ধুলার সাথে বসবাস by সুমনা শারমিন
ধুলার
সাথে নিত্য বসবাস। ঘর ছেড়ে বেরোলেই আর কিছু না হোক, ধুলার মুখোমুখি হতেই
হয় রাজধানীবাসীকে। ভাঙাচোরা রাস্তা আর বছরজুড়ে উন্নয়নের নামে চলা
খোঁড়াখুঁড়ির ধুলা দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণে। শীতের শেষে এর তীব্রতা
বেড়েছে। রাজধানীর বেশির ভাগ রাস্তায় এখন ধুলার রাজত্ব। একে সঙ্গী করে চলা
অনেকে ভুগছেন শ্বাসকষ্ট, শ্বাসনালীর ক্ষতসহ নানা ধরনের মারাত্মক সমস্যায়।
পাশেই বুড়িগঙ্গা নদী। অথচ প্রাণভরে শ্বাস নেয়া তো দূরের কথা, উল্টো দূষিত
পানির দুর্গন্ধ সহ্য করতে হয় সদরঘাট-গাবতলী বেড়িবাঁধ সড়কের পাশের
বাসিন্দাদের। কয়েক বছর ধরে যুক্ত হয়েছে নতুন ধুলার ভোগান্তি। সদরঘাট থেকে
গাবতলী পর্যন্ত দীর্ঘ ১১ কিলোমিটার এই সড়কের প্রায় সাত কিলোমিটার অংশের পিচ
উঠে গর্ত তৈরি হয়েছে। এতে সৃষ্টি হচ্ছে ধুলার। বেড়িবাঁধ সড়কের সোয়ারীঘাটের
কামালবাগ বটতলা মোড় থেকে হাজারীবাগ পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার অংশ ঘুরে
দেখা যায়, সড়কের পিচ উঠে বের হয়ে পড়েছে মাটি। আলগা হয়ে গেছে খোয়া। সড়কের
পাশের বাসাবাড়ি ও দোকানের আবর্জনা স্তূপ করে রাখা হয়েছে রাস্তার ধারে।
পথচারীরা চলছে হাত দিয়ে নাক-মুখ চেপে। সড়কে চলাচল করছে বাস, ট্রাক, লেগুনা,
ব্যাটারিচালিত রিকশা। সড়ক দিয়ে কোনো যানবাহন গেলেই ধুলায় ভরে যাচ্ছে
আশপাশের এলাকা। একসাথে একাধিক গাড়ি চললে ধুলায় একরকম অন্ধকার হয়ে যায় সড়কের
ওই অংশ। বেড়িবাঁধ সড়কের কেল্লার মোড় অংশে দেখা যায়, ধুলা থেকে বাঁচতে
যানবাহনের যাত্রীদের কেউ মাস্ক পরেছেন, কেউবা হাত দিয়ে নাক-মুখ চেপে
রেখেছেন। সড়কের পাশের চা-দোকানিরা কাপড় দিয়ে খাবার ঢেকে রেখেছেন। ধুলা জমে
বিবর্ণ হয়ে গেছে সড়কের আশপাশের গাছের পাতা। কথা হয় লেগুনার যাত্রী মাহমুদা
খাতুনের সাথে।
তিনি বলেন, সকালে ভালো কাপড় পরে বাইরে বের হলে পরের দিনই
সেটা পরা যায় না। শিশুদের স্কুল ড্রেস প্রতিদিনই ধুয়ে দিতে হয়। ধুলার কারণে
মাঝেমধ্যে নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। গলা ব্যথা করে, নাক-বুক জ্বলে। এই সড়ক
তৈরির কয়েক বছর পর থেকেই নষ্ট হতে শুরু করে। বৃষ্টিতে কাদা-পানি জমে। আর
শুষ্ক মওসুমে ধুলা। বালুঘাটের বাসিন্দা মকবুল হোসেন বলেন, দিনে তো নয়ই,
রাতেও ঘরের দরজা-জানালা খোলা রাখা যায় না। সড়ক থেকে উড়ে আসা ধুলাবালুতে
ঘরের আসবাব-বিছানাপত্র ময়লা হয়ে যায়। সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী ইকবাল
বলেন, ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটি সংস্কার করা হচ্ছে। কাজটি করছে ন্যাশনাল
ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গাবতলী ও
সোয়ারীঘাট অংশে এরই মধ্যে সংস্কারকাজ শুরু হয়ে গেছে। এপ্রিলের মধ্যে কাজ
শেষ হয়ে যাবে। তখন আর ধুলাবালুর সমস্যা থাকবে না। শুধু এই সড়ক না, রাজধানীর
অভিজাত গুলশান বনানীর ফুটপাথেও ধুলার যন্ত্রণায় হাঁটা যায় না। বাড্ডা লিংক
রোড হয়ে গুলশান ১ নম্বর সড়ক পর্যন্ত চলছে ডিভাইডার সংস্কারের কাজ। ফলে
অফিসগামী যাত্রীদের মুখে মাস্ক পরে হাঁটতে হয় এই রাস্তায়। গুলশান ১ থেকে
পুলিশপ্লাজা পর্যন্ত সড়কের ফুটপাথ সংস্কারের নামে রাস্তায় ফেলে রাখা হয়েছে
নির্মাণসামগ্রী ফলে প্রতিনিয়তই ধুলার কবলে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বে বায়ুদূষণের শীর্ষে যেসব নগরী, ঢাকা তার অন্যতম।
শীতকালে ঢাকার বাতাসে ক্ষতিকর কণার পরিমাণ সহনীয় মাত্রার চেয়ে দশগুণ বেড়ে
যায়। ফলে শ্বাসকষ্ট, এলার্জিসহ নানা রোগে ভুগতে হয় নগরবাসীকে। এই দূষণ থেকে
নগরবাসীকে বাঁচাতে ধুলার উৎস বন্ধ করতে হবে। প্রতিদিন পানি ছিটাতে হবে
রাস্তায়। সড়কের পাশে খোলা জায়গায় রাখা যাবে না নির্মাণসামগ্রী। এছাড়া
নগরীতে যেভাবে সবুজের পরিসর কমছে- তাতে বায়ুদূষণ ঠেকাতে যে পদক্ষেপই নেয়া
হোক না কেন তা কোনো কাজে আসবে না। তাই কেটে ফেলা গাছের চেয়ে নতুন করে
লাগানো গাছের সংখ্যা যেন বেশি হয় সেই পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
No comments