গঙ্গায় আরো বাঁধ দেবে ভারত! by প্রকৌশলী এস এম ফজলে আলী
গঙ্গার
উজানে আরো ১৬টি বাঁধ দেবে ভারত। ভারত ইতোমধ্যে ৩০টি বাঁধ দিয়ে গঙ্গা নদীর
পানি প্রত্যাহার করে তার গতিপথের উভয় পাশে সেচসহ সেসব এলাকার শহরগুলোতে
পানি সরবরাহ করছে। ফলে গঙ্গার পানিতে এমনিতেই টান পড়ছে। ফারাক্কা বাঁধের
নিচে গঙ্গাপ্রবাহে বাংলাদেশকে তার ন্যায্য হিস্যা দিতে পারছে না। এখন আরো
১৬টি বৃহদাকার বাঁধ গঙ্গা নদীতে ভারত দিলে নিম্নাঞ্চলে আরো পানি পাওয়ার
কোনো সম্ভাবনাই থাকবে না।
প্রায় ১৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ গঙ্গা-হুগলি নদীর ওপর ১০০ কিলোমিটার অন্তর এসব বাঁধ নির্মাণ করা হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের বাঁধ নির্মাণের ফলে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে ভাটির বাংলাদেশ। কৃষি, সেচ, জীববৈচিত্র্যে এ বাঁধ মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে।
ভারতের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক পত্রিকা টাইমস অব ইন্ডিয়ায় গঙ্গার উজানে আরো ১৬টি বাঁধ নির্মাণের খবর প্রকাশিত হয়েছে। এতে জানানো হয়, দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার এলাহাবাদ থেকে হলদিয়ার ১৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ গঙ্গা-হুগলির ১০০ কিলোমিটার পরপর বাঁধ দেবে। বাঁধগুলো হবে মূলত ব্যারাজ-ভিত্তিক। ব্যারাজের মাধ্যমে ধরে রাখা পানি থেকে শুষ্ক মওসুমে কৃষি সেচ সুবিধা নেয়া হবে। এর পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। এ ছাড়া দেশটি অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহনের জন্য একটি নৌরুটও তৈরি করবে। ভারতের মোদি সরকার এসব বাঁধ নির্মাণে বেশি আগ্রহী। দেশের কৃষি উৎপাদন বাড়ানোই তার লক্ষ্য। এতে ভাটির বাংলাদেশ মহাবিপর্যয়ে পড়বে। এতে বাংলাদেশে কার্যত গঙ্গার পানি আসার প্রায় সব পথ বন্ধ হয়ে যাবে। ফারাক্কার কারণে বাংলাদেশ এমনিতেই ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এরপর নতুন করে গঙ্গার বাঁধ নির্মাণের খবর সত্যিই বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগজনক।
ভারত ২০০৫ সালে গঙ্গার উজানে তেহারি ড্যাম নির্মাণ করে। উত্তর প্রদেশের তেহারি-গাড়ওয়াল জেলায় গঙ্গার উজানে তেহারি ড্যামে বিপুল পানি জমিয়ে রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে ভারত। সেচের জন্যও এ বাঁধের পানি ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি পৃথিবীর পঞ্চম বৃহৎ ড্যাম, যার বিস্তৃতি ৪৫ কিলোমিটার জুড়ে। এ বাঁধ হচ্ছে গঙ্গার ওপর ভারতের বড় ধরনের সর্বশেষ প্রকল্প। তেহারি ড্যামের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে ভাটিতে, বিশেষ করে ফারাক্কা পয়েন্টে পানির প্রবাহ অনেক কমে গেছে। তবে এ বাঁধের আগেও ভারত গঙ্গা নদীর উজানে বহু পয়েন্টে বহু ড্যাম ও ব্যারাজ নির্মাণ করেছে। ড্যাম, ব্যারাজ ছাড়াও ভারত গঙ্গার উজানের বহু পয়েন্টে পাইপ বসিয়ে নদীর পানি উজান থেকে টেনে নেয়ার ব্যবস্থা করেছে। জানা গেছে, উজানে বর্তমানে প্রায় ৪০০ ড্যাম-ব্যারাজসহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এভাবে একের পর এক বাঁধ নির্মাণ করে দেশটি গঙ্গার মতো একটি আন্তর্জাতিক নদীর পানির ওপর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। ভাটির দেশ বাংলাদেশের কথা একবারও ভেবে দেখল না। গঙ্গার উজানে বাঁধ নির্মাণের ফলে নদীটির উজানেই পানির স্থিরতা বাড়বে এবং ভাটিতে পানির অভাব দেখা দেবে- তাই প্রবাহ কমে যাবে। নদীর পানিতে প্রবাহিত কার্বন, ফসফরাসসহ বিভিন্ন পুষ্টি-উপাদান উজানের জমিতে জমা হতে থাকবে। ভাটিতে বাংলাদেশ শুষ্ক মওসুমে পানি কম পাবে।
ইতোমধ্যেই গঙ্গা নদীর পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় নদীর লবণাক্ততা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে দৌলতদিয়া-বাঘাবাড়ী পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এতে নদীতে জলজ প্রাণী ও মিঠাপানির মাছ মারাত্মকভাবে কমেছে। ভূমির লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় ফসলাদির উৎপাদনও কমে যাচ্ছে। বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবনের বিভিন্ন জাতের গাছ অতিরিক্ত লবণাক্ততায় মরে যাচ্ছে। ফলে একসময় কালের স্রোতে হয়তো সুন্দরবন হারিয়ে যাবে। তাই পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে।
যেকোনো নদীর ওপর বাঁধ বা অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় তার স্বাভাবিক প্রবাহকে বাধা দিলে তার অববাহিকায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তা উজানের লোকের জন্যও মঙ্গল বয়ে আনে না। প্রকৃতির বৈরিতা অসময় বন্যা, প্রবল বৃষ্টি ও নদীভাঙনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ভারত বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ট্রানজিট বা ট্রানশিপমেন্ট পেতে চায়। তাদেরও বাংলাদেশকে কিছু দিতে হবে। তার মধ্যে প্রধান ও প্রথম কাজ হলো, শুষ্ক মওসুমে বাংলাদেশকে পর্যান্ত পানি দিতে হবে। ভারত আজ ৫৪টি অভিন্ন নদীর ৫৩টিতেই ড্যাম-বাঁধ ও মাটির বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। তার একতরফা পানি প্রত্যাহার আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন। পানির জন্য বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত নিয়ে জাতিসঙ্ঘ ও আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে হবে। সমুদ্রসীমা নির্ধারণে আমরা আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার চেয়ে মিয়ানমার ও ভারতের বিরুদ্ধে যে রায় পেয়েছি, তা আমাদের অভিন্ন নদীর পানি সমতার ভিত্তিতে পাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করবে। তবে এ জন্য চাই জাতীয় ঐক্য। দুর্ভাগ্য আমাদের যে, রাজনৈতিক ঐক্য নেই। জাতীয় ইস্যুতে রাজনীতিকেরা ও রাজনৈতিক দলগুলো দ্বিধাবিভক্ত। এ সুযোগই ভারত নিচ্ছে। বিশ্বের উন্নত দেশে এমন নজির নেই। সেখানে জাতীয় ইস্যুতে সব দল ও মানুষ এক হয়ে যায়। আজকে আমাদের দরকার একজন সাহসী, মজলুম জননেতা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর। ১৯৭৬ সালের মে মাসে ফারাক্কা মার্চে তিনি যে অটল ভূমিকা নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট পর্যন্ত জনতার লংমার্চ করেছেন তা অসাধারণ। এতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ‘লৌহমানবী’ ইন্দিরা গান্ধী পর্যন্ত ভীত হয়েছিলেন। পরে তিনি বাংলাদেশের সাথে গঙ্গা নদীর পানিবণ্টনে ফারাক্কা চুক্তি করতে বাধ্য হন।
আন্তঃসীমান্ত নদীর ৫৩টিতে বাঁধ নির্মাণ করে একতরফা পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে ভারত। টিপাইমুখ ও সারির উজানে বাঁধ দিয়ে আরো আটটি নদীর পানি প্রত্যাহার করার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে। ফলে শুকনো মওসুমের শুরুতেই বড় বিপর্যয়ে পড়বে বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞরা জানান, ভারতের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সদস্যদের হিসাব অনুযায়ী, ভারতে প্রাকৃতিক উপায়ে বিভিন্ন উৎস থেকে প্রতি বছর প্রায় ৬৫০০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি পাওয়া যায়। ২০২৫ সাল পর্যন্ত বছরে গড়ে তাদের সর্বোচ্চ ৯০০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি প্রয়োজন। অর্থাৎ তাদের প্রাপ্য মোট পানির মাত্র শতকরা ১৫ ভাগ পানি ব্যবহার করা সম্ভব। এর পরও ভারত বাংলাদেশকে বঞ্চিত রেখে একতরফা যৌথ নদীগুলোতে বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে।
৬০টি নদী ভারত ও মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের হিসাবে আন্তঃসীমান্ত নদী ৫৭টি। এর মধ্যে ৫৪টি ভারত থেকে, তিনটি মিয়ানমার থেকে এসেছে। যৌথ নদীগুলোর বড়গুলোতে স্থায়ী বাঁধ এবং ছোট নদীগুলোতে অস্থায়ী মাটির বাঁধ দিয়ে ভারত শুকনো মওসুমে পানি প্রত্যাহার করে নেয়। বর্ষায় সেগুলো ভেঙে দিলে বাংলাদেশে বন্যাপরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ দিকে আমাদের অভ্যন্তরীণ নদীগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে এবং পানির অভাবে বিপর্যয় সৃষ্টি হচ্ছে। স্বাধীনতার পর আমাদের দেশে যেখানে ২৪ হাজার কিলোমিটার নৌপথ ছিল বিআইডব্লিউর হিসাবে, এখন তা বর্ষা মওসুমে ছয় হাজার ও শুকনো মওসুমে মাত্র দুই হাজার ৪০০ কিলোমিটারে নেমে এসেছে।
জানা গেছে, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, দুধকুমার, ধরলা, মহানন্দা ও বরাক নদীতে ভারত ৫০০টি বাঁধ তৈরি করেছে। তাদের ‘বৃহত্তম আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প’ এর সাথে সম্পৃক্ত। এর আওতায় ভারতে ৪৫০টি, নেপালে ৩০টি ও ভুটানে ২০টি বাঁধ তৈরি করা হবে। এরই মধ্যে এ প্রকল্পের প্রায় ১০০টি বাঁধ নির্মাণ হয়ে গেছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে মাথাভাঙ্গা, বেতনা (সেনামুখী), ভৈরব, রায়মঙ্গল, ইছামতি- এ পাঁচটি অভিন্ন নদী রয়েছে। এসব নদীর প্রবাহের ওপর নির্ভর করছে সাতক্ষীরা ও যশোর এলাকার অন্যান্য নদীতে মিঠা পানির প্রবাহ। ভারতের নদীয়া জেলার করিমপুর থানার গঙ্গারামপুরে সীমান্তের প্রায় কাছাকাছি ভৈরব নদের উৎসমুখে একটি ক্রসবাঁধ নির্মাণ করেছে ভারত। ওই বাঁধের উজানে ভৈরব নদের উৎসমুখে জলঙ্গী নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে একটি রেগুলেটর। ওই বাঁধ ও রেগুলেটর দিয়ে ভারত জলঙ্গী নদীর পানি একতরফাভাবে প্রত্যাহার করছে। ফলে ভাটিতে বাংলাদেশের ভৈরব নদী মরে গেছে। ভৈরব শুকিয়ে যাওয়ায় পানি পাচ্ছে না কপোতাক্ষ। কপোতাক্ষ নদী ভরাট হয়ে পড়ায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে স্থায়ী জলাবদ্ধতাসহ মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসছে।
রায়মঙ্গল সাতক্ষীরার শ্যামনগর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত এ নদী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিভক্ত করেছে সুন্দরবনকে। ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদীতে নদীশাসনের উন্নত কলাকৌশল প্রয়োগ করে দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপের দখল নিয়েছে ভারত। অথচ প্রাকৃতিকভাবে দ্বীপটি বাংলাদেশের অংশে পড়ে। নদীর পানি আটকে রাখায় পানির অভাবে বাংলাদেশের বেতনা ও কোদালিয়া নদীর মধ্যবর্তী ৩০ বর্গমাইল এলাকা শুকিয়ে যায়। আবার বর্ষায় পানি ছেড়ে দিলে ওই অঞ্চলে প্লাবন দেখা দেয়। সীমান্ত নদী মাথাভাঙ্গা গঙ্গার একটি প্রধান শাখা। এ নদীটি ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাবের শিকার। ফারাক্কা ব্যারাজ হওয়ার পর নদীটি দিনে দিনে মরা গাঙে পরিণত হয়েছে। ফলে এ অববাহিকায় পরিবেশ বিপর্যয় নেমে আসছে।
বাংলাদেশের প্রধান নদী পদ্মা ও ব্রহ্মপুত্র। এ দুটো নদীতে বর্ষা মওসুমে ৬০ থেকে ৬৫ ভাগ পানি আসে নেপাল থেকে। শুকনো মওসুমে ৬০ থেকে ৭০ ভাগ। ১০ ভাগ পানি আসে চীন থেকে ও ২০ ভাগ আসে ভারত থেকে। অথচ ভারত ফারাক্কা বাঁধ ও রেগুলেটর তৈরি করে এবং এর উজানে আরো বেশ ক’টি বাঁধ তৈরি করে একতরফা পুরো পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। ১৯৭৫ সালে পরীক্ষামূলক ফারাক্কা বাঁধ চালু করলেও তা আজ পর্যন্ত আর বন্ধ হয়নি। বাঁধটি চালু হওয়ার দুই বছরের মধ্যেই শুকিয়ে যেতে থাকে পদ্মা নদী। আর দুর্ভোগ শুরু হয় বাংলাদেশের অংশে পদ্মার বেসিন এলাকার মানুষের। অভিন্ন নদী গঙ্গার উজানে ফারাক্কা বাঁধ দেয়া এবং পানি প্রত্যাহার করায় বড় বিপর্যয় নেমে আসে বাংলাদেশের উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলেও। বিপদে পড়েছেন বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার কোনো গ্যারান্টি ক্লজ ছাড়াই ভারতের সাথে পানিচুক্তি করায় বাংলাদেশ আর পানি পাচ্ছে না। তারা ফারাক্কা পয়েন্টে পানি ভাগাভাগি করে। অথচ উজানে গঙ্গায় ৩০টির অধিক বাঁধ দিয়ে গঙ্গার পানির শতকরা ৯০ ভাগই ফারাক্কা পয়েন্টে আসার আগে প্রত্যাহার করছে। তাই ফারাক্কা পয়েন্টে পানি ভাগাভাগির কোনো যুক্তি নেই। চুক্তিটি যদি এমন হতো, যেকোনো পরিস্থিতিতেই ভারত ফারাক্কা পয়েন্ট থেকে বাংলাদেশকে অন্তত ৪০ হাজার কিউসেক পানি দিতে বাধ্য থাকবে; তাহলে চুক্তির সুফল বাংলাদেশ পেত। গুগল আর্থ ম্যাপে দেখা যায়, ফারাক্কার উজানে গঙ্গার ভরা যৌবন, আর ভাটিতে গঙ্গা মৃত। ফারাক্কার খানিকটা উজানে ক্যানাল কেটে গঙ্গার পানি ভারত সরকার ভাগীরথী নদীতে সঞ্চালন করছে।
গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা পেতে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় কোনো কাজ হবে না। সে চেষ্টা বিগত ৩০ বছর ধরে হয়েছে, কিন্তু ফলাফল শূন্য। তাই সঠিক তথ্য-উপাত্তসহ বাংলাদেশকে জাতিসঙ্ঘ ও আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে হবে। এ নদীর পানি আমাদের বাঁচা-মরার বিষয়।
লেখক :প্রকৌশলী এস এম ফজলে আলী। পানি বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদ
প্রায় ১৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ গঙ্গা-হুগলি নদীর ওপর ১০০ কিলোমিটার অন্তর এসব বাঁধ নির্মাণ করা হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের বাঁধ নির্মাণের ফলে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে ভাটির বাংলাদেশ। কৃষি, সেচ, জীববৈচিত্র্যে এ বাঁধ মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে।
ভারতের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক পত্রিকা টাইমস অব ইন্ডিয়ায় গঙ্গার উজানে আরো ১৬টি বাঁধ নির্মাণের খবর প্রকাশিত হয়েছে। এতে জানানো হয়, দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার এলাহাবাদ থেকে হলদিয়ার ১৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ গঙ্গা-হুগলির ১০০ কিলোমিটার পরপর বাঁধ দেবে। বাঁধগুলো হবে মূলত ব্যারাজ-ভিত্তিক। ব্যারাজের মাধ্যমে ধরে রাখা পানি থেকে শুষ্ক মওসুমে কৃষি সেচ সুবিধা নেয়া হবে। এর পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। এ ছাড়া দেশটি অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহনের জন্য একটি নৌরুটও তৈরি করবে। ভারতের মোদি সরকার এসব বাঁধ নির্মাণে বেশি আগ্রহী। দেশের কৃষি উৎপাদন বাড়ানোই তার লক্ষ্য। এতে ভাটির বাংলাদেশ মহাবিপর্যয়ে পড়বে। এতে বাংলাদেশে কার্যত গঙ্গার পানি আসার প্রায় সব পথ বন্ধ হয়ে যাবে। ফারাক্কার কারণে বাংলাদেশ এমনিতেই ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এরপর নতুন করে গঙ্গার বাঁধ নির্মাণের খবর সত্যিই বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগজনক।
ভারত ২০০৫ সালে গঙ্গার উজানে তেহারি ড্যাম নির্মাণ করে। উত্তর প্রদেশের তেহারি-গাড়ওয়াল জেলায় গঙ্গার উজানে তেহারি ড্যামে বিপুল পানি জমিয়ে রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে ভারত। সেচের জন্যও এ বাঁধের পানি ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি পৃথিবীর পঞ্চম বৃহৎ ড্যাম, যার বিস্তৃতি ৪৫ কিলোমিটার জুড়ে। এ বাঁধ হচ্ছে গঙ্গার ওপর ভারতের বড় ধরনের সর্বশেষ প্রকল্প। তেহারি ড্যামের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে ভাটিতে, বিশেষ করে ফারাক্কা পয়েন্টে পানির প্রবাহ অনেক কমে গেছে। তবে এ বাঁধের আগেও ভারত গঙ্গা নদীর উজানে বহু পয়েন্টে বহু ড্যাম ও ব্যারাজ নির্মাণ করেছে। ড্যাম, ব্যারাজ ছাড়াও ভারত গঙ্গার উজানের বহু পয়েন্টে পাইপ বসিয়ে নদীর পানি উজান থেকে টেনে নেয়ার ব্যবস্থা করেছে। জানা গেছে, উজানে বর্তমানে প্রায় ৪০০ ড্যাম-ব্যারাজসহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এভাবে একের পর এক বাঁধ নির্মাণ করে দেশটি গঙ্গার মতো একটি আন্তর্জাতিক নদীর পানির ওপর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। ভাটির দেশ বাংলাদেশের কথা একবারও ভেবে দেখল না। গঙ্গার উজানে বাঁধ নির্মাণের ফলে নদীটির উজানেই পানির স্থিরতা বাড়বে এবং ভাটিতে পানির অভাব দেখা দেবে- তাই প্রবাহ কমে যাবে। নদীর পানিতে প্রবাহিত কার্বন, ফসফরাসসহ বিভিন্ন পুষ্টি-উপাদান উজানের জমিতে জমা হতে থাকবে। ভাটিতে বাংলাদেশ শুষ্ক মওসুমে পানি কম পাবে।
ইতোমধ্যেই গঙ্গা নদীর পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় নদীর লবণাক্ততা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে দৌলতদিয়া-বাঘাবাড়ী পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এতে নদীতে জলজ প্রাণী ও মিঠাপানির মাছ মারাত্মকভাবে কমেছে। ভূমির লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় ফসলাদির উৎপাদনও কমে যাচ্ছে। বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবনের বিভিন্ন জাতের গাছ অতিরিক্ত লবণাক্ততায় মরে যাচ্ছে। ফলে একসময় কালের স্রোতে হয়তো সুন্দরবন হারিয়ে যাবে। তাই পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে।
যেকোনো নদীর ওপর বাঁধ বা অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় তার স্বাভাবিক প্রবাহকে বাধা দিলে তার অববাহিকায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তা উজানের লোকের জন্যও মঙ্গল বয়ে আনে না। প্রকৃতির বৈরিতা অসময় বন্যা, প্রবল বৃষ্টি ও নদীভাঙনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ভারত বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ট্রানজিট বা ট্রানশিপমেন্ট পেতে চায়। তাদেরও বাংলাদেশকে কিছু দিতে হবে। তার মধ্যে প্রধান ও প্রথম কাজ হলো, শুষ্ক মওসুমে বাংলাদেশকে পর্যান্ত পানি দিতে হবে। ভারত আজ ৫৪টি অভিন্ন নদীর ৫৩টিতেই ড্যাম-বাঁধ ও মাটির বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। তার একতরফা পানি প্রত্যাহার আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন। পানির জন্য বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত নিয়ে জাতিসঙ্ঘ ও আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে হবে। সমুদ্রসীমা নির্ধারণে আমরা আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার চেয়ে মিয়ানমার ও ভারতের বিরুদ্ধে যে রায় পেয়েছি, তা আমাদের অভিন্ন নদীর পানি সমতার ভিত্তিতে পাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করবে। তবে এ জন্য চাই জাতীয় ঐক্য। দুর্ভাগ্য আমাদের যে, রাজনৈতিক ঐক্য নেই। জাতীয় ইস্যুতে রাজনীতিকেরা ও রাজনৈতিক দলগুলো দ্বিধাবিভক্ত। এ সুযোগই ভারত নিচ্ছে। বিশ্বের উন্নত দেশে এমন নজির নেই। সেখানে জাতীয় ইস্যুতে সব দল ও মানুষ এক হয়ে যায়। আজকে আমাদের দরকার একজন সাহসী, মজলুম জননেতা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর। ১৯৭৬ সালের মে মাসে ফারাক্কা মার্চে তিনি যে অটল ভূমিকা নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট পর্যন্ত জনতার লংমার্চ করেছেন তা অসাধারণ। এতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ‘লৌহমানবী’ ইন্দিরা গান্ধী পর্যন্ত ভীত হয়েছিলেন। পরে তিনি বাংলাদেশের সাথে গঙ্গা নদীর পানিবণ্টনে ফারাক্কা চুক্তি করতে বাধ্য হন।
আন্তঃসীমান্ত নদীর ৫৩টিতে বাঁধ নির্মাণ করে একতরফা পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে ভারত। টিপাইমুখ ও সারির উজানে বাঁধ দিয়ে আরো আটটি নদীর পানি প্রত্যাহার করার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে। ফলে শুকনো মওসুমের শুরুতেই বড় বিপর্যয়ে পড়বে বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞরা জানান, ভারতের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সদস্যদের হিসাব অনুযায়ী, ভারতে প্রাকৃতিক উপায়ে বিভিন্ন উৎস থেকে প্রতি বছর প্রায় ৬৫০০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি পাওয়া যায়। ২০২৫ সাল পর্যন্ত বছরে গড়ে তাদের সর্বোচ্চ ৯০০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি প্রয়োজন। অর্থাৎ তাদের প্রাপ্য মোট পানির মাত্র শতকরা ১৫ ভাগ পানি ব্যবহার করা সম্ভব। এর পরও ভারত বাংলাদেশকে বঞ্চিত রেখে একতরফা যৌথ নদীগুলোতে বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে।
৬০টি নদী ভারত ও মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের হিসাবে আন্তঃসীমান্ত নদী ৫৭টি। এর মধ্যে ৫৪টি ভারত থেকে, তিনটি মিয়ানমার থেকে এসেছে। যৌথ নদীগুলোর বড়গুলোতে স্থায়ী বাঁধ এবং ছোট নদীগুলোতে অস্থায়ী মাটির বাঁধ দিয়ে ভারত শুকনো মওসুমে পানি প্রত্যাহার করে নেয়। বর্ষায় সেগুলো ভেঙে দিলে বাংলাদেশে বন্যাপরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ দিকে আমাদের অভ্যন্তরীণ নদীগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে এবং পানির অভাবে বিপর্যয় সৃষ্টি হচ্ছে। স্বাধীনতার পর আমাদের দেশে যেখানে ২৪ হাজার কিলোমিটার নৌপথ ছিল বিআইডব্লিউর হিসাবে, এখন তা বর্ষা মওসুমে ছয় হাজার ও শুকনো মওসুমে মাত্র দুই হাজার ৪০০ কিলোমিটারে নেমে এসেছে।
জানা গেছে, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, দুধকুমার, ধরলা, মহানন্দা ও বরাক নদীতে ভারত ৫০০টি বাঁধ তৈরি করেছে। তাদের ‘বৃহত্তম আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প’ এর সাথে সম্পৃক্ত। এর আওতায় ভারতে ৪৫০টি, নেপালে ৩০টি ও ভুটানে ২০টি বাঁধ তৈরি করা হবে। এরই মধ্যে এ প্রকল্পের প্রায় ১০০টি বাঁধ নির্মাণ হয়ে গেছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে মাথাভাঙ্গা, বেতনা (সেনামুখী), ভৈরব, রায়মঙ্গল, ইছামতি- এ পাঁচটি অভিন্ন নদী রয়েছে। এসব নদীর প্রবাহের ওপর নির্ভর করছে সাতক্ষীরা ও যশোর এলাকার অন্যান্য নদীতে মিঠা পানির প্রবাহ। ভারতের নদীয়া জেলার করিমপুর থানার গঙ্গারামপুরে সীমান্তের প্রায় কাছাকাছি ভৈরব নদের উৎসমুখে একটি ক্রসবাঁধ নির্মাণ করেছে ভারত। ওই বাঁধের উজানে ভৈরব নদের উৎসমুখে জলঙ্গী নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে একটি রেগুলেটর। ওই বাঁধ ও রেগুলেটর দিয়ে ভারত জলঙ্গী নদীর পানি একতরফাভাবে প্রত্যাহার করছে। ফলে ভাটিতে বাংলাদেশের ভৈরব নদী মরে গেছে। ভৈরব শুকিয়ে যাওয়ায় পানি পাচ্ছে না কপোতাক্ষ। কপোতাক্ষ নদী ভরাট হয়ে পড়ায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে স্থায়ী জলাবদ্ধতাসহ মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসছে।
রায়মঙ্গল সাতক্ষীরার শ্যামনগর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত এ নদী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিভক্ত করেছে সুন্দরবনকে। ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদীতে নদীশাসনের উন্নত কলাকৌশল প্রয়োগ করে দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপের দখল নিয়েছে ভারত। অথচ প্রাকৃতিকভাবে দ্বীপটি বাংলাদেশের অংশে পড়ে। নদীর পানি আটকে রাখায় পানির অভাবে বাংলাদেশের বেতনা ও কোদালিয়া নদীর মধ্যবর্তী ৩০ বর্গমাইল এলাকা শুকিয়ে যায়। আবার বর্ষায় পানি ছেড়ে দিলে ওই অঞ্চলে প্লাবন দেখা দেয়। সীমান্ত নদী মাথাভাঙ্গা গঙ্গার একটি প্রধান শাখা। এ নদীটি ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাবের শিকার। ফারাক্কা ব্যারাজ হওয়ার পর নদীটি দিনে দিনে মরা গাঙে পরিণত হয়েছে। ফলে এ অববাহিকায় পরিবেশ বিপর্যয় নেমে আসছে।
বাংলাদেশের প্রধান নদী পদ্মা ও ব্রহ্মপুত্র। এ দুটো নদীতে বর্ষা মওসুমে ৬০ থেকে ৬৫ ভাগ পানি আসে নেপাল থেকে। শুকনো মওসুমে ৬০ থেকে ৭০ ভাগ। ১০ ভাগ পানি আসে চীন থেকে ও ২০ ভাগ আসে ভারত থেকে। অথচ ভারত ফারাক্কা বাঁধ ও রেগুলেটর তৈরি করে এবং এর উজানে আরো বেশ ক’টি বাঁধ তৈরি করে একতরফা পুরো পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। ১৯৭৫ সালে পরীক্ষামূলক ফারাক্কা বাঁধ চালু করলেও তা আজ পর্যন্ত আর বন্ধ হয়নি। বাঁধটি চালু হওয়ার দুই বছরের মধ্যেই শুকিয়ে যেতে থাকে পদ্মা নদী। আর দুর্ভোগ শুরু হয় বাংলাদেশের অংশে পদ্মার বেসিন এলাকার মানুষের। অভিন্ন নদী গঙ্গার উজানে ফারাক্কা বাঁধ দেয়া এবং পানি প্রত্যাহার করায় বড় বিপর্যয় নেমে আসে বাংলাদেশের উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলেও। বিপদে পড়েছেন বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার কোনো গ্যারান্টি ক্লজ ছাড়াই ভারতের সাথে পানিচুক্তি করায় বাংলাদেশ আর পানি পাচ্ছে না। তারা ফারাক্কা পয়েন্টে পানি ভাগাভাগি করে। অথচ উজানে গঙ্গায় ৩০টির অধিক বাঁধ দিয়ে গঙ্গার পানির শতকরা ৯০ ভাগই ফারাক্কা পয়েন্টে আসার আগে প্রত্যাহার করছে। তাই ফারাক্কা পয়েন্টে পানি ভাগাভাগির কোনো যুক্তি নেই। চুক্তিটি যদি এমন হতো, যেকোনো পরিস্থিতিতেই ভারত ফারাক্কা পয়েন্ট থেকে বাংলাদেশকে অন্তত ৪০ হাজার কিউসেক পানি দিতে বাধ্য থাকবে; তাহলে চুক্তির সুফল বাংলাদেশ পেত। গুগল আর্থ ম্যাপে দেখা যায়, ফারাক্কার উজানে গঙ্গার ভরা যৌবন, আর ভাটিতে গঙ্গা মৃত। ফারাক্কার খানিকটা উজানে ক্যানাল কেটে গঙ্গার পানি ভারত সরকার ভাগীরথী নদীতে সঞ্চালন করছে।
গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা পেতে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় কোনো কাজ হবে না। সে চেষ্টা বিগত ৩০ বছর ধরে হয়েছে, কিন্তু ফলাফল শূন্য। তাই সঠিক তথ্য-উপাত্তসহ বাংলাদেশকে জাতিসঙ্ঘ ও আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে হবে। এ নদীর পানি আমাদের বাঁচা-মরার বিষয়।
লেখক :প্রকৌশলী এস এম ফজলে আলী। পানি বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদ
No comments