নিষেধাজ্ঞা- গাজীপুরে বিএনপি’র হরতাল আজ, দেশজুড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ, মিছিল
সকাল
থেকে জেলাজুড়ে ছিল চরম উত্তেজনা। ২০ দল ও ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ
ঘিরে নানা আলোচনা। ভয় আর শঙ্কা। টান টান উত্তেজনার মধ্যে দুপুরে জেলায় ১৪৪
ধারা জারির কথা জানান পুলিশ সুপার। তবে বিকালে জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন,
শুধুমাত্র সমাবেশস্থল ও আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। জেলার
অন্য কোথাও আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রশাসনের
পক্ষ থেকে এ ঘোষণার পর রাত পর্যন্ত সমাবেশ করার বিষয়ে দুই পক্ষ থেকেই কড়া
বক্তব্য এসেছে। সমাবেশ করার বিষয়ে জানানো হয়েছে অনড় অবস্থানের কথা। এমন
অবস্থার মধ্যেই রাতে করণীয় নির্ধারণে সিনিয়র নেতাদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন
বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া। বৈঠক শেষে
সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে জোটের সিদ্ধান্তের কথা জানান দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় মির্জা আলমগীর ও গাজীপুর জেলা বিএনপির
সভাপতি ফজলুল হক মিলন ২০ দলীয় জোট কেন্দ্রীয় ও গাজীপুর জেলার তরফে নেয়া
কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ফজলুল হক মিলন জানান, খালেদা জিয়ার সমাবেশে ১৪৪ ধারা
জারির প্রতিবাদে শনিবার গাজীপুর জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করবে ২০ দল।
এ সময় মির্জা ফখরুল জানান, একই ঘটনার প্রতিবাদে আজ সারা দেশে বিক্ষোভ করবে
২০ দল।
তিনি বলেন, গাজীপুর সরকারি ভাওয়াল বদরে আলম কলেজ মাঠে ২০ দল আয়োজিত শনিবারের জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেয়ার কথা ছিল বিএনপি চেয়ারপারসন ও জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়ার। কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুমতি এবং প্রশাসনকে অবহিতও করা হয়েছিল। কিন্তু সরকার ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে অন্যায়ভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। পুলিশের ছত্রছায়ায় আক্রমণ ও গোলাগুলি করে ছাত্রলীগ কলেজ মাঠ দখল করে রাখে। শেষে পুলিশ সারা জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে। এভাবেই ঢাকা মহানগরে দেড় বছর ধরে সমাবেশ নিষিদ্ধ করে রেখেছে সরকার। গাজীপুরেও অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি তারই ধারাবাহিকতা। তিনি বলেন, ১৪৪ ধারা জারির মাধ্যমে আমাদের সাংবিধানিক অধিকার বঞ্চিত ও গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করা হলো। অবৈধ সরকার এভাবে বিরোধী দলকে দমন-পীড়নের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে চাইছে।
এদিকে গতকাল সকাল থেকেই শহরের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত চৌরাস্তার মোড় ও সমাবেশ স্থল ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠ দখলে নেয় ছাত্রলীগ ও পুলিশ। এ সময় ছাত্রলীগের কর্মীরা বিভিন্ন অলিগলি ও সদর রাস্তায় একের পর এক মিছিল করে। পাশাপাশি মোটরসাইকেল ও অন্যান্য যানবাহন নিয়ে লাঠিসহ মহড়া দেয়। এরপরই যে কোন ধরনের নাশকতা এড়াতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে গাজীপুর জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত ওই আদেশ বলবৎ রাখার ঘোষণা দেন পুলিশ সুপার হারুন-অর-রশিদ। এর আগে তিনি জানিয়েছিলেন, দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা না হলে গাজীপুরের কোথাও কাউকে সমাবেশ করতে দেয়া হবে না। পুলিশ সুপার বলেন, দুই পক্ষই কোন সমঝোতায় পৌঁছায়নি। সে ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার স্বার্থে কোন পক্ষকেই সমাবেশের অনুমতি দিচ্ছে না প্রশাসন। পুলিশ সুপার জেলাজুড়ে ১৪৪ ধারা জারির কথা বললেও জেলা প্রশাসক জানান, পাল্টাপাল্টি সমাবেশের ঘোষণায় উত্তেজনা থাকলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধারণত ১৪৪ ধারা জারি করে সব ধরনের সভা, সমাবেশ মিছিল নিষিদ্ধ করা হয়। তবে সমাবেশ যেহেতু ভাওয়াল কলেজ মাঠে হওয়ার কথা রয়েছে, তাই ১৪৪ ধারা শুধু কলেজ মাঠেই জারি করা হয়েছে। জেলার অন্য কোন স্থানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়নি। জেলার অন্য স্থানে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সেখানে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। দুপুর ২টা থেকে পুরো গাজীপুরে ১৪৪ ধারা জারির কথা পুলিশ সুপার জানালেও বিকাল সোয়া চারটায় পুলিশের সামনেই মিছিল বের করে জেলা শ্রমিক লীগ। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মতিউর রহমান মোল্লার নেতৃত্বে মিছিলটি শহরের জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে বের হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এদিকে ছাত্রলীগের পাশাপাশি সকাল থেকেই সমাবেশস্থল ও আশপাশে এলাকা দখলে নেয় গাজীপুর জেলা আওয়ামী যুব মহিলা লীগের নেতা-কর্মীরা। গতকাল দুপুরে একটি খোলা গাড়িতে করে যুব মহিলা লীগের অর্ধশত নেতাকর্মী ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠে এসে পৌঁছান। জেলা আওয়ামী যুব মহিলা লীগের সহ-সভাপতি সুস্মিতা সাহার নেতৃত্বে মিছিল নিয়ে কলেজ মাঠে প্রবেশের চেষ্টা করেন তারা। তবে কলেজ গেটে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের বাধায় ভেতরে যেতে ব্যর্থ হন। পরে মিছিল নিয়ে জয়দেবপুর জাগ্রত চৌরঙ্গী মোড়ের দিকে চলে যান। সকাল পৌনে ১০ টায় জয়দেবপুর জাগ্রত চৌরঙ্গী মোড়ে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন আওয়ামী কৃষক লীগের ব্যানারে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন নেতা-কর্মীরা।
বিএনপি কার্যালয় পুলিশের দখলে: শুক্রবার সকাল ৬টা থেকেই গাজীপুর জেলা ও মহানগর বিএনপি অফিস দখল করে রাখে পুলিশ। ফলে ১৪৪ ধারা জারি হওয়া পর্যন্ত বিএনপির কোন নেতা-কর্মী ভাওয়াল কলেজ মাঠ এলাকায় ভিড়তেই পারেননি, তৈরি করতে পারেননি মহাসমাবেশের মঞ্চ। এছাড়া ওই এলাকায় কাউকে দেখাও যায়নি। তবে তারা ঘরোয়াভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মহাসমাবেশ সফল করার জন্য। পাশাপাশি পুলিশের হয়রানি বা আটক এড়াতে অনেকেই গা-ঢাকা দেন বলে সূত্র জানিয়েছে। সকাল ৬টা থেকে এসআই রাজীবের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের পুলিশের একটি গ্রুপ গাজীপুর জেলা বিএনপির অফিস-জয়দেবপুরের সামনে অবস্থান নেয়। বেলা পৌনে ২টার দিকে এসআই রাজীব এ প্রতিবেদককে বলেন, বিএনপির কোন নেতা-কর্মী সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অফিসে প্রবেশের চেষ্টা করেননি। বিএনপি ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন মানবজমিনকে বলেন, প্রথমে তারা ভাওয়াল বদরে আলম কলেজ মাঠে ১৪৪ ধারা জারি করে। পরে, গোটা গাজীপুরে জারি করেছে। এটা অবৈধ সরকারের অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী আচরণ। দলের লাখ লাখ নেতা-কর্মী মহাসমাবেশের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। আমরা এখন কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়্যেদুল আলম বাবুল জানান, আমরা কেন্দ্রীয় নির্দেশের অপেক্ষায়। সমাবেশ করা বা না-করার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিইনি। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার ভোর রাত পর্যন্ত পুলিশ অভিযান চালিয়ে আইনশৃঙ্খলা অবনতির আশঙ্কায় জেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতিসহ নয়জনকে আটক করেছে। এদিকে শনিবার বিএনপির পূর্বঘোষিত জনসভা এবং একই স্থানে ছাত্রলীগের ডাকা বিক্ষোভ সমাবেশস্থল গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠে পাঁচ প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয়। টঙ্গী থানার ডিউটি অফিসার এসআই সাজেদা লতা জানান, রাতে টঙ্গীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গাজীপুর জেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রভাষক বশির উদ্দিন (৪৫), ইজ্জত আলী (৫৫) এবং রনি মিয়াকে (২৫) আটক করা হয়। জয়দেবপুর থানার ডিউটি অফিসার এসআই ফৌজিয়া সুলতানা জানান, রাতে অভিযান চালিয়ে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। এদিকে বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ডা. মাজহারুল আলম বলেন, শুক্রবার রাতে তার বাসাসহ পৌর বিএনপির সভাপতি মীর হালিমুজ্জামান ননী, গাজীপুর জেলা জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সভাপতি সৈয়দ হাসান সোহেলসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের বাসায় পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। রাতে পুলিশ পূবাইল ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি হারুন-অর-রশিদ, ভাওয়াল বদরে আলম কলেজ ছাত্রদলের সদস্য আলমগীর হোসেন ও শিশির চৌধুরীকে আটক করেছে।
এদিকে টঙ্গী থেকে শুরু করে ভাওয়াল কলেজ এলাকা পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সব ক’টি পয়েন্টে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ। ঢাকা-ময়মনসিংহ এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুর অংশের সব স্থানই রয়েছে পুলিশের নজরদারিতে। জেলার অন্যান্য থানা থেকে ও পুলিশ সদস্য ও থানা কর্মকর্তাদের আনা হয়েছে নগরে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সামাল ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সমাবেশকে ঘিরে প্রায় ১০০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন রাখা হয়েছে।
এদিকে সমাবেশস্থলে ১৪৪ ধারা জারি করার পর বিকালে শ্রমিকদলের কেন্দ্রীয় নেতা সালাহ্ উদ্দিন সরকারের বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন গাজীপুর সিটি মেয়র অধ্যাপক এম.এ মান্নান। তিনি বলেন, গত ২০ দিন আগে সমাবেশের অনুমতি পাওয়ার পরও কথিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দিয়ে সমাবেশ পণ্ড করার জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে সরকার। সারা দেশের দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার সমাবেশে লোকসমাগম দেখে সরকার ভয় পেয়ে জেলা পুলিশ দিয়ে সমাবেশস্থলে ১৪৪ ধারা জারি করে।
গুলশান কার্যালয়ের সামনে রহস্যময় লিফলেট ও ময়লা
এদিকে বিকাল ৪টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে গাড়ি দিয়ে ময়লা ও একটি রহস্যময় লিফলেট ফেলে যাওয়া হয়। তৃণমূল বিএনপির নামে ছড়িয়ে দেয়া ওই লিফলেটে লেখা রয়েছে- ‘সুপ্রিয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, আপনি আগে নিজের ঘর ঠিক করুন... তারপর আন্দোলনে নামুন।’ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একটি পিকআপে করে কয়েকজন লোক ময়লা ও লিফলেটগুলো ছড়িয়ে দ্রুত চলে যায়। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, আওয়ামী লীগের লোকজন এই ঘৃণ্য কাজ করেছে।
তিনি বলেন, গাজীপুর সরকারি ভাওয়াল বদরে আলম কলেজ মাঠে ২০ দল আয়োজিত শনিবারের জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেয়ার কথা ছিল বিএনপি চেয়ারপারসন ও জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়ার। কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুমতি এবং প্রশাসনকে অবহিতও করা হয়েছিল। কিন্তু সরকার ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে অন্যায়ভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। পুলিশের ছত্রছায়ায় আক্রমণ ও গোলাগুলি করে ছাত্রলীগ কলেজ মাঠ দখল করে রাখে। শেষে পুলিশ সারা জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে। এভাবেই ঢাকা মহানগরে দেড় বছর ধরে সমাবেশ নিষিদ্ধ করে রেখেছে সরকার। গাজীপুরেও অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি তারই ধারাবাহিকতা। তিনি বলেন, ১৪৪ ধারা জারির মাধ্যমে আমাদের সাংবিধানিক অধিকার বঞ্চিত ও গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করা হলো। অবৈধ সরকার এভাবে বিরোধী দলকে দমন-পীড়নের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে চাইছে।
এদিকে গতকাল সকাল থেকেই শহরের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত চৌরাস্তার মোড় ও সমাবেশ স্থল ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠ দখলে নেয় ছাত্রলীগ ও পুলিশ। এ সময় ছাত্রলীগের কর্মীরা বিভিন্ন অলিগলি ও সদর রাস্তায় একের পর এক মিছিল করে। পাশাপাশি মোটরসাইকেল ও অন্যান্য যানবাহন নিয়ে লাঠিসহ মহড়া দেয়। এরপরই যে কোন ধরনের নাশকতা এড়াতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে গাজীপুর জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত ওই আদেশ বলবৎ রাখার ঘোষণা দেন পুলিশ সুপার হারুন-অর-রশিদ। এর আগে তিনি জানিয়েছিলেন, দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা না হলে গাজীপুরের কোথাও কাউকে সমাবেশ করতে দেয়া হবে না। পুলিশ সুপার বলেন, দুই পক্ষই কোন সমঝোতায় পৌঁছায়নি। সে ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার স্বার্থে কোন পক্ষকেই সমাবেশের অনুমতি দিচ্ছে না প্রশাসন। পুলিশ সুপার জেলাজুড়ে ১৪৪ ধারা জারির কথা বললেও জেলা প্রশাসক জানান, পাল্টাপাল্টি সমাবেশের ঘোষণায় উত্তেজনা থাকলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধারণত ১৪৪ ধারা জারি করে সব ধরনের সভা, সমাবেশ মিছিল নিষিদ্ধ করা হয়। তবে সমাবেশ যেহেতু ভাওয়াল কলেজ মাঠে হওয়ার কথা রয়েছে, তাই ১৪৪ ধারা শুধু কলেজ মাঠেই জারি করা হয়েছে। জেলার অন্য কোন স্থানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়নি। জেলার অন্য স্থানে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সেখানে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। দুপুর ২টা থেকে পুরো গাজীপুরে ১৪৪ ধারা জারির কথা পুলিশ সুপার জানালেও বিকাল সোয়া চারটায় পুলিশের সামনেই মিছিল বের করে জেলা শ্রমিক লীগ। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মতিউর রহমান মোল্লার নেতৃত্বে মিছিলটি শহরের জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে বের হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এদিকে ছাত্রলীগের পাশাপাশি সকাল থেকেই সমাবেশস্থল ও আশপাশে এলাকা দখলে নেয় গাজীপুর জেলা আওয়ামী যুব মহিলা লীগের নেতা-কর্মীরা। গতকাল দুপুরে একটি খোলা গাড়িতে করে যুব মহিলা লীগের অর্ধশত নেতাকর্মী ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠে এসে পৌঁছান। জেলা আওয়ামী যুব মহিলা লীগের সহ-সভাপতি সুস্মিতা সাহার নেতৃত্বে মিছিল নিয়ে কলেজ মাঠে প্রবেশের চেষ্টা করেন তারা। তবে কলেজ গেটে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের বাধায় ভেতরে যেতে ব্যর্থ হন। পরে মিছিল নিয়ে জয়দেবপুর জাগ্রত চৌরঙ্গী মোড়ের দিকে চলে যান। সকাল পৌনে ১০ টায় জয়দেবপুর জাগ্রত চৌরঙ্গী মোড়ে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন আওয়ামী কৃষক লীগের ব্যানারে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন নেতা-কর্মীরা।
বিএনপি কার্যালয় পুলিশের দখলে: শুক্রবার সকাল ৬টা থেকেই গাজীপুর জেলা ও মহানগর বিএনপি অফিস দখল করে রাখে পুলিশ। ফলে ১৪৪ ধারা জারি হওয়া পর্যন্ত বিএনপির কোন নেতা-কর্মী ভাওয়াল কলেজ মাঠ এলাকায় ভিড়তেই পারেননি, তৈরি করতে পারেননি মহাসমাবেশের মঞ্চ। এছাড়া ওই এলাকায় কাউকে দেখাও যায়নি। তবে তারা ঘরোয়াভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মহাসমাবেশ সফল করার জন্য। পাশাপাশি পুলিশের হয়রানি বা আটক এড়াতে অনেকেই গা-ঢাকা দেন বলে সূত্র জানিয়েছে। সকাল ৬টা থেকে এসআই রাজীবের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের পুলিশের একটি গ্রুপ গাজীপুর জেলা বিএনপির অফিস-জয়দেবপুরের সামনে অবস্থান নেয়। বেলা পৌনে ২টার দিকে এসআই রাজীব এ প্রতিবেদককে বলেন, বিএনপির কোন নেতা-কর্মী সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অফিসে প্রবেশের চেষ্টা করেননি। বিএনপি ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন মানবজমিনকে বলেন, প্রথমে তারা ভাওয়াল বদরে আলম কলেজ মাঠে ১৪৪ ধারা জারি করে। পরে, গোটা গাজীপুরে জারি করেছে। এটা অবৈধ সরকারের অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী আচরণ। দলের লাখ লাখ নেতা-কর্মী মহাসমাবেশের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। আমরা এখন কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়্যেদুল আলম বাবুল জানান, আমরা কেন্দ্রীয় নির্দেশের অপেক্ষায়। সমাবেশ করা বা না-করার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিইনি। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার ভোর রাত পর্যন্ত পুলিশ অভিযান চালিয়ে আইনশৃঙ্খলা অবনতির আশঙ্কায় জেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতিসহ নয়জনকে আটক করেছে। এদিকে শনিবার বিএনপির পূর্বঘোষিত জনসভা এবং একই স্থানে ছাত্রলীগের ডাকা বিক্ষোভ সমাবেশস্থল গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠে পাঁচ প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয়। টঙ্গী থানার ডিউটি অফিসার এসআই সাজেদা লতা জানান, রাতে টঙ্গীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গাজীপুর জেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রভাষক বশির উদ্দিন (৪৫), ইজ্জত আলী (৫৫) এবং রনি মিয়াকে (২৫) আটক করা হয়। জয়দেবপুর থানার ডিউটি অফিসার এসআই ফৌজিয়া সুলতানা জানান, রাতে অভিযান চালিয়ে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। এদিকে বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ডা. মাজহারুল আলম বলেন, শুক্রবার রাতে তার বাসাসহ পৌর বিএনপির সভাপতি মীর হালিমুজ্জামান ননী, গাজীপুর জেলা জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সভাপতি সৈয়দ হাসান সোহেলসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের বাসায় পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। রাতে পুলিশ পূবাইল ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি হারুন-অর-রশিদ, ভাওয়াল বদরে আলম কলেজ ছাত্রদলের সদস্য আলমগীর হোসেন ও শিশির চৌধুরীকে আটক করেছে।
এদিকে টঙ্গী থেকে শুরু করে ভাওয়াল কলেজ এলাকা পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সব ক’টি পয়েন্টে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ। ঢাকা-ময়মনসিংহ এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুর অংশের সব স্থানই রয়েছে পুলিশের নজরদারিতে। জেলার অন্যান্য থানা থেকে ও পুলিশ সদস্য ও থানা কর্মকর্তাদের আনা হয়েছে নগরে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সামাল ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সমাবেশকে ঘিরে প্রায় ১০০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন রাখা হয়েছে।
এদিকে সমাবেশস্থলে ১৪৪ ধারা জারি করার পর বিকালে শ্রমিকদলের কেন্দ্রীয় নেতা সালাহ্ উদ্দিন সরকারের বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন গাজীপুর সিটি মেয়র অধ্যাপক এম.এ মান্নান। তিনি বলেন, গত ২০ দিন আগে সমাবেশের অনুমতি পাওয়ার পরও কথিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দিয়ে সমাবেশ পণ্ড করার জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে সরকার। সারা দেশের দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার সমাবেশে লোকসমাগম দেখে সরকার ভয় পেয়ে জেলা পুলিশ দিয়ে সমাবেশস্থলে ১৪৪ ধারা জারি করে।
গুলশান কার্যালয়ের সামনে রহস্যময় লিফলেট ও ময়লা
এদিকে বিকাল ৪টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে গাড়ি দিয়ে ময়লা ও একটি রহস্যময় লিফলেট ফেলে যাওয়া হয়। তৃণমূল বিএনপির নামে ছড়িয়ে দেয়া ওই লিফলেটে লেখা রয়েছে- ‘সুপ্রিয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, আপনি আগে নিজের ঘর ঠিক করুন... তারপর আন্দোলনে নামুন।’ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একটি পিকআপে করে কয়েকজন লোক ময়লা ও লিফলেটগুলো ছড়িয়ে দ্রুত চলে যায়। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, আওয়ামী লীগের লোকজন এই ঘৃণ্য কাজ করেছে।
No comments