নৌকায় লাশ নিতে হয় কবরে
নাটোরে গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের চলনবিল-অধ্যুষিত একটি গ্রাম বিলহরিবাড়ী। আত্রাই নদের শাখা প্রবহমান নালা (মরা আত্রাই) বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে গ্রামটিকে। নালার ওপর একটি সেতুর দাবি থাকলেও উপেক্ষিত হচ্ছে বছরের পর বছর। বিশেষ করে উত্তর পারের কেউ মারা গেলে কলাগাছের ভেলা কিংবা খেয়া নৌকায় লাশ দক্ষিণ পারের হরদমা গ্রামের করবস্থানে নিয়ে দাফন করতে হয়। তখন আপনজন হারানোর কষ্ট আরও বহুগুণ বাড়ে শেষযাত্রার এ ভোগান্তিতে। সেই সঙ্গে উত্তর পারের অধিবাসীদের পারাপারের নিত্য ভোগান্তি তো আছেই। সরেজমিনে ৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে দেখা যায়, নৌকায় করে নিয়ে আসা হচ্ছে একটি লাশ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বিলহরিবাড়ী গ্রামের প্রায় শতবর্ষী রহিমউদ্দিন ব্যাপারী মারা গেছেন। নৌকায় করে প্রায় তিন কিলোমিটার দূর থেকে দক্ষিণ পারের হরদমা গ্রামে লাশ আনা হয়েছে দাফন করতে। লাশের সঙ্গে শবযাত্রাবাহী নৌকার কয়েকজন বলেন, একটি সেতু ও তিন কিলোমিটার কাঁচা সড়কের আক্ষেপ এই বিলহরিবাড়ী গ্রামের উত্তরপাড়াবাসীর। সুবিধাবঞ্চিত এসব মানুষের দুঃখগাথা গল্প পৌঁছায় না উচ্চপর্যায়ে। বেঁচেও মরার মতো দিন কাটাতে হয় তাদের। এ দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণ চেয়ে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সম্প্রতি গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে জনপ্রসাশন মন্ত্রালয়ে একটি লিখিত আবেদন করা হয়েছে। তারা ওই কাঁচা সড়ক ও সেতু নির্মাণের ব্যাপারে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, প্রবহমান ওই নালা বিলহরিবাড়ী-হরদমা গ্রামের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার ফলে গ্রামটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে। দুর্গাপুর-যোগেন্দ্রনগর রাবার ড্যাম হয়ে একটি পাকা সড়ক ওই নালার দক্ষিণ পারে এসে শেষ হয়েছে। নালার দক্ষিণ পারে জনবহুল হরদমা গ্রাম। এখানে রয়েছে প্রাথমিক-মাধ্যমিক স্কুল, মাদ্রাসা, কবরস্থান ও বাজার। সুবিধাবঞ্চিত উত্তর পারের মানুষের শিক্ষা, চিকিৎসাসহ যাবতীয় প্রয়োজনে এসব প্রতিষ্ঠানে আসতে হয়। বিলহরিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলে, বিদ্যালয়ে যেতে কাঁচা সড়ক ও নৌকায় পার হতে হয়। কাদাযুক্ত পথ পাড়ি দিতে গিয়ে অনেক সময় পড়ে যায়। এ জন্য প্রতিদিন বাড়তি পোশাক নিয়ে তারা বিদ্যালয়ে আসে। বিলহরিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোজাফফর হোসেন বলেন,
বিলহরিবাড়ি গ্রামের সড়কটি কাঁচা ও তুলনামূলক নিচু হওয়ায় বছরজুড়েই পানি জমে থাকে। এতে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসতে বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। তা ছাড়া বর্ষাকালে বিদ্যালয়ে উপস্থিতি কম হয়। তা ছাড়া আত্রাই নদের দুর্গাপুরযোগেন্দ্র নগর পয়েন্টে রাবার ড্যাম থাকায় বর্ষা ও শুষ্ক মৌসুমেও পানি থাকায় নালাটি বছরজুড়েই প্রবহমান থাকে। এ কারণে শত শত ছাত্রছাত্রী ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পারাপার করে। স্থানীয় ইউপি সদস্য বেলাল হোসেন বলেন, ‘সড়কটির বেহালের কারণে কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য পরিবহনে দুর্ভোগ বাড়ে। বিশেষ করে ইরি-বোরো মৌসুমে ধান বহনকারী গরু ও মহিষের গাড়ি কোনোরকমে সড়ক দিয়ে যাতায়াত করলেও ওই নালা পারাপারে দুর্ভোগ দেখা দেয়। তা ছাড়া প্রসূতি ও অসুস্থ ব্যক্তিরা সময়মতো চিকিৎসাসেবা পর্যন্ত নিতে পারে না। বিয়াঘাট ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক বলেন, সেতু না থাকায় বিলহরিবাড়ী গ্রামের প্রায় ৪ হাজার মানুষ দুর্ভোগে রয়েছে। দুর্ভোগ এড়াতে গ্রামের একমাত্র কাঁচা সড়কটি পাকা করার জন্য অগ্রাধিকার তালিকায় রাখা হয়েছে। সেতু নির্মাণের ব্যাপারে সাংসদ আবদুল কুদ্দুসকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। আবদুল কুদ্দুস বলেন, অচিরেই ওই গ্রামের মানুষের সুবিধার্থে বিলহরিবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় পয়েন্টে একটি সেতু নির্মাণ করা হবে। সেতু হলেই কাঁচা সড়কটিও পাকা করা হবে।
No comments