১৩৯ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য কেউ আবেদনই করেনি by মোশতাক আহমেদ
অনলাইনে একাদশ শ্রেণির ভর্তি কার্যক্রম শুরু করায় দেশের প্রায় ১ হাজার ৩০০ কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দৈন্য বেরিয়ে এসেছে। এগুলোর মধ্যে ১৩৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একজন শিক্ষার্থীও ভর্তি হওয়ার আগ্রহ দেখায়নি।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ঢাকা বোর্ডের ১১টি কলেজসহ মোট ১৩৯ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো কোনোটির শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে, আবার কোনোটি বন্ধের উপক্রম হয়েছে। কোনো কোনোটি চলছে শুধু নামেই। লেখাপড়ার পরিবেশ না থাকায় শিক্ষার্থীরা এসব কলেজে আর ভর্তি হতে চায় না।
অথচ এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারই অনুমোদন দিয়েছে। অভিযোগ আছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডগুলো বিভিন্ন সময়ে আর্থিক অনিয়ম করে যাচ্ছেতাই ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদন দিয়ে থাকে। কিন্তু সেগুলো কেমন চলছে, তার খোঁজ কেউ নেয় না।
জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, এটা ঠিক যে বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের কিছু কলেজ অনুমোদন পেয়ে গেছে। এখন এগুলো সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেল। প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন করিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মিলিয়ে ৮ হাজার ৯৩৩টি প্রতিষ্ঠানে এবার অনলাইনে ভর্তির সুযোগ ছিল। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সূত্রমতে, এর মধ্যে ৫৯টি কলেজ, ৭২টি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আটটি মাদ্রাসায় একজন শিক্ষার্থীও ভর্তির জন্য আবেদন করেনি।
এর আগে অনলাইনে প্রথম দফায় প্রায় ২০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য আবেদন করেছিল মাত্র এক থেকে পাঁচজন করে শিক্ষার্থী। আর ৯৯৯টি কলেজে আবেদন করে ১ থেকে ২০ জন করে শিক্ষার্থী। তবে শেষ ধাপে এসে এ ধরনের কিছু কলেজে কিছু আবেদন জমা পড়ে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে একজন শিক্ষার্থীও ভর্তি হতে চায়নি, সেগুলো নানা কায়দা-কৌশলে অনুমোদন পেয়ে চলছিল। নতুন ভর্তি পদ্ধতি আসায় এগুলোর আসল চেহারা প্রকাশ পেল।
জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সুষ্ঠু প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পারলে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাঁচিয়ে রাখার কোনো মানে নেই। এগুলো বন্ধ করে দেওয়া উচিত। এর পাশাপাশি কীভাবে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পেল, তা খতিয়ে দেখা উচিত।
ঢাকা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, যেসব কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি হতে চায় না, তার মধ্যে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আছে ১১টি কলেজ। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে ১৩টি, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে ১৬, কুমিল্লা বোর্ডে পাঁচ, যশোরে নয় এবং সিলেটে পাঁচটি কলেজ।
ঢাকা বোর্ড: এই বোর্ডে একজনও আবেদন না করা কলেজগুলোর একটি প্রিমিয়ার কলেজ। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কলেজটির ঠিকানা ৩৯ কাকরাইল। গত মঙ্গলবার এই ঠিকানায় গেলে নাভানা রহিম অ্যাপার্টমেন্ট নামের একটি বহুতল ভবনের ১১ তলায় যাওয়ার পরামর্শ দেন নিরাপত্তাকর্মী। সেখানে গিয়ে ওই নামে কোনো কলেজ পাওয়া যায়নি। সিড ইউনিভার্সিটি কলেজ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামফলক দেখা যায়। কিন্তু এই নামে ঢাকা বোর্ডে কোনো কলেজের অনুমোদন নেই বলে জানান কলেজ পরিদর্শক আশফাকুস সালেহীন।
কথিত ওই প্রতিষ্ঠানের অফিস এক্সিকিউটিভ পরিচয়ে মনিরুজ্জামান বলেন, এখানে প্রিমিয়ার কলেজ ছিল। আগে ছাত্র থাকলেও লোকসান হওয়ায় ছাত্রদের অন্য কলেজে পাঠানো হয়েছে। এবার কেউ ভর্তির আবেদন করেনি।
ঢাকা শহরে অবস্থিত এ রকম আরও দুটি কলেজ আছে। সেগুলো হলো ধানমন্ডির ঠিকানায় জাস্ট ইন্টারন্যাশনাল কলেজ ও উত্তরার লিডস কলেজ। শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারাও এগুলোর প্রকৃত ঠিকানা দিতে পারেননি।
গাজীপুরের কালিয়াকৈরের নয়ানগর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আবুল বাশারের সঙ্গে কথা বলেই বোঝা গেছে, কেন এখানে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আবেদন করেনি। তিনি বলেন, তাঁদের স্থায়ী কোনো শিক্ষক নেই। অস্থায়ী যাঁরা ছিলেন তাঁরাও চলে গেছেন। ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে মাত্র ১০ জন। কলেজের পরিবেশ বর্ণনা করে অধ্যক্ষ বলেন, একটি টিনের ঘরে কক্ষ মাত্র তিনটি। বর্তমানে কলেজের মাঠে প্রায় কোমরপানি।
জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদার কলেজটির অবস্থাও যাচ্ছেতাই। এই কলেজ থেকে চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে মাত্র ১৩ জন। তা-ও ক্লাস করে নয়, ‘প্রাইভেট’ পড়ে। এখনো ১৪ জন শিক্ষার্থী দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ছে। কিন্তু কলেজের দুরবস্থার কারণে তারা কলেজে আসে না। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম ছাড়া কোনো শিক্ষক-কর্মচারী নেই।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, কলেজটি টিকিয়ে রাখতে তিনি অনেক চেষ্টা করছেন। কিন্তু অনলাইনে এবার কোনো শিক্ষার্থী না পাওয়ায় তিনি ছাড়া অন্য শিক্ষকেরা চলে গেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, কলেজটি প্রতিষ্ঠা পেয়েছে ২০০০ সালে এবং বোর্ডের পাঠদানের অনুমোদন পায় ২০০৩ সালে। আর ২০০৫ সাল থেকে এই কলেজে থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা বোর্ডের অধীন এ ধরনের অন্য কলেজগুলো হলো: নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার কায়মুন্নেসা কলেজ, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী রাতলি আইডিয়াল কলেজ, একই জেলার মুকসুদপুরের দুর্বা সুর আদর্শ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, নেত্রকোনার পূর্বধলা জাটিয়াবার কলেজ, একই উপজেলার কালিশাপুর উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ও জামালপুরের ইসলামপুরের এস এন সি আদর্শ কলেজ।
অন্যান্য বোর্ডের কলেজগুলো: রাজশাহী বোর্ডের অধীন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে না চাওয়া কলেজগুলো হলো মিঠাপুর আদর্শ কলেজ, ব্রি-পাটুরিয়া হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, দুপইল কলেজ, বেগম খালেদা জিয়া কলেজ, চৌগ্রাম হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, শহীদ স্মরণিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, দামিন নওগাঁ আইডিয়াল কলেজ, সাতবাড়িয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চৌবিলা দ্বিমুখী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, গোসাইবাড়ি উইমেন্স কলেজ, চলনবিল আদর্শ কলেজ, মতিহার কলেজ ও বটতলী কলেজ।
যশোর বোর্ডের অধীন কলেজগুলো হলো রগুনাথ নগর উচ্চমাধ্যমিক স্কুল, সোনার বাংলা কলেজ, আই আই কলেজ, পাল্লা বহুমুখী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কাজালি কলেজিয়েট স্কুল, মুলিয়া পাবলিক কলেজ, সাতারা আব্বাস টেকনিক্যাল ও বি এম কলেজ, মাশিয়াহাটি উইমেন কলেজ ও এম এম মোস্তফা রশিদী সূজা গার্লস কলেজ।
সিলেট বোর্ডের অধীন যে কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি হতে চায় না সেগুলো হলো: কমলগঞ্জ বহুমুখী গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, জয়শ্রী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, মহিষখোলা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, আব্দুল গফুর হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ ও চার্চার্ড কলেজ।
দিনাজপুর বোর্ডের অধীন এ ধরনের কলেজগুলো হলো: কাটলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ব্যাপারিতলা আদর্শ কলেজ, বেতুরা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উত্তর লক্ষ্মীপুর হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, বোয়ালদার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কামর দ্বিমুখী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, দিনাজপুর জুবলি হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, গাইবান্ধার বাদিয়াখালী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, শহরগাছি মডেল বিএল গার্লস স্কুল অ্যান্ড উইমেন্স কলেজ, রশিদপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আলহাজ তমিজউদ্দিন কলেজ, বদরগঞ্জ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, তিনগ্রিয়া হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, বাংলা গড় কলেজ, বেরাজান নয়া কলেজ ও কবি নজরুল কলেজ।
শিক্ষার্থীদের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য এবার কলেজের পছন্দক্রম দিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে হয়েছে। এরপর শিক্ষার্থীর এসএসসি ও সমমানের ফল অনুযায়ী ভর্তির কলেজ ঠিক করে দেয় শিক্ষা বোর্ড। এ প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু ভুলভ্রান্তির জন্য শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হলেও শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলেছেন, নতুন এই ব্যবস্থাটি ভালোভাবে কার্যকর করা গেলে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের উপকার হবে।
এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল ১২ লাখ ৮২ হাজার ৬১৮ জন। এর মধ্যে অনলাইনে প্রথম তিন দফায় মনোনীতদের মধ্য থেকে ১০ লাখ ৪৪ হাজার ৪৭৫ জন শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন কলেজে ভর্তি হয়েছে। এর বাইরে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইন ছাড়াই ভর্তি হয়েছে ৪৩ হাজার ৯৬০ জন। আর আদালতের নির্দেশে পরীক্ষা নিয়ে তিনটি কলেজ ৫ হাজার ১৫১ জনকে ভর্তি করেছে। অনলাইনের শেষ ধাপে এখন সাড়ে ৮২ হাজার শিক্ষার্থীর ভর্তির তথ্য সংগ্রহ করছে বোর্ড।
{প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন মাদারগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি}
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ঢাকা বোর্ডের ১১টি কলেজসহ মোট ১৩৯ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো কোনোটির শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে, আবার কোনোটি বন্ধের উপক্রম হয়েছে। কোনো কোনোটি চলছে শুধু নামেই। লেখাপড়ার পরিবেশ না থাকায় শিক্ষার্থীরা এসব কলেজে আর ভর্তি হতে চায় না।
অথচ এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারই অনুমোদন দিয়েছে। অভিযোগ আছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডগুলো বিভিন্ন সময়ে আর্থিক অনিয়ম করে যাচ্ছেতাই ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদন দিয়ে থাকে। কিন্তু সেগুলো কেমন চলছে, তার খোঁজ কেউ নেয় না।
জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, এটা ঠিক যে বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের কিছু কলেজ অনুমোদন পেয়ে গেছে। এখন এগুলো সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেল। প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন করিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মিলিয়ে ৮ হাজার ৯৩৩টি প্রতিষ্ঠানে এবার অনলাইনে ভর্তির সুযোগ ছিল। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সূত্রমতে, এর মধ্যে ৫৯টি কলেজ, ৭২টি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আটটি মাদ্রাসায় একজন শিক্ষার্থীও ভর্তির জন্য আবেদন করেনি।
এর আগে অনলাইনে প্রথম দফায় প্রায় ২০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য আবেদন করেছিল মাত্র এক থেকে পাঁচজন করে শিক্ষার্থী। আর ৯৯৯টি কলেজে আবেদন করে ১ থেকে ২০ জন করে শিক্ষার্থী। তবে শেষ ধাপে এসে এ ধরনের কিছু কলেজে কিছু আবেদন জমা পড়ে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে একজন শিক্ষার্থীও ভর্তি হতে চায়নি, সেগুলো নানা কায়দা-কৌশলে অনুমোদন পেয়ে চলছিল। নতুন ভর্তি পদ্ধতি আসায় এগুলোর আসল চেহারা প্রকাশ পেল।
জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সুষ্ঠু প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পারলে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাঁচিয়ে রাখার কোনো মানে নেই। এগুলো বন্ধ করে দেওয়া উচিত। এর পাশাপাশি কীভাবে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পেল, তা খতিয়ে দেখা উচিত।
ঢাকা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, যেসব কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি হতে চায় না, তার মধ্যে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আছে ১১টি কলেজ। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে ১৩টি, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে ১৬, কুমিল্লা বোর্ডে পাঁচ, যশোরে নয় এবং সিলেটে পাঁচটি কলেজ।
ঢাকা বোর্ড: এই বোর্ডে একজনও আবেদন না করা কলেজগুলোর একটি প্রিমিয়ার কলেজ। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কলেজটির ঠিকানা ৩৯ কাকরাইল। গত মঙ্গলবার এই ঠিকানায় গেলে নাভানা রহিম অ্যাপার্টমেন্ট নামের একটি বহুতল ভবনের ১১ তলায় যাওয়ার পরামর্শ দেন নিরাপত্তাকর্মী। সেখানে গিয়ে ওই নামে কোনো কলেজ পাওয়া যায়নি। সিড ইউনিভার্সিটি কলেজ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামফলক দেখা যায়। কিন্তু এই নামে ঢাকা বোর্ডে কোনো কলেজের অনুমোদন নেই বলে জানান কলেজ পরিদর্শক আশফাকুস সালেহীন।
কথিত ওই প্রতিষ্ঠানের অফিস এক্সিকিউটিভ পরিচয়ে মনিরুজ্জামান বলেন, এখানে প্রিমিয়ার কলেজ ছিল। আগে ছাত্র থাকলেও লোকসান হওয়ায় ছাত্রদের অন্য কলেজে পাঠানো হয়েছে। এবার কেউ ভর্তির আবেদন করেনি।
ঢাকা শহরে অবস্থিত এ রকম আরও দুটি কলেজ আছে। সেগুলো হলো ধানমন্ডির ঠিকানায় জাস্ট ইন্টারন্যাশনাল কলেজ ও উত্তরার লিডস কলেজ। শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারাও এগুলোর প্রকৃত ঠিকানা দিতে পারেননি।
গাজীপুরের কালিয়াকৈরের নয়ানগর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আবুল বাশারের সঙ্গে কথা বলেই বোঝা গেছে, কেন এখানে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আবেদন করেনি। তিনি বলেন, তাঁদের স্থায়ী কোনো শিক্ষক নেই। অস্থায়ী যাঁরা ছিলেন তাঁরাও চলে গেছেন। ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে মাত্র ১০ জন। কলেজের পরিবেশ বর্ণনা করে অধ্যক্ষ বলেন, একটি টিনের ঘরে কক্ষ মাত্র তিনটি। বর্তমানে কলেজের মাঠে প্রায় কোমরপানি।
জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদার কলেজটির অবস্থাও যাচ্ছেতাই। এই কলেজ থেকে চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে মাত্র ১৩ জন। তা-ও ক্লাস করে নয়, ‘প্রাইভেট’ পড়ে। এখনো ১৪ জন শিক্ষার্থী দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ছে। কিন্তু কলেজের দুরবস্থার কারণে তারা কলেজে আসে না। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম ছাড়া কোনো শিক্ষক-কর্মচারী নেই।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, কলেজটি টিকিয়ে রাখতে তিনি অনেক চেষ্টা করছেন। কিন্তু অনলাইনে এবার কোনো শিক্ষার্থী না পাওয়ায় তিনি ছাড়া অন্য শিক্ষকেরা চলে গেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, কলেজটি প্রতিষ্ঠা পেয়েছে ২০০০ সালে এবং বোর্ডের পাঠদানের অনুমোদন পায় ২০০৩ সালে। আর ২০০৫ সাল থেকে এই কলেজে থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা বোর্ডের অধীন এ ধরনের অন্য কলেজগুলো হলো: নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার কায়মুন্নেসা কলেজ, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী রাতলি আইডিয়াল কলেজ, একই জেলার মুকসুদপুরের দুর্বা সুর আদর্শ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, নেত্রকোনার পূর্বধলা জাটিয়াবার কলেজ, একই উপজেলার কালিশাপুর উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ও জামালপুরের ইসলামপুরের এস এন সি আদর্শ কলেজ।
অন্যান্য বোর্ডের কলেজগুলো: রাজশাহী বোর্ডের অধীন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে না চাওয়া কলেজগুলো হলো মিঠাপুর আদর্শ কলেজ, ব্রি-পাটুরিয়া হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, দুপইল কলেজ, বেগম খালেদা জিয়া কলেজ, চৌগ্রাম হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, শহীদ স্মরণিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, দামিন নওগাঁ আইডিয়াল কলেজ, সাতবাড়িয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চৌবিলা দ্বিমুখী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, গোসাইবাড়ি উইমেন্স কলেজ, চলনবিল আদর্শ কলেজ, মতিহার কলেজ ও বটতলী কলেজ।
যশোর বোর্ডের অধীন কলেজগুলো হলো রগুনাথ নগর উচ্চমাধ্যমিক স্কুল, সোনার বাংলা কলেজ, আই আই কলেজ, পাল্লা বহুমুখী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কাজালি কলেজিয়েট স্কুল, মুলিয়া পাবলিক কলেজ, সাতারা আব্বাস টেকনিক্যাল ও বি এম কলেজ, মাশিয়াহাটি উইমেন কলেজ ও এম এম মোস্তফা রশিদী সূজা গার্লস কলেজ।
সিলেট বোর্ডের অধীন যে কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি হতে চায় না সেগুলো হলো: কমলগঞ্জ বহুমুখী গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, জয়শ্রী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, মহিষখোলা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, আব্দুল গফুর হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ ও চার্চার্ড কলেজ।
দিনাজপুর বোর্ডের অধীন এ ধরনের কলেজগুলো হলো: কাটলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ব্যাপারিতলা আদর্শ কলেজ, বেতুরা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উত্তর লক্ষ্মীপুর হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, বোয়ালদার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কামর দ্বিমুখী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, দিনাজপুর জুবলি হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, গাইবান্ধার বাদিয়াখালী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, শহরগাছি মডেল বিএল গার্লস স্কুল অ্যান্ড উইমেন্স কলেজ, রশিদপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আলহাজ তমিজউদ্দিন কলেজ, বদরগঞ্জ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, তিনগ্রিয়া হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, বাংলা গড় কলেজ, বেরাজান নয়া কলেজ ও কবি নজরুল কলেজ।
শিক্ষার্থীদের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য এবার কলেজের পছন্দক্রম দিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে হয়েছে। এরপর শিক্ষার্থীর এসএসসি ও সমমানের ফল অনুযায়ী ভর্তির কলেজ ঠিক করে দেয় শিক্ষা বোর্ড। এ প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু ভুলভ্রান্তির জন্য শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হলেও শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলেছেন, নতুন এই ব্যবস্থাটি ভালোভাবে কার্যকর করা গেলে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের উপকার হবে।
এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল ১২ লাখ ৮২ হাজার ৬১৮ জন। এর মধ্যে অনলাইনে প্রথম তিন দফায় মনোনীতদের মধ্য থেকে ১০ লাখ ৪৪ হাজার ৪৭৫ জন শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন কলেজে ভর্তি হয়েছে। এর বাইরে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইন ছাড়াই ভর্তি হয়েছে ৪৩ হাজার ৯৬০ জন। আর আদালতের নির্দেশে পরীক্ষা নিয়ে তিনটি কলেজ ৫ হাজার ১৫১ জনকে ভর্তি করেছে। অনলাইনের শেষ ধাপে এখন সাড়ে ৮২ হাজার শিক্ষার্থীর ভর্তির তথ্য সংগ্রহ করছে বোর্ড।
{প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন মাদারগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি}
No comments