অন্তিম শয়ানে আবদুল কালাম
মানুষের
ঢল নেমেছিল তামিলনাড়ুর উপকূলীয় শহর রামেশ্বরমে। শুধু রামেশ্বরম নয়,
দক্ষিণের বিভিন্ন রাজ্য থেকে ছাত্র, যুব ও প্রবীণরা এসেছিলেন তাদের প্রিয়
মানুষটিকে শেষ বিদায় জানাতে। গত বুধবার থেকে রামেশ্বরমে জনতার ঢল নামতে
শুরু করে। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত সেই স্রোত ছিল চলমান। এদিন বেলা সাড়ে
১১টায় রামেশ্বরমে ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও মিসাইলম্যান খ্যাত এপিজে
আবদুল কালামকে পূর্ণ রাষ্ট্র্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয় জন্মভূমির শুভ্র
বালুকাবেলায় নির্ধারিত সমাধি ক্ষেত্রে। সেখানেই কালামের স্মৃতিতে গড়ে তোলা
হবে স্মারক। বুধবার রামেশ্বরমে কালামের মরদেহ পৌঁছানোর পর থেকে মানুষ গভীর
রাত পর্যন্ত লাইন দিয়ে তাদের ঘরের ছেলেকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। রাতে
কালামের বাড়িতেই রাখা ছিল মরদেহ। বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় মসজিদে জানাজার
পর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় সমাধিক্ষেত্রে। সেখানেও তখন এসে উপস্থিত লক্ষাধিক
মানুষ। স্রোতের মতো তারা ছুটে এসেছেন জনতার প্রেসিডেন্টকে শেষ দেখার আশায়।
সমাধিক্ষেত্রে তখন উপস্থিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ বিভিন্ন রাজ্যের
মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য। কংগ্রেস ভাইস
প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধীও এসেছিলেন কালামকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। শ্রদ্ধা
জানিয়েছেন তিন বাহিনীর প্রধানরাও। তালিনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা
অসুস্থতার কারণে হাজির থাকতে না পারলেও তার মন্ত্রিসভার ৭ জন সদস্য উপস্থিত
ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন চন্দ্রবাবু নাইডু, ভেঙ্কাইয়া নাইডু, মনোহর পারিকার,
ওমেন চ্যান্ডি, গোলাম নবী আজাদসহ অনেক নেতা। গতকাল আবদুল কালামকে সমাহিত
করার পর প্রধানমন্ত্রী মোদি, অন্য অতিথি ও তিন বাহিনীর পক্ষ থেকে এক মিনিট
নীরবতা পালন করা হয়। প্রয়াত প্রেসিডেন্ট কালামের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে
তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন নরেন্দ্র মোদি। কালামের মৃতদেহ
যে তিনরঙা পতাকায় ঢেলে রাখা হয়েছিল তা তুলে পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে
দেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর কালামের মৃতদেহ রাখা হয়েছিল
সেই মরটালও তুলে দেয়া হয় তার পরিবারের কাছে। রামেশ্বরমেই এক সাধারণ
পরিবারে জন্মেছিলেন কালাম। এখানকার মাটির সঙ্গে তার যোগ ছিল আমৃত্যু ।
কালামের নবতিপর বড় ভাইয়ের ইচ্ছাতে জন্মভূমিতেই তাকে সমাহিত করা হয়। গত
সোমবার সন্ধ্যায় শিলংয়ে আইআইএম’র ছাত্রদের সামনে ভাষণ দিতে দিতেই তিনি
অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার দুপুরে মেঘালয়ের
রাজধানী শিলং থেকে কালামের মরদেহ দিল্লিতে নিয়ে আসার পর থেকে সারাদিন ১০
রাজাজি মার্গের বাসভবনে ছিল মানুষের ঢল। বুধবার সকালে ভারতীয় বায়ু সেনার
বিশেষ বিমানে তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে সেনা
হেলিকপ্টারে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় রামেশ্বরমে।
No comments