যুক্তরাজ্যে রয়ে গেল স্কটল্যান্ড
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ও স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতাকামী নেতা অ্যালেক্স স্যামন্ড। ফল ঘোষণার পর। রয়টার্স |
রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষায় ছিল স্কটল্যান্ডবাসী। কৌতূহল নিয়ে অপেক্ষায় ছিল পুরো বিশ্বই। স্কটল্যান্ডে শুক্রবারের নতুন সকালে কি বিশ্বের নবীনতম সার্বভৌম রাষ্ট্রের আবাহন হবে, না কি ৩০৭ বছরের সম্পর্কের বন্ধনই বেশি পোক্ত প্রমাণিত হবে। না, শেষ পর্যন্ত বিচ্ছেদের করুণ রাগিনী বাজেনি। ভোটের মাধ্যমে স্কটল্যান্ডবাসী জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা যুক্তরাজ্যের সঙ্গে জোটবদ্ধ থাকলেই বেশি ভালো থাকবেন। গণভোটে হেরে যাওয়ার পর পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার অ্যালেক্স স্যামন্ড। গতকাল এডিনবরায় সাংবাদিকদের তিনি জানান, নভেম্বরে নিজ দলের বার্ষিক সম্মেলনের সময় দলের নেতার পদ ছাড়বেন এবং পরে ফার্স্ট মিনিস্টারের পদ থেকেও তিনি পদত্যাগ করবেন। এদিকে, স্কটল্যান্ডের গণভোটের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট মার্টিন শুলৎজ, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট হোসে ম্যানুয়েল বারাসো ও ন্যাটোর মহাসচিব আন্ড্রেস ফগ রাসমুসেন। খবর রয়টার্স, বিবিসি ও এএফপির। গণভোটের এই ফলে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন ঐক্যপন্থীরা। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন আগেই বলে রেখেছিলেন, যুক্তরাজ্য ভেঙে যাচ্ছে, এটা দেখা তাঁর জন্য হৃদয় ভেঙে যাওয়ার সমান মনে হবে। গতকাল ফল প্রকাশের পর তিনি স্কটল্যান্ডবাসীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা প্রশ্নে গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয় স্বাধীনতাকামীদের বহুল প্রতীক্ষিত এ গণভোট। ভোটার ছিলেন ৪২ লাখের কিছু বেশি। ভোট পড়ার হার ছিল খুবই উঁচু—৮৪ দশমিক ৬ শতাংশ।
সে হিসাবে, স্বাধীন হওয়ার জন্য ‘হ্যাঁ’ ভোট দরকার ছিল ১৮ লাখ ৫২ হাজার ৮২৮টি। তবে গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত ফলে দেখা গেছে, স্বাধীনতার পক্ষে ১৬ লাখ ১৭ হাজার ৯৮৯ জন স্কট ভোট দিয়েছেন। আর ‘না’ ভোট পড়েছে ২০ লাখ ১,৯২৬টি। তার মানে, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে থেকে যাওয়ার পক্ষের শিবির স্বাধীনতাকামীদের বিরুদ্ধে শতাংশের হিসাবে ৫৫-৪৫ ব্যবধানে জিতে গেছে। স্কটল্যান্ডের মোট এলাকা ৩২টি। এর মধ্যে বৃহত্তম নগর গ্লাসগোসহ মাত্র চারটিতে জিতেছে হ্যাঁ ভোট। এগুলো হচ্ছে ডান্ডি (৫৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ), গ্লাসগো (৫৩ দশমিক ৪৯), ওয়েস্ট ডানবার্টনশায়ার (৫৩ দশমিক ৯৬) ও নর্থ লানার্কশায়ার (৫১ দশমিক ০৭)। রাজধানী এডিনবরাসহ বাকি ২৮টিতেই না ভোট বেশি পড়েছে। গণভোটের আগে প্রচারণার সময় প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন স্কটল্যান্ডবাসীকে না ভোট দেওয়ার জন্য আকুল আবেদন জানিয়েছিলেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ওই অঞ্চলের জন্য অধিকতর ক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার। সেসব প্রতিশ্রুতির পূর্ণ বাস্তবায়ন করা হবে বলে গতকাল জানিয়েছেন তিনি। স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দেওয়া স্কটদের উদ্দেশে ক্যামেরন বলেন, ‘আমি আপনাদের কথাও শুনেছি। যুক্তরাজ্যের লোকজন যে উপায়ে শাসিত হচ্ছে, তাতে পরিবর্তন আনার জন্য এটা একটা সুযোগ।’ অন্যদিকে স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার ও স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রাণপুরুষ অ্যালেক্স স্যামন্ড পরাজয় মেনে নিয়ে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। স্যামন্ড বলেন, ‘এটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ারই জয়। তাই কোনো বিরোধ নয়।’ স্বাধীনতার বিপক্ষে প্রচারাভিযানের নেতা অ্যালিস্টার ডার্লিং বলেছেন, স্কটল্যান্ডবাসী পরিবর্তন চেয়ে যে বার্তা দিয়েছেন, তা অবশ্যই শোনা হবে।
No comments