ধূপখোলা মাঠের অস্তিত্ব বিপন্ন by অরূপ দত্ত
মাঠে প্রবেশপথের মুখে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কার্যালয় : মাদকাসক্তদের আড্ডা |
পুরান
ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ধূপখোলা মাঠটির অস্তিত্ব প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে।
মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের পোস্তগোলা লুপ নির্মাণের সরঞ্জাম রাখতে
এই মাঠ ব্যবহার করা হয়েছিল। গত বছর অক্টোবরের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে গেলেও
মাঠটি এখন পর্যন্ত মুক্ত করে দেওয়া হয়নি। মাঠের তিন পাশে শ্রমিকদের থাকার
জন্য যে অস্থায়ী ঘরগুলো তৈরি করা হয়েছিল তার মধ্যে দুটি রাজনৈতিক
সংগঠনের দখলে। বাকিগুলো অসামাজিক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। গত রোববার বেলা ১১টা
থেকে প্রায় ১টা পর্যন্ত সরেজমিনে দেখে এসব তথ্য পাওয়া যায়। মাঠটির
দর্শকদের জন্য তৈরি করা গ্যালারিতে শ্রমিকদের থাকার জন্য প্রায় ৩০টি ঘর
করা হয়েছিল। তার দুটিতে এখন গড়ে উঠেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগের বৃহত্তর
সূত্রাপুর থানার প্রধান কার্যালয়। গতকাল রোববার গিয়ে দেখা যায়, মাঠের
প্রবেশপথের ঠিক পাশেই স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাইনবোর্ড। তাতে লেখা ‘প্রধান
কার্যালয়, ৪৫ নং ওয়ার্ড, বৃহত্তর সূত্রাপুর থানা, ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ)’।
দোতলায় উঠে দেখা যায়, কার্যালয়ে তালা ঝোলানো। স্থানীয় দোকানিরা বলেন,
সন্ধ্যার পর এখানে নেতা-কর্মীরা আসেন। মাঠের রক্ষণাবেক্ষণে পালা করে তিনজন
প্রহরী কাজ করেন। গতকাল পাওয়া গেল আবুল হোসেন নামের একজন বয়োজ্যেষ্ঠ
প্রহরীকে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাস দুয়েক আগে স্বেচ্ছাসেবক লীগের
কার্যালয়টি গড়ে ওঠে। তবে এর বাইরে তিনি নেতা-কর্মীদের নামধাম বা রাজনৈতিক
কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানেন না বলে জানান।
যোগাযোগ
করা হলে বৃহত্তর সূত্রাপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু
আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাঠটি অনেক দিন ধরে অবহেলার শিকার। এটি যেন আবার
খেলার মাঠ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় তার জন্য আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি।’
স্বেচ্ছাসেবক লীগের কার্যালয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি স্থানীয় ৪৫ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমানের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। জানতে চাইলে আনিসুর রহমান বলেন, খালি পড়ে থাকায় এখানে অফিস করা হয়েছে। এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি। সিটি করপোরেশন যদি বলে তবে তাঁরা অফিস উঠিয়ে নেবেন।
রাজনৈতিক সংগঠনের দখল করা ঘরগুলোর বাইরে অন্তত ২৮টির কোনো কোনোটার দরজা-জানালা ভেঙে গেছে। প্রহরী আবুল হোসেন বলেন, এখন এসব ঘরে কেউ থাকে না।
তবে স্থানীয় দোকানিরা বলেন, এসব ঘর মাদকাসক্তদের নিরাপদ আখড়া। দিনের বেলায়ও এখানে মাদক সেবন চলে। সন্ধ্যার পর বসে মাদকসেবীদের রীতিমতো আড্ডা। চলে অসামাজিক কাজও। প্রকাশ্যে বিক্রি হয় ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। এই প্রতিবেদকের সামনেই তিন তরুণকে দেখা যায়, এক ব্যক্তির হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে কাগজে মোড়া কিছু নিতে। মাঠপাড়ের বসার সিঁড়িতে বিচ্ছিন্নভাবে ভাগ হয়ে আড্ডা দিতে দেখা যায় আরও কিছু তরুণকে। এখানে কী করছে, জানতে চাইলে এক তরুণ ঘুমজড়ানো কণ্ঠে জবাব দেয়, ‘দেখবার পারতাচেন না, ব্যাগটি (সবাই) মিল্লা গপ্প করবার লাগচি।’
মাঠটির দুই-তৃতীয়াংশজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ভাঙা পাথর, পরিত্যক্ত ব্লকের খণ্ড ও স্ল্যাবের ধ্বংসাবশেষ। এগুলো এমনভাবে রাখা হয়েছে যে কিছুতেই সেখানে খেলাধুলা করা সম্ভব নয়। মাঠের এখানে-ওখানে বড় বড় গর্ত। জমে আছে ময়লা পানি। হাঁটতে গেলেও হোঁচট খাওয়ার আশঙ্কা। তারপরও এলাকার পুরোনো বাসিন্দারা অভ্যাসবশত মাঝে মাঝে মাঠে হাঁটতে আসেন। গতকাল দেখা হয় চারজন স্থায়ী বাসিন্দার সঙ্গে। এঁদের মধ্যে রায়হানুল হক নামের একজন বলেন, আগে এখানে সকাল-সন্ধ্যা নিয়মিত হাঁটতেন। মাঠের বেহাল অবস্থায় এখন আর হাঁটার পরিবেশ নেই।
মাস খানেক আগে বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছেন মো. জামান। এসে পরিবেশ পরিস্থিতি দেখে শান্তি পাচ্ছেন না। দুঃখ করে বললেন, ‘এই মাঠে খেলে বড় হয়েছি। অনেক দিন পর দেশে ফিরে দেখলাম মাঠটিকে আর মাঠ বলে চেনাই যায় না। এখানকার শিশুরা খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’
সিটি করপোরেশন মার্কেটের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনজন ব্যবসায়ী বলেন, উড়ালসড়ক নির্মাণের জন্য শ্রমিকদের থাকার যেসব ঘর তৈরি হয়েছে, সেগুলো তেমন মজবুত করে বানানো হয়নি। কারণ কাজ শেষে সেগুলো ভেঙে ফেলার কথা। কিন্তু নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার প্রায় নয় মাস পরেও ঘরগুলো ভাঙা হয়নি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের প্রকল্প পরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্বে নিয়োজিত মো. নূরুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ধূপখোলা মাঠ থেকে নির্মাণসামগ্রীগুলো পর্যায়ক্রমে সরিয়ে নেওয়া হবে। এ ছাড়া অবৈধভাবে কেউ যদি স্থাপনা দখল করে থাকে তবে সম্পত্তি বিভাগের সঙ্গে কথা বলে উচ্ছেদের ব্যবস্থা করা হবে।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের কার্যালয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি স্থানীয় ৪৫ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমানের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। জানতে চাইলে আনিসুর রহমান বলেন, খালি পড়ে থাকায় এখানে অফিস করা হয়েছে। এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি। সিটি করপোরেশন যদি বলে তবে তাঁরা অফিস উঠিয়ে নেবেন।
রাজনৈতিক সংগঠনের দখল করা ঘরগুলোর বাইরে অন্তত ২৮টির কোনো কোনোটার দরজা-জানালা ভেঙে গেছে। প্রহরী আবুল হোসেন বলেন, এখন এসব ঘরে কেউ থাকে না।
তবে স্থানীয় দোকানিরা বলেন, এসব ঘর মাদকাসক্তদের নিরাপদ আখড়া। দিনের বেলায়ও এখানে মাদক সেবন চলে। সন্ধ্যার পর বসে মাদকসেবীদের রীতিমতো আড্ডা। চলে অসামাজিক কাজও। প্রকাশ্যে বিক্রি হয় ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। এই প্রতিবেদকের সামনেই তিন তরুণকে দেখা যায়, এক ব্যক্তির হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে কাগজে মোড়া কিছু নিতে। মাঠপাড়ের বসার সিঁড়িতে বিচ্ছিন্নভাবে ভাগ হয়ে আড্ডা দিতে দেখা যায় আরও কিছু তরুণকে। এখানে কী করছে, জানতে চাইলে এক তরুণ ঘুমজড়ানো কণ্ঠে জবাব দেয়, ‘দেখবার পারতাচেন না, ব্যাগটি (সবাই) মিল্লা গপ্প করবার লাগচি।’
মাঠটির দুই-তৃতীয়াংশজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ভাঙা পাথর, পরিত্যক্ত ব্লকের খণ্ড ও স্ল্যাবের ধ্বংসাবশেষ। এগুলো এমনভাবে রাখা হয়েছে যে কিছুতেই সেখানে খেলাধুলা করা সম্ভব নয়। মাঠের এখানে-ওখানে বড় বড় গর্ত। জমে আছে ময়লা পানি। হাঁটতে গেলেও হোঁচট খাওয়ার আশঙ্কা। তারপরও এলাকার পুরোনো বাসিন্দারা অভ্যাসবশত মাঝে মাঝে মাঠে হাঁটতে আসেন। গতকাল দেখা হয় চারজন স্থায়ী বাসিন্দার সঙ্গে। এঁদের মধ্যে রায়হানুল হক নামের একজন বলেন, আগে এখানে সকাল-সন্ধ্যা নিয়মিত হাঁটতেন। মাঠের বেহাল অবস্থায় এখন আর হাঁটার পরিবেশ নেই।
মাস খানেক আগে বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছেন মো. জামান। এসে পরিবেশ পরিস্থিতি দেখে শান্তি পাচ্ছেন না। দুঃখ করে বললেন, ‘এই মাঠে খেলে বড় হয়েছি। অনেক দিন পর দেশে ফিরে দেখলাম মাঠটিকে আর মাঠ বলে চেনাই যায় না। এখানকার শিশুরা খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’
সিটি করপোরেশন মার্কেটের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনজন ব্যবসায়ী বলেন, উড়ালসড়ক নির্মাণের জন্য শ্রমিকদের থাকার যেসব ঘর তৈরি হয়েছে, সেগুলো তেমন মজবুত করে বানানো হয়নি। কারণ কাজ শেষে সেগুলো ভেঙে ফেলার কথা। কিন্তু নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার প্রায় নয় মাস পরেও ঘরগুলো ভাঙা হয়নি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের প্রকল্প পরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্বে নিয়োজিত মো. নূরুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ধূপখোলা মাঠ থেকে নির্মাণসামগ্রীগুলো পর্যায়ক্রমে সরিয়ে নেওয়া হবে। এ ছাড়া অবৈধভাবে কেউ যদি স্থাপনা দখল করে থাকে তবে সম্পত্তি বিভাগের সঙ্গে কথা বলে উচ্ছেদের ব্যবস্থা করা হবে।
No comments