মানব পাচার- বন্দিশালায় কষ্টের জীবন by টিপু সুলতান
সাগরপথে
মানব পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ে অসংখ্য বাংলাদেশি এখন থাইল্যান্ডের
বিভিন্ন বন্দিশালায় ধুঁকছেন। কেউ কারাগারে, কেউ অভিবাসন পুলিশের ক্যাম্পে,
আবার কেউ বা থানাহাজতে। এঁদের কারও কারাবাসের মেয়াদ দুই দিন, কারও দুই
বছর বা তারও বেশি।
থাইল্যান্ডে বন্দিশালায় এ মুহূর্তে কত বাংলাদেশি আছেন, তার পুরো হিসাব বাংলাদেশ দূতাবাস, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বা ইউএনএইচসিআর—কারও কাছে নেই।
থাইল্যান্ডের স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশি বন্দীর সংখ্যা হবে কয়েক হাজার। অবস্থা এমন হয়েছে যে সমুদ্র উপকূলবর্তী দক্ষিণ থাইল্যান্ডের দুটি প্রদেশ সংখলা ও পুকেটের কারাগার ও ডিটেনশন ক্যাম্পে আর জায়গা হচ্ছে না। তাই অনেক বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাকে দেশটির উত্তরাঞ্চলের চিয়াংরাই প্রদেশসহ কম্বোডিয়ার সীমান্তে স্থাপিত বিভিন্ন ডিটেনশন ক্যাম্পে স্থানান্তর করা হয়েছে। বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন মুখপাত্র জানান, তাঁদের কাছে ১১ মে পর্যন্ত যে হিসাব আছে, তাতে এ দেশে বন্দী বাংলাদেশির সংখ্যা ৪১৯। তিনি বলেন, শুধু সাজা শেষ হলে, তারপর আদালতের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ইমিগ্রেশন ক্যাম্পে পাঠানোর পর থাই কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানায়। এরপর দূতাবাসের কর্মকর্তারা সাক্ষাৎকার নিয়ে তাঁদের নাম-ঠিকানা ঢাকায় পাঠান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এঁদের নাগরিকত্ব ঠিক আছে বলে ছাড়পত্র আসার পরই দূতাবাস দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ে যাঁরা আটক হয়েছেন, তাঁদের সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই। এমনকি দু-তিন বছর আগে আটক হওয়া অনেকের তথ্য দূতাবাসের কাছে নেই। প্রথম আলোর অনুসন্ধানে ১৬ তরুণের সন্ধান মিলেছে, যাঁরা প্রায় দুই বছর ধরে কারাগারে বা পুলিশ হাজতে আছেন। কিন্তু বাংলাদেশ দূতাবাস তা জানে না বা থাই কর্তৃপক্ষ দূতাবাসকে জানায়নি। এঁদের দুজন ইতিমধ্যে মারা গেছেন। স্বজনেরা লাশও পাননি।
দূতাবাসের ওই মুখপাত্র জানান, দূতাবাসের কাউন্সিলর শাখার কর্মকর্তারা গত বছরের মার্চ থেকে এ বছরের ১০ মে পর্যন্ত আটক থাকা ১ হাজার ২১৪ জন বাংলাদেশির সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পরিচয় নিশ্চিত হতে। আর গত বছরের ১৩ জুন থেকে ৮ মে পর্যন্ত ৭৯৯ জনকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
থাইল্যান্ডে বাংলাদেশ বিমানের কান্ট্রি ম্যানেজার নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, এই ৭৯৯ জনের মধ্যে ১৩ জন থাই এয়ারওয়েজে এবং অন্যরা বাংলাদেশ বিমানে দেশে ফিরেছেন। বিমান ভাড়া দিয়েছে তাঁদের পরিবার।
এ ছাড়া আটক বাংলাদেশিদের পরিচয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ছাড়পত্র না এলে তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে এখানকার সরকার বা বাংলাদেশ দূতাবাস কিছু করতে পারে না। কিন্তু এ পরিচয় নিশ্চিত করার কাজটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় করে স্থানীয় পুলিশের মাধ্যমে। এ ক্ষেত্রে পুলিশকে টাকা না দিলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন আসে না, এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
আইওএম-এর ব্যাংকক কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, সাম্প্রতিককালে যাঁরা ধরা পড়েছেন, তাঁদের প্রথম যাচাই-বাছাইয়ের কাজ করছে থাই কর্তৃপক্ষ। এরপর দ্বিতীয় ধাপে গিয়ে তারা আইওএম ও ইউএনএইচসিআরকে ডাকবে।
এই কর্মকর্তা আরও জানান, আটক হওয়ার পর শুরুতে কোনো কোনো বাংলাদেশি নিজেদের রোহিঙ্গা বলে দাবি করেন। তাঁদের ধারণা, রোহিঙ্গা দাবি করলে শরণার্থী মর্যাদা পাওয়া যাবে এবং এ দেশে থেকে কাজ করা যাবে। পরে ভুল ভাঙলে অনেকে আইওএম বা ইউএনএইচসিআরের কাছে আসল পরিচয় স্বীকার করেন।
থাইল্যান্ডে বন্দিশালায় এ মুহূর্তে কত বাংলাদেশি আছেন, তার পুরো হিসাব বাংলাদেশ দূতাবাস, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বা ইউএনএইচসিআর—কারও কাছে নেই।
থাইল্যান্ডের স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশি বন্দীর সংখ্যা হবে কয়েক হাজার। অবস্থা এমন হয়েছে যে সমুদ্র উপকূলবর্তী দক্ষিণ থাইল্যান্ডের দুটি প্রদেশ সংখলা ও পুকেটের কারাগার ও ডিটেনশন ক্যাম্পে আর জায়গা হচ্ছে না। তাই অনেক বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাকে দেশটির উত্তরাঞ্চলের চিয়াংরাই প্রদেশসহ কম্বোডিয়ার সীমান্তে স্থাপিত বিভিন্ন ডিটেনশন ক্যাম্পে স্থানান্তর করা হয়েছে। বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন মুখপাত্র জানান, তাঁদের কাছে ১১ মে পর্যন্ত যে হিসাব আছে, তাতে এ দেশে বন্দী বাংলাদেশির সংখ্যা ৪১৯। তিনি বলেন, শুধু সাজা শেষ হলে, তারপর আদালতের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ইমিগ্রেশন ক্যাম্পে পাঠানোর পর থাই কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানায়। এরপর দূতাবাসের কর্মকর্তারা সাক্ষাৎকার নিয়ে তাঁদের নাম-ঠিকানা ঢাকায় পাঠান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এঁদের নাগরিকত্ব ঠিক আছে বলে ছাড়পত্র আসার পরই দূতাবাস দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ে যাঁরা আটক হয়েছেন, তাঁদের সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই। এমনকি দু-তিন বছর আগে আটক হওয়া অনেকের তথ্য দূতাবাসের কাছে নেই। প্রথম আলোর অনুসন্ধানে ১৬ তরুণের সন্ধান মিলেছে, যাঁরা প্রায় দুই বছর ধরে কারাগারে বা পুলিশ হাজতে আছেন। কিন্তু বাংলাদেশ দূতাবাস তা জানে না বা থাই কর্তৃপক্ষ দূতাবাসকে জানায়নি। এঁদের দুজন ইতিমধ্যে মারা গেছেন। স্বজনেরা লাশও পাননি।
দূতাবাসের ওই মুখপাত্র জানান, দূতাবাসের কাউন্সিলর শাখার কর্মকর্তারা গত বছরের মার্চ থেকে এ বছরের ১০ মে পর্যন্ত আটক থাকা ১ হাজার ২১৪ জন বাংলাদেশির সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পরিচয় নিশ্চিত হতে। আর গত বছরের ১৩ জুন থেকে ৮ মে পর্যন্ত ৭৯৯ জনকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
থাইল্যান্ডে বাংলাদেশ বিমানের কান্ট্রি ম্যানেজার নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, এই ৭৯৯ জনের মধ্যে ১৩ জন থাই এয়ারওয়েজে এবং অন্যরা বাংলাদেশ বিমানে দেশে ফিরেছেন। বিমান ভাড়া দিয়েছে তাঁদের পরিবার।
এ ছাড়া আটক বাংলাদেশিদের পরিচয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ছাড়পত্র না এলে তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে এখানকার সরকার বা বাংলাদেশ দূতাবাস কিছু করতে পারে না। কিন্তু এ পরিচয় নিশ্চিত করার কাজটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় করে স্থানীয় পুলিশের মাধ্যমে। এ ক্ষেত্রে পুলিশকে টাকা না দিলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন আসে না, এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
আইওএম-এর ব্যাংকক কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, সাম্প্রতিককালে যাঁরা ধরা পড়েছেন, তাঁদের প্রথম যাচাই-বাছাইয়ের কাজ করছে থাই কর্তৃপক্ষ। এরপর দ্বিতীয় ধাপে গিয়ে তারা আইওএম ও ইউএনএইচসিআরকে ডাকবে।
এই কর্মকর্তা আরও জানান, আটক হওয়ার পর শুরুতে কোনো কোনো বাংলাদেশি নিজেদের রোহিঙ্গা বলে দাবি করেন। তাঁদের ধারণা, রোহিঙ্গা দাবি করলে শরণার্থী মর্যাদা পাওয়া যাবে এবং এ দেশে থেকে কাজ করা যাবে। পরে ভুল ভাঙলে অনেকে আইওএম বা ইউএনএইচসিআরের কাছে আসল পরিচয় স্বীকার করেন।
থাইল্যান্ডের একটি আটককেন্দ্রে গতকাল অবৈধ অভিবাসীদের তথ্য সংগ্রহ করে সেখানকার পুলিশ। এ সময় তথ্য দেওয়ার জন্য অনেকে হাত উঁচু করেন l প্রথম আলো |
এদিকে
সংখলা প্রদেশের রাত্তাফোমে এ মাসের প্রথম সপ্তাহে তিন দফায় যে ২২০ জনকে
আটক করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ১৮০ জনই বাংলাদেশের বলে জানিয়েছেন সেখানকার
ডিটেনশন ক্যাম্পের কর্মকর্তারা। অন্যরা মিয়ানমারের আরাকানের রোহিঙ্গা
জনগোষ্ঠী। থাই সরকারের অভিযানের মুখে মানব পাচারকারীরা তাঁদের জঙ্গলে ছেড়ে
দিয়ে পালিয়ে যায়। সর্বশেষ গত শুক্রবার পুকেটের পাঙ্না দ্বীপে আরও ১০৬
জনকে আটক করা হয়েছে। এঁদের কতজন বাংলাদেশি তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে
পুকেটের স্থানীয় একজন সাংবাদিক এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, সেখানেও
বাংলাদেশি নাগরিক আছে বলে তিনি জেনেছেন।
এ প্রতিবেদক গত তিন দিনে সংখলা প্রদেশের বিভিন্ন জেলায় তিন ধরনের তিনটি বন্দিশালায় (কারাগার, পুলিশের হাজতখানা ও অভিবাসন) বাংলাদেশি বন্দীদের সঙ্গে অল্প সময় কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন। এঁদের মধ্যে সাদাও জেলা কারাগারে থাকা বগুড়ার মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘এখানে যে কী কষ্ট, কীভাবে বলব, বোঝাতে পারব না। খাবার কষ্ট, থাকার কষ্ট, ঠিকভাবে বসা যায় না, অতটুক জায়গায় ঘুমাতে হয়।’
সাতক্ষীরার রবিউল হোসেন বলেন, ‘ওদের ভাষা বুঝি না। আমরা বিদেশি বলে লাথি-গুঁতা মারে, ঘৃণা করে। অসুখ হলে চিকিৎসা দেয় না। দুজন মারা গেছে, গ্যাস্ট্রিকের জন্য তারা খেতে পারত না।’
এর চেয়েও খারাপ দশা অভিবাসন পুলিশের ডিটেনশন ক্যাম্পে। একসঙ্গে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি মিলিয়ে শত শত মানুষ গাদাগাদি করে রাখা। একই কষ্টের কথা জানিয়েছেন হাজ্জাই থানাহাজতে থাকা ১২ বাংলাদেশি তরুণও। কারাবন্দী এসব বাংলাদেশি জানেন না, তাঁদের এ দুর্দশা কবে শেষ হবে।
এ প্রতিবেদক গত তিন দিনে সংখলা প্রদেশের বিভিন্ন জেলায় তিন ধরনের তিনটি বন্দিশালায় (কারাগার, পুলিশের হাজতখানা ও অভিবাসন) বাংলাদেশি বন্দীদের সঙ্গে অল্প সময় কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন। এঁদের মধ্যে সাদাও জেলা কারাগারে থাকা বগুড়ার মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘এখানে যে কী কষ্ট, কীভাবে বলব, বোঝাতে পারব না। খাবার কষ্ট, থাকার কষ্ট, ঠিকভাবে বসা যায় না, অতটুক জায়গায় ঘুমাতে হয়।’
সাতক্ষীরার রবিউল হোসেন বলেন, ‘ওদের ভাষা বুঝি না। আমরা বিদেশি বলে লাথি-গুঁতা মারে, ঘৃণা করে। অসুখ হলে চিকিৎসা দেয় না। দুজন মারা গেছে, গ্যাস্ট্রিকের জন্য তারা খেতে পারত না।’
এর চেয়েও খারাপ দশা অভিবাসন পুলিশের ডিটেনশন ক্যাম্পে। একসঙ্গে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি মিলিয়ে শত শত মানুষ গাদাগাদি করে রাখা। একই কষ্টের কথা জানিয়েছেন হাজ্জাই থানাহাজতে থাকা ১২ বাংলাদেশি তরুণও। কারাবন্দী এসব বাংলাদেশি জানেন না, তাঁদের এ দুর্দশা কবে শেষ হবে।
No comments