কঠিন কাজ দুটি জলবৎতরলং হয়ে গেছে দেশে

এই কলামটি লিখতে গিয়ে আমার প্রিয় উপজেলা পাটগ্রামের প্রয়াত শামসুল চাচার কথা মনে পড়েছে। এলাকাবাসীর কাছে তিনি ছিলেন শামসুল দেওয়ানী। দেওয়ানী মানে মাতব্বর। এমন ইন্টারেস্টিং ক্যারেকটার নাটক-সিনেমায় পাওয়া যায়, বাস্তবে খুব কম। তাকে প্রধান চরিত্র করে একটি নাটক লিখতে চেয়েছিলাম অনেক আগে, হয়নি। যা হোক, একদিন এক লোক তার কাছে কিছু টাকা ধার চাইতে এলেন। চাচা পাঞ্জাবির পকেট থেকে একমুঠ টাকা বের করে তার বিছানার নিচে রেখে বললেন- দ্যাখেক, টাকালা তোষকের তলৎ থুনু, আইতোত মোক কামড়ের পায়। সাকালে আসিস, যদি কামড়ায় শ্যালা দেইম (এই যে দেখছিস টাকাগুলো বিছানার নিচে রাখলাম। রাতে আমাকে কামড়াতে পারে। সকালে আসিস, যদি কামড়ায়, তাহলে দেব)। তো ’৯৯ সালে আমেরিকা থেকে আসার সময় বেশকিছু টাকা নিয়ে এসেছিলাম। টাকাগুলো কামড়াচ্ছিল আমার গা-গতর। এমন কামড়, একটা সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করার খায়েশ হল, বিজয়নগরের যে ভবনটায় সেন্ট্রাল ল’ কলেজ অবস্থিত, সেটার তিন তলায় একটা প্রশস্ত অফিসও ভাড়া নিয়ে ফেললাম। সংক্ষেপে বলি, ওই অফিসে বাদল নামের ১৮-২০ বছরের একটি ছেলে পিয়নের কাজ করত। টানা দুই বছর, প্রজেক্টটিতে লালবাতি জ্বলার আগ পর্যন্ত সে চা-সিগারেট আনত, অফিসে যখন থাকতাম না, নিয়োগপ্রাপ্ত অন্য সাংবাদিকরাও নেই, ফোন রিসিভ করত ইত্যাদি। তাকে বেতন দিতাম দেড় কী দু’হাজার টাকা। তার অসুস্থ মা’র খবর নেয়ার সময় যদি মনে হতো অতিরিক্ত কিছু টাকা দেয়া দরকার, দিতাম।
কত টাকা নষ্ট করেছি বলব না, শাট ডাউন করতে হয়েছিল সেই অফিস। অনুতাপ বলে আমার চরিত্রে কিছু নেই, যদি থাকত ওই দুই বছরের পণ্ডশ্রমের জন্য অনুতাপে চোখের জল যথেষ্ট ছিল না। বাদলের সঙ্গে দীর্ঘ ১৫ বছর দেখা নেই। এই সেদিন নাটক দেখতে শিল্পকলা একাডেমির দিকে যাচ্ছি। কাকরাইল মোড় পার হওয়ার পর যে জায়গাটায় যুবলীগ, ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাটের অফিস, সেখান থেকে ফ্যাশনদুরস্ত এক লোক দৌড়ে এসে আমার রিকশার গতিরোধ করে। আমাকে ‘স্যার’ সম্বোধন করতেই চিনে ফেলি- আরে বাদল, তুমি? কথাবার্তা তার আগের মতোই আছে; কিন্তু পোশাক-পরিচ্ছদ বদলে গেছে আমূল। আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করেই বুঝতে পারি সে এখন টাকাওয়ালা। হয়তো অর্থমন্ত্রী যে পরিমাণ অর্থকে সম্পদশালী হওয়ার শর্ত মনে করেন, তার চেয়েও অনেক গুণ টাকার মালিক সে। তার টাকার হিসাব নেয়া আমার সাজে না। তবে তার এই রূপান্তরের রহস্যটা বুঝতে চাই। লেখাপড়া করেনি, ব্যবসা যদি করছে, পুঁজি পেল কোথায়? রহস্যভেদের জন্য বেশি সময় লাগেনি। বাদল আমাকে রিকশা থেকে নামাবেই। নামলাম, চা খেলাম এবং জানলাম সে যুবলীগ, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাকরাইল ইউনিটের সভাপতি! আমার সব বোঝা শেষ। ওদিকে এক্সপেরিমেন্টাল হলের পর্দা উঠল বলে। বাদল আমার ফোন নাম্বার নিয়ে তুলে দেয় আমাকে আরেকটি রিকশায়। এ প্রসঙ্গে আমার শ্বশুরবাড়ির এক নেতার কথা বলতে গিয়েও বলা যাচ্ছে না। শরৎচন্দ্রের ‘গৃহদাহ’ শুরু হয়ে যাবে। কে যেন আমাকে বলেছিল, ঘরে ও কর্মস্থলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন যিনি, তার পুরো পৃথিবীটাই শান্তিময়। আমি দু’ক্ষেত্রেই শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করে আসছি। আমার একসময়ের পিয়ন বর্তমানে কত টাকার মালিক অথবা সেই টাকা কীভাবে অর্জিত হয়েছে, সেসব বিষয় আমাদের প্রসঙ্গ নয়। আমরা এখন এ দেশের রাজনীতির একটি মৌলিক প্রশ্নের উত্তর খুঁজব।
প্রশ্নটা হল- বিশেষ কোনো রাজনীতিকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে তেমন কোনো যোগ্যতার প্রয়োজন পড়ে না মানি, নেতার বক্তৃতা শুনেই তার রাজনীতি সমর্থন করার অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে দেশে-বিদেশে। ছয় দফার একটিও না বুঝেই শুধু বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা শুনেই আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিল গ্রামের সাধারণ মানুষ ’৭০-এর নির্বাচনে। কিন্তু রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে, সোজা বাংলায় রাজনীতিক হতে হলে এ দেশে কি কোনোই যোগ্যতার প্রয়োজন পড়ে না? যদি থাকে, কী সেই যোগ্যতা? একটা মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা কিছু না বুঝেই যদি ‘মানি না, মানবো না’ স্লোগান দেয়, তাতে কী এমন দোষ! কিন্তু সেই স্লোগানসর্বস্বদের মধ্য থেকে কেউ যদি মিছিলটির আয়োজক দল বা তার কোনো অঙ্গ সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তখন তো বলতেই হবে সোহরাওয়ার্দী, ফজলুল হকদের জীবনী পড়ে কী লাভ আমাদের! প্রশ্নটা আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডকে করে নিই আগে, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী প্রকাশ করে কী লাভ হয়েছে? আপনাদের অনেক নেতা তো বইটি বানান করেও পড়তে পারছে না। ব্যাপারটা কি তাহলে এমন যে, আওয়ামী লীগের দরকার শুধু এমন নেতাকর্মী, প্রতিপক্ষ অথবা রাজপথে কখনও যদি মানুষের ঢল নামে, সেটাকে প্রতিহত করার জন্য যাদের শারীরিক শক্তি ও মনোবল রয়েছে শুধু? হবে হয়তো। বিজ্ঞ নেতার কী দরকার? সভানেত্রীর একক মেধাই তো যথেষ্ট! পৃথিবীর দুটি অতি কঠিন কাজ বাংলাদেশে জলবৎতরলং হয়ে গেছে। রাজনীতিবিদ ও ধর্মতত্ত্ববিদ (theologist) হওয়া। এ দুই শ্রেণীর মানুষ আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছেন বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে। পার্লামেন্টের ইংরেজি বানান জানি না তো কী হয়েছে, বড় নেতার অনুগ্রহ পেলেই তো ছোট নেতা, অতঃপর শুধু ঝুঁকি নেব, হয়ে যাব বড় নেতা। হ্যাঁ, এদেরই মুখ থেকে আমরা শিখে চলেছি রাজনীতির নতুন নতুন ব্যাকরণ। ওদিকে মাথায় একটা টুপি পরলেই তিনি হয়ে গেলেন ধর্মতত্ত্ববিদ! তিনি বলে দিচ্ছেন- এটা হালাল, ওটা হারাম; এটা করা যাবে না, ওটা মানা যাবে না! জালালউদ্দিন রুমি বেঁচে থাকলে দেখে যেতে পারতেন ধর্মকে তার মতো করে দেখতে পারাটাই শেষ কথা নয়, আরও দেখতে পেতেন বাংলাদেশে ধার্মিকের চেয়ে ধর্মতত্ত্ববিদ বেশি। হ্যাঁ, রাজনীতি অতি কঠিন একটি কাজ বটে। এটাকে তো বলাই হয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান। অর্থাৎ নিউটন-গ্যালিলিওরাই শুধু বিজ্ঞানী নন, ম্যান্ডেলাও একজন বিজ্ঞানী।
বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখারই কাজ ও লক্ষ্য হল আওতাধীন বিষয়গুলো চর্চা করে নতুন কিছু উদ্ভাবন করা এবং একইসঙ্গে পুরনো অকেজোকে পাল্টে ফেলা। বলা বাহুল্য, বিজ্ঞানের সব শাখার সব কর্মকাণ্ডের সমষ্টিগত ফলই হচ্ছে সভ্যতা। সহজ করে বললে- পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা ইত্যাদির মতো রাষ্ট্রবিজ্ঞানও অর্থাৎ রাজনীতিও কন্ট্রিবিউট করে চলেছে সভ্যতাকে। এই কন্ট্রিবিউশনটা হল মানুষের স্বভাব, সামাজিক আচরণ, সর্বোপরি রাষ্ট্রের চেহারায় ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটানো। অবশ্য রাজনীতির দোষে পরিবর্তনটা নেতিবাচকও হয়ে পড়তে পারে। কোন্টা ইতিবাচক আর কোন্টা নেতিবাচক সেই বিতর্কে না গিয়ে এটা তো বলাই যায়- শাহ পাহলভিতন্ত্রের ইরান আর আয়াতুল্লাহ খোমেনি-পরবর্তী ইরান এক নয়, একইভাবে সাদ্দামের ইরাক আর ফুয়াদ মাসুম-মালেকির এখনকার ইরাক কিংবা ডি ক্লার্কের দক্ষিণ আফ্রিকা আর ম্যান্ডেলার আফ্রিকার চেহারাও ভিন্ন। আর বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি তো পাকিস্তান নামের কিম্ভূতকিমাকার রাষ্ট্রটির শরীরটাই ভেঙে ফেলে সাইজমতো দুটি রাষ্ট্র গড়ে দিয়েছে। হ্যাঁ, রাজনীতি যে মানবজাতির জন্য কত বড় ফ্যাক্টর, তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হেফাজত-সংক্রান্ত মাত্র একটি সিদ্ধান্ত সমাজে কীভাবে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে, তা দেখলেই বোঝা যায়। চিন্তার বিষয় বৈকি। এত বড় কঠিন কাজটির ভার ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে আনাড়িদের হাতে। এ কি কম দুঃখের কথা, আনাড়িরা আবার স্পন্সরশিপ জোগাড় করছে যাদেরকে আমরা অপেক্ষাকৃত যোগ্য মনে করি তাদের কাছ থেকে। ঢাকা শহরের এখানে-সেখানে এক ধরনের বিশেষ রঙিন পোস্টার চোখে পড়ে। পোস্টারগুলোর ভাষার একটা নমুনা দিচ্ছি (শুধু নাম ও পদবিটা আমার দেয়া)- বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক আলতাফ হোসেন ভাইকে আওয়ামী লীগ ঢাকা দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করায় জননেত্রী, দেশরত্ন, গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। পোস্টারটিতে শুধু আলতাফ ভাইয়েরই ছবি শোভা পাচ্ছে না, উপরের দিকে রয়েছে বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়েরও ছবি। বিএনপির ক্ষেত্রে পোস্টারের ভাষায় বঙ্গবন্ধুর জায়গায় শহীদ জিয়া এবং ছবিগুলো পাল্টে হয়ে যাবে জিয়া, মিসেস জিয়া এবং তারেক রহমানের। বলা বাহুল্য, এসব পোস্টারে রাজনীতি নেই, তারপরও যে চাররঙা পোস্টারগুলো হাজার হাজার ছাপানো হয়েছে, তা এক বড় বিনিয়োগ- চাঁদা আদায়ে তাতে সুবিধা হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ী, টেন্ডার কমিটি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাসহ সম্পদশালীদের দৃষ্টিগোচর করাই এসব পোস্টারের উদ্দেশ্য। একদিন দেখি, একটি পোস্টার বিরুদ্ধবাদীরা এমনভাবে ছিঁড়েছে যে, বঙ্গবন্ধুর মাথা তার দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে কলেজ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত আমার একটি গল্পের কথা মনে পড়েছিল। তখন মার্কসবাদী লেনিনবাদী রাজনীতি করি। গল্পটির নাম ছিল ‘লেনিনের লজ্জা’। উত্তম পুরুষে লেখা গল্পটিতে আমি একটি ঘুপচি দোকানে চা খেতে বসেছি। দোকানটির বেড়ার ভেতরের অংশগুলো বিভিন্ন সংবাদপত্রের পাতা দিয়ে সাঁটিয়ে সাজানো হয়েছে। তো এমন একটি পাতা ছিল চিত্রালী নামের সিনে-পত্রিকাটির প্রথম পাতা, তাতে প্রচ্ছদকন্যা হিসেবে ছাপা হয়েছে তখনকার আবেদনময়ী নায়িকা অলিভিয়া গোমেজের ছবি। স্কার্ট ও হিল জুতাপরা অলিভিয়ার পায়ের ওপর পা তোলা আধা-শোয়া অবস্থার ছবি। আমি চোখ দুটো ছবিটির এপাশ থেকে ওপাশে নিতেই দেখি, অলিভিয়ার হিলপরা একটি পা পাশেই সাঁটানো প্রগতি প্রকাশনী থেকে ছাপানো একটি পোস্টারে থাকা লেনিনের মুখের ওপর লাথি দিচ্ছে! লেনিনের লজ্জিত মুখের একটি বর্ণনা দিয়ে শেষ করেছিলাম গল্পটা। দুই নেত্রীর অঞ্জলি ভরে উপচে পড়ছে কৃতজ্ঞতা। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া- একটা করে কমিটি হচ্ছে আর কৃতজ্ঞতার ঢেউ আছড়ে পড়ছে গণভবন ও গুলশানে। কৃতজ্ঞ হতে পারছে না শুধু সাধারণ মানুষ।
এটা ঠিক, কোথায় কীভাবে কোন্ লিলিপুট কমিটিতে স্থান পেয়ে গালিভারের আকার ধারণ করছে, তার সব খবর নেত্রীদ্বয়ের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। কিন্তু নেতা হওয়ার প্রক্রিয়াটি তো তারা জানেন খুব। রাজনীতি করার পূর্বশর্ত হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক সনদের কোনো চল নেই মানি, এটাও মানি যে, জনগণই রাজনীতির প্রকৃত প্রশিক্ষণশালা; কিন্তু তাই বলে কি এমন কেউ এমপি হয়ে যেতে পারেন, যিনি ছাত্রছাত্রীদের উপদেশ দেন- তোমরা শেকসপিয়রের মতো বিজ্ঞানী হও! এই খবর পড়ার পর লিখেছিলাম, তাকে মাফ করে দেয়া যায়, কারণ তিনি দয়া করে বলেননি- তোমরা গান্ধীর মতো সন্ত্রাসী হও। আমি কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি, দেশের সব উপজেলার ছাত্রলীগ সভাপতিদের সঙ্গে কথা বললে দেখা যাবে, তাদের অন্তত আশি শতাংশেরই টাইপটা একই। বাচ্চা সামন্তপ্রভুদের মতো তাদের কথাবার্তা, অহংকারে মাটিতে পা পড়ে না, ছাত্রদল তাদের কাছে প্রজাস্বরূপ। আর রাজনীতির জ্ঞান বলতে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, যুদ্ধাপরাধ ইত্যাদি। সব সভাপতি একরকম হয় কীভাবে! আসলে আল্লায় মেলায়। ক্ষমতা কিংবা বড় আন্দোলন ছাড়া বড় নেতার জন্ম হয় না। জিয়া ও এরশাদ নেতা হতে পেরেছিলেন ক্ষমতার বলে। আশির দশকের আন্দোলন তৈরি করেছে হাসিনা-খালেদাকে, ’৬৯-এর আন্দোলন নেতা বানিয়েছিল তোফায়েলকে, ’৭০ বানিয়েছিল আসম আবদুর রবকে, ’৯০-এ নেতা হয়েছিলেন আমানউল্লাহ আমান। ক্ষমতা ও বড় আন্দোলন ছাড়াও নেতা হওয়া যায়, সেক্ষেত্রে ব্যক্তিটিকে হতে হবে রাজনীতির অসাধারণ কারিগর। বঙ্গবন্ধু যেমন। ক্ষমতা কিংবা বড় আন্দোলন কিছুরই প্রয়োজন পড়েনি; তার আগেই নেতা বনে গিয়েছিলেন তিনি। এদেশে সবসময়ই যে ক্ষমতার প্রতি মোহ এবং আন্দোলন অথবা আন্দোলন রচনার একটা প্রয়াস লক্ষ করা যায়, তার কারণ এর মধ্য দিয়ে কর্মী হতে চায় নেতা, নেতা হতে চায় আরও বড় নেতা। তা না হলে উপনিবেশে বাস করতাম যখন, তখনকার চেয়ে স্বাধীন দেশে আন্দোলনের এত প্রাচুর্য কেন, কেন হবে সেই আন্দোলন এত বহুমাত্রিক? তা-ও বোঝা যেত, যদি আন্দোলনগুলোয় নির্দলীয়দের অংশগ্রহণ থাকত। দেশে রাজনৈতিক কর্মী ও নেতার সংখ্যা এত বেশি যে, মিটিং-মিছিল করতে নির্দলীয়ের প্রয়োজন পড়ে না। নেতা হওয়ার এই প্রক্রিয়া বন্ধ হওয়া চাই।
পুনশ্চ : ফেসবুক নিয়ে লেখাটায় ছিল- টেক্সট ও ভয়েস কলের মাধ্যমে যে যোগাযোগ, তা টোটাল কমিউনিকেশনের যথাক্রমে ৭ ও ৪৫ শতাংশ। এক পাঠক এ ধরনের কমিউনিকেশনে বিভ্রান্তির শিকার হয়ে কীভাবে বিপদগ্রস্ত হয়েছিলেন, সহানুভূতি উদ্রেক করার মতো বর্ণনা দিয়েছেন তার। তাকে বলি, দেখুন তো আমার প্রতি সহানুভূতি জাগে কিনা। সম্প্রতি আমি কর্মব্যস্ত এক বিশিষ্ট ব্যক্তিকে একটি অনুষ্ঠানে দাওয়াত করেছিলাম। দাওয়াতটা আন্তরিক ছিল বলে তিনি ‘না’ করলেন না। কিন্তু আমি বুঝলাম তিনি আসবেন না। আরও বুঝলাম, এসব ক্ষেত্রে যা ঘটে থাকে, এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হবে না। প্রথমে আমার কাছে একটা ‘হঠাৎ’-এর ঝাপটা আসবে, অর্থাৎ অনুষ্ঠানের ঠিক আগে আগে হঠাৎ করেই তার একটা সমস্যা তৈরি হবে। তিনি সেটা জানাবেন এবং ঠিক তখনই নিরাশ করবেন না, বলবেন তিনি চেষ্টা করছেন। একদম শেষ মুহূর্তে একটা টেক্সট পাব আমি, সেখানে থাকবে- সম্ভবত তিনি আসতে পারছেন না। ঘটলও তাই। প্রথমে জানলাম, হঠাৎ তার বিশেষ ধরনের গেস্ট চলে এসেছে, চেষ্টা করছেন। অর্থাৎ প্রথমেই ‘শক’ করতে চাইলেন না। এরপর অনুষ্ঠানের মাঝখানে এলো সেই টেক্সট- গেস্টরা সহসাই উঠবে বলে মনে হয় না। পাঠক বুঝুন, তখনও সম্ভাবনা! গেস্ট তো আসতেই পারে, আসেও; কিন্তু এ যুগে হঠাৎ করে গেস্ট আসে না, এমনকি রোগী দেখতেও, কারণ ওই সময় তিনি ডাক্তারের কাছেও থাকতে পারেন। কারও বাসায় যাওয়ার আগে আগাম ফোনকল এখন রাজধানীবাসীর এক অনিবার্য সংস্কৃতি। তারপরও আমি তাকে বিশ্বাস করেছি। ওই যে, আমি তো ৭ ও ৪৫ শতাংশের ঊর্ধ্বে উঠতে পারব না। এটা যে বিজ্ঞানভিত্তিক ফাইন্ডিংস। আরেকটু বলি, আমি একবার নাইট কোচে রংপুর যাচ্ছি। পাশের সিটের লোকটি ফোন ধরেই বলছেন- জ্বি স্যার, আমি লঞ্চে। বরিশাল যাইতেছি!
মাহবুব কামাল : সাংবাদিক
mahbubkamal08@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.