কাভার্ড ভ্যানের সিলিন্ডার ফেটেই এত প্রাণহানি
ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলায় বাস ও কাভার্ড ভ্যানের সংঘর্ষের ঘটনায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণজনিত অগ্নিকাণ্ডেই ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনার জন্য সিলিন্ডার বিস্ফোরণকেই দায়ী করেছে। পুলিশ বলছে, কাভার্ড ভ্যানটি বেশ কিছু গ্যাস সিলিন্ডার পরিবহন করছিল। সংঘর্ষে সেসব সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এতসংখ্যক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার রাত ১১টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে উপজেলার গজারিয়া এলাকায় বাস ও কাভার্ড ভ্যানের সংঘর্ষে ১৩ জন নিহত হয়েছে। ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এজাজুল ইসলাম আজ শনিবার প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, কাভার্ড ভ্যানটিতে বেশ কিছু গ্যাস সিলিন্ডার ছিল। সংঘর্ষে সিলিন্ডারগুলো ফেটে যায়। এতে বিস্ফোরজনিত অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়েই ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে সংঘর্ষে নিহত ১৩ জনের মধ্যে আজ তিনজনের পরিচয় জানা গেছে। বাকিদের পরিচয় শনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা লাশ শনাক্ত করতে ভিড় করেছেন। তবে প্রশাসন বলছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজনের লাশ প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা হয়েছে।
স্বজনেরা লাশগুলো তাদের পরিবারের বলে দাবি করলেও প্রশাসন এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেনি। স্বজনদের দাবির সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজনকে ডা. গোলাম রসুল বলে দাবি করেছেন হাফিজুর রহমান নামের একজন। প্রথম আলোকে তিনি জানান, নিহত ডা. গোলাম রসুল তাঁর ছোট বোনের স্বামী। তিনি রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় থাকতেন। কল্যাণপুরে ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ছিলেন তিনি। তাঁর গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরে। গতকাল ক্লিনিক নির্মাণের জন্য জমি দেখতে নড়াইল এসেছিলেন। রাতে ঢাকায় ফেরার পথে দুর্ঘটনার শিকার হন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে আরও যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে, তাঁদের একজন হলেন কাভার্ড ভ্যানের চালক হেমায়েত হোসেন (৪০)। তাঁর বাড়ি নড়াইলের বাসি গ্রামে। অপরজন হলেন কাভার্ড ভ্যানের সহকারী মো. জুয়েল (২০)। নড়াইলের গোবরা এলাকায় তাঁর বাড়ি। গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মকর্তা তরুণ মণ্ডল আজ প্রথম আলোকে জানান, দুর্ঘটনাজনিত অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে ৩৩ জন বাসযাত্রী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসে। এর মধ্যে চারজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়েছে। দুজন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. কামরুজ্জামান আজ প্রথম আলোকে বলেন, নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা লাশ শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন। প্রশাসন পরিচয় নিশ্চিত হয়ে মানবিক দিক বিবেচনায় লাশগুলো পরিবারের কাছে দ্রুত হস্তান্তর করবে। লাশগুলো বাড়িতে পৌঁছানোর ব্যয় বহন করবে প্রশাসন। এ ঘটনায় হাইওয়ে পুলিশ বাদী হয়ে নগরকান্দা থানায় একটি মামলা করেছে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাত ১১টার দিকে নগরকান্দার চরযশোরদী ইউনিয়নের গজারিয়া এলাকায় ঢাকাগামী যাত্রীবাহী একটি বাস ও খুলনাগামী একটি কাভার্ড ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে বাস ও কাভার্ড ভ্যানের চালকসহ ১৩ জন নিহত হয়। হানিফ পরিবহনের ওই বাস ৩৯ জন যাত্রী নিয়ে নড়াইলের লোহাগড়া হয়ে ঢাকা যাচ্ছিল।
No comments