কেশবপুরের সেই অবৈধ ঘের প্রশাসনের সহায়তায় উচ্ছেদ
যশোরের কেশবপুর উপজেলার সোনাতলা মাঠে জোর করে তৈরি করা মাছের ঘেরের বেড়িবাঁধ উচ্ছেদ করেছে উপজেলা প্রশাসন। প্রশাসনের সহায়তায় এলাকার হাজারখানেক নারী-পুরুষ গতকাল শুক্রবার সমবেত হয়ে বেড়িবাঁধটি অপসারণ করে। এলাকার নয়টি গ্রামের নারী ও পুরুষেরা ঝুড়ি-কোদাল হাতে নিয়ে গতকাল সকাল থেকে পাশের গোপালপুর গড়ের মাঠ এলাকায় সমবেত হতে থাকে। তারা ‘ঝুড়ি কোদাল হাতে নাও, অবৈধ ঘের গুঁড়িয়ে দাও’ স্লোগান দিতে থাকে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরীফ রায়হান কবির ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. কবীর হোসেন। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ঘটনাস্থলে কেশবপুর থানা থেকে একদল পুলিশ মোতায়েন করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, ইউএনও ঘের উচ্ছেদের বিষয়ে যশোরের জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবীরের নির্দেশনা পড়ে শোনান। এরপর উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশে দেওয়া এক বক্তব্যে ইউএনও বলেন, ‘আপনাদের লিখিত অভিযোগ তদন্ত করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কবীর হোসেন। তদন্তে ঘেরের মালিক সেলিম উজ জামান (আসাদ) কোনো চুক্তিপত্র না করেই এলাকার মানুষের জমি দখল করে ঘের নির্মাণ করেন বলে প্রমাণ পান তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক এই ঘের উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছেন। এখন আপনারাই এই অবৈধ ঘেরের বেড়িবাঁধ অপসারণ করবেন।’ এ সময় উপস্থিত লোকজন ঝুড়ি ও কোদাল হাতে নিয়ে বেড়িবাঁধ কাটা শুরু করেন। তাঁরা গতকাল তিন শ ফুট বাঁধ কেটেছেন।
মির্জানগর গ্রাম থেকে এসেছিলেন গৃহবধূ বিলকিস আনজুয়ারা বেগম। তিনি বলেন, ‘এই জমির ফসল খেয়ে আমরা বেঁচে আছি। এই ঘের হলে আমরা না খেয়ে মরব। তাই পুরুষদের সঙ্গে আমরাও কোদাল হাতে বেড়ি উচ্ছেদে এসেছি।’ আজ শনিবার সকাল নয়টায় লোকজন আবার সমবেত হয়ে ঘের কাটা শুরু করবে। পুরো বেড়িবাঁধ উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত এ কাজ চলবে। ভালুকঘর এলাকার কৃষক হায়দার আলী বলেন, এই মাঠে ভালুকঘর ছাড়াও এলাকার সরাপপুর, শ্রীরামপুর, মির্জানগর, চাঁদড়া, রঘুরামপুর, বরনডালি, বাঁশবাড়িয়া ও কাস্তা গ্রামের মানুষের জমি রয়েছে। তাঁদের দুই শ বিঘা জমি জোর করে দখল করে ঘের তৈরি করেছিলেন মালিক সেলিম। তবে জীবন থাকতে তাঁরা এখানে ঘের করতে দেবেন না। সোনাতলা মাঠে কৃষকের জমি দখল করে মাছের ঘের তৈরি নিয়ে গত ২৭ জানুয়ারি প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে জমির কয়েকজন মালিক অভিযোগ করেন, প্রতিবাদ করায় ঘেরের মালিকের লোকজন তাঁদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে ও মারধর করছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এলাকার লোকজন প্রশাসন ও পুলিশের দ্বারস্থ হয়। উপজেলা প্রশাসন ২ ফেব্রুয়ারি ঘের নির্মাণ বন্ধ করে দিয়ে আসে। এরপরও ঘের তৈরির কাজ অব্যাহত ছিল। পরে এলাকাবাসী যশোর জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবীরকে লিখিতভাবে অভিযোগ দেয়। তিনি ঘের উচ্ছেদে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। কেশবপুরের ইউএনও প্রথম আলোকে বলেন, এরপরও কেউ যদি এই ঘেরের পক্ষে অবস্থান নিয়ে নিরীহ মানুষদের হয়রানি করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
No comments