সামরিক আদালতে সন্ত্রাসের বিচার
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদসংশ্লিষ্ট ঘটনাগুলো বিচারে সামরিক আদালত গঠন করছে পাকিস্তান। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে বৈঠকের পর পাকিস্তান সরকার গতকাল বৃহস্পতিবার এ ঘোষণা দিয়েছে। পাশাপাশি দেশটির মাদ্রাসাগুলোকে ‘নিয়মের আওতায়’ নিয়ে আসারও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। খবর এএফপি, বিবিসি ও ডনের। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ইসলামাবাদে নিজের বাসভবনে গত বুধবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে টানা প্রায় ১১ ঘণ্টা বৈঠক করেন। ১৬ ডিসেম্বর পেশোয়ারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে সন্ত্রাসবাদ দমনের উপায় নিয়ে আলোচনা করতে এই বৈঠক ডাকেন তিনি। বৈঠক শেষে মধ্যরাতেই জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে নওয়াজ বলেন, সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করতে শক্ত পদক্ষেপের দরকার। পেশোয়ারের স্কুলে জঙ্গি হামলায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সন্ত্রাসীদের দিন ফুরিয়ে আসছে। সন্ত্রাসবাদ রুখতে বুধবারের বৈঠক থেকে উচ্চাভিলাষী ১৭ দফা কর্মপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। তার অংশ হিসেবে সামরিক আদালত গঠন করা হচ্ছে। টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ বলেন, ‘দ্রুত বিচারের স্বার্থেই সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে বিশেষ আদালতগুলো গঠন করা হচ্ছে।’ দুই বছরের জন্য এসব আদালতের কার্যক্রম চলবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘শিশুদের হত্যার মাধ্যমে সন্ত্রাসীরা দেশের ভবিষ্যতের প্রতি আঘাত হেনেছে। এখন চরমপন্থা ও সাম্প্রদায়িকতাকে পরাজিত করতে আমাদের সন্ত্রাসবাদী মানসিকতাকেই মুছে ফেলতে হবে।’ ১৭ দফা পরিকল্পনার আওতায় জঙ্গিদের অর্থের উৎস বন্ধ করা এবং নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠনগুলোর নতুন নামে তৎপরতা চালানো ঠেকানোর কথা বলা হয়েছে।
এ ছাড়া সংবিধান সংশোধন, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট উভয় প্রকার গণমাধ্যমে সন্ত্রাসীদের জায়গা করে নেওয়ার সুযোগ বন্ধ করা, তাদের যোগাযোগের পদ্ধতিগুলো ধ্বংস করে দেওয়া এবং আফগানিস্তান থেকে আসা উদ্বাস্তুদের তাদের দেশে ফিরিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ সন্ত্রাসবাদবিরোধী বিশেষ বাহিনী গঠন এবং মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়মের আওতায় নিয়ে আসারও ঘোষণা দিয়েছেন। সামরিক আদালত গঠন প্রশ্নে বিরোধী দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতা সৈয়দ খুরশিদ শাহ বলেন, সামরিক আদালত গঠনের উদ্দেশ্য সন্ত্রাসীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা। মাদ্রাসাগুলোর সংস্কারের আহ্বান: পেশোয়ারের স্কুলে হামলার ঘটনায় সরকারের ‘নির্লিপ্ততা’র সমালোচনা করেছেন পাকিস্তানের পার্লামেন্ট সদস্যদের পাশাপাশি একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও। পেশোয়ার হামলা নিয়ে পার্লামেন্টে গত মঙ্গলবার টানা দ্বিতীয় দিনের আলোচনায় অংশ নিয়ে দেশের মাদ্রাসাগুলোর সংস্কার করার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা। কেন্দ্রীয় বস্ত্র ও শিল্পমন্ত্রী আব্বাস খান আফ্রিদি দ্রুত ব্যবস্থা না নিতে পারলে সরকারকে পদত্যাগ করার আহ্বান পর্যন্ত জানান। আফ্রিদি সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘সিদ্ধান্ত নেওয়া বা আইন করার কোনো সাহস না থাকলে আপনারা কেন এখানে বসে আছেন?’ পাঞ্জাবের প্রাদেশিক সরকার ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা জঙ্গিবাদী কার্যকলাপে জড়িত মাদ্রাসাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে। প্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুজা খানজাদা বলেন, ‘আমরা প্রদেশের নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মাদ্রাসার তালিকা তৈরি করেছি। এর মধ্যে ১০ শতাংশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করতে পারি।’
No comments