এখনও আঁতকে ওঠেন সালাহউদ্দিন by দীন ইসলাম
অপহরণের
পরের কথা চিন্তা করে এখনও আঁতকে উঠছেন শিলংয়ের সিভিল হাসপাতালের আন্ডার
ট্রায়াল প্রিজনার (ইউটিপি) সেলে চিকিৎসাধীন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব
সালাহউদ্দিন আহমেদ। এখনও তার ভয়, শঙ্কা ও উৎকণ্ঠা কাটেনি। নিজের ঘনিষ্ঠজনরা
দেখা করতে গেলে এভাবেই সালাহউদ্দিন নিজের ভীতিকর অবস্থার কথা প্রকাশ
করছেন। তবে কিসের ভয় এখনও তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে ওই বিষয়টি খোলাসা করে বলছেন
না। মানসিক ভীতির পাশাপাশি তার শারীরিক অবস্থারও অবনতি হয়েছে। বিশেষত
কিডনি সমস্যা তাকে বেশ ভোগাচ্ছে বলে জোর দিয়ে বলছেন সালাহউদ্দিন। গতকাল
বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনিকে স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন সমস্যা
দেখিয়েছেন। পাশাপাশি দেখা করতে যাওয়া আত্মীয়স্বজনদেরও স্বাস্থ্যগত
সমস্যাগুলো দেখান। স্ত্রী হাসিনা আহমেদ কবে নাগাদ শিলং আসবেন ওই বিষয়টি
জানতে চেয়েছেন। এদিকে শিলংয়ের সিভিল হাসপাতালে দেশের বিভিন্ন জেলার বিএনপি
নেতাকর্মীদের ভিড় বাড়ছে। গতকাল লালমনিরহাট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লা
জেলার কয়েক জন নেতা হাসপাতালে ভিড় জমান। তবে সহ- দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ
জনি তাদের স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, ভারত সরকার বিব্রত হয় এমন কোন কাজ তোমরা
কর না। এরপরই হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান ওই সব নেতারা।
সব সময় আল্লাহকে স্মরণ করবে:
আল্লাহ যে নিজ হাতে মানুষকে বাঁচিয়ে দিতে পারেন তার প্রকৃত উদাহরণ আমি। এ
ভাবেই আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্টির কথা নিজের ঘনিষ্ঠজনদের কাছে বর্ণনা করেন
সালাহউদ্দিন আহমেদ। তার এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় জানিয়েছেন, সিভিল হাসপাতালে নিয়ে
আসার পরদিন আমার হাত ধরে কেঁদে ফেলেন ভাই। বলেন, ৬১ দিন একটি ঘুপচি ঘরে
থেকে আল্লাহকে ডাকা ছাড়া আমার কোন কাজ ছিল না। ওই সময়টাতে শেষের দিকে মনে
হয়েছে আল্লাহর সঙ্গে আমার আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। তিনি আমার কথা
শুনছেন। যে কোন উপায়ে হোক আল্লাহ তোমাদের মাঝে আমাকে ফিরিয়ে এনেছে। এসব কথা
বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনিকেও বলেছেন সালাহউদ্দিন। জনি
মানবজমিনকে জানান, সালাহউদ্দিন ভাইয়ের আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসের কথা
শুনে সত্যিই অনুপ্রাণিত হয়েছি। তিনি আমাকে বলেছেন যেখানেই থাকেন না কেন
কোন সময় নামাজ কাজা করবে না। নামাজের গুরুত্বের কথা বিভিন্নভাবে বুঝিয়েছেন।
কথা ভুলে যাচ্ছেন সালাহউদ্দিন: মানসিক বিপর্যয় এখনও কাটেনি সালাহউদ্দিন আহমেদের। ভীতি, উৎকণ্ঠা ও আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন তিনি। কোন কথা মনে রাখতে পারছেন না। গতকাল সিভিল হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন সালাহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর এসব কথা বলেন আব্দুল লতিফ জনি। ভারতে পাসপোর্ট ছাড়া আসার ঘটনায় ওনার মধ্যে কোন ধরনের অনুশোচনা, ভুল স্বীকার বা অন্য কিছু আছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল লতিফ জনি বলেন, এ ব্যাপারে গত শুক্রবার দেখা করে বিষয়টি সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি আমাকে জানিয়েছেন, আমি এদেশে এসেছি নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে। কিভাবে এসেছি সেটা আমি জানি না। এদেশে পাসপোর্ট ছাড়া আসার ঘটনা সত্যি। এ কারণে আমার বিরুদ্ধে ভারতীয় ইমিগ্রেশন আইন অনুযায়ী অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা হয়েছে। ওনার স্ত্রী আসার পর এ মামলা কিভাবে মোকাবিলা করা যায় তা আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি বলেন, আজকে (গতকাল) তাকে দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি। ওনার পায়ের ভয়ানক অবস্থা দেখালেন। পা টিপলেই দেবে যাচ্ছে, মিলে যাচ্ছে না। তার মানে ওনার কিডনির অবস্থা খুবই খারাপ। গত কয়েক দিন কিডনির অনেক টেস্ট হয়েছে। ওই সব টেস্টের রিপোর্ট এখনও পাওয়া যায়নি। হার্ট বা কিডনির জন্য কোন বোর্ড বসানো হয়েছে কিনা সে বিষয়টি আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি জানিয়েছেন, প্রতিদিন ডাক্তার আসছে। হয়তো মনে করছেন রিপোর্টগুলো পেলে বোর্ড বসিয়ে ট্রিটমেন্টের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। একটা কথা সালাহউদ্দিন জোর দিয়ে বলেছেন, ভারতীয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেস্ট লেভেল দিয়ে আমাকে সুস্থ করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু সিঙ্গাপুরে যে ডাক্তারের অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন ওই ধরনের ইনফ্রাস্ট্রাকচার এ হাসপাতালে নেই। এ কারণে এই হাসপাতালে যে চিকিৎসা চলছে তা ওনার জন্য কতটুকু প্রযোজ্য এ নিয়ে তার সন্দেহ রয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরকে কেন প্রাধান্য দিচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল লতিফ জনি বলেন, সিঙ্গাপুর বলে কোন কথা নেই। আমরা বলছি স্পেশালাইজড হসপিটালের কথা। সেটা বিশ্বের যে কোন দেশে হতে পারে। কিন্তু আমরা সিঙ্গাপুরের কথা বলছি এ কারণে যে, তিনি অতীতে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কোর্টে ওঠানোর বিষয়টি দেরি হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা নির্ভর করবে এদেশের ডাক্তারদের রিপোর্টের উপর। এ বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করবো না। এখানকার আইন ও মেডিক্যাল সিস্টেম আমাদের দেশের মতো নয়। ওনারা ওনাদের আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবেন। লতিফ জনি বলেন, সালাহউদ্দিন আহমেদ মানসিকভাবে এতটাই বিপর্যস্ত যে কোন কথা মনে রাখতে পারছেন না। একটা কথা বলে কিছুক্ষণ পরেই তা ভুলে যাচ্ছেন। এটা কেন হচ্ছে, সেটি নিয়ে আমার মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার অবস্থায় আছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমি যেটা দেখলাম মুভ করার মতো অবস্থায় তিনি নেই। তার মানে আইনি প্রক্রিয়া এখনই শুরু হচ্ছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে জনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। এ বিষয়টি ভাল জানবেন ডাক্তাররা। আইনজীবীদের সঙ্গে কথা হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আনঅফিসিয়ালি কথা হয়েছে। কারণ তারা কাগজপত্র ও লিগ্যাল গার্ডিয়ান ছাড়া কোন কথা বলবে না। লিগ্যাল গার্ডিয়ান ওনার স্ত্রী। ওনার স্ত্রী আসলেই আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলবেন। কথা বলে সালাহউদ্দিনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ কিভাবে মোকাবিলা করা যায় ওই বিষয়টি সিদ্ধান্ত নেবেন।
সালাহউদ্দিনকে দেখতে শিলংয়ে বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতারা: সালাহউদ্দিন আহমেদকে দেখতে শতাধিক বিএনপি নেতা এখন ভারতে রয়েছেন। কিন্তু পুলিশের অনুমতি না পাওয়ায় কেউই দেখা করতে পারছেন না। গতকাল সালাহউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করতে সিভিল হাসপাতালে আসেন লালমনিরহাট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক শাহেদুল ইসলাম পাটোয়ারী (সাজু)। তিনি মানবজমিনকে জানান, গত ১৫ই মে চেংড়াবান্ধা বর্ডার হয়ে ভারতে এসেছি। উদ্দেশ্য একটাই সালাহউদ্দিন ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা। কিন্তু পুলিশের অনুমতি না মেলায় সাক্ষাৎ করতে পারিনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আসা জেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আতিকুল হক জালাল সালাহউদ্দিনকে দেখতে হাসপাতালে আসেন। তিনিও দেখা করতে পারেননি। জালাল মানবজমিনকে জানান, আখাউড়া বর্ডার দিয়ে ১২ই মে এসেছি নেতাকে দেখতে। কিন্তু দেখা হয়নি (এ কথা বলেই কান্না করেন জামাল)। তৃণমূলের কর্মীদের প্রতি সালাহউদ্দিন ভাইয়ের দরদ অনেক বেশি। এ কারণে এসেছি। বিএনপির এক নেতা জানান, শিলংয়ের আশেপাশের বর্ডার দিয়ে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী এসেছেন। কিন্তু হাসপাতালে গিয়ে দেখা করা যাচ্ছে না- এ সংবাদ পাওয়ার পর সিভিল হাসপাতালে তারা আসছেন না।
সালাহউদ্দিনের জন্য কাপড়-চোপড়, খাবার: জনি সালাহউদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তিনটি টিশার্ট, তিনটি ট্রাউজার, ১০টি সাবান ও ২০টি মিনিপ্যাক শ্যাম্পু দিয়ে আসেন। এ সময় সালাহউদ্দিন নিজের কাছে একটি ট্রাউজার রেখে বাকিগুলো অন্য বন্দিদের মধ্যে ভাগ করে দেন। এ সময় জনিকে উদ্দেশ্য করে সালাহউদ্দিন বলেন, হাসপাতালে খুব ঠাণ্ডা লাগে। আমার একটি শাল দরকার। এছাড়া আরেকটি কুর্তা চান। এরপর বাইরে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। জনি আসার কিছুক্ষণ পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী প্রত্যাগত প্রবাসী দলের সভাপতি পাইলট রবিন কে জামান ইডেন রেস্টুরেন্টের নাস্তা নিয়ে দেখা করতে আসেন। এসব নাস্তার মধ্যে ছিল রুটি, সবজি ও ভাজি। কিন্তু অনুমতি না থাকায় তিনি সাক্ষাৎ করতে পারেননি। তবে সালাহউদ্দিনের আত্মীয় এসব খাবার ভেতরে দিয়ে আসেন।
সালাহউদ্দিনের টানে প্রবাসী বাংলাদেশী রবিন: শিলংয়ের সিভিল হাসপাতালের আন্ডার ট্রায়াল প্রিজনারে (ইউটিপি) চিকিৎসাধীন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদের টানে ভারতে চলে এসেছেন জাপান প্রবাসী বাংলাদেশী পাইলট রবিন কে জামান। গত শনিবার দুপুরে মেঘালয়ের শিলংয়ে পৌঁছে একটি হোটেলে উঠেছেন। এসেই সিভিল হাসপাতালে গিয়ে সালাহউদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করেছেন। গতকালও হাসপাতালে নিয়ে গেছেন খাবার দাবার। জাপানে উঁচুমাপের ব্যবসায়ী হলেও গড়ে তুলেছেন ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী প্রত্যাগত প্রবাসী দল’। তিনি এ সংগঠনের সভাপতি। হোটেল লবিতে বসে তিনি মানবজমিনকে জানান, বিএনপির একজন ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা সালাহউদ্দিনের প্রেমে পড়া স্বাভাবিক ব্যাপার। যদিও সালাহউদ্দিন ভাইয়ের সঙ্গে আমার স্বল্প পরিচয় রয়েছে। কিন্তু জাতীয়তাবাদী আদর্শের একজন প্রবাসী কর্মী হিসেবে মনে করেছি বিপদের এই মুহূর্তে তার পাশে দাঁড়ানো উচিত। ওই প্রেরণা থেকে এসেছি। এর বাইরে কিছু নয়। কতদিন শিলংয়ে থাকবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনও ডিসিশন নেইনি। তবে আমি ভারতে ৯০ দিন অবস্থান করতে পারবো। এর মধ্যেও ভাইয়ের সমস্যার সমাধান না হলে ভিসার মেয়াদ আবার বাড়িয়ে নেব। সেটা কোন সমস্যা নয়। রবিনের আসার মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, খাবার-দাবার, আইনি বিষয়ে সহায়তা, মানসিক সাপোর্ট ও কাপড়- চোপড়সহ নানা বিষয়ে সহায়তা দিতে এসেছি। কখন শিলংয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৩ই মে বাংলাদেশী সংবাদপত্রের অনলাইন ভার্সন দেখেই আসার সিদ্ধান্ত নেই। এরপর ভিসা প্রসেসিং করে আসতে একটু দেরি হয়ে গেছে। ২০দলীয় জোটের সব পর্যায়ের নেতা ও জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে পাইলট রবিন বলেন, ২০দলীয় জোটের প্রতিটি দল থেকে একজন করে নেতা এসে তার পাশে দাঁড়ানো উচিত। এতে তার মনোবল বেড়ে যাবে। এছাড়া, জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী সব প্রবাসী ভাই-বোনদের সালাহউদ্দিন ভাইয়ের পাশে এসে দাঁড়ানো উচিত বলে মনে করছি।
শিগগিরই আদালতে উঠছেন না সালাহউদ্দিন: শিগগিরই আদালতে ওঠানো হচ্ছে না বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদকে। সিভিল হাসপাতালের ডাক্তাররা জানিয়েছেন, কিডনি ও হার্টের আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার প্রয়োজন রয়েছে। ওইসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে কয়েক দিন সময় লেগে যাবে। এ কারণে ডাক্তারদের সুস্থতার সার্টিফিকেট নিয়ে আদালতে ওঠাতে কয়েক দিন সময় লেগে যেতে পারে। সালাহউদ্দিনের স্বাস্থ্যের বিষয়ে সিভিল হাসপাতালের কার্ডিওলজিস্ট জিকে গোস্বামী মানবজমিনকে জানান, তাকে দেখে আসার পর এমন কিছু মনে হয়নি। ১৫ মিনিট দেখেছি। তিনি কথা ভুলে যাচ্ছেন বা ওই রকম কিছু আমার কাছে মনে হয়নি।
সালাহউদ্দিনকে দেখতে ভারতে এসেছেন তাবিথ: শিলংয়ের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিনকে দেখতে ভারতে এসেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল। তিনি একটি হোটেলে উঠেছেন। আজ সকালে সিভিল হাসপাতালে সালাউহদ্দিনকে দেখতে যাবেন। বিষয়টি সম্পর্কে বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি নিশ্চিত করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তাবিথ আউয়ালকে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে বারণ করে দেয়া হয়েছে। তাই মিডিয়ার সঙ্গে কোন কথা বলবেন না তাবিথ। তবে সালাহউদ্দিনের সঙ্গে তার দেখা হবে কিনা- ওই বিষয়টি নির্ভর করে পুলিশ সুপারের আদেশের ওপর।
কথা ভুলে যাচ্ছেন সালাহউদ্দিন: মানসিক বিপর্যয় এখনও কাটেনি সালাহউদ্দিন আহমেদের। ভীতি, উৎকণ্ঠা ও আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন তিনি। কোন কথা মনে রাখতে পারছেন না। গতকাল সিভিল হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন সালাহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর এসব কথা বলেন আব্দুল লতিফ জনি। ভারতে পাসপোর্ট ছাড়া আসার ঘটনায় ওনার মধ্যে কোন ধরনের অনুশোচনা, ভুল স্বীকার বা অন্য কিছু আছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল লতিফ জনি বলেন, এ ব্যাপারে গত শুক্রবার দেখা করে বিষয়টি সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি আমাকে জানিয়েছেন, আমি এদেশে এসেছি নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে। কিভাবে এসেছি সেটা আমি জানি না। এদেশে পাসপোর্ট ছাড়া আসার ঘটনা সত্যি। এ কারণে আমার বিরুদ্ধে ভারতীয় ইমিগ্রেশন আইন অনুযায়ী অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা হয়েছে। ওনার স্ত্রী আসার পর এ মামলা কিভাবে মোকাবিলা করা যায় তা আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি বলেন, আজকে (গতকাল) তাকে দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি। ওনার পায়ের ভয়ানক অবস্থা দেখালেন। পা টিপলেই দেবে যাচ্ছে, মিলে যাচ্ছে না। তার মানে ওনার কিডনির অবস্থা খুবই খারাপ। গত কয়েক দিন কিডনির অনেক টেস্ট হয়েছে। ওই সব টেস্টের রিপোর্ট এখনও পাওয়া যায়নি। হার্ট বা কিডনির জন্য কোন বোর্ড বসানো হয়েছে কিনা সে বিষয়টি আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি জানিয়েছেন, প্রতিদিন ডাক্তার আসছে। হয়তো মনে করছেন রিপোর্টগুলো পেলে বোর্ড বসিয়ে ট্রিটমেন্টের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। একটা কথা সালাহউদ্দিন জোর দিয়ে বলেছেন, ভারতীয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেস্ট লেভেল দিয়ে আমাকে সুস্থ করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু সিঙ্গাপুরে যে ডাক্তারের অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন ওই ধরনের ইনফ্রাস্ট্রাকচার এ হাসপাতালে নেই। এ কারণে এই হাসপাতালে যে চিকিৎসা চলছে তা ওনার জন্য কতটুকু প্রযোজ্য এ নিয়ে তার সন্দেহ রয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরকে কেন প্রাধান্য দিচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল লতিফ জনি বলেন, সিঙ্গাপুর বলে কোন কথা নেই। আমরা বলছি স্পেশালাইজড হসপিটালের কথা। সেটা বিশ্বের যে কোন দেশে হতে পারে। কিন্তু আমরা সিঙ্গাপুরের কথা বলছি এ কারণে যে, তিনি অতীতে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কোর্টে ওঠানোর বিষয়টি দেরি হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা নির্ভর করবে এদেশের ডাক্তারদের রিপোর্টের উপর। এ বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করবো না। এখানকার আইন ও মেডিক্যাল সিস্টেম আমাদের দেশের মতো নয়। ওনারা ওনাদের আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবেন। লতিফ জনি বলেন, সালাহউদ্দিন আহমেদ মানসিকভাবে এতটাই বিপর্যস্ত যে কোন কথা মনে রাখতে পারছেন না। একটা কথা বলে কিছুক্ষণ পরেই তা ভুলে যাচ্ছেন। এটা কেন হচ্ছে, সেটি নিয়ে আমার মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার অবস্থায় আছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমি যেটা দেখলাম মুভ করার মতো অবস্থায় তিনি নেই। তার মানে আইনি প্রক্রিয়া এখনই শুরু হচ্ছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে জনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। এ বিষয়টি ভাল জানবেন ডাক্তাররা। আইনজীবীদের সঙ্গে কথা হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আনঅফিসিয়ালি কথা হয়েছে। কারণ তারা কাগজপত্র ও লিগ্যাল গার্ডিয়ান ছাড়া কোন কথা বলবে না। লিগ্যাল গার্ডিয়ান ওনার স্ত্রী। ওনার স্ত্রী আসলেই আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলবেন। কথা বলে সালাহউদ্দিনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ কিভাবে মোকাবিলা করা যায় ওই বিষয়টি সিদ্ধান্ত নেবেন।
সালাহউদ্দিনকে দেখতে শিলংয়ে বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতারা: সালাহউদ্দিন আহমেদকে দেখতে শতাধিক বিএনপি নেতা এখন ভারতে রয়েছেন। কিন্তু পুলিশের অনুমতি না পাওয়ায় কেউই দেখা করতে পারছেন না। গতকাল সালাহউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করতে সিভিল হাসপাতালে আসেন লালমনিরহাট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক শাহেদুল ইসলাম পাটোয়ারী (সাজু)। তিনি মানবজমিনকে জানান, গত ১৫ই মে চেংড়াবান্ধা বর্ডার হয়ে ভারতে এসেছি। উদ্দেশ্য একটাই সালাহউদ্দিন ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা। কিন্তু পুলিশের অনুমতি না মেলায় সাক্ষাৎ করতে পারিনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আসা জেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আতিকুল হক জালাল সালাহউদ্দিনকে দেখতে হাসপাতালে আসেন। তিনিও দেখা করতে পারেননি। জালাল মানবজমিনকে জানান, আখাউড়া বর্ডার দিয়ে ১২ই মে এসেছি নেতাকে দেখতে। কিন্তু দেখা হয়নি (এ কথা বলেই কান্না করেন জামাল)। তৃণমূলের কর্মীদের প্রতি সালাহউদ্দিন ভাইয়ের দরদ অনেক বেশি। এ কারণে এসেছি। বিএনপির এক নেতা জানান, শিলংয়ের আশেপাশের বর্ডার দিয়ে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী এসেছেন। কিন্তু হাসপাতালে গিয়ে দেখা করা যাচ্ছে না- এ সংবাদ পাওয়ার পর সিভিল হাসপাতালে তারা আসছেন না।
সালাহউদ্দিনের জন্য কাপড়-চোপড়, খাবার: জনি সালাহউদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তিনটি টিশার্ট, তিনটি ট্রাউজার, ১০টি সাবান ও ২০টি মিনিপ্যাক শ্যাম্পু দিয়ে আসেন। এ সময় সালাহউদ্দিন নিজের কাছে একটি ট্রাউজার রেখে বাকিগুলো অন্য বন্দিদের মধ্যে ভাগ করে দেন। এ সময় জনিকে উদ্দেশ্য করে সালাহউদ্দিন বলেন, হাসপাতালে খুব ঠাণ্ডা লাগে। আমার একটি শাল দরকার। এছাড়া আরেকটি কুর্তা চান। এরপর বাইরে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। জনি আসার কিছুক্ষণ পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী প্রত্যাগত প্রবাসী দলের সভাপতি পাইলট রবিন কে জামান ইডেন রেস্টুরেন্টের নাস্তা নিয়ে দেখা করতে আসেন। এসব নাস্তার মধ্যে ছিল রুটি, সবজি ও ভাজি। কিন্তু অনুমতি না থাকায় তিনি সাক্ষাৎ করতে পারেননি। তবে সালাহউদ্দিনের আত্মীয় এসব খাবার ভেতরে দিয়ে আসেন।
সালাহউদ্দিনের টানে প্রবাসী বাংলাদেশী রবিন: শিলংয়ের সিভিল হাসপাতালের আন্ডার ট্রায়াল প্রিজনারে (ইউটিপি) চিকিৎসাধীন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদের টানে ভারতে চলে এসেছেন জাপান প্রবাসী বাংলাদেশী পাইলট রবিন কে জামান। গত শনিবার দুপুরে মেঘালয়ের শিলংয়ে পৌঁছে একটি হোটেলে উঠেছেন। এসেই সিভিল হাসপাতালে গিয়ে সালাহউদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করেছেন। গতকালও হাসপাতালে নিয়ে গেছেন খাবার দাবার। জাপানে উঁচুমাপের ব্যবসায়ী হলেও গড়ে তুলেছেন ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী প্রত্যাগত প্রবাসী দল’। তিনি এ সংগঠনের সভাপতি। হোটেল লবিতে বসে তিনি মানবজমিনকে জানান, বিএনপির একজন ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা সালাহউদ্দিনের প্রেমে পড়া স্বাভাবিক ব্যাপার। যদিও সালাহউদ্দিন ভাইয়ের সঙ্গে আমার স্বল্প পরিচয় রয়েছে। কিন্তু জাতীয়তাবাদী আদর্শের একজন প্রবাসী কর্মী হিসেবে মনে করেছি বিপদের এই মুহূর্তে তার পাশে দাঁড়ানো উচিত। ওই প্রেরণা থেকে এসেছি। এর বাইরে কিছু নয়। কতদিন শিলংয়ে থাকবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনও ডিসিশন নেইনি। তবে আমি ভারতে ৯০ দিন অবস্থান করতে পারবো। এর মধ্যেও ভাইয়ের সমস্যার সমাধান না হলে ভিসার মেয়াদ আবার বাড়িয়ে নেব। সেটা কোন সমস্যা নয়। রবিনের আসার মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, খাবার-দাবার, আইনি বিষয়ে সহায়তা, মানসিক সাপোর্ট ও কাপড়- চোপড়সহ নানা বিষয়ে সহায়তা দিতে এসেছি। কখন শিলংয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৩ই মে বাংলাদেশী সংবাদপত্রের অনলাইন ভার্সন দেখেই আসার সিদ্ধান্ত নেই। এরপর ভিসা প্রসেসিং করে আসতে একটু দেরি হয়ে গেছে। ২০দলীয় জোটের সব পর্যায়ের নেতা ও জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে পাইলট রবিন বলেন, ২০দলীয় জোটের প্রতিটি দল থেকে একজন করে নেতা এসে তার পাশে দাঁড়ানো উচিত। এতে তার মনোবল বেড়ে যাবে। এছাড়া, জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী সব প্রবাসী ভাই-বোনদের সালাহউদ্দিন ভাইয়ের পাশে এসে দাঁড়ানো উচিত বলে মনে করছি।
শিগগিরই আদালতে উঠছেন না সালাহউদ্দিন: শিগগিরই আদালতে ওঠানো হচ্ছে না বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদকে। সিভিল হাসপাতালের ডাক্তাররা জানিয়েছেন, কিডনি ও হার্টের আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার প্রয়োজন রয়েছে। ওইসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে কয়েক দিন সময় লেগে যাবে। এ কারণে ডাক্তারদের সুস্থতার সার্টিফিকেট নিয়ে আদালতে ওঠাতে কয়েক দিন সময় লেগে যেতে পারে। সালাহউদ্দিনের স্বাস্থ্যের বিষয়ে সিভিল হাসপাতালের কার্ডিওলজিস্ট জিকে গোস্বামী মানবজমিনকে জানান, তাকে দেখে আসার পর এমন কিছু মনে হয়নি। ১৫ মিনিট দেখেছি। তিনি কথা ভুলে যাচ্ছেন বা ওই রকম কিছু আমার কাছে মনে হয়নি।
সালাহউদ্দিনকে দেখতে ভারতে এসেছেন তাবিথ: শিলংয়ের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিনকে দেখতে ভারতে এসেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল। তিনি একটি হোটেলে উঠেছেন। আজ সকালে সিভিল হাসপাতালে সালাউহদ্দিনকে দেখতে যাবেন। বিষয়টি সম্পর্কে বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি নিশ্চিত করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তাবিথ আউয়ালকে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে বারণ করে দেয়া হয়েছে। তাই মিডিয়ার সঙ্গে কোন কথা বলবেন না তাবিথ। তবে সালাহউদ্দিনের সঙ্গে তার দেখা হবে কিনা- ওই বিষয়টি নির্ভর করে পুলিশ সুপারের আদেশের ওপর।
No comments