বস্তিতে বেড়ে ওঠা বিশ্বসেরা এক ফিল্ম স্টার by ইমরান আলী
ষাট-সত্তরের দশকে যারা হলিউডের মুভি
দেখতেন তাদের কাছে সোফিয়া লরেন পরিচিতি এক নাম। ১৯৩৪ সালে রোমের একটি
হাসপাতালের দাতব্য ওয়ার্ডে জন্মগ্রহণ করেন আন্তর্জাতিক এ ফিল্ম স্টার৷
পুরো নাম সোফিয়া ভিলানি সাইক্লোন। লরেনের মা রোমিলদাকে বিয়ে করতে আগেই
অস্বীকার করেছিলেন বাবা রিকার্ডো৷ ১৯৩৪ সালের ২০শে সেপ্টেম্বর জন্মের
কিছুদিন পরই মা আর মেয়েকে আশ্রয় নিতে হয়েছিলো ইতালির জরাজীর্ণ এক বস্তিতে৷
কেউ কি অনুমান করতে পেরেছিলো একরকম অবিভাবকহীন এই মেয়েই এক সময় বিশ্বব্যাপি
আলোচিত হবে । বস্তিতে আশ্রয় নেয়া চরম দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটে মা এবং
মেয়ের৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে রোমিলদা আর মেয়ে সোফিয়ার দারিদ্রতা যেন
শেষ সীমায় অতিক্রম করেছিলো। আর তাই বেশিরভাগ সময়ই তাদেরকে অনাহারে থাকতে
হত। ১৯৪৮ সালের দিকে যখন তাদের কিছুটা আর্থিক সচ্ছলতা আসে তখন এক সুন্দরী
প্রতিযোগিতায় নাম লেখান ১৪ বছর বয়সি সোফিয়া৷ এক লাফে উঠে যান বিচারকদের
রায়ে চূড়ান্ত পর্যায়ে। ওই প্রতিযোগিতায় সোফিয়া দৃষ্টি কাড়েন ৩৭ বছর বয়সী
চলচ্চিত্র পরিচালক কার্লো পন্টির৷ তিনিই সোফিয়াকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের
সুযোগ করে দেন৷ এর পর থেকে সাফল্যের পথে ঘুরতে থাকে সোফিয়ার ভাগ্যের চাকা।
পরিচালক কার্লো পন্টিই বিয়ে করেন সোফিয়াকে। চলচিত্রে সবার নজর কেড়ে তার
নাম হয়ে উঠে সোফিয়া লরেন। ১৯৫২ সালে লা ফ্যাভোরিটা এবং ১৯৫৩ সালে এইডা
ছবিতে অভিনয় করে হলিউডে শক্ত ভাবে পা রাখেন এই ইটালীয়ান দেবী এই সোফিয়া
লরেন। ১৯৫৭ সাল। অভিনয় করেন প্রথম আমেরিকান ছবি বয় ইন আ ডলফিন-এ ৷
সুপারস্টার ক্যারি গ্রান্টের সহশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন দ্য প্রাইড
অ্যান্ড দ্য প্যাশন ও হাউসবোট ছবিতে৷ লা সাইওসায়ারা-তে অভিনয় করে ১৯৬০
সালে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন সোফিয়া৷
অভিনয় করেন পল নিউম্যান, মার্লন ব্র্যান্ডো, গ্রেগরি পেক, চার্লটন
হিউসটনদের মতো নামকরা সব অভিনেতাদের সঙ্গে। একাডেমি অফ মোশন পিকচার্স আর্টস
অ্যান্ড সায়েন্সেস থেকে বিশেষ সম্মাননা পাওয়া এই অভিনেত্রীর বয়সের সাথে
পাল্লা দিয়ে ভারি হতে থাকে খ্যাতি আর পুরস্কার। শুধু অস্কারই জিতেননি
একাধারে পাঁচটি গোল্ডেন গ্লোব এওয়ার্ডও কিন্তু তার দখলে। তার অভিনীত
উল্লেখযোগ্য হলিউডি ছবির মধ্যে এল সিড, দ্য ফল অফ দ্য রোমান এম্পায়ার,
অ্যারাবেস্ক, ম্যান অফ লা মাঞ্চা এবং দ্য ক্যাসান্ড্রা ক্রসিং অন্যতম।
সংসার জীবনে দুই ছেলের জননী সোফিয়া লরেন হঠাৎ করে অভিনয় থামিয়ে দিলেও ৬০
বছর বয়সে প্রিট-আ-পোর্টার ছবি দিয়ে আবারো দর্শকদের মাতিয়ে তুলেন। ২০০৯ সালে
তার অভিনীত শেষ ছবি নাইন এ কাজ করে দীর্ঘ বিরতিতে যান এই বিশ্ব আলোচিত
সোফিয়া লরেন। বস্তি থেকে উঠে আসা বিশ্বসেরা এই অভিনেত্রীর আজ জন্মদিন। সারা
দুনিয়ায় অগণিত দর্শকের ভালোবাসায় শিক্ত হবেন এমনই প্রত্যাশা।
No comments