উন্নয়নের নামে ঐতিহ্য ধ্বংস
সড়ক সম্প্রসারণের জন্য রাজশাহী নগরের মিশন হাসপাতাল মোড়ের ঢোপকলটি সম্প্রতি অপসারণ করা হয় l প্রথম আলো |
রাজশাহী
নগরে সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য একসময় প্রসিদ্ধ ছিল ঢোপকল। ৭০ থেকে ৮০
বছর আগে বসানো এসব ঢোপকলের অনেকগুলোই এখনো সচল। নগরের সড়ক সম্প্রসারণের
নামে একের পর এক ঢোপকল উচ্ছেদ চলছেই।
২০১০ সালের দিকে নগরে প্রায় ২০টি ঢোপকল ছিল। রাস্তা প্রশস্তকরণ ও বর্তমান পানি সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে খাপ না খাওয়ায় রাজশাহী সিটি করপোরেশন এসব ঢোপকলের বেশির ভাগই ভেঙে ফেলেছে।
সর্বশেষ ১৩ মে নগরের চণ্ডীপুর এলাকায় একটি ঢোপকল অপসারণ করা হয়। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রাস্তা চওড়া করার জন্য এটি অপসারণ করতে হয়েছে।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, রায় ডি এন দাশ গুপ্ত (১৯৩৪-৩৯) রাজশাহী পৌরসভার চেয়ারম্যান থাকাকালে তাঁর উদ্যোগ এবং রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় নগরবাসীর জন্য সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সে সময় রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশন মহারাণী হেমন্ত কুমারীসহ অন্যান্য দানশীল ব্যক্তিকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসার অনুরোধ করে। তখন হেমন্ত কুমারী একাই ৬৫ হাজার টাকা অনুদান দেন। বিশাল অঙ্কের একক অনুদানের কারণে রাজশাহী জেলা বোর্ডের দান করা জমিতে মহারাণী হেমন্ত কুমারীর নামেই ‘ওয়াটার ওয়ার্কস’ স্থাপিত হয়। সেই সময় ঢোপকলে পানি সরবরাহ ব্যবস্থার পাইপগুলো ছিল কাস্ট আয়রনের এবং অন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যগুলো ছিল পিতলের তৈরি। সিমেন্টের তৈরি ঢোপকলগুলো ব্যতীত অন্য সবকিছুই ইংল্যান্ড থেকে আনা হয়েছিল। সে সময় হেমন্ত কুমারী ওয়াটার ওয়ার্কসে প্রতিদিন ভূ-গর্ভস্থ পানি শোধন করা হতো। এই পানি শোধন কেন্দ্রে আয়রন, ম্যাংগানিজ ও পানির ক্ষারতা দূর করার ব্যবস্থা ছিল। এই শোধিত পানি রাজশাহী নগরের মোড়ে মোড়ে স্থাপিত ১০০টিরও বেশি ঢোপকলের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যে সরবরাহ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ঢোপকলের প্রতিটির পানি ধারণক্ষমতা ৪৭০ গ্যালন। এগুলোর প্রতিটিই ছিল একটি ‘রাফিং ফিল্টার’। এতে বালি ও পাথরের স্তর ছিল যাতে সরবরাহকৃত পানি আরও পরিশোধিত হয়ে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাত। সে সময় সারা দিনে মাত্র দুই ঘণ্টা পানি সরবরাহ করা হতো। এ জন্য প্রতিটি ঢোপকলকে পানি রিজার্ভ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
বর্তমানে সড়ক প্রশস্তকরণের নামে এসব ঢোপকল সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। শুধু সিটি করপোরেশন নয়, অন্য লোকজনও নিজের সুবিধার জন্য ঢোপকল সরিয়ে ফেলছেন। এ নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। রাজশাহী ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি আহসান কবির বলেন, রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী এই ঢোপকল দেশে আর কোথাও নেই। তৎকালীন সময়ে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহের যে দৃষ্টান্ত তা বিরাট ঐতিহ্য। নির্বিচারে এই ঢোপকলগুলো ভেঙে ফেলা হচ্ছে। তিনি এগুলো সংরক্ষণের জোর দাবি জানান।
হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি মাহাবুব সিদ্দিকী বলেন, ঢোপকলগুলো রাজশাহীর ঐতিহ্য। ঢোপকলের মতোই রাজশাহীর অনেক ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এই ঐতিহ্যগুলো রক্ষার জন্য অতিসত্বর রাজশাহীতে একটি নগর জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা উচিত। এ ছাড়াও রাজশাহীতে যেসব ঐতিহাসিক নিদর্শন এখনো টিকে আছে সেগুলো রক্ষার জন্য সবাইকে উদ্যোগী ও সচেতন হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, ‘রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য ঢোপকলগুলো ভাঙা হয়েছে। সবগুলো ঢোপকল আর চালু নেই। রাস্তা বড় করতে গেলে এগুলো আর রাখা যাচ্ছে না। তা ছাড়াও বর্তমান পানি সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে এগুলো যায় না।’ তিনি জানান, যেসব ঢোপকল অপসারণ করা হচ্ছে তা ঐতিহ্য হিসেবে ফুটপাতে এমনি বসিয়ে রাখা হবে। যাতে ভবিষ্যতে মানুষ বুঝতে পারে যে এগুলো দিয়ে একসময় নগরে পানি সরবরাহ করা হয়েছে।
২০১০ সালের দিকে নগরে প্রায় ২০টি ঢোপকল ছিল। রাস্তা প্রশস্তকরণ ও বর্তমান পানি সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে খাপ না খাওয়ায় রাজশাহী সিটি করপোরেশন এসব ঢোপকলের বেশির ভাগই ভেঙে ফেলেছে।
সর্বশেষ ১৩ মে নগরের চণ্ডীপুর এলাকায় একটি ঢোপকল অপসারণ করা হয়। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রাস্তা চওড়া করার জন্য এটি অপসারণ করতে হয়েছে।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, রায় ডি এন দাশ গুপ্ত (১৯৩৪-৩৯) রাজশাহী পৌরসভার চেয়ারম্যান থাকাকালে তাঁর উদ্যোগ এবং রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় নগরবাসীর জন্য সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সে সময় রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশন মহারাণী হেমন্ত কুমারীসহ অন্যান্য দানশীল ব্যক্তিকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসার অনুরোধ করে। তখন হেমন্ত কুমারী একাই ৬৫ হাজার টাকা অনুদান দেন। বিশাল অঙ্কের একক অনুদানের কারণে রাজশাহী জেলা বোর্ডের দান করা জমিতে মহারাণী হেমন্ত কুমারীর নামেই ‘ওয়াটার ওয়ার্কস’ স্থাপিত হয়। সেই সময় ঢোপকলে পানি সরবরাহ ব্যবস্থার পাইপগুলো ছিল কাস্ট আয়রনের এবং অন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যগুলো ছিল পিতলের তৈরি। সিমেন্টের তৈরি ঢোপকলগুলো ব্যতীত অন্য সবকিছুই ইংল্যান্ড থেকে আনা হয়েছিল। সে সময় হেমন্ত কুমারী ওয়াটার ওয়ার্কসে প্রতিদিন ভূ-গর্ভস্থ পানি শোধন করা হতো। এই পানি শোধন কেন্দ্রে আয়রন, ম্যাংগানিজ ও পানির ক্ষারতা দূর করার ব্যবস্থা ছিল। এই শোধিত পানি রাজশাহী নগরের মোড়ে মোড়ে স্থাপিত ১০০টিরও বেশি ঢোপকলের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যে সরবরাহ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ঢোপকলের প্রতিটির পানি ধারণক্ষমতা ৪৭০ গ্যালন। এগুলোর প্রতিটিই ছিল একটি ‘রাফিং ফিল্টার’। এতে বালি ও পাথরের স্তর ছিল যাতে সরবরাহকৃত পানি আরও পরিশোধিত হয়ে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাত। সে সময় সারা দিনে মাত্র দুই ঘণ্টা পানি সরবরাহ করা হতো। এ জন্য প্রতিটি ঢোপকলকে পানি রিজার্ভ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
বর্তমানে সড়ক প্রশস্তকরণের নামে এসব ঢোপকল সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। শুধু সিটি করপোরেশন নয়, অন্য লোকজনও নিজের সুবিধার জন্য ঢোপকল সরিয়ে ফেলছেন। এ নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। রাজশাহী ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি আহসান কবির বলেন, রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী এই ঢোপকল দেশে আর কোথাও নেই। তৎকালীন সময়ে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহের যে দৃষ্টান্ত তা বিরাট ঐতিহ্য। নির্বিচারে এই ঢোপকলগুলো ভেঙে ফেলা হচ্ছে। তিনি এগুলো সংরক্ষণের জোর দাবি জানান।
হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি মাহাবুব সিদ্দিকী বলেন, ঢোপকলগুলো রাজশাহীর ঐতিহ্য। ঢোপকলের মতোই রাজশাহীর অনেক ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এই ঐতিহ্যগুলো রক্ষার জন্য অতিসত্বর রাজশাহীতে একটি নগর জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা উচিত। এ ছাড়াও রাজশাহীতে যেসব ঐতিহাসিক নিদর্শন এখনো টিকে আছে সেগুলো রক্ষার জন্য সবাইকে উদ্যোগী ও সচেতন হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, ‘রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য ঢোপকলগুলো ভাঙা হয়েছে। সবগুলো ঢোপকল আর চালু নেই। রাস্তা বড় করতে গেলে এগুলো আর রাখা যাচ্ছে না। তা ছাড়াও বর্তমান পানি সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে এগুলো যায় না।’ তিনি জানান, যেসব ঢোপকল অপসারণ করা হচ্ছে তা ঐতিহ্য হিসেবে ফুটপাতে এমনি বসিয়ে রাখা হবে। যাতে ভবিষ্যতে মানুষ বুঝতে পারে যে এগুলো দিয়ে একসময় নগরে পানি সরবরাহ করা হয়েছে।
No comments