আরএসএসের ছায়ায় বিজেপি by কুলদীপ নায়ার
ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও রাষ্ট্রীয়
স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে যদি কারও মধ্যে বিন্দুমাত্র
সন্দেহ থাকে, তা হলে নরেন্দ্র মোদি নিজেই সেটা দূর করেছেন। তিনি তাঁর
গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের আরএসএস-প্রধান মোহন ভাগওয়াতের সামনে হাজির করে
নিজেদের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করতে
বলেছেন। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অস্বস্তিবোধ নেই, পুরো অনুষ্ঠানটি একটি
সংবাদ চ্যানেলে সম্প্রচারিত হওয়ায় সেটা বোঝা গেছে। হ্যাঁ, মোদি আরএসএসের
রাজনৈতিক শাখা বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগে প্রথমোক্ত সংগঠনটির উৎসাহী প্রচারক
ছিলেন।
বিজেপি আরএসএসের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারটা লুকিয়ে রাখতে চায়। কারণ, তারা বোঝে, গড়পড়তা ভারতীয়দের মধ্যে আরএসএসের গ্রহণযোগ্যতা নেই। এই প্রশ্নের কারণেই জনতা পার্টি ভেঙে গেছে। বিজেপির পূর্ববর্তী রূপ জন সংঘ জনতা পার্টিতে যোগ দেওয়ার আগে আরএসএসের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করার অঙ্গীকার করেছিল। তারা গান্ধীবাদী জয়প্রকাশ নারায়ণকে কথা দিয়েছিল, জনতা পার্টিতে ঠাঁই পেলে তারা আরএসএসের সঙ্গ ত্যাগ করবে। কিন্তু বাস্তবে এই সম্পর্ক ত্যাগের ব্যাপারটা ঘটেনি, তারা জয়প্রকাশ নারায়ণের বিশ্বাস ভঙ্গ করেছিল।
মনে পড়ে, আমি জয়প্রকাশ নারায়ণকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তিনি কেন আরএসএসের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ না করা সত্ত্বেও জন সংঘকে জনতা পার্টিতে স্থান দিয়েছিলেন। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, জন সংঘ কথা না রেখে তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করেছিল।
এট নিশ্চয়ই সত্য হবে, কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় জন সংঘ ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি পেয়েছিল। জয়প্রকাশ যে গুরুতর ভুল করেছিলেন, তার জন্য জাতিকে বড় মূল্য দিতে হয়েছে, আর গতকালের জন সংঘ আজ বিজেপি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, লোকসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে।
এই পরিস্থিতি থেকে কংগ্রেসের লাভবান হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু পরিবারতন্ত্র নিয়ে দলটির আচ্ছন্নতা এবং রাহুলকে নিজের উত্তরসূরি বানানোর ব্যাপারে সোনিয়া গান্ধীর পীড়াপীড়ির কারণে তারা এ সুযোগ হারিয়েছে। মুসলমানরা দলটির নির্ভরযোগ্য ভোটব্যাংক ছিল, দলটি তাদের হারিয়েছে। সমাজ এখন আঞ্চলিক দলগুলোর ওপর নির্ভর করতে শুরু করেছে, এমনকি ওয়াসিকে সমর্থন করার চিন্তাও নাড়াচাড়া করছে। ওয়াসি নিজেকে মুসলমানদের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছেন, ঠিক যেমন দেশভাগের আগে মুসলিম লীগ চেষ্টা করেছিল। সমাজ সংকীর্ণ রাজনীতির কাছে ফেরত যেতে চায় না।
যা হোক, টেলিভিশনের পর্দায় যখন লোকে দেখল আরএসএস-প্রধান মোহন ভাগওয়াতের সামনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজের মন্ত্রীদের হাজির করেছেন, তখন বোঝা গেল, নেতা কে। এটা সত্য যে ভোটাররা মোদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়েছে, কিন্তু নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি কখনো বলেননি, দেশশাসনের বেলায় আরএসএসও তাদের সঙ্গে থাকবে।
সত্য হলো, নির্বাচনী প্রচারণার সময় মোদি সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে মুসলমানদের আশ্বস্ত করেছিলেন, ইতিপূর্বে পার্টির অবস্থান যা হোক না কেন, নতুন স্লোগান হবে, সব ক্যা সাথ, সব ক্যা বিকাশ। কিছু জনসভায় তিনি একটু ভিন্নপথে গিয়ে বলেছিলেন, তিনি মুসলমানদের সবচেয়ে ভালো রক্ষক হবেন।
স্বাধীনতাসংগ্রামের ও বহুত্ববাদের দর্শনের প্রতি আবেগের ঘাটতি দেখে মনোবেদনা সৃষ্টি হয়। এমনকি আধুনিক ভারতের স্থপতি জওহরলাল নেহরুর নাম পর্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে
সত্যি কথা বলতে, এখন পর্যন্ত তাঁর কাজের মধ্যে বৈষম্যমূলক কিছু দেখা যায়নি। যদিও এটা দৃশ্যমান যে আরএসএস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে গেরুয়াকরণ করছে আর গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নিজেদের লোক বসাচ্ছে। এতে বোঝা যায়, মোদি খুব ধীরগতিতে ও অবিশ্রান্তভাবে আরএসএসের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। এটাও পরিষ্কার যে শাসনব্যবস্থায় মুসলমানদের ভূমিকা আর নেই। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় মাত্র একজন মুসলমান মন্ত্রী আছেন, তা-ও আবার গুরুত্বহীন মন্ত্রণালয়ে। তা ছাড়া, সরকারের ভেতরে ও বাইরে এমন ধারণা আছে যে শাসনব্যবস্থায় একরকম মৃদু হিন্দুত্ব কায়েম হয়েছে।
আরএসএসের লক্ষ্য হচ্ছে হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা, সেটা হয়তো এখন দূর অস্ত মনে হতে পারে। কিন্তু মোদির হাতে এখনো সাড়ে তিন বছর সময় রয়েছে। তিনি ও আরএসএস-প্রধান এখন প্রায়ই জনসমক্ষে মিলিত হচ্ছেন। তাঁদের কাজকর্ম দেখে মনে হচ্ছে, তাঁরা নাগপুরে আরএসএস সদর দপ্তরে প্রণীত পরিকল্পনা অনুসারে কাজ করে যাচ্ছেন। বিজেপি ও তার ছাত্রসংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের স্বাধীন চিন্তা নেই, তারা শুধু নাগপুরে রচিত পাণ্ডুলিপি পাঠ করে, আর কিছু নয়।
এর আবার নানা রকম বহিঃপ্রকাশ আছে। কখনো কখনো সেটা মাংসের ওপর নিষেধাজ্ঞা রূপে হাজির হয়, কখনো পোশাক বিধান এবং কখনো বিদ্যালয়ে সংস্কৃত শিক্ষা ও কখনো সেখানকার অ্যাসেম্বলিতে সকালের বিশেষ প্রার্থনা বাধ্যতামূলক করার মধ্য দিয়ে তার প্রকাশ ঘটে। দিল্লির নেহরু স্মৃতি জাদুঘর সংস্কার করার সিদ্ধান্তও এর একটি অংশ। ব্রিটিশ তাড়ানোর আন্দোলনে যেখানে আরএসএসের টিকিটি পর্যন্ত দেখা যায়নি, সেখানে এখন তারা সব স্থান দখল ও নিজেদের স্বাধীনতার চ্যাম্পিয়ন হিসেবে প্রদর্শন করতে চায়।
স্বাধীনতাসংগ্রামের ও বহুত্ববাদের দর্শনের প্রতি আবেগের ঘাটতি দেখে মনোবেদনা সৃষ্টি হয়। এমনকি আধুনিক ভারতের স্থপতি জওহরলাল নেহরুর নাম পর্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে, যেমন এরা নেহরু ও ইন্দিরা গান্ধীর ছবি ডাকটিকিট থেকে মুছে ফেলছে। শিক্ষা খাতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এরা ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা করছে, পাঠ্যবই নতুন করে লিখছে। সেখানে স্বাধীনতাসংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ভূমিকা খাটো করা হচ্ছে। ফলে এতে বিস্ময়ের কিছু নেই যে সীমান্ত গান্ধী খান আবদুল গাফফার খান ও মাওলানা আবুল কালাম আজাদের মতো যে নেতারা মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে সাহস নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁদের নাম আর তেমন একটা উচ্চারণ করা হয় না।
আসল ব্যাপারটা বোধগম্য, স্বাধীনতাসংগ্রামের কথা বললে আরএসএস ও তার সদস্য বিজেপি ও বজরঙ্গি দল বিচ্ছিন্ন বোধ করে। কিন্তু স্বাধীনতাসংগ্রামকে খাটো করা তাদের উচিত হবে না, সেটা আগামী প্রজন্মের জন্য বড় রকম ক্ষতির কারণ হবে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে স্বাধীনতাসংগ্রাম, আর তার জন্য যে অসংখ্য মানুষ ত্যাগ স্বীকার করেছে, সেই মানুষেরা।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন
কুলদীপ নায়ার: ভারতীয় সাংবাদিক।
বিজেপি আরএসএসের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারটা লুকিয়ে রাখতে চায়। কারণ, তারা বোঝে, গড়পড়তা ভারতীয়দের মধ্যে আরএসএসের গ্রহণযোগ্যতা নেই। এই প্রশ্নের কারণেই জনতা পার্টি ভেঙে গেছে। বিজেপির পূর্ববর্তী রূপ জন সংঘ জনতা পার্টিতে যোগ দেওয়ার আগে আরএসএসের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করার অঙ্গীকার করেছিল। তারা গান্ধীবাদী জয়প্রকাশ নারায়ণকে কথা দিয়েছিল, জনতা পার্টিতে ঠাঁই পেলে তারা আরএসএসের সঙ্গ ত্যাগ করবে। কিন্তু বাস্তবে এই সম্পর্ক ত্যাগের ব্যাপারটা ঘটেনি, তারা জয়প্রকাশ নারায়ণের বিশ্বাস ভঙ্গ করেছিল।
মনে পড়ে, আমি জয়প্রকাশ নারায়ণকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তিনি কেন আরএসএসের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ না করা সত্ত্বেও জন সংঘকে জনতা পার্টিতে স্থান দিয়েছিলেন। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, জন সংঘ কথা না রেখে তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করেছিল।
এট নিশ্চয়ই সত্য হবে, কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় জন সংঘ ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি পেয়েছিল। জয়প্রকাশ যে গুরুতর ভুল করেছিলেন, তার জন্য জাতিকে বড় মূল্য দিতে হয়েছে, আর গতকালের জন সংঘ আজ বিজেপি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, লোকসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে।
এই পরিস্থিতি থেকে কংগ্রেসের লাভবান হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু পরিবারতন্ত্র নিয়ে দলটির আচ্ছন্নতা এবং রাহুলকে নিজের উত্তরসূরি বানানোর ব্যাপারে সোনিয়া গান্ধীর পীড়াপীড়ির কারণে তারা এ সুযোগ হারিয়েছে। মুসলমানরা দলটির নির্ভরযোগ্য ভোটব্যাংক ছিল, দলটি তাদের হারিয়েছে। সমাজ এখন আঞ্চলিক দলগুলোর ওপর নির্ভর করতে শুরু করেছে, এমনকি ওয়াসিকে সমর্থন করার চিন্তাও নাড়াচাড়া করছে। ওয়াসি নিজেকে মুসলমানদের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছেন, ঠিক যেমন দেশভাগের আগে মুসলিম লীগ চেষ্টা করেছিল। সমাজ সংকীর্ণ রাজনীতির কাছে ফেরত যেতে চায় না।
যা হোক, টেলিভিশনের পর্দায় যখন লোকে দেখল আরএসএস-প্রধান মোহন ভাগওয়াতের সামনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজের মন্ত্রীদের হাজির করেছেন, তখন বোঝা গেল, নেতা কে। এটা সত্য যে ভোটাররা মোদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়েছে, কিন্তু নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি কখনো বলেননি, দেশশাসনের বেলায় আরএসএসও তাদের সঙ্গে থাকবে।
সত্য হলো, নির্বাচনী প্রচারণার সময় মোদি সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে মুসলমানদের আশ্বস্ত করেছিলেন, ইতিপূর্বে পার্টির অবস্থান যা হোক না কেন, নতুন স্লোগান হবে, সব ক্যা সাথ, সব ক্যা বিকাশ। কিছু জনসভায় তিনি একটু ভিন্নপথে গিয়ে বলেছিলেন, তিনি মুসলমানদের সবচেয়ে ভালো রক্ষক হবেন।
স্বাধীনতাসংগ্রামের ও বহুত্ববাদের দর্শনের প্রতি আবেগের ঘাটতি দেখে মনোবেদনা সৃষ্টি হয়। এমনকি আধুনিক ভারতের স্থপতি জওহরলাল নেহরুর নাম পর্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে
সত্যি কথা বলতে, এখন পর্যন্ত তাঁর কাজের মধ্যে বৈষম্যমূলক কিছু দেখা যায়নি। যদিও এটা দৃশ্যমান যে আরএসএস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে গেরুয়াকরণ করছে আর গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নিজেদের লোক বসাচ্ছে। এতে বোঝা যায়, মোদি খুব ধীরগতিতে ও অবিশ্রান্তভাবে আরএসএসের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। এটাও পরিষ্কার যে শাসনব্যবস্থায় মুসলমানদের ভূমিকা আর নেই। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় মাত্র একজন মুসলমান মন্ত্রী আছেন, তা-ও আবার গুরুত্বহীন মন্ত্রণালয়ে। তা ছাড়া, সরকারের ভেতরে ও বাইরে এমন ধারণা আছে যে শাসনব্যবস্থায় একরকম মৃদু হিন্দুত্ব কায়েম হয়েছে।
আরএসএসের লক্ষ্য হচ্ছে হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা, সেটা হয়তো এখন দূর অস্ত মনে হতে পারে। কিন্তু মোদির হাতে এখনো সাড়ে তিন বছর সময় রয়েছে। তিনি ও আরএসএস-প্রধান এখন প্রায়ই জনসমক্ষে মিলিত হচ্ছেন। তাঁদের কাজকর্ম দেখে মনে হচ্ছে, তাঁরা নাগপুরে আরএসএস সদর দপ্তরে প্রণীত পরিকল্পনা অনুসারে কাজ করে যাচ্ছেন। বিজেপি ও তার ছাত্রসংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের স্বাধীন চিন্তা নেই, তারা শুধু নাগপুরে রচিত পাণ্ডুলিপি পাঠ করে, আর কিছু নয়।
এর আবার নানা রকম বহিঃপ্রকাশ আছে। কখনো কখনো সেটা মাংসের ওপর নিষেধাজ্ঞা রূপে হাজির হয়, কখনো পোশাক বিধান এবং কখনো বিদ্যালয়ে সংস্কৃত শিক্ষা ও কখনো সেখানকার অ্যাসেম্বলিতে সকালের বিশেষ প্রার্থনা বাধ্যতামূলক করার মধ্য দিয়ে তার প্রকাশ ঘটে। দিল্লির নেহরু স্মৃতি জাদুঘর সংস্কার করার সিদ্ধান্তও এর একটি অংশ। ব্রিটিশ তাড়ানোর আন্দোলনে যেখানে আরএসএসের টিকিটি পর্যন্ত দেখা যায়নি, সেখানে এখন তারা সব স্থান দখল ও নিজেদের স্বাধীনতার চ্যাম্পিয়ন হিসেবে প্রদর্শন করতে চায়।
স্বাধীনতাসংগ্রামের ও বহুত্ববাদের দর্শনের প্রতি আবেগের ঘাটতি দেখে মনোবেদনা সৃষ্টি হয়। এমনকি আধুনিক ভারতের স্থপতি জওহরলাল নেহরুর নাম পর্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে, যেমন এরা নেহরু ও ইন্দিরা গান্ধীর ছবি ডাকটিকিট থেকে মুছে ফেলছে। শিক্ষা খাতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এরা ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা করছে, পাঠ্যবই নতুন করে লিখছে। সেখানে স্বাধীনতাসংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ভূমিকা খাটো করা হচ্ছে। ফলে এতে বিস্ময়ের কিছু নেই যে সীমান্ত গান্ধী খান আবদুল গাফফার খান ও মাওলানা আবুল কালাম আজাদের মতো যে নেতারা মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে সাহস নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁদের নাম আর তেমন একটা উচ্চারণ করা হয় না।
আসল ব্যাপারটা বোধগম্য, স্বাধীনতাসংগ্রামের কথা বললে আরএসএস ও তার সদস্য বিজেপি ও বজরঙ্গি দল বিচ্ছিন্ন বোধ করে। কিন্তু স্বাধীনতাসংগ্রামকে খাটো করা তাদের উচিত হবে না, সেটা আগামী প্রজন্মের জন্য বড় রকম ক্ষতির কারণ হবে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে স্বাধীনতাসংগ্রাম, আর তার জন্য যে অসংখ্য মানুষ ত্যাগ স্বীকার করেছে, সেই মানুষেরা।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন
কুলদীপ নায়ার: ভারতীয় সাংবাদিক।
No comments