হলমার্কে ঋণ বিতরণ হয়নি লুণ্ঠন হয়েছে
শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক স্বীকার করেছে, বাস্তবে হলমার্ক গ্রুপকে ঋণ বিতরণ করা হয়নি, হয়েছে লুণ্ঠন। এ জন্য ব্যাংকের প্রকৃত খেলাপি ঋণ প্রায় ৫০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, সোনালী ব্যাংক হলমার্ক গ্রুপকে যে পরিমাণ ঋণ দিয়েছে তার বিপরীতে সমপরিমাণ সম্পদ নেই। এ ছাড়া খেলাপি ঋণের কারণে বর্তমানে ব্যাংকের ২০টি শাখার অবস্থা খুবই নাজুক। এসব শাখার প্রায় ৮৪ শতাংশই খেলাপি ঋণ। বুধবার বিকালে সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ব্যাংকটির সর্বশেষ অবস্থা জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ। সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকের ডিএমডি এবং জিএমরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তিনি জানান, ২০টি শাখা ছাড়াও আরও ৫টি শাখার খেলাপি প্রায় ৫৪ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এ টাকা আদায়ের প্রক্রিয়া এখন অনেকখানি বন্ধ। কারণ এ ঘটনায় জড়িত বেশ কিছু কর্মকর্তা পলাতক। কেউ গ্রেফতার হয়েছেন, আবার কেউ করেছেন দেশত্যাগ। ২০১২ সালে সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে অর্থ আত্মসাতের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের কারও সাজা হয়নি। হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভীর মাহমুদ জেলে থাকলেও প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম জামিনে আছেন। ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, সোনালী ব্যাংকের কথা এলেই ঘুরেফিরে হলমার্কের কথা উঠে আসে। ২০১০, ২০১১ এবং ২০১২ সালে পুরো ব্যাংকিং সেক্টরসহ শেয়ারবাজার এবং আবাসন খাতে বড় ধস নেমেছে। এ সময় ব্যাংকিং সেক্টরে একটা সুনামি হয়ে গেছে। হলমার্কের ঘটনা এবং বেসিক ব্যাংকের ঘটনাসহ সব খারাপ জিনিস তখনই ঘটেছে। তিনি বলেন, সোনালী ব্যাংকে বর্তমানে আমানত আছে ১ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৩৮ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যাংকটির দৃশ্যমান খেলাপি ১০ হাজার কোটি টাকা। ৭ হাজার কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করা হয়েছে।
আরও ২ হাজার কোটি টাকা আটকে আছে পুনঃতফসিলের রিট মামলায়। বিতরণ করা ৩৮ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ১৯ হাজার কোটি টাকাই নেই। তাই যে করেই হোক খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমাতে হবে। তবে ১২১০টি শাখার মধ্যে ৬০০ শাখার খেলাপি ঋণ প্রায় ১০ শতাংশের কাছাকাছি থাকায় বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তিনি। খেলাপি ঋণের কারণ উল্লেখ করে ব্যাংকটির এমডি বলেন, কিছু দুষ্ট ঋণগ্রহীতার কাছে ব্যাংকের টাকা আটকে আছে। এটা বাদ দিলে মোটের ওপর কিন্তু ঋণ খেলাপি খুব বেশি নয়। মূল সমস্যা হচ্ছে বড় শাখায় বড় ঋণগ্রহীতাদের কাছে ঋণগুলো আটকে আছে। তবে ঋণ আদায়ে নানা রকম পদ্ধতি আছে। সুদ মওকুফ পদ্ধতি, পুনঃতফসিল পদ্ধতি এবং আরেকটা পদ্ধতি হল মামলা। যখন ক্ষুদ্র গ্রাহকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়, তখন সফলতা আসে। এছাড়া টাকা আদায়ের হারও ভালো। কিন্তু যখন বড় ?ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে টাকা আদায় করতে যাওয়া হয় তখন খুবই অসহায় হয়ে যাই। তারা আদালতে রিট মামলার আশ্রয় নেয়। তিনি বলেন, এ রিটের চাপ থেকে আমরা বের হতে পারি না। খেলাপি ঋণ থেকে বের হতে হলে রাষ্ট্রীয়ভাবেই কাজ করতে হবে। বিশেষ করে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আসতে হবে। তার মতে, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে হলমার্ক গ্রুপের ওপর প্রশাসক বসানো উচিত। এ বিষয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। তিনি বলেন, মামলায় আটকে আছে ১৪ হাজার কোটি টাকা। এসব টাকা আদায়ের ক্ষেত্রে আইনগত সহায়তা বাড়ানো দরকার। পাশাপাশি স্বতন্ত্র আদালত গঠন করা যায় কিনা তা ভেবে দেখতে হবে।
No comments