দেশে ফেরানোর প্রস্তুতিও চলছে? by রাহীদ এজাজ
সালাহ উদ্দিন আহমদ |
বিএনপির
যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে ভারতে অনুপ্রবেশ মামলার
শুনানি গতকাল বৃহস্পতিবার শিলংয়ের আদালতে শুরু হয়েছে। শুনানিতে দুই সাক্ষীর
মধ্যে পুলিশ কনস্টেবল এন সাংমা উপস্থিত ছিলেন, যিনি গত ১১ মে সালাহ
উদ্দিনকে গলফ লিংক এলাকা থেকে পুলিশ ফাঁড়িতে এনেছিলেন।
এ মামলায় সরকারপক্ষের কৌঁসুলি আই সি ঝা গতকাল প্রথম আলোকে মুঠোফোনে জানান, শিলংয়ের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের মুখ্য বিচারক কে এম লিংদো নংব্রি আগামী ১৯ আগস্ট মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
ভারতের মেঘালয় রাজ্যে অনুপ্রবেশের প্রায় আড়াই মাস পর সালাহ উদ্দিন আহমদের বিচার শুরু হলো। ভারতের ফরেনার্স অ্যাক্ট, ১৯৪৬-এর ১৪ ধারা অনুযায়ী, বিনা পাসপোর্টে অনুপ্রবেশের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বনিম্ন কয়েক দিন থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়ে থাকে।
পুলিশ কনস্টেবল এন সাংমা শুনানিতে বলেন, ১১ মে ভোরে টহল দেওয়ার সময় শিলং গলফ লিংক এলাকা থেকে ফোন পেয়ে উপপরিদর্শক কে সাবাং তাঁকে ও অন্য এক পুলিশ কনস্টেবলকে নিয়ে সেখানে যান। গিয়ে দেখেন, স্থানীয় তিন-চারজন লোকের সঙ্গে একজন দাঁড়িয়ে আছেন। পরিচয় জানতে চাইলে ওই লোক তাঁর নাম সালাহ উদ্দিন আহমদ এবং বাংলাদেশের নাগরিক বলে জানান। সেখান থেকে তাঁকে প্রথমে পুলিশ ফাঁড়িতে, পরে শিলংয়ের সিভিল হাসপাতাল, শিলং সদর পুলিশ থানা ও মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক জেরায় তিনি বলেন, তাঁকে ঢাকার উত্তরা থেকে অপহরণ করা হয়েছে। এরপর বিভিন্ন জায়গা ঘুরিয়ে তাঁকে অপহরণকারীরা শিলংয়ে রেখে গেছে।
এদিকে এই বিএনপি নেতার বিচার শুরু হওয়ার পাশাপাশি তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতিপর্বও থেমে নেই। আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আগের দিন তাঁর কাছ থেকে তাঁকে ফেরত পাঠানোর (ডিপোর্টেশন) একটি ফরমে সই করানো হয় বলে উভয় দেশের কূটনৈতিক সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। তবে মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর দেশে ফেরাটা দীর্ঘায়িত হতে পারে। আবার ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের বোঝাপড়ায় তাঁকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ, গত ১১ মে তাঁকে শিলংয়ে খুঁজে পাওয়ার পরপরই বাংলাদেশে তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তালিকাসহ পূর্ণ বৃত্তান্ত দ্রুত ভারতে পাঠায় বাংলাদেশ সরকার। আবার মামলায় সাক্ষী ১১ জন হওয়ায় কয়েক মাসের মধ্যে বিচারকাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
সম্প্রতি শিলং সফরের সময় রাজ্য সরকারের কর্মকর্তা, পুলিশ, আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে ধারণা পাওয়া গেছে, সালাহ উদ্দিন আহমদের দেশে ফেরাটা দীর্ঘায়িত হওয়া কিংবা দ্রুত হওয়া—দুই সম্ভাবনাই থাকছে।
গত ১১ মে সালাহ উদ্দিনকে খুঁজে পাওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির কথা বলা হয়েছিল। বিশেষ করে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এটি জোরেশোরে দাবি করা হয়েছিল। ওই সময় শিলং পুলিশও বলেছিল, বাংলাদেশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ইন্টারপোল দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এ বার্তা পাঠিয়েছে। সম্প্রতি শিলংয়ে সালাহ উদ্দিনের মামলায় সরকারপক্ষের আইনজীবী আই সি ঝার সঙ্গে কথা বলে ইন্টারপোলের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ তথ্য। তাঁর দাবি, ইন্টারপোলের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। এমন কিছু থাকলে সরকারি কৌঁসুলি হিসেবে তিনি সেটা জানতেন।
মেঘালয়ে পৌঁছানোর পর পুলিশ ফাঁড়ি, দুই দফায় সিভিল হাসপাতাল, মানসিক হাসপাতাল মিমহানস, নেগ্রিমস হয়ে এখন শহরের বিষ্ণুপুরের একটি রেস্ট হাউসে থাকছেন সালাহ উদ্দিন আহমদ। শিলং না ছাড়ার শর্তে গত ৫ জুন তিনি আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। জামিন পাওয়ার পর থেকেই তিনি ওই রেস্ট হাউসে থাকছেন। বিচারকাজ থাকলে তিনি আদালতে যান। তা না হলে রেস্ট হাউসেই সময় কাটান। এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও দলের সহকর্মীরা দেশ থেকে সালাহ উদ্দিন আহমদের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন।
২২ জুলাই অভিযোগপত্র গঠনের শুনানিতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করায় সাক্ষ্য গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। আটকের পর থেকে সালাহ উদ্দিনের অধিকাংশ সময় কেটেছে হাসপাতালে। অসুস্থ থাকায় পুলিশ সেভাবে তাঁকে জেরা করতে পারেনি। তারপরও ঢাকা থেকে পাঠানো প্রতিবেদনকে বিবেচনায় নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় বলে জানা গেছে। তিনি শিলং পৌঁছানোর এক সপ্তাহের মাথায় ঢাকা থেকে প্রতিবেদন পাঠানো হয়। আর স্থানীয় পুলিশ এটিকে বিবেচনায় নিয়েছে বলে সালাহ উদ্দিনের আইনজীবীরা ইঙ্গিত দিয়েছেন।
১১ জন সাক্ষীর মধ্যে আছেন তদন্ত কর্মকর্তা ও পুলিশের উপপরিদর্শক পি লামারেসহ পাঁচজন পুলিশ ও ছয়জন চিকিৎসক। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারপক্ষের আইনজীবী আই সি ঝা ২২ জুলাই তাঁর দপ্তরে প্রথম আলোকে বলেন, সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে, বৈধ কাগজপত্র ছাড়া তাঁকে ভারতের ভূখণ্ডে পাওয়া গেছে। অনুপ্রবেশের মামলায় সাধারণত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দোষী কিংবা নির্দোষের সপক্ষে বলার সুযোগ দেওয়া হয়। অভিযোগপত্র দাখিল করেই কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় না। কেউ দোষ স্বীকার করলে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তির বিষয়টি সামনে চলে আসে। কেউ যদি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন, তাহলে সাক্ষীর উপস্থিতিতে তাঁকে আদালতে যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে সেটি প্রমাণ করতে হবে।
অনুপ্রবেশের মামলায় সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের শাস্তির যে বিধান রয়েছে, সেই শাস্তি সব মামলায় দেওয়া হয়েছে তা কিন্তু নয়। শিলংয়ে অনুপ্রবেশের মামলা পরিচালনা করেছেন এমন তিনজন আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে এ ধারণা পাওয়া গেছে যে বিচারিক প্রক্রিয়াতেই বেশি সময় গড়িয়ে যায়। মামলার অভিযোগপত্র গঠন, সাক্ষীদের যুক্তি, পাল্টা যুক্তি নিয়ে শুনানি ইত্যাদি প্রক্রিয়াতেই বেশি সময় লাগে। এ ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত ব্যক্তি অনুপ্রবেশের দোষ স্বীকার করার পর আদালত লঘু শাস্তি দিয়েছেন। যথারীতি শাস্তি ভোগের পর নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে সালাহ উদ্দিন আহমদ শুরু থেকেই নিজেকে নির্দোষ দাবি করছেন। তবে তিনি আর দশজন সাধারণ নাগরিকের মতো নন। ফলে তাঁর পরিণতি অন্যদের মতো না-ও হতে পারে।
বিশেষ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর শুরুর এক দিন আগে, অর্থাৎ ৫ জুন সালাহ উদ্দিন আহমদের জামিন পাওয়াটা এ ইঙ্গিত দেয়। তা ছাড়া নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাঁর প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে।
তবে সালাহ উদ্দিন আহমদের শিলংয়ে অবস্থানের আড়াই মাস পরও স্পষ্ট নয়, তিনি কীভাবে সেখানে গেলেন। শুরু থেকেই তিনি যেটা বলছেন, সেই দাবিতেই তিনি অটল আছেন। শিলং পৌঁছানোর পর থেকেই সালাহ উদ্দিন আহমদ বলছেন, তিনি শিলংয়ে স্বেচ্ছায় যাননি। ঢাকার উত্তরা থেকে মার্চে তাঁকে অপহরণ করা হয়েছিল। এরপর নানা জায়গা ঘুরিয়ে অপহরণকারীরা তাঁকে ১১ মে মেঘালয়ে রেখে যায়। উত্তরা থেকে শিলংয়ে পৌঁছানোর মাঝখানের সময়টা কোথায় ছিলেন, তা বলছেন না তিনি। ফলে ৬২ দিনের রহস্যের জট এখনো খোলেনি, শিগগির খুলবে এমন আভাসও মিলছে না।
অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরুর আগে আদালত চত্বরে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে তাঁর কথা হয়। ঢাকা থেকে শিলং, মাঝখানের দিনগুলো সম্পর্কে এ প্রতিবেদক জানতে চাইলে বিএনপির নেতা কথা বলতে অপারগতা জানান। তবে তিনি বলেন, ১১ মে শিলং গলফ লিংক এলাকায় পৌঁছানোর পর তিনিই স্থানীয় লোকজনকে পুলিশে খবর দিতে অনুরোধ জানান। পরে টহল পুলিশ এসে তাঁকে ফাঁড়িতে নেয়। এরপর হাসপাতালে। মিমহানস নামের মানসিক হাসপাতালে নেওয়ার পর নিয়মানুযায়ী তাঁর দাড়ি-গোঁফ (৬২ দিনের) কামানো হয়েছিল। শুরু থেকেই পুলিশ ও হাসপাতালের লোকজন বিশ্বাস করতে চাননি, তিনি বাংলাদেশের সাবেক প্রতিমন্ত্রী। তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক এ কে রায় তাঁর সঙ্গে কথা বলেই বুঝতে পারেন বর্ণনা কিছুটা অসংলগ্ন হলেও তিনি মানসিক রোগী নন। পরে ওই চিকিৎসকের মাধ্যমেই ১২ মে স্ত্রী হাসিনা আহমদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় সালাহ উদ্দিনের।
এ মামলায় সরকারপক্ষের কৌঁসুলি আই সি ঝা গতকাল প্রথম আলোকে মুঠোফোনে জানান, শিলংয়ের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের মুখ্য বিচারক কে এম লিংদো নংব্রি আগামী ১৯ আগস্ট মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
ভারতের মেঘালয় রাজ্যে অনুপ্রবেশের প্রায় আড়াই মাস পর সালাহ উদ্দিন আহমদের বিচার শুরু হলো। ভারতের ফরেনার্স অ্যাক্ট, ১৯৪৬-এর ১৪ ধারা অনুযায়ী, বিনা পাসপোর্টে অনুপ্রবেশের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বনিম্ন কয়েক দিন থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়ে থাকে।
পুলিশ কনস্টেবল এন সাংমা শুনানিতে বলেন, ১১ মে ভোরে টহল দেওয়ার সময় শিলং গলফ লিংক এলাকা থেকে ফোন পেয়ে উপপরিদর্শক কে সাবাং তাঁকে ও অন্য এক পুলিশ কনস্টেবলকে নিয়ে সেখানে যান। গিয়ে দেখেন, স্থানীয় তিন-চারজন লোকের সঙ্গে একজন দাঁড়িয়ে আছেন। পরিচয় জানতে চাইলে ওই লোক তাঁর নাম সালাহ উদ্দিন আহমদ এবং বাংলাদেশের নাগরিক বলে জানান। সেখান থেকে তাঁকে প্রথমে পুলিশ ফাঁড়িতে, পরে শিলংয়ের সিভিল হাসপাতাল, শিলং সদর পুলিশ থানা ও মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক জেরায় তিনি বলেন, তাঁকে ঢাকার উত্তরা থেকে অপহরণ করা হয়েছে। এরপর বিভিন্ন জায়গা ঘুরিয়ে তাঁকে অপহরণকারীরা শিলংয়ে রেখে গেছে।
এদিকে এই বিএনপি নেতার বিচার শুরু হওয়ার পাশাপাশি তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতিপর্বও থেমে নেই। আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আগের দিন তাঁর কাছ থেকে তাঁকে ফেরত পাঠানোর (ডিপোর্টেশন) একটি ফরমে সই করানো হয় বলে উভয় দেশের কূটনৈতিক সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। তবে মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর দেশে ফেরাটা দীর্ঘায়িত হতে পারে। আবার ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের বোঝাপড়ায় তাঁকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ, গত ১১ মে তাঁকে শিলংয়ে খুঁজে পাওয়ার পরপরই বাংলাদেশে তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তালিকাসহ পূর্ণ বৃত্তান্ত দ্রুত ভারতে পাঠায় বাংলাদেশ সরকার। আবার মামলায় সাক্ষী ১১ জন হওয়ায় কয়েক মাসের মধ্যে বিচারকাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
সম্প্রতি শিলং সফরের সময় রাজ্য সরকারের কর্মকর্তা, পুলিশ, আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে ধারণা পাওয়া গেছে, সালাহ উদ্দিন আহমদের দেশে ফেরাটা দীর্ঘায়িত হওয়া কিংবা দ্রুত হওয়া—দুই সম্ভাবনাই থাকছে।
গত ১১ মে সালাহ উদ্দিনকে খুঁজে পাওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির কথা বলা হয়েছিল। বিশেষ করে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এটি জোরেশোরে দাবি করা হয়েছিল। ওই সময় শিলং পুলিশও বলেছিল, বাংলাদেশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ইন্টারপোল দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এ বার্তা পাঠিয়েছে। সম্প্রতি শিলংয়ে সালাহ উদ্দিনের মামলায় সরকারপক্ষের আইনজীবী আই সি ঝার সঙ্গে কথা বলে ইন্টারপোলের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ তথ্য। তাঁর দাবি, ইন্টারপোলের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। এমন কিছু থাকলে সরকারি কৌঁসুলি হিসেবে তিনি সেটা জানতেন।
মেঘালয়ে পৌঁছানোর পর পুলিশ ফাঁড়ি, দুই দফায় সিভিল হাসপাতাল, মানসিক হাসপাতাল মিমহানস, নেগ্রিমস হয়ে এখন শহরের বিষ্ণুপুরের একটি রেস্ট হাউসে থাকছেন সালাহ উদ্দিন আহমদ। শিলং না ছাড়ার শর্তে গত ৫ জুন তিনি আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। জামিন পাওয়ার পর থেকেই তিনি ওই রেস্ট হাউসে থাকছেন। বিচারকাজ থাকলে তিনি আদালতে যান। তা না হলে রেস্ট হাউসেই সময় কাটান। এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও দলের সহকর্মীরা দেশ থেকে সালাহ উদ্দিন আহমদের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন।
২২ জুলাই অভিযোগপত্র গঠনের শুনানিতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করায় সাক্ষ্য গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। আটকের পর থেকে সালাহ উদ্দিনের অধিকাংশ সময় কেটেছে হাসপাতালে। অসুস্থ থাকায় পুলিশ সেভাবে তাঁকে জেরা করতে পারেনি। তারপরও ঢাকা থেকে পাঠানো প্রতিবেদনকে বিবেচনায় নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় বলে জানা গেছে। তিনি শিলং পৌঁছানোর এক সপ্তাহের মাথায় ঢাকা থেকে প্রতিবেদন পাঠানো হয়। আর স্থানীয় পুলিশ এটিকে বিবেচনায় নিয়েছে বলে সালাহ উদ্দিনের আইনজীবীরা ইঙ্গিত দিয়েছেন।
১১ জন সাক্ষীর মধ্যে আছেন তদন্ত কর্মকর্তা ও পুলিশের উপপরিদর্শক পি লামারেসহ পাঁচজন পুলিশ ও ছয়জন চিকিৎসক। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারপক্ষের আইনজীবী আই সি ঝা ২২ জুলাই তাঁর দপ্তরে প্রথম আলোকে বলেন, সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে, বৈধ কাগজপত্র ছাড়া তাঁকে ভারতের ভূখণ্ডে পাওয়া গেছে। অনুপ্রবেশের মামলায় সাধারণত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দোষী কিংবা নির্দোষের সপক্ষে বলার সুযোগ দেওয়া হয়। অভিযোগপত্র দাখিল করেই কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় না। কেউ দোষ স্বীকার করলে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তির বিষয়টি সামনে চলে আসে। কেউ যদি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন, তাহলে সাক্ষীর উপস্থিতিতে তাঁকে আদালতে যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে সেটি প্রমাণ করতে হবে।
অনুপ্রবেশের মামলায় সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের শাস্তির যে বিধান রয়েছে, সেই শাস্তি সব মামলায় দেওয়া হয়েছে তা কিন্তু নয়। শিলংয়ে অনুপ্রবেশের মামলা পরিচালনা করেছেন এমন তিনজন আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে এ ধারণা পাওয়া গেছে যে বিচারিক প্রক্রিয়াতেই বেশি সময় গড়িয়ে যায়। মামলার অভিযোগপত্র গঠন, সাক্ষীদের যুক্তি, পাল্টা যুক্তি নিয়ে শুনানি ইত্যাদি প্রক্রিয়াতেই বেশি সময় লাগে। এ ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত ব্যক্তি অনুপ্রবেশের দোষ স্বীকার করার পর আদালত লঘু শাস্তি দিয়েছেন। যথারীতি শাস্তি ভোগের পর নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে সালাহ উদ্দিন আহমদ শুরু থেকেই নিজেকে নির্দোষ দাবি করছেন। তবে তিনি আর দশজন সাধারণ নাগরিকের মতো নন। ফলে তাঁর পরিণতি অন্যদের মতো না-ও হতে পারে।
বিশেষ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর শুরুর এক দিন আগে, অর্থাৎ ৫ জুন সালাহ উদ্দিন আহমদের জামিন পাওয়াটা এ ইঙ্গিত দেয়। তা ছাড়া নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাঁর প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে।
তবে সালাহ উদ্দিন আহমদের শিলংয়ে অবস্থানের আড়াই মাস পরও স্পষ্ট নয়, তিনি কীভাবে সেখানে গেলেন। শুরু থেকেই তিনি যেটা বলছেন, সেই দাবিতেই তিনি অটল আছেন। শিলং পৌঁছানোর পর থেকেই সালাহ উদ্দিন আহমদ বলছেন, তিনি শিলংয়ে স্বেচ্ছায় যাননি। ঢাকার উত্তরা থেকে মার্চে তাঁকে অপহরণ করা হয়েছিল। এরপর নানা জায়গা ঘুরিয়ে অপহরণকারীরা তাঁকে ১১ মে মেঘালয়ে রেখে যায়। উত্তরা থেকে শিলংয়ে পৌঁছানোর মাঝখানের সময়টা কোথায় ছিলেন, তা বলছেন না তিনি। ফলে ৬২ দিনের রহস্যের জট এখনো খোলেনি, শিগগির খুলবে এমন আভাসও মিলছে না।
অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরুর আগে আদালত চত্বরে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে তাঁর কথা হয়। ঢাকা থেকে শিলং, মাঝখানের দিনগুলো সম্পর্কে এ প্রতিবেদক জানতে চাইলে বিএনপির নেতা কথা বলতে অপারগতা জানান। তবে তিনি বলেন, ১১ মে শিলং গলফ লিংক এলাকায় পৌঁছানোর পর তিনিই স্থানীয় লোকজনকে পুলিশে খবর দিতে অনুরোধ জানান। পরে টহল পুলিশ এসে তাঁকে ফাঁড়িতে নেয়। এরপর হাসপাতালে। মিমহানস নামের মানসিক হাসপাতালে নেওয়ার পর নিয়মানুযায়ী তাঁর দাড়ি-গোঁফ (৬২ দিনের) কামানো হয়েছিল। শুরু থেকেই পুলিশ ও হাসপাতালের লোকজন বিশ্বাস করতে চাননি, তিনি বাংলাদেশের সাবেক প্রতিমন্ত্রী। তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক এ কে রায় তাঁর সঙ্গে কথা বলেই বুঝতে পারেন বর্ণনা কিছুটা অসংলগ্ন হলেও তিনি মানসিক রোগী নন। পরে ওই চিকিৎসকের মাধ্যমেই ১২ মে স্ত্রী হাসিনা আহমদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় সালাহ উদ্দিনের।
No comments