তৃণমূল গোছাতে পারছে না মহানগর আওয়ামী লীগ
তৃণমূল এখনো গোছাতে পারেনি ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। এক বছর পার হলেও থানা-ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটিই গঠন করতে পারেনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রাণ খ্যাত মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ কমিটি। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মহানগর নেতাদের থানা-ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে একাধিকবার নির্দেশ দিলেও তা উপেক্ষা করার অভিযোগ উঠেছে। সর্বশেষ গত ২২ মে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মহানগর নেতাদের ৩১ মে’র মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে কেন্দ্রে জমা দেয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পার হলেও যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া পর্যন্ত শেষ করতে পারেননি তারা। এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ নয়া দিগন্তকে বলেন, অবস্থা ভালো, রেডি হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কত দিন লাগবে বলা যাচ্ছে না। যাচাই-বাছাই চলছে। এরপর ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং হবে, তারপর বলা যাবে। আর মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান আরো সপ্তাহ খানেক সময় লাগবে বলে জানান। তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, সব থানার কমিটি এখনো জমা পড়েনি। তবে মোটামুটি কাজ শেষ। যাচাই-বাছাই চলছে। সপ্তাহ খানেক সময় লাগবে। ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনের তিন বছর তিন মাস পর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে দুই ভাগে বিভক্ত করে ২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের তখনকার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। একই সাথে রাজধানীর ৪৫টি থানা এবং ১০০টি ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নামও ঘোষণা করা হয়। এরপর সাত মাসের মাথায় একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর-দেিণর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দেিণর অন্তর্গত ৪৫টি থানা এবং ১০০টি ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনো ঘোষণা হয়নি।
গত ২২ মে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়ে বলেন, আগামী ৩০ মে’র মধ্যে কমিটি দেয়ার কথা থাকলেও আমি আরো এক দিন বাড়িয়ে ৩১ মে পর্যন্ত সময় দিলাম। আপনারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে জমা দেবেন। এর আগে গত ৭ মার্চ ও গত ২ জানুয়ারি দুই দফায় মহানগর নেতাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, থানা ও ওয়ার্ড পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের লক্ষ্যে উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ৯টি বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। ওই টিম তৃণমূল থেকে যাচাই-বাছাই করে একটি খসড়া কমিটি করবে। ওই খসড়া কমিটি মহানগর যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত করে ঘোষণা করবে। এবার গঠনতন্ত্রে কিছু পরিবর্তন আসায় থানা ও ওয়ার্ডের কমিটির আকার বৃদ্ধি পেয়েছে। থানা শাখায় ৬৭ থেকে ৭১ করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের কমিটি গঠন নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে মাতুয়াইল ইউনিয়ন নেতাকর্মীদের মধ্যে সভাপতি সমর্থকেরা ডেমরা থানা ও সাধারণ সম্পাদক সমর্থকেরা যাত্রাবাড়ী থানায় কাজ করতে আগ্রহী। সীমানা জটিলতা নিরসনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা খন্দকার এনায়েত উল্যাহকে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক একটি চিঠিও দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও এমপি-মন্ত্রীদের চাপের মুখে হাইব্রিড নেতারা কিছু থানা ও ওয়ার্ড কমিটিতে পদ পেতে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সেভাবেই একাধিক থানা কমিটির খসড়া চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এরপরও থানা-ওয়ার্ডের নেতৃত্ব নিয়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব লেগেই আছে। এ প্রসঙ্গে যাত্রাবাড়ী থানার ৪৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম অনু নয়া দিগন্তকে বলেন, কমিটি গঠনের কাজ চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে মাতুয়াইল ইউনিয়নের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। যার ফলে পুরো থানা কমিটি জমা দেয়ার কাজ আটকে আছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সৎ, যোগ্য ও মাঠের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। পল্টন থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তবা জামান পপি নয়া দিগন্তকে বলেন, আমাদের থানার কমিটি গঠনের কাজ শেষ হয়েছে। যারা দলের দুঃসময়ে পাশে ছিল, আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিয়েছে, ওই সব ত্যাগী নেতাকে মূল্যায়ন করার চেষ্টা করেছি। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে একটু ব্যতিক্রম হয়েছে। যেমন দলে একেবারে নতুন এবং কিছু হাইব্রিড নেতাকে কমিটিতে রাখতে হয়েছে।
No comments