‘নীতিমালা নয় ন্যায়মালা চাই’
সম্প্রচার নীতিমালার প্রেক্ষাপটে টকশো। আলোচনায় অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, গণমাধ্যম গবেষক, সাংবাদিক আর টকশো ব্যক্তিত্বরা। প্রায় সবাই একবাক্যে সমালোচনা করলেন সম্প্রচার নীতিমালার। এ নীতিমালাকে ভীতিমালা হিসেবে অভিহিত করে তা বাতিলের দাবি জানালেন তারা। বিকল্প পার্লামেন্ট হিসেবে টকশোর ভূমিকার কথাও বললেন কেউ কেউ। আলোচনায় এলো ৫ই জানুয়ারি পরবর্তী নতুন বাস্তবতাও। চ্যানেল আই’র ১৬ বছর পদার্পনে আয়োজন করা হয় এ আলোচনার। সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খানের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উত্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস। তিনি বলেন, সাংবাদিকতার প্রথম পাঠ হচ্ছে- পৃথিবীর সমস্ত সরকার মিথ্যাবাদী। সরকারগুলো তথ্য লুকায়। সাংবাদিকদের কাজ হচ্ছে সে তথ্য বের করে আনা। টকশো এখন অনেকটাই বিকল্প পার্লামেন্টের ভূমিকা পালন করছে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ৫ই জানুয়ারি পরবর্তী সময়ে কর্তৃত্ববাদী আকাঙ্ক্ষা নতুন মাত্রায় উপনীত হয়েছে। আমরা অদ্ভুত এক গণতান্ত্রিক বাস্তবতায় উপনীত হয়েছি। ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশের সংসদে যখন কোন বিতর্ক হয় না সে সময় টকশোতেই বিতর্ক হচ্ছে। যে বিতর্ক আমজানতাকে দেশ নিয়ে ভাবতে উদ্ধুদ্ধ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে উদ্ধৃত করে বলেন, জাস্টিস শব্দের মধ্যে নীতি এবং ন্যায় দু’টি বিষয় রয়েছে। নীতিমালা হচ্ছে- নিয়ন্ত্রণমূলক। আমাদের প্রয়োজন হচ্ছে ন্যায়মালা। নিউজটুডে সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখন টকশো নিয়ে লিখেন তখন বুঝতে হবে টকশোর গুরুত্ব রয়েছে। চ্যানেল আই’র পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ বলেন, গণমাধ্যমে যেটুকু স্বাধীনতা ভোগ করছে তা কেউ গণমাধ্যমের হাতে তুলে দেয়নি। নিজ যোগ্যতায় গণমাধ্যম তা অর্জন করেছে। মানবজমিন প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, কোন ধরনের সম্প্রচার নীতিমালারই প্রয়োজন নেই। পাঁচটি টিভি চ্যানেল বন্ধ করতে কোন নীতিমালার প্রয়োজন পড়েনি। সকালের খবর পত্রিকার সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু বলেন, সম্প্রচার নীতিমালা অপ্রয়োজনীয় এবং তা প্রত্যাহার করা উচিত। সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত বলেন, সদিচ্ছার ওপর ভিত্তি করেই আসলে গণমাধ্যমকে চলতে হয়। সিনিয়র সাংবাদিক ফরিদ হোসেন বলেন, গণমাধ্যমের জন্য নীতিমালা প্রয়োজন। গণমাধ্যমের ওপর সরকার যে হস্তক্ষেপ করছে তার জন্য বহুলাংশে সাংবাদিকরাই দায়ী।
সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান বলেন, সম্প্রচার নীতিমালা সংবিধানের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। সাংবাদিক আশরাফ কায়সার বলেন, সম্প্রচার নীতিমালা নিয়ন্ত্রণমূলক। কি যোগ্যতার ভিত্তিতে লাইসেন্স দেয়া হবে তার জন্যই নীতিমালা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু নীতিমালায় তা নিয়ে শুধু একটিমাত্র বাক্য আছে। সাপ্তাহিক সম্পাদক গোলাম মোর্তোজা বলেন, যে উদ্দেশ্যে নীতিমালা চাওয়া হয়েছিল সে উদ্দেশ্যে নীতিমালা দেয়া হয়নি। গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই এ নীতিমালা দেয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শামীম রেজা বলেন, টকশো বহুমাত্রিক আলোচনার জায়গা তৈরি করেছে। যদিও টকশোতে বেশির ভাগ আলোচনা হয় রাজনীতি নিয়ে। আনন্দ আলো সম্পাদক রেজানুর রহমান বলেন, শহরের গণ্ডি পেরিয়ে গ্রামেও টকশো জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। চ্যানেল আই ভবনে অনুষ্ঠিত আলোচনায় শুরুতে সবাইকে স্বাগত জানান সাংবাদিক কাজল ঘোষ।
মূল প্রবন্ধে রোবায়েত ফেরদৌস আরও বলেন, গণতন্ত্র শুধু একটি শাসন ব্যবস্থা নয়। গণতন্ত্র একটি মূল্যবোধের নাম। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যে সাংবাদিক সরকারের বিরুদ্ধে তথ্য প্রকাশ করবে সরকারেরই দায়িত্ব সে সাংবাদিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। যেমন সংসদে সরকারি দলের দায়িত্ব বিরোধী দল যেন তাদের সমালোচনা করতে পারবে সে পরিবেশ নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, টকশোকে আমরা ব্যাখ্যা করতে পারি জনপরিসর বা পাবলিক স্ফেয়ার হিসেবে। জনপরিসর এমন পাটাতন যেখানে নাগরিকরা রাষ্ট্র সরকার ও সমাজের বিবিধ সমস্যা বা ইস্যু নিয়ে কথা বলতে পারবে। টিভি টকশো সে কাজটিই করে থাকে। টকশোর মধ্য দিয়ে টেলিভিশন নাগরিকদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিতর্ক তোলার সুযোগ তৈরি করে দেয়। কেউ কেউ টকশোকে বিকল্প পার্লামেন্ট হিসেবে চিহ্নিত করেছেন এ অর্থে, যখন আমাদের সংসদ ঠিকমতো কাজ করে না, সংসদে যখন সরকারি দল ও বিরোধী দলের কোন বিতর্ক হয় না, সংসদের বাইরেও তাদের মধ্যে যখন কোন সম্মুখ সংলাপ হয় না, তখন টকশোই একমাত্র ফ্লাটফর্ম হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে, যেখানে সরকারি দল, বিরোধী দল তো বটেই সংসদে কখনও আসন পায়নি এমন অনেক রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও কথা বলার, বিতর্ক তোলার সুযোগ পাচ্ছেন। কিন্তু এর পরও প্রশ্ন থাকে আমাদের টিভি টকশোগুলো কি সত্যিকার অর্থেই জনপরিসরের শর্ত পূরণ করতে পারছে। এখানে কি সবার কথা বলার সুযোগ আছে? গ্রামের প্রান্তিক মানুষ, শিক্ষাবঞ্চিত নারী-পুরুষ কিংবা ঢাকার বাইরে জনবুদ্ধিজীবীদের কতজন টকশোতে অংশ নিতে পারেন? কতজন নারী রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, নারী অর্থনীতিবিদ টকশোতে অংশ নেন। মোটা দাগে আমাদের টকশো তো শহর অভিমুখী, ধনিক অভিমুখী, এলিট অভিমুখী, পুরুষ অভিমুখী এবং তথাকথিত শিক্ষক অভিমুখী। বাংলাদেশে গ্রামীণ সমাজে পুকুরঘাটের আড্ডাকে কি আমরা জনপরিসর বলতে পারি? আমাদের চা স্টল, হাটবাজার বা নাপিত শালা কি আসলেই জনপরিসর? ভারতীয় প্রেক্ষাপটে দীপেশ চক্রবর্তী আড্ডাকে জনপরিসর হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বৃটিশবিরোধী স্বদেশী আন্দোলনের সময় ঘরে ঘরে গোপন আলোচনা হতো, সেখানে আলোচনার এজেন্ডা ঠিক করতেন পুরুষ, আলোচকও থাকতেন পুরুষ, নারীও থাকতেন তবে তা কেবল চা-চানাচুর পরিবেশনের সময়। তিনি বলেন, অনেকে বলেন টকশোগুলো গণতন্ত্রের প্রহরীর ভূমিকা পালন করছে। টকশোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও দর্শকপ্রিয়তা পায় পলিটিক্যাল টকশো। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে টকশো নিয়ে বিস্তর গবেষণা হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিভাবে টকশোগুলোতে আলোচনার এজেন্ডা ঠিক হয়? কারা ঠিক করেন? এজেন্ডা ঠিক থাকলেই কি আলোচকরা সে ফ্রেমে কথা বলেন। টকশো উপস্থাপনা করতে গিয়ে দেখেছি অনেককে প্রশ্ন করলে তারা বলেন, আমি আমার কথাটা বলি, তারপর আপনার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি। রোবায়েত ফেরদৌস সম্প্রচার নীতিমালার তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি একে নিয়ন্ত্রণমূলক হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কি কোন বন্ধুরাষ্ট্র এবং শত্রুরাষ্ট্রের তালিকা আছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচিত সে তালিকা প্রকাশ করা। তিনি বলেন, আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পথে আমাদের আরও অনেক দূর অবধি যেতে হবে। যেতে হবে গণতন্ত্রকে সতেজ টাটকা আর ফুরফুরে রাখার তাগিদে। আমরা চাই জানালা খোলা থাকুক- এতে ধুলোবালি কিছু আসবে। কিন্তু বিশ্বাস করুন সবচেয়ে বেশি আসবে আলো।
অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, গ্রামসীর তত্ত্ব অনুযায়ী যখন কোন দেশে ফ্যাসিজম চালু হয় তখন রাজনৈতিক দল বলে কিছু থাকে না, তখন গণমাধ্যমকে রাজনৈতিক দলের ভূমিকা পালন করতে হয়। বাংলাদেশে যেহেতু কোন দলের মধ্যে গণতন্ত্র নেই, তাই মিডিয়াকে ভূমিকা পালন করতে হচ্ছে। তবে টকশো বিকল্প সংসদ নয়। কারণ সংসদের দায়িত্ব হচ্ছে আইন তৈরি করা। টকশো কোন আইন তৈরি করে না। তিনি বলেন, আমাদের রাজনীতিবিদদের কোন লেখার প্রয়োজন হয় না। তাদের ভাষণ দিতে জানলেই চলে। তিনি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ নামকরণের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বলেন, রিপাবলিকের মধ্যেই তো পাবলিক রয়েছে। তিনি গণমাধ্যমের জন্য ন্যায়মালা প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন দুটি নীতি সব সময়ই অনুসরণ করতে হবে। প্রথমত, কোন ব্যক্তিগত আক্রমণ করা যাবে না। দ্বিতীয়ত, ঘৃণা প্রচার করা যাবে না।
অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, সরকারের চিন্তায় বড় ধরনের জট লেগেছে। সম্প্রচার নীতিমালা এক ধরনের ভীতিমালা। সরকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে এ নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। এ নীতিমালা প্রণয়নের পর সব মিডিয়া ভয়ে আছে। তাই একে ভীতিমালা বলাই যৌক্তিক। তিনি বলেন, আমার খুব প্রিয় একটি কবিতা আছে। লোকের কথায় নয় ঘটনায় মন দাও।
সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, টকশো এবং খবর দুটোই জনপ্রিয়। ২০-২৫ বছর ধরে শত সমস্যার পরও জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেতো। কিন্তু ৫ই জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের পর রাজনৈতিক অগ্রযাত্রায় নতুন উপাদান তৈরি হয়েছে। কর্তৃত্ববাদী আকাঙ্ক্ষা নতুন মাত্রা পেয়েছে। জনগণের কণ্ঠ উচ্চকিত হয় কিন্তু কোন ফল হয় না। এক দশক পর নাগরিক সমাজও অসহায় অবস্থায় রয়েছে। কর্তৃত্ববাদী শাসকরা নাগরিক সমাজের চেয়ে অনেক চালাক। শাসকরা এখন অনেক অস্ত্র ব্যবহার করছে। এ অবস্থায় এখন পরামর্শের মূহুর্ত নয় এখন হচ্ছে উপলব্ধির সময়। আমাদের বলতে হবে আমরা ভয় পাইনি।
শাইখ সিরাজ বলেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোর নিজস্ব কোন নীতিমালা নেই। এটা সত্য, আমরা নীতিমালা চেয়েছিলাম। কিন্তু কি প্রেক্ষাপটে তা চেয়েছিলাম তা-ও বিবেচনায় নিতে হবে। তিনি বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের আগ থেকেই নানা জায়গা থেকে নানা রকমের নির্দেশনা আসতো। নানা দুর্যোগের সময় আমাদের নানা রকম নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে টকশো নিয়ে নতুন করে ভাবার প্রয়োজন রয়েছে। ঢাকার বাইরেও অনেক প্রতিভাবান মানুষ রয়েছে। আমাদের উচিত সেইসব মানুষদের টকশোতে নিয়ে আসা। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গণমাধ্যমের অবদানের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আইন করে কেউ গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে সফল হয়নি। আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের সময়ও আমরা আমাদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার ছিলাম। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময়ও সাংবাদিকরা সাহসী ও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন। সম্প্রচার নীতিমালা একটি বাজে আইন। এ আইন বাতিল ঘোষণা করা প্রয়োজন। মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকার তিনটি টিভি চ্যানেল বন্ধ করেছে। জরুরি অবস্থার সরকার একটি এবং বিএনপি সরকার একটি টিভি চ্যানেল বন্ধ করেছিল। এজন্য তাদের কোন নীতিমালা লাগেনি। তিনি বলেন, দুই জন রাজনীতিবিদ বই লিখে কি বিপদে পড়েছেন তা আপনারা দেখেছেন। টকশো’র কারণেও অনেকে বিপদে পড়েন। নানা ধরনের লিস্ট আসছে। এখন আবার অনেকে নিজ থেকেও টকশোতে আসতে চাচ্ছেন না। আসলে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন না হলে কোন কিছুরই পরিবর্তন হবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলের ইতিহাস যখন লেখা হবে তখন দুটি কারণে সেখানে চ্যানেল আই’র নাম অবশ্যই থাকবে। একটি হচ্ছে টকশো এবং অন্যটি বিনোদন। মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু বলেন, আজ বাসায় বসে বিস্মিত হয়ে স্কটল্যান্ডের গণভোট দেখছিলাম। কিভাবে একটি দেশের স্বাধীনতা নিয়ে ভোটের মাধ্যমে মানুষ তাদের মতামত দিয়েছে। যুদ্ধ নেই, লড়াই নেই। অথচ আমরা এখানে কেউ কাউকে মানি না। সামান্য নির্বাচন নিয়েও লিপ্ত হই রক্তক্ষয়ী সংঘাতে। তিনি বলেন, সম্প্রচার নীতিমালা অনাবশ্যক। এটি হয়তো বিরোধীদের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা হবে। সংবাদপত্রের পর্যালোচনার ক্ষেত্রে একটি আওয়ামী লীগ একটি বিএনপির সংবাদ নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন নেই। শামীম রেজা বলেন, টকশোকে আমি বিকল্প সংসদ বলতে রাজি নই। ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, আমরা কথা বলতে পছন্দ করি। পেটে ভাত না থাকলেও আমরা কথা বলতে চাই। যে কারণে আমাদের এখানে টকশোগুলো বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। মিজানুর রহমান খান বলেন, সাংবাদিক নিজেরা যদি একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে রাখতেন তাহলে সরকার নীতিমালা চাপিয়ে দিতে পারতো না। সরকারের কাছে সবকিছু চাওয়ার একটি অভ্যাস আমাদের রয়ে গেছে। অজয় দাশগুপ্ত বলেন, ১/১১ এর রাতে জরুরি অবস্থা জারির পরপরই সংবাদ মাধ্যমের ওপর কোন ধরনের নিয়ন্ত্রণ আসেনি। সে রাতে আমরা সমকাল অফিসে বসে আলোচনা করছিলাম সেন্সরশিপ ছাড়া জরুরি আইন বা সামরিক শাসন টিকে কি না। বাংলাদেশে ২০০১ সাল ব্যতীত কখনোই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর হয়নি। এ বিষয়টিও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। ফরিদ হোসেন বলেন, আমরা যারা টকশোতে অংশ নেই আমাদেরও সমালোচনা রয়েছে। একই দিনে আমরা একই পোশাকে একাধিক টকশোতে অংশ নিয়ে থাকি। এটা হয়তো ঠিক প্রধানমন্ত্রীকে সাংবাদিকদেরই কেউ কেউ সম্প্রচার নীতিমালা করার পরামর্শ দিয়েছেন। সম্পাদক পরিষদ এখন নীতিমালার কথা বলছেন, কিন্তু আগে কেন তারা নীতিমালা তৈরির কথা বলেননি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হিসেবে জনগণের ট্যাক্সের টাকায় অনেক সাংবাদিক-সম্পাদককে আমরা বিদেশ যেতে দেখি। তাদের দ্বারা কি নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা সম্ভব। পৃথিবীর কোন দেশে দুস্থ সাংবাদিকদের অর্থ দেয়া হয় এবং তা প্রচারিত-প্রকাশিত হয় তা আমি কখনোই শুনিনি। আশরাফ কায়সার বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতির পেছনে সংবাদ মাধ্যমের কি কোন অবদান নেই। গণমাধ্যমের সে অবদান কেন আজ অস্বীকার করা হচ্ছে। যখন নীতিমালা ছিল না তখন কি গণমাধ্যম দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেনি। অলিখিত নীতিমালার মাধ্যমে আমাদের সম্পাদকরা সব-সময়ই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে আসছেন। নীতিমালা লাইসেন্সের ব্যাপারে বিস্তারিত কোন কিছু না বলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে আওয়ামী লীগের লোকেরা লাইসেন্স পান, বিএনপির আমলে বিএনপির লোকেরা লাইসেন্স পান। দক্ষ ও যোগ্য লোকরা টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স পান না। গোলাম মোর্তোজা বলেন, সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়নে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার কথা বলা হয়েছে। অথচ যেসব বিষয়ে কখনোই কোন আলোচনা হয়নি সেসব বিষয়ও সম্প্রচার নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ নীতিমালা কঠোর নিয়ন্ত্রণমূলক। পুরো ধমক ও গায়ের জোরে মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হচ্ছে। রেজানুর রহমান বলেন, গ্রামের মানুষও এখন গভীর রাত জেগে টকশো দেখে থাকে। টকশো আলোচকদের সবাইকেই তারা চিনেন। তবে অনেক ক্ষেত্রে একইদিন এক আলোচক একাধিক টকশোতে অংশ নেন। এটা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। টকশোতে নতুন মানুষ আনা প্রয়োজন। গ্রামের মানুষকেও টকশোতে আলোচনায় অংশ নেয়া প্রয়োজন।
সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান বলেন, সম্প্রচার নীতিমালা সংবিধানের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। সাংবাদিক আশরাফ কায়সার বলেন, সম্প্রচার নীতিমালা নিয়ন্ত্রণমূলক। কি যোগ্যতার ভিত্তিতে লাইসেন্স দেয়া হবে তার জন্যই নীতিমালা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু নীতিমালায় তা নিয়ে শুধু একটিমাত্র বাক্য আছে। সাপ্তাহিক সম্পাদক গোলাম মোর্তোজা বলেন, যে উদ্দেশ্যে নীতিমালা চাওয়া হয়েছিল সে উদ্দেশ্যে নীতিমালা দেয়া হয়নি। গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই এ নীতিমালা দেয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শামীম রেজা বলেন, টকশো বহুমাত্রিক আলোচনার জায়গা তৈরি করেছে। যদিও টকশোতে বেশির ভাগ আলোচনা হয় রাজনীতি নিয়ে। আনন্দ আলো সম্পাদক রেজানুর রহমান বলেন, শহরের গণ্ডি পেরিয়ে গ্রামেও টকশো জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। চ্যানেল আই ভবনে অনুষ্ঠিত আলোচনায় শুরুতে সবাইকে স্বাগত জানান সাংবাদিক কাজল ঘোষ।
মূল প্রবন্ধে রোবায়েত ফেরদৌস আরও বলেন, গণতন্ত্র শুধু একটি শাসন ব্যবস্থা নয়। গণতন্ত্র একটি মূল্যবোধের নাম। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যে সাংবাদিক সরকারের বিরুদ্ধে তথ্য প্রকাশ করবে সরকারেরই দায়িত্ব সে সাংবাদিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। যেমন সংসদে সরকারি দলের দায়িত্ব বিরোধী দল যেন তাদের সমালোচনা করতে পারবে সে পরিবেশ নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, টকশোকে আমরা ব্যাখ্যা করতে পারি জনপরিসর বা পাবলিক স্ফেয়ার হিসেবে। জনপরিসর এমন পাটাতন যেখানে নাগরিকরা রাষ্ট্র সরকার ও সমাজের বিবিধ সমস্যা বা ইস্যু নিয়ে কথা বলতে পারবে। টিভি টকশো সে কাজটিই করে থাকে। টকশোর মধ্য দিয়ে টেলিভিশন নাগরিকদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিতর্ক তোলার সুযোগ তৈরি করে দেয়। কেউ কেউ টকশোকে বিকল্প পার্লামেন্ট হিসেবে চিহ্নিত করেছেন এ অর্থে, যখন আমাদের সংসদ ঠিকমতো কাজ করে না, সংসদে যখন সরকারি দল ও বিরোধী দলের কোন বিতর্ক হয় না, সংসদের বাইরেও তাদের মধ্যে যখন কোন সম্মুখ সংলাপ হয় না, তখন টকশোই একমাত্র ফ্লাটফর্ম হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে, যেখানে সরকারি দল, বিরোধী দল তো বটেই সংসদে কখনও আসন পায়নি এমন অনেক রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও কথা বলার, বিতর্ক তোলার সুযোগ পাচ্ছেন। কিন্তু এর পরও প্রশ্ন থাকে আমাদের টিভি টকশোগুলো কি সত্যিকার অর্থেই জনপরিসরের শর্ত পূরণ করতে পারছে। এখানে কি সবার কথা বলার সুযোগ আছে? গ্রামের প্রান্তিক মানুষ, শিক্ষাবঞ্চিত নারী-পুরুষ কিংবা ঢাকার বাইরে জনবুদ্ধিজীবীদের কতজন টকশোতে অংশ নিতে পারেন? কতজন নারী রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, নারী অর্থনীতিবিদ টকশোতে অংশ নেন। মোটা দাগে আমাদের টকশো তো শহর অভিমুখী, ধনিক অভিমুখী, এলিট অভিমুখী, পুরুষ অভিমুখী এবং তথাকথিত শিক্ষক অভিমুখী। বাংলাদেশে গ্রামীণ সমাজে পুকুরঘাটের আড্ডাকে কি আমরা জনপরিসর বলতে পারি? আমাদের চা স্টল, হাটবাজার বা নাপিত শালা কি আসলেই জনপরিসর? ভারতীয় প্রেক্ষাপটে দীপেশ চক্রবর্তী আড্ডাকে জনপরিসর হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বৃটিশবিরোধী স্বদেশী আন্দোলনের সময় ঘরে ঘরে গোপন আলোচনা হতো, সেখানে আলোচনার এজেন্ডা ঠিক করতেন পুরুষ, আলোচকও থাকতেন পুরুষ, নারীও থাকতেন তবে তা কেবল চা-চানাচুর পরিবেশনের সময়। তিনি বলেন, অনেকে বলেন টকশোগুলো গণতন্ত্রের প্রহরীর ভূমিকা পালন করছে। টকশোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও দর্শকপ্রিয়তা পায় পলিটিক্যাল টকশো। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে টকশো নিয়ে বিস্তর গবেষণা হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিভাবে টকশোগুলোতে আলোচনার এজেন্ডা ঠিক হয়? কারা ঠিক করেন? এজেন্ডা ঠিক থাকলেই কি আলোচকরা সে ফ্রেমে কথা বলেন। টকশো উপস্থাপনা করতে গিয়ে দেখেছি অনেককে প্রশ্ন করলে তারা বলেন, আমি আমার কথাটা বলি, তারপর আপনার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি। রোবায়েত ফেরদৌস সম্প্রচার নীতিমালার তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি একে নিয়ন্ত্রণমূলক হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কি কোন বন্ধুরাষ্ট্র এবং শত্রুরাষ্ট্রের তালিকা আছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচিত সে তালিকা প্রকাশ করা। তিনি বলেন, আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পথে আমাদের আরও অনেক দূর অবধি যেতে হবে। যেতে হবে গণতন্ত্রকে সতেজ টাটকা আর ফুরফুরে রাখার তাগিদে। আমরা চাই জানালা খোলা থাকুক- এতে ধুলোবালি কিছু আসবে। কিন্তু বিশ্বাস করুন সবচেয়ে বেশি আসবে আলো।
অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, গ্রামসীর তত্ত্ব অনুযায়ী যখন কোন দেশে ফ্যাসিজম চালু হয় তখন রাজনৈতিক দল বলে কিছু থাকে না, তখন গণমাধ্যমকে রাজনৈতিক দলের ভূমিকা পালন করতে হয়। বাংলাদেশে যেহেতু কোন দলের মধ্যে গণতন্ত্র নেই, তাই মিডিয়াকে ভূমিকা পালন করতে হচ্ছে। তবে টকশো বিকল্প সংসদ নয়। কারণ সংসদের দায়িত্ব হচ্ছে আইন তৈরি করা। টকশো কোন আইন তৈরি করে না। তিনি বলেন, আমাদের রাজনীতিবিদদের কোন লেখার প্রয়োজন হয় না। তাদের ভাষণ দিতে জানলেই চলে। তিনি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ নামকরণের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বলেন, রিপাবলিকের মধ্যেই তো পাবলিক রয়েছে। তিনি গণমাধ্যমের জন্য ন্যায়মালা প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন দুটি নীতি সব সময়ই অনুসরণ করতে হবে। প্রথমত, কোন ব্যক্তিগত আক্রমণ করা যাবে না। দ্বিতীয়ত, ঘৃণা প্রচার করা যাবে না।
অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, সরকারের চিন্তায় বড় ধরনের জট লেগেছে। সম্প্রচার নীতিমালা এক ধরনের ভীতিমালা। সরকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে এ নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। এ নীতিমালা প্রণয়নের পর সব মিডিয়া ভয়ে আছে। তাই একে ভীতিমালা বলাই যৌক্তিক। তিনি বলেন, আমার খুব প্রিয় একটি কবিতা আছে। লোকের কথায় নয় ঘটনায় মন দাও।
সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, টকশো এবং খবর দুটোই জনপ্রিয়। ২০-২৫ বছর ধরে শত সমস্যার পরও জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেতো। কিন্তু ৫ই জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের পর রাজনৈতিক অগ্রযাত্রায় নতুন উপাদান তৈরি হয়েছে। কর্তৃত্ববাদী আকাঙ্ক্ষা নতুন মাত্রা পেয়েছে। জনগণের কণ্ঠ উচ্চকিত হয় কিন্তু কোন ফল হয় না। এক দশক পর নাগরিক সমাজও অসহায় অবস্থায় রয়েছে। কর্তৃত্ববাদী শাসকরা নাগরিক সমাজের চেয়ে অনেক চালাক। শাসকরা এখন অনেক অস্ত্র ব্যবহার করছে। এ অবস্থায় এখন পরামর্শের মূহুর্ত নয় এখন হচ্ছে উপলব্ধির সময়। আমাদের বলতে হবে আমরা ভয় পাইনি।
শাইখ সিরাজ বলেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোর নিজস্ব কোন নীতিমালা নেই। এটা সত্য, আমরা নীতিমালা চেয়েছিলাম। কিন্তু কি প্রেক্ষাপটে তা চেয়েছিলাম তা-ও বিবেচনায় নিতে হবে। তিনি বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের আগ থেকেই নানা জায়গা থেকে নানা রকমের নির্দেশনা আসতো। নানা দুর্যোগের সময় আমাদের নানা রকম নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে টকশো নিয়ে নতুন করে ভাবার প্রয়োজন রয়েছে। ঢাকার বাইরেও অনেক প্রতিভাবান মানুষ রয়েছে। আমাদের উচিত সেইসব মানুষদের টকশোতে নিয়ে আসা। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গণমাধ্যমের অবদানের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আইন করে কেউ গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে সফল হয়নি। আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের সময়ও আমরা আমাদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার ছিলাম। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময়ও সাংবাদিকরা সাহসী ও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন। সম্প্রচার নীতিমালা একটি বাজে আইন। এ আইন বাতিল ঘোষণা করা প্রয়োজন। মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকার তিনটি টিভি চ্যানেল বন্ধ করেছে। জরুরি অবস্থার সরকার একটি এবং বিএনপি সরকার একটি টিভি চ্যানেল বন্ধ করেছিল। এজন্য তাদের কোন নীতিমালা লাগেনি। তিনি বলেন, দুই জন রাজনীতিবিদ বই লিখে কি বিপদে পড়েছেন তা আপনারা দেখেছেন। টকশো’র কারণেও অনেকে বিপদে পড়েন। নানা ধরনের লিস্ট আসছে। এখন আবার অনেকে নিজ থেকেও টকশোতে আসতে চাচ্ছেন না। আসলে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন না হলে কোন কিছুরই পরিবর্তন হবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলের ইতিহাস যখন লেখা হবে তখন দুটি কারণে সেখানে চ্যানেল আই’র নাম অবশ্যই থাকবে। একটি হচ্ছে টকশো এবং অন্যটি বিনোদন। মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু বলেন, আজ বাসায় বসে বিস্মিত হয়ে স্কটল্যান্ডের গণভোট দেখছিলাম। কিভাবে একটি দেশের স্বাধীনতা নিয়ে ভোটের মাধ্যমে মানুষ তাদের মতামত দিয়েছে। যুদ্ধ নেই, লড়াই নেই। অথচ আমরা এখানে কেউ কাউকে মানি না। সামান্য নির্বাচন নিয়েও লিপ্ত হই রক্তক্ষয়ী সংঘাতে। তিনি বলেন, সম্প্রচার নীতিমালা অনাবশ্যক। এটি হয়তো বিরোধীদের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা হবে। সংবাদপত্রের পর্যালোচনার ক্ষেত্রে একটি আওয়ামী লীগ একটি বিএনপির সংবাদ নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন নেই। শামীম রেজা বলেন, টকশোকে আমি বিকল্প সংসদ বলতে রাজি নই। ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, আমরা কথা বলতে পছন্দ করি। পেটে ভাত না থাকলেও আমরা কথা বলতে চাই। যে কারণে আমাদের এখানে টকশোগুলো বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। মিজানুর রহমান খান বলেন, সাংবাদিক নিজেরা যদি একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে রাখতেন তাহলে সরকার নীতিমালা চাপিয়ে দিতে পারতো না। সরকারের কাছে সবকিছু চাওয়ার একটি অভ্যাস আমাদের রয়ে গেছে। অজয় দাশগুপ্ত বলেন, ১/১১ এর রাতে জরুরি অবস্থা জারির পরপরই সংবাদ মাধ্যমের ওপর কোন ধরনের নিয়ন্ত্রণ আসেনি। সে রাতে আমরা সমকাল অফিসে বসে আলোচনা করছিলাম সেন্সরশিপ ছাড়া জরুরি আইন বা সামরিক শাসন টিকে কি না। বাংলাদেশে ২০০১ সাল ব্যতীত কখনোই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর হয়নি। এ বিষয়টিও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। ফরিদ হোসেন বলেন, আমরা যারা টকশোতে অংশ নেই আমাদেরও সমালোচনা রয়েছে। একই দিনে আমরা একই পোশাকে একাধিক টকশোতে অংশ নিয়ে থাকি। এটা হয়তো ঠিক প্রধানমন্ত্রীকে সাংবাদিকদেরই কেউ কেউ সম্প্রচার নীতিমালা করার পরামর্শ দিয়েছেন। সম্পাদক পরিষদ এখন নীতিমালার কথা বলছেন, কিন্তু আগে কেন তারা নীতিমালা তৈরির কথা বলেননি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হিসেবে জনগণের ট্যাক্সের টাকায় অনেক সাংবাদিক-সম্পাদককে আমরা বিদেশ যেতে দেখি। তাদের দ্বারা কি নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা সম্ভব। পৃথিবীর কোন দেশে দুস্থ সাংবাদিকদের অর্থ দেয়া হয় এবং তা প্রচারিত-প্রকাশিত হয় তা আমি কখনোই শুনিনি। আশরাফ কায়সার বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতির পেছনে সংবাদ মাধ্যমের কি কোন অবদান নেই। গণমাধ্যমের সে অবদান কেন আজ অস্বীকার করা হচ্ছে। যখন নীতিমালা ছিল না তখন কি গণমাধ্যম দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেনি। অলিখিত নীতিমালার মাধ্যমে আমাদের সম্পাদকরা সব-সময়ই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে আসছেন। নীতিমালা লাইসেন্সের ব্যাপারে বিস্তারিত কোন কিছু না বলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে আওয়ামী লীগের লোকেরা লাইসেন্স পান, বিএনপির আমলে বিএনপির লোকেরা লাইসেন্স পান। দক্ষ ও যোগ্য লোকরা টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স পান না। গোলাম মোর্তোজা বলেন, সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়নে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার কথা বলা হয়েছে। অথচ যেসব বিষয়ে কখনোই কোন আলোচনা হয়নি সেসব বিষয়ও সম্প্রচার নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ নীতিমালা কঠোর নিয়ন্ত্রণমূলক। পুরো ধমক ও গায়ের জোরে মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হচ্ছে। রেজানুর রহমান বলেন, গ্রামের মানুষও এখন গভীর রাত জেগে টকশো দেখে থাকে। টকশো আলোচকদের সবাইকেই তারা চিনেন। তবে অনেক ক্ষেত্রে একইদিন এক আলোচক একাধিক টকশোতে অংশ নেন। এটা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। টকশোতে নতুন মানুষ আনা প্রয়োজন। গ্রামের মানুষকেও টকশোতে আলোচনায় অংশ নেয়া প্রয়োজন।
No comments