচ্ছে। বামপন্থিদের মধ্যেও সংকীর্ণতা দেখা দিয়েছে। তারাও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে ভাগ হয়েছে। বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সকলকে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি তৈরির জন্য এগিয়ে আসতে হবে। যার মাধ্যমে ত্রিশ লক্ষ শহীদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে। সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমীন, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ।
No comments