যেভাবে উদ্ধার জিহাদ
প্রায়
২৩ ঘণ্টা পর উদ্ধার হয়েছে শিশু জিহাদের নিথর দেহ। শ্বাসরুদ্ধকর উদ্ধার
অভিযান। সব ‘চেষ্টা ব্যার্থ’ হওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক সংবাদ
সম্মেলন করে উদ্ধার তৎপরতার সমাপ্তি ঘোষণা করলেন। কিন্তু তখনো হাল ছাড়েনি
সাধারণ মানুষ। পেশাগত দায়িত্ব নয়, একান্ত মানবিক অনুভূতি থেকে যারা গতকাল
থেকে জিহাদকে উদ্ধারে কাজ করছিলেন তাদের চেষ্টাই গভীর পাইপের তল থেকে উঠে
আসে শিশু জিহাদের নিথর দেহ। নিজস্ব উদ্ভাবনী শক্তি আর মানবতার মহান ব্রত
নিয়ে কয়েক সঙ্গী নিয়ে জিহাদ উদ্ধারে নামেন আবু বকর। বেলা তিনটার দিকে
রাজধানীর মিরপুর থেকে ঘটনাস্থলে আসা আবু বকর সিদ্দিকের বানানো খাঁচার
সাহায্যেই জিহাদকে উদ্ধার করা হয়। আবু বকর সিদ্দিক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন,
গণমাধ্যমে শিশুটিকে উদ্ধার করা যাচ্ছে না দেখে গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত
১২টায় তিনি ঘটনাস্থলে লোহার খাঁচা নিয়ে যান। রাতে একবার খাঁচাটি ভেতরে
ঢুকিয়ে উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তখন উদ্ধার করা যায়নি। খাঁচাটি
কিছুটা ভেঙে যাওয়ায় সারা রাত ধরে তিনি এটি মেরামত করেন। পরে আরও কয়েকজনকে
নিয়ে আবু বকর সিদ্দিক দুটি খাঁচা ভেতরে ঢোকান। এরপর তারা দেখেন, খাঁচায়
কিছু একটা আটকে গেছে। ধীরে ধীরে খাঁচাটি টেনে তোলা হয়। এভাবে উদ্ধার হয়
জিহাদ। ৩টার দিকে জিহাদকে বের করে আনার পর সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে সাড়ে ৩টায় পৌঁছনোর পর জরুরি বিভাগের
চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আবু বকরদের তৈরি যন্ত্রটির সঙ্গে সিসি
ক্যামেরাও পাঠানো হয়েছিল পাইপের ভেতর। ওই ক্যামেরা থেকে পাইপের তলদেশে
জিহাদের অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যায়। যে যন্ত্রটির মাধ্যমে জিহাদের দেহ
উদ্ধার করা হয় লোহার তৈরি ওই যন্ত্রটির নিচের দিকে তিনটি হুক এবং সুতার
তৈরি একটি জাল ছিল। হুক ও জালের মাধ্যমে জিহাদের দেহ খাঁচায় ধরে রেখে উপরে
তোলা হয়। এর আগে শুক্রবার বিকালে রেলওয়ের পরিত্যক্ত পানির পাম্পের কয়েক শ’
ফুট দীর্ঘ গভীর পাইপের ভেতরে পড়ে যায় জিহাদ। এরপরে শুরু হয় উদ্ধার অভিযান।
একের পর এক যন্ত্র আর কৌশল খাটিয়ে চলতে থাকে উদ্ধার অভিযান। চলতে থাকে
বুয়েটের বিশেষজ্ঞ, ফায়ার সার্ভিসের কর্মী আর সাধারণ মানুষের একের পর এক
চেষ্টা। উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ক্যামেরা আর ভারি যন্ত্রপাতি ব্যাবহার করে আজ
দুপুর পর্যন্ত যখন জিহাদের কোন হদিস পাওয়া যায়নি তখন অভিযানের সমাপ্তি
ঘোষণা করেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক। তিনি যখন সংবাদ সম্মেলন করে
নিজেদের গুটিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেন টিক সেই মুহূর্তে খবর আসে স্থানীয়দের
চেষ্টা জিহাদকে উদ্ধারের। জিহাদকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা
তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে ঠিক কখন জিহাদ মারা যায় পোস্টমর্টেম রিপোর্ট
থেকে তা জানা যাবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
No comments